একা একা আপন মনে বসে আছি পুকুর পাড়ে । হঠাৎ করে কে যেন পিছন থেকে ডাক দিল এই যে শুনতে পাচ্ছেন ।একটু এই দিকে আসবেন । আমি ভাবলাম হয়তো অন্য কাউকে ডাকতেছে । তাই আমি আমার মত বসে আছি । একটু পর দেখলাম আর কেউ ডাকে না । তখন আরো নিশ্চিত হলাম যে আমাকে ডাকে নাই । আমি আমার ভাবনায় ফিরে আসলাম । কি ভাবতেছিলাম কিছুই মনে হইতেছে না । হঠাৎ করে একটা মেয়ে আমার সামনে এসে বলতে লাগল “কি ব্যাপার আপনি কি কানে শুনতে পান না সেই কখন থেকে ডাকতেছি কোন সাড়া দিতেছেন না । কি সমস্যা আপনার । ভাব ধরেন । এতো ভাব কেন আপনার । “
কথা গুলো বলে মেয়েটা একটু জিরিয়ে নিল । আর এই সময়ের মাঝে মেয়েটাকে এক পলক দেখে আমি লাফ দিয়া বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পরি । কি বলব বুঝতে পারতেছিলাম না । মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম । কিছু একটা বলতে যাব কিন্তু আমার মূখ দিয়া কোন কথা বের হইতেছে না । নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলাম আমি স্বপ্ন দেখতেছি না তো । নাহ স্বপ্ন না মেয়েটা সত্যি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
আর ঐদিকে আমার এই অবস্থা দেখে মেয়েটা হাসতে লাগল । আমি কিছুই বলতে পারছি না । মেয়েটা আমাকে আমার নাম কি আমি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ি সব জিজ্ঞাস করল আর আমি রোবটের মত শুধু ওর প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিয়ে যাচ্ছি আর একদৃষ্টিতে ওরে দেখতেছি ।
একপর্যায়ে মেয়েটা আমাকে বল্লো “আমার যা জানার ছিল আমি জেনে নিলাম । ভালো থাকবেন আর আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত । “ বলেই মেয়েটা উঠে চলে যেতে লাগল । আমি তখনো নির্বাক হয়ে বসে মেয়েটার চলে যাওয়ার পথের দিকে থাকিয়ে ছিলাম । হঠাৎ করে মনে হল আরে মেয়েটা তো আমার সব কিছু জেনে গেল কিন্তু আমি তো কিছুই জিজ্ঞাস করলাম না । সাথে সাথে মেয়েটিকে ডাক দিলাম । মেয়েটি ফিরে তাকিয়ে বল্লো কিছু বলবেন ।
আমি কিছু একটা বলতে যাব ঠিক ওই মুহূর্তে আমার মূখে পানি ঢেলে দিল কে যেন । আমি লাফ দিয়া উঠে দেখি আমার রোম মেট গ্লাশে পানি নিয়া দাঁড়িয়ে আছে আর বলতেছে কি সব বকবক করতেছিস ঘূমের মাঝে । কয়টা বাঝে একবার ঘড়িটার দিকে তাকা । ক্লাশে যাবি না ।
আমি নিজেকে আমার বিছানায় আবিষ্কার করলাম আর বুঝতে পারলাম যে এতোক্ষন আমি স্বপ্ন দেখতেছিলাম । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । রোম মেট আর স্যারকে যে কি করতে ইচ্ছা করতেছিল বলে বুঝাতে পারব না। আরে বেটা ক্লাশে যাবি যা না আমার স্বপ্নটা কেন ভাঙ্গলি । মেয়েটার নামটাই জানতে পারলাম না ।
আর মেয়েটা আর কেউ ছিল না সে ছিল আমার পরীটা । মেজাজ চরম পর্যায়ে খারাপ হইতেছে। শালা ক্লাশে যাইতেই ইচ্ছা করতেছিল না । কি হল এটা । আমি আমার পরীকে এতো কাছে পেয়েও ওর নামটা জানতে পারলাম না । নাম না হয় বাদ দিলাম কোন ডিপার্টমেন্টে পরে সেটাও জানা হল । আমার থেকে বড় না ছোট নাকি আমার সাথেই পড়ে সেটাও না ।
একদিকে যেমন মেজাজ খারাপ হইতেছিল ঠিক তেমনি ভালোও লাগতেছিল । পরীটাকে মন বরে দেখতে পারছি বলে । হোক না সেটা স্বপ্নে সমস্যা নাই । সামনা সামনি হয়তো আর দেখা হবে না ।
তো আর কি করা একরাশ হতাশা নিয়া ক্লাশ করতে গেলাম । সারা দিন ক্লাশ করে রুমে আইসা ঘুম দিলাম । একটু পর হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল । ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম কে ফোন দিছে । দেখলাম যে আমার এক জুনিয়র ফোন দিছিল । আমি আর ফোন না দিয়া ঘূমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘূম আর আসলো না ।
উঠে ছাদে গেলাম একটু হাওয়া খাইতে । এমন সময় আবার ফোনটা বেজে উঠল।এইবার আর কল আসে নাই।একটা SMS আসলো,আমার জুনিয়রটাই পাঠাইছে । ওর SMS পড়ে বুঝতে পারলাম ও অসুস্থ । কিন্তু কোথায় কি করবে বুঝতেছে না । তাই আরকি বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতে চলে গেলাম । ওরে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ পত্র কিনে পাঠিয়ে দিলাম মেছে । কিন্তু ওর সাথে যে মেয়েটা আসছিল কেমন যেন চিনা চিনা লাগতেছিল । আর তখন চার দিকে কিছুটা অন্ধকার ছিল আর আমিও হয়তো শুরুর দিকে খেয়াল করি নাই । কিন্তু যখন চলে যাচ্ছিল মেয়েটাকে তখন চিনতে পারছি সে আর কেউ না আমার পরী। আমি ওরে দেখে আর কিছু বলতে পারলাম না । এমন কি ওর নামটাও জানতে পারলাম না । জানবোই বা কি করে ওরে দেখলেই আমার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যায় ।
মানে আর কি বলব নিজের উপরেই মেজাজ খারাপ হইলো । এতো কাছে পেয়েও ওর নাম কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে সেটাও জানা হল না ।
তবে আজ এটা বুঝতে পারছি, মানুষ মন থেকে যা চায় তা কোন না কোন দিক দিয়ে পূর্ণতা পায় । আবারো হইতো দেখা হবে তার জন্যই হয়তো বিধাতা চায়নাই আজ আমি সব জেনে যাই ।
আবারো দেখার অপেক্ষায় থাকলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪