নারীবাদী আন্দোলনের তিনটা দিক। প্রথম দিকে ছিল রাজনীতির ক্ষেত্রে সমান অধিকার, যেমন নির্বাচনে ভোট দেয়া। এর জন্য ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় নারীবাদীদের দীর্ঘ আন্দোলন করতে হয়েছে। দ্বিতীয় আন্দোলনে ছিল কর্মক্ষেত্রে বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা পুরুষদের সমকক্ষ হয়ে পাওয়ার দাবী, যা এখনো চলছে। এক্ষেত্রেও ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার নারীবাদীরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। নারীবাদীদের তৃতীয় আন্দোলন সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যমুলক আচরনের বিরুদ্ধে। নারীর প্রতি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অবদমনের মুল হাতিয়ার হল ভাষায় লিঙ্গ বিভাজন এনে মেয়েদের হেয় করা। পুরুষতান্ত্রিক কতৃত্বে ভাষাকে নিরপেক্ষ না রেখে নারীকে নেতিবাচকভাবে দেখানোর কথা প্রথম বলেছিলেন ফরাসী নারীবাদী বুদ্ধিজীবী ইরিগেরে, সিক্সোর মত ব্যাক্তিরা। নারীবাদী এই বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন এখনো অব্যাহত, কেননা ভাষাগত বৈষম্যমুলক আচরন স্থুল এবং সুক্ষ, উভয় ভাবেই হয়ে থাকে এবং বেশ সুকৌশলে এর চর্চা করা হয় তথাকথিত মার্জিত রুচির পুরুষদের দ্বারা।
বাংলাভাষায় স্থুলভাবেই নারীদের প্রতি বৈষম্য, ঘৃনা এবং অপবাদ দেয়া হয়ে আসছে সুদুর অতীত থেকে। অশিক্ষিত,অমার্জিত পুরুষদের মধ্যে এর দৃষ্টান্ত বেশি দেখা গেলেও শিক্ষিত পুরুষ এলিটদেরও এই ক্ষেত্রে সমর্থন রয়েছে।
হাসান ইকবাল তার "ভাষা, নারী ও পুরুষপুরাণ" বইতে বাংলা ভাষায় কিভাবে নারীকে অবদমিত ও অপমানিত করে হেয় করে ওঠার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তার বিশ্লেষণ করেছেন অনেক দৃষ্টান্ত দিয়ে। এর জন্য তাকে প্রচুর গবেষণা করতে হয়েছে এবং তিনি তার বক্তব্যের সপক্ষে যথেষ্ট তথ্য- উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, বইটি পড়ে তা বোঝা যায়। এটি নি:সন্দেহে একটি মুল্যবান আকরগ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হবে। আমার জানা মতে বাংলা ভাষায় এই বিষয় নিয়ে খুব বেশি কাজ হয় নি। প্রকৃতপক্ষে, নারীবাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইস্যুগুলি এত প্রাধান্য পেয়ে এসেছে যে এই সমস্যার বুদ্ধিবৃত্তিক দিক প্রায় অবহেলিতই থেকেছে, পাশ্চাত্যে এবং প্রাচ্যদেশে। এই ঘাটতিপুরণে হাসান ইকবালের বইটি একটি মুল্যবান অবদান। তাকে অভিনন্দন। বইটি প্রকাশ করেছে ''অবসর প্রকাশনা সংস্হা"। বইটির অনলাইন লিংক: Click This Link
হাসনাত আবদুল হাই
১৬ মার্চ ২০২১, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪৭