সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু লেখা লিখে যিনি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার আজকের লেখাটি ''ডক্টর এক্স'' কে উৎসর্গ করলাম।ডক্টর, আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।
কালিদাস পণ্ডিতে কয়
পথে যেতে যেতে,
নেই তাই খাচ্ছো,
থাকলে কোথায় পেতে?
বাংলা ভাষায় সিরিয়াল কিলিং নিয়ে আদৌ কোন লেখা আছে কি-না, বা বাঙালি কোন গবেষক বাংলায় সিরিয়াল কিলিং নিয়ে কোন ধরনের গবেষনা করেছেন করেছেন কি না বা করলেও সেটি আম জনতার জন্য উন্মুক্ত কিনা আমার জানা নেই(কারো জানা থাকলে আমাকে জানাবেন),তাই হুমায়ুন আহমেদ এর মিসির আলি সিরিজ এর ''কহেন কবি কালিদাস'' উপন্যাসটিকে আমি এই জনরা বা বিভাগ এর প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে ধরে নিচ্ছি(মনে রাখবেন, কন্ট্রাক্ট কিলার আর সিরিয়াল কিলার কিন্ত এক নয়)।আজকের লেখাটি এই সিরিজের অন্যান্য লেখাগুলো থেকে একদমই অন্যরকম কারন এবারই প্রথম কোন ফিকশনাল চরিত্র কে নিয়ে লিখছি(স্পয়লার এলার্টঃ কেউ উপন্যাসটি পড়ে সত্যিকার আনন্দ পেতে চাইলে এখানেই থামুন)।
উপন্যাস এর শুরুতেই আমরা একজন টিপিক্যাল হুমায়ুনিয় নায়িকা কে দেখতে পাই যিনি অসম্ভব সুন্দরী হবার সাথে সাথে একজন সফল একাডেমিক এবং ধনী।যে কিনা মিসির আলীর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছে, এমনকি তাকে সাহায্য করতে অনিচ্ছুক মিসির আলীকে সে বাবা সম্বোধন করে তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়। সায়রা বানু নামের এই আত্মবিশ্বাসী চরিত্রটি প্রথমেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষন করে নেয়।
মিসির আলীর সঙ্গে সায়রা বানু প্রথম পরিচয় এর পরে বাদবাকি ঘটনা খুব দ্রুত এগিয়ে যায় কারন সায়রা বানু যে বিষয়ে সাহায্য চাইতে এসেছে সেটি সে একবারও মুখ ফুটে বলে নি বরং অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যাান আননোউন ইয়াং গার্ল নামের একশো পাতার একটা খাতায় সে তার বক্তব্য লিখে এনেছে।
মিসির আলী সেই খাতা পড়ে বিভিন্ন সায়রা বানু এবং তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌছান এবং যুক্তির সাহায্যে সেগুলো বিচার করে দেখেন এবং হুমায়ুন আহমেদ এর লেখায় ও মিসির আলীর অসাধারন বিশ্লেষনে উঠে আসে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সার্থক সিরিয়াল কিলার ''সায়রা বানু''।
সিরিয়াল কিলারদের কিছু কমন বৈশিষ্টের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এরা ধার্মিক হয়ে থাকে উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই সায়রা বানু
নামায ও রোজার মত বিষয়গুলি খুব আস্থার সাথে পালন করছে, তবে এদের ক্ষেত্রে ধর্মে আস্থা নয় বরং অন্যের দৃষ্টি আকর্ষন বা নিজেকে লুকিয়ে রাখার ব্যাপারটাই মুখ্য এমনকি সায়রা বানুর ক্ষেত্রেও সেটাই প্রমানিত হয়।
সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে আপনজন বা পরিবারের লোকদের ক্ষতি করবার একটা প্রবনতা দেখতে পাওয়া যায়। সায়রা বানুর ক্ষেত্রেও আমরা দেখি কিভাবে সে তার আপনজনদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। মা, বোন তো বটেই এই উপন্যাস এর অন্যতম প্রধান চরিত্র সায়রা বানুর বাবা কেমিস্ট্রির অধ্যাপক হাবিবুর রহমান কে সে দীর্ঘ দিন ধরে যে মানসিক অত্যাচার এর মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় সেটি এক কথায় বর্ননাতীত।
এই উপন্যাসে আমরা নাসরিন নামের অল্পবয়সি একটি কাজের মেয়ে কে দেখতে পাই। আমরা আমাদের চারপাশে আমরা প্রতিনিয়ত এ ধরনের কাজের মেয়ে দেখতে পাই কিন্তু নাসরিন এদের সবার চেয়ে আলাদা। উপন্যাসে নাসরিন এর চরিত্রটি খুব রহস্যময় কিছু জট খুলতে মিসির আলিকে সাহয্য করে,এবং এই উপন্যাস যত উপসংহার এর দিকে আগাবে ততই আমরা অনুভব করতে থাকব কেন নাসরিন সবার চেয়ে আলাদা।
যারা মিসির আলি সিরিজ পড়েছেন তারা অবশ্যই জানেন মিসির আলিকে বুদ্ধির খেলায় হারানো অসম্ভব, তাহলে সায়রা বানু কেন মিসির আলির কাছেই সাহায্য নিতে যায়? যেখানে তার আসল পরিচয় উন্মুক্ত হয়ে যাবার ভয় আছে। এর উত্তরও খুব সহজ, সিরিয়াল কিলার রা নিজেকে অন্যদের চেয়ে বুদ্ধিমান ভাবতেই পছন্দ করে সায়রা বানু ও এর ব্যাতিক্রম নয়।
এই সিরিজ এর আগের পর্বগুলোঃ
টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলার,রবার্ট হ্যানসেন
টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলার,জেফ্রি ডাহমার
টুইস্টেড মাইন্ড আফ আ সিরিয়াল কিলারঃ আন্দ্রে রোমানভ চিকাটিলো
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৪