somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রোফাইল পিকচার বদল-নাবদল বিতর্ক

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত দুই দিন থেকে ফেসবুকে ফ্রান্সের প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে নিজের প্রোফাইল পিকচার ফ্রান্সের পতাকার রঙ্গে রাঙানোর হিড়িক পড়ে গেছে। আবার নিজের প্রোফাইল পিকচার পতাকাশোভিত করার পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক চলছে। বিষয়টিকে কিছুটা হলেও উপভোগ করছি।

মুলত হামলাকারী কারা, কে বা কারা এত টাইট সিকিউরিটি উপেক্ষা করে হামলা করে, আমাদের মতো চুনোপাুটিদের জানার কথা না। তবে অন্য সব ক্ষেত্রের মতো এখানেও আমরা যা লক্ষ্য করেছি, তা হলো- ই-মেইলের মাধ্যমে আইএসের দায় স্বীকার। এটাই স্বাভাবিক। আগে আন্তর্জাতিক সব সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করতো আল কায়েদা। এখন নাটকের প্লট একই। দৃশ্যটা শুধু অন্য অংকে মোড় নিয়েছে। আল কায়েদার জায়গায় আইএস। আর নাটকের পরতে পরতে তা কত দৃশ্যে দৃশ্যায়ন করা হবে আল্লাহই ভালো জানেন!!!!

আমরা অত্যন্ত রোমাঞ্চিত হয়ে লক্ষ্য করি, যে আইএসের কোনো নাম-গন্ধ ছিল না। হঠাৎ ধূমকেতুর মতো আবির্ভুত হয়ে সেই দলটি খেলাফতও প্রতিষ্ঠা করে ফেললো। অথচ ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিন্দানাও, চেচনিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ বছরের পর বছর আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে কোনো অগ্রগতি সাধন করতে পারে না। আর আইএস দৃশ্যপটে এসেই নতুন দেশ কায়েম করে ফেলে। আবার বিশ্ব মোড়লরা এই আইএস নিয়ে টম-জেরি খেলে।

আমরা অত্যন্ত পুলকিত হই তখন, যখন দেখি আমেরিকার মতো একটি সুদক্ষ ও সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী বিমান থেকে আইএস বিরোধীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়ে ভূলে আইএসের হাতে পড়ে যায়। আমরা তখন খুবই পুলক অনুভব করি। শিহরিত হই। আমরা উদ্বিগ্ন হই তখন, যখন দেখি আমেরিকা আল কায়েদা এবং তালেবান সৃষ্টি করে। আবার এই তালেবানের হামলায় যখন স্কুলের কোমলমতি শিশুদের হত্যা করে তখন আমরা মর্মাহত হই। আবার যখন এই তালেবানের উপর হামলা করে তালেবানসহ নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়, কোনো শান্তিপ্রিয় দেশে অশান্তি ছড়িয়ে দেয়া হয়, আমরা তখন পুলক অনুভব করি।

যে সময়টিতে প্যারিসে হামলা হলো, ঠিক সেই সময়ে লেবাননে হামলায় অনেক হতাহত হয়। নাইজেরিয়ায় সেই সময় অসংখ্য শিশু ও মানুষকে জিম্মি করে রাখা হয়, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে সেলেকাও ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধ-শতাধিক নিহত হয়, ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়। ইরাক-লিবিয়ার বৈধ শাসকদের হটিয়ে দিয়ে চির শান্তির এই জনপদগুলোতে চির অশান্তি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের শিশুরা আজ বই-কলম ফেলে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে, কাশ্মীর আর চেচেনদের আজকে লড়াই শুধু কাজ। এদের জন্য আমরা আমাদের প্রোফাইল পিকচার রাঙাই না।

যারা চারদিকে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে, যারা মধ্যপ্রাচ্যসহ অনুন্নত দেশগুলোতে টম-জেরি খেলতছেে, তারা যা করছে, যাদের নিয়ে টম-জেরি খেলছে, সেই নিষ্পেষিত মানুষগুলোর জন্যও সহমর্মিতা দরকার। আমরা চাই না রাজায় রাজায় যুদ্ধ হোক, আর উলুখাগড়ার প্রাণ যাক। আমরা চাই শান্তি। আমরা চাই না আর কোনো জীবন ঝরুক। হোক না সে ইহুদী, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা মুসলমান। আমরা আরও চাই, যারা এই দাবা খেলছে, বেকুব মুসলমানগুলো যেন দাবার গুটি না হয়।

আবার আমরা এই টম-জেরি খেলার জন্য শুধু পশ্চিমা বিশ্ব বা বিশ্ব মোড়লদের দায়ী করে থাকি। কিন্থু এর জন্য মোড়লরা যতটা দায়ী মুসলমানরা বা তৃতীয় বিশ্বের নেতারা তার চেয়ে বেশি দায়ী। সামান্য ক্ষমতার মোহে এরা অন্যের দাবার গুটি হয়।এসব দাবার গুটির জন্য তো মোড়লরা এদের নিয়ে খেলা করে।

যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তা মুসলমানদের দ্বারা হোক বা অন্যদের দ্বারা হোক, তাতে মুসলমানরা মারা যাক বা অন্যরা মারা যাক, সবই নিন্দার যোগ্য। সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হবে। আপনি যদি ফ্রান্সের ঘটনায় সহানুভূিত বা সমানুভূতি প্রকাশ করে তাদের পতাকায় আপনার প্রােফাইল পিকচার রাঙান, এটা প্রশংসার যোগ্য। ঠিক সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, আমেরিকা, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, মিশর সহ সকল দেশের ক্ষেত্রে যেন সহানুভূিতর প্রকাশটা যেন একই না হোক অন্তত কাছাকাছি হয়, সেটা কাম্য। সবার মঙ্গল চাই। টম-জেরি খেলা চাই না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×