অবশেষে অক্টোবরে ফাইনাল হল ভুটান ভ্রমনের । সময় কম ছুটি নাই ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার ঝামেলা এড়াতে হবে । তাই প্লেনে যাব । ভিসা করে যেতে হবে না ভুটানের এয়ারপোর্টে স্পট ভিসা দিবে । ভারত, মালদ্বীপ আর বাংলাদেশিদের জন্য এই জামাই আদর । অবিশ্বাস্য , বাংলাদেশকে এতটা সম্মান হয়তো শুধু আর একমাত্র সিয়েরা লিওন ই দেয় । শুরুর আগেই শেষ এমন একটা “এ জার্নি বাই উড়োজাহাজ” দিয়ে যাত্রা পর্ব শেষ । Druk Air একমাত্র ভুটানি বিমান সংস্থা আমাদের বাহন । টেকঅফ আর ল্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক এয়ারপোর্টগুলোর মধ্যে ভুটানের পারো এয়ারপোর্ট অন্যতম । দুই বিশাল পাহাড়ের মধ্যদিয়ে প্লেন নিয়ে যেতে হয় এয়ারপোর্টে । হাতেগুনা কয়েকজন প্রশিক্ষিত পাইলটই এখানে কর্মরত আছেন এই কাজটি করতে । যাত্রা শুরু অট্টালিকার জঞ্জালের শহর আর এরই মধ্যে নয়নাবিরাম মহান সংসদ ভবনের সৌন্দর্য দিয়ে ।
ঈগলের চোখে -
হাতির ঝিল -
মহান সংসদ ভবন -
প্রাণের ঢাকা -
ঘণ্টা খানিক পর, প্লেনের জানালা দিয়ে দূরে যে কয়টা চকচকে চুড়া দেখছি এর একটা হিমালয়ের, জানিয়ে দিলেন বিমানের ক্রু ? বেশ! কিন্তু কোনটা ? খেয়াল করিনি ক্রু মামা কোনটাকে হিমালয় আর কোনটাকে কাঞ্চনজঙ্গা বললেন । নেমপ্লেট ঝুলিয়ে দিলে সুবিধা হত (কর্তৃপক্ষ সদয় হবেন)।
জুস, স্যান্ডউইচ আর বাদামের সাথে তুলনামূলক কমসুন্দরি কিন্তু হাসিমুখি আর সুন্দরি কিন্তু গুমরা মুখের বিমানবালাদের পায়চারী উপভোগ করতে করতে ভুটান পৌছে গেলাম । (সুন্দরী সহপাঠী, সুন্দরী সহকর্মী কিংবা সুন্দরী বিমানবালার গুমরা মুখ অতিউৎসাহি আমাদের থেকে নিস্তার পাওয়ার হাতিয়ার । বুঝি, কিন্তু আমার গুমরা মুখ ভাল লাগে না।)
ভুটান, পাহাড়ের বুকে আবাস -
পাহাড়ের মাঝে সুন্দর ছিমছাম গুছানো এয়ারপোর্ট । পাশেই বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী । অপূর্ব ।
এয়ারপোর্ট পাশে রাস্তা আর তার পাশেই বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী -
ভিসার কাজ চলছে , আমাদের রাজীব ভুটান প্রস্থানের তারিখ ভুল দিয়ে বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে । হাসবো নাকি ঝাড়ব ! বোকা ছেলেটা বিব্রত । আগামী দিনগুলোতে সে আরও খেল দেখাবে এত মাত্র শুরু । নারায়ন যোগ দিবে গাইড প্লাস ড্রাইভার হিসেবে । সে আছে এয়ারপোর্টের বাহিরে আমাদের অপেক্ষায় ।
হালকা পাতলা গড়নের আমাদের দেশের পাহাড়ি ছেলেদের মত মায়াবি চেহারার ছোটখাটো অমায়িক ছেলে নারায়ন । পড়নে ভুটানি ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘গো’ । আমাদের নিয়ে রওনা হল ট্রানজিট অফিসে পারো থেকে থিম্পু ও পুনাখা যেতে ট্রানজিট লাগবে । ফর্ম পূরণ করে ট্রানজিট পেতে ঘণ্টা দুয়েক লেগে গেল । এই ফাকে কয়টা ক্লিক -
Iron Chain Bridge
পারো থেকে থিম্পু যাবার পথে নদীর উপর তৈরি এই ব্রিজ । এর নির্মাতা Thangtong Gyalpo যিনি তিব্বত ও ভুটানে এমন আরও প্রায় অর্ধশত Iron Chain Bridge তৈরি করেন সেই ১৪০০ সালের দিকে । যার অনেক গুলো এখনো ব্যাবহার হচ্ছে পুরদমে । তবে এর চাইতেও অলৌকিক ১৯৯১ সালে তৈরি আমাদের মেঘনা সেতু মাত্র দুই-যুগ না যেতেই মেঘনা ব্রিজের করুন হাল । । অপ্রাসঙ্গিক( !!! ) প্রসঙ্গ বাদ দিই ।
নিচে পানির স্রোত সামনে বিশাল পাহাড় আর অনন্য সাধারন লোহার শেকলে তৈরি ব্রিজ উপর দাড়িয়ে শিহরিত হবেন নিশ্চিত ।
Iron Chain Bridge -
পথ চলা শুরু । উদ্দেশ্য থিম্পু , ভুটানের রাজধানী । অক্টোবরে আরামদায়ক এক আবহাওয়া । না গরম না শীত । দুপাশে উচু পাহাড় পাশ দিয়ে বয়ে চলছে নদী । বাকি প্রায় পুরোটা সফর এই নদীর কড়া নজরদারিতেই কাটবে আমাদের । সমতলের দেখা নেই । জনমানব প্রায় শূন্য, পাহাড়, নদী আর পাইন গাছের সবুজের ছড়াছড়ি।
গাড়ি চলছে থিম্পুর পানে । রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে । পাহাড়ের কোথাও কোথাও সুন্দর করে বানানো কাঠের বাড়ি । মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকানে পরসিমন, আপেল, পেয়ারা আর বড় আকারের মরিচের পসরা সাজিয়ে মহিলারা ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন । রাজীব পরসিমন কিনল । এতক্ষণ একে টমেটো ভাবছিলাম । রসে ভরপুর মিষ্টি স্বাদের ফল ।
পরসিমন (ভুটানিরা বলে আন্ডে) -
ভুটানি মরিচ -
ঢাকায় ইদানিং দেখা যায় ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি, ভুটানে ১০০ রুপি । ওহ হ্যাঁ, ভুটানি মুদ্রা ভুলট্রম আর ভারতীয় রুপি ওখানে সমান তালে চলে বিনিময় হার ও সমান । কি জানি দেখলাম একটি বাড়ির দেয়ালে আঁকা গাড়ির স্পীড বেশী ছিল তাই ঠিকমত খেয়াল করিনি । আর এদিকে আমার নংরা মন কত কিছু চিন্তা করে ফেলেছে ।
ইনশাআল্লাহ্, আগামী পোস্টে থিম্পুর গফ।
**** ফাখানি = ঘুরাঘুরি , গফ = গল্প । (সিলেটি ভাষায়)