১ম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
২য় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই মনটা ভাল হয়ে গেল, বৃষ্টি থেমে গেছে। নামাজ পড়ে হোটেলের নিজস্ব যে রেস্তোরা (অফ সিজন বলে বন্ধ আছে) আছে ঐটার ২য় তলার বারান্দায় বসে সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গতকাল সন্ধায় আন্দাজ করতে পারছিলাম না বিচ থেকে কত দূরে আছি, একটু পরিষ্কার হতেই বুজলাম হেটে বিচে যেতে ১ মিনিট লাগবে। সাইন বোর্ডে দেখলাম এইতা টিভাই ভাডডো বিচ যা ক্যালাংগুট বিচের একটা অংশ আর হোটেলের নাম জুড বাই দা সি। আমি, হালিম ভাই, রেজাউল ভাই মিলে বিচে হাটতে বের হলাম, বাকিরা ঘুমে।
বিচে যেতেই প্রায় ২৫০০ কিলোমিটারের জার্নির কষ্টের কথা ভুলে গেলাম। আমি বরাবরই পাহাড় প্রেমী, সাগর আমাকে সেভাবে টানে না। কিন্তু সাগরের বিশালতা এবং সৌন্দর্য আপনাকে প্রেমে ফেলতে বাধ্য। গত ৩ দিন টানা বৃষ্টির কারনে সাগরের পানি যেমন ঘোলা ছিল তেমনি সৈকতে অনেক ময়লা আবর্জনাও পড়ে ছিল, যা দেখতে মোটেই ভাল ছিল না। আসলে আমরা সাগরকে যা দেই সাগর আমাদের তা ফেরতও দেয় এটা হল তার বাস্তব প্রমান। বিচে হাটতে হাটতে এক অন্য রকম ভালোলাগা অনুভব করলাম, বিচের বালিগুলো অনেক মোটা হওয়াতে ঢেউ গুলো যখন পা ছুয়ে আবার ফেরত যাচ্ছিল পায়ে অন্য রকম এক ধরনের সুড়সুড়ি হতে লাগলো যা বলে বুঝানো যাবে না। হাটতে হাটতে ক্যালাংগুট বিচের মেইন পয়েন্টে চলে আসলাম। এবার হোটেলে ফেরার পালা, রাস্তা ধরলাম শহরের ভিতর দিয়ে-পথপ্রদর্শক গুগুল ম্যাপ আর জিপিএস।
হোটেলে ফিরে বাকিদের রেডি হতে বললাম আর আমরাও রেডি হয়ে ০৮:৩০ এর দিকে হোটেলের সামনে চলে আসলাম। আলী ভাইকে (হোটেল ম্যানেজার) বললাম আমাদের কাছে বাংলাদেশী লাইসেন্স আছে (আমার কাছে নাই, রেজাউল ভাই, হালিম ভাই আর রাসেলের আছে) আমাদের কি স্কুটার ভাড়া দেয়া যাবে কি না? উনি বললেন কোন সমস্যা নেই, তাই আর দেরী না করে এক দিনের জন্য ৯০০ রুপি দিয়ে ৩ টা স্কুটার নিয়ে নিলাম। আমি গত ৮ বছরের মধ্যে ৩-৪ বার মোটরসাইকেল (তার আগে ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা) চালিয়েছি স্কুটার তো দূরের কথা, তাই নিজের উপর খুব একটা আত্মবিশ্বাস ছিল না। কলকাতায় একজন স্কুটার চালকের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিভাবে চালাতে হয়, ব্যাস শুধু এতটুকুই। হালিম ভাই যেহেতু স্কুটার চালাতে জানেন না তাই আমিই চালকের আসনে আর পেছনে হালিম ভাই। আমার স্কুটারটা লক করতে পারছিলাম না বলে আলী ভাই কে বললাম অন্য একটা দিতে, শুনে বলল আমাদের গোয়াতে বাইক তোমাদের দেশের মত চুরি হয় না। দেশের নামে এই মন্তব্য শুনে খারাপ লাগলেও আমার কাছে কোন উত্তর ছিল না।
শুরু হল আমাদের যাত্রা, প্রথমে একটু নার্ভাস লাগছিল। দশ মিনিটের মধ্যেই স্কুটার আমার আয়ত্তে চলে আসলো। এক দোকান থেকে প্রতি স্কুটারের জন্য ২ লিটার করে পেট্রোল নিয়ে নিলাম, দাম ৯০ রুপি প্রতি লিটার। এক লিটার করে ভরে নিলাম আর একটা পরে ভরার জন্য রেখে দিলাম। মোবাইলে জিপিএস চালু করে প্রথম গন্তব্য দিলাম ক্যালাংগুট বিচ (যদিও আমরা ৩ জন সকালে গিয়েছিলাম, বাকিদের জন্য আবার)।
গোয়া পর্তুগিজরা গোয়া শাসন করেছে ৪৫০ বছর (১৫১০-১৯৬১)। ১৯৮৭ সালে গোয়া ভারতের একটি রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। গোয়া শহর টা এখনও প্রায় সেভাবেই আছে যেভাবে পর্তুগিজরা রেখে গিয়েছে, নতুনে তাদের মনে হয় অনেক অনিহা। শহরে নেই কোন আকাশ ছোঁয়া দালান, না আছে অনেক সুপ্রসস্থ রাস্তা, আবার যানজটও নেই। ভাবলাম আমরা অফ সিজনে এসেছি বলে হয়তো এই অবস্থা। তবে টুরিস্ট সিজনেও খুব একটা পরিবর্তন হয় না। পুরো শহর জুড়েই সবুজের সমারোহ।
৫ মিনিটের মধ্যেই ক্যালাংগুট বিচে পৌঁছে গেলাম, পার্কিং খরচ ৯০ রুপি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যেমন ভিড় আশা করছিলাম তেমন ছিল না। সাগর কিছুটা উত্তাল থাকায় কাউকে সমুদ্রেও নামতে দেখলাম না। কিছুক্ষণ। নাস্তা করার জন্য বিচের ধারের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলে তারা জানালো বিয়ার আর মদ ছাড়া কিছু দিতে পারবে না নাস্তাতে। তাই বের হয়ে অন্য দিকে যাত্রা শুরু, গন্তব্য এবার বাঘা বিচ। নর্থ গোয়ার সবচেয়ে জমজমাট বিচ বলতে পারেন। স্কুটার পার্কিং করে আগে নাস্তা করতে গেলাম। নাস্তাতে সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার ইটলি আর ধোসা ছাড়া কিছু না পাওয়াতে নাস্তা করা ছাড়াই বিচে চলে গেলাম। আসলেই এই বিচটা জমজমাট মানুষের সমাগম আছে। বিচের যে বালি তা ক্যালাংগুট বিচ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একদম মিহি। বিচের পাশে পর্যটকদের জন্য সামান্য খরচে আধুনিক চেঞ্জ রুম, লাইফ সাপোর্ট টিম সবসময় প্রস্তুত আছে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করতে।
পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করলাম আঞ্জুনা বিচ, জিপিএসে গন্তব্য দিয়ে আবার শুরু ছুটে চলা। ক্ষুধায় সবার অবস্থাই কাহিল। তাই রাস্তার পাশে একটা রেস্তোরাতে বসলাম, আলু পরোটা অর্ডার দিয়ে অপেক্ষো করতে লাগলাম। প্রায় ১৫ মিনিট পর গরম গরম আলু পরোটা চলে আসলো সাথে চাটনি আর টক দই। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম এই ছোট এই হোটেলেও মদ, বিয়ার পাওয়া যায় কিন্তু আমরা ভাল ছেলে দেখেই সন্তুষ্ট। নাস্তা বিল ৭০০ রুপি।
খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। চলতে চলতে দূর থেকে লক্ষ্য করলাম সামনে পুলিশ চেক পোষ্টে বাইক চেক হচ্ছে। মনে মনে বাইক ঘুরাতে চাইলাম কিন্তু আবার কি ভেবে সামনে এগিয়ে গেলাম। দেখে শুনে আমাকে সিগনাল দিল আমার পরে রেজাউল ভাইকে। আমার কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স চাইলে আমি হালিম ভাইকে বলি ভাই আপনারটা দেখান (মনে মনে চিন্তা দেখি কোনভাবে বাঁচা যায় কিনা)। হালিম ভাইয়ের লাইসেন্স দেখে আমাকে বলে আপনারটা দেখান, আমি জবাবে বললাম আমার লাইসেন্স নাই। দারোগা বাবু বলল এই ২০০০ রুপির মামলা লাগাও, এই বলে সে চলে গেল (বুঝলাম টাকা খাবে তাই সে থাকবে না)। রেজাউল ভাইয়ের বাংলাদেশী লাইসেন্স দেখে বলল ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স লাগবে। কনস্টেবল সাদা খাতায় ৯০০ লিখল আর বলল এইটা দিন তাই ছেড়ে দিব, আর ব্যাটা টাকা খাওয়ার জন্য রেজাউল ভাইকে এও বলতে লাগলো তুমি মদ খেয়ে বাইক চালাচ্ছ। রেজাউল ভাই একটু ঘাবরিয়ে গিয়েছিল, আর আমি বুঝতেছিলাম না কোনটা মদের গন্ধ যার কারনে জোরে নিশ্বাস বেটার মুখে মারলাম, বললাম দেখেন আমরা মুসলিম আমরা মদ খাওয়া তো দূরের কথা ছুয়ের দেখি না। ব্যাটা আবার বলল আজ না খেলেও কাল রাতে নিশ্চই খেয়েছেন। সাথে সাথে রেজাউল ভাই উনাকে দেখালেন ঝোপের পাশে একটা মদের ভাঙ্গা বোতল ছিল ঐটা থেকে গন্ধ আসছে (আমার মনে হল এইটা ওদের একটা ফাঁদ, টাকা আদায় করার)।পরে ব্যাটাকে অনেক ভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করলাম, দেখেন আমারা আপনাদের দেশে মেহমান, আমাদের কাছে টাকা নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। পরে ৫০০ রুপিতে নামলেন, আমি বললাম দেখেন না টাকা ছাড়া ব্যাপারটা শেষ করা যায় কিনা। শেষে খাতায় ৩০০ লিখলেন, আমরা ২০০ দিয়ে বিদায় নিলাম।
হালিম ভাই ম্যাপ দেখে আমাকে রাস্তা বলে দিচ্ছিলেন আর আমি স্কুটারে চালকের আসনে। উদ্দেশ্য ছিল আঞ্জুনা বিচ কিন্তু উনি ভুল পথের কথা বলেছিলেন বলে আমরা চলে গিয়েছিলাম সানসেট পয়েন্টে। জায়গাটাতে বসে সূর্যাস্ত দেখতে ভালই লাগার কথা। কিন্তু আমরা চলে এসেছি ভুল সময়ে, আর আকাশের এই বিষণ্ণ অবস্থাতে আগামী ২-৩ দিন সূর্যের মুখ দেখতে পাব কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সময়টা নিজেদের মত করে কাটিয়ে আবার যাত্রা শুরু করালাম উদ্দেশ্য ভাগাটর বিচ।
১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ভাগাটর বিচে। বিচটা একদম চাপোড়া ফোরটের নিম্নভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। বিচের এক পাশে মাঝারী সাইজের কিছু পাথরে সমুদ্রের বড় বড় ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছিল সে এক দেখার মত দৃশ্য। এই বিচের বালিগুলো ৮০% কালো। একটা ব্যাপার প্রথম থেকেই লক্ষণীয় প্রায় সব বিচের পাশেই পর্যটকদের জন্য চেঞ্জ রুম আছে, আর ছোট-বড় বার। প্রায় ৩০ মিনিট ভাগাটর বিচ দর্শন শেষে পরবর্তী গন্তব্য চাপোড়া ফোরট।
হালিম ভাইয়ের দিক নির্দেশনায় ৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাই চাপোড়া ফোরটে। স্কুটার পার্কিং করে পায়ে হাটা শুরু। ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই ফোরটের উপর চলে আসলাম। উঠার সময় ভেজা আর ঝুরঝুরে মাটিতে হাটতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল। ভেবেছিলাম কোন টিকেট কাউন্টার আছে, কিন্তু ছিল না। হেটে একদম উত্তর প্রান্তে চলে গিয়েছিলাম, আর যা দেখলাম তা এক কথায় অসাধারন। একপাশে ভাগাটর বিচ আরেক পাশে মরিজম বিচ আর সামনে আরব সাগর। দেয়ালের একটা অংশ ভাঙ্গা ছিল বলে আমরা ফোরটের নিচে নেমে একদম সাগরের কাছাকাছি চলে গেলাম। ঐ অংশটায় আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। মনেমনে ভাবলাম এটা আমাদের দেশের কোন স্থান হলে নিশ্চিত কয়েক জোড়া এখানে বসে প্রেম করা অবস্থায় পাওয়া যেত। যাইহোক এমন নিরিবিলি একটা জায়গাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও আপনার মন ভরবে না। আকাশে যদি মেঘ না থাকতো তাহলে হয়তো সমুদ্রের এক অন্য রং ঐদিন দেখতে পেতাম। কিন্তু যা দেখলাম তা আমি হয়তো বর্ণনা করতে পারবো না কিন্তু সারাজীবন মনের গভীরে এক অন্য রকম ভাললাগার অনুভুতি সৃষ্টি করে গেল। জায়গাটা ছেড়ে একদমই আসতে মন চাচ্ছিল না, কিন্তু সময় কম তাই ফিরতে হল।
ফোরট থেকে বেরিয়ে নিচে এসে একটা ডাব খেয়ে তৃষ্ণা মিটালাম, দাম ৪০ রুপি করে। সবাই হালকা নাস্তা করে নিলাম নুডুলস দিয়ে, সারা ট্যুরের সবচাইতে স্বাদের খাবার ছিল মনে হয়। ৩ টা নুডুলসের দাম ১৮০ রুপি। পেট ঠাণ্ডা করে আবার রওনা নতুন বিচের উদ্দেশে, গন্তব্য মরিজম বিচ। চাপোড়া ফোরট থেকে মরিজম বিচ যদিও খুব কাছে দেখা যায় কিন্তু ঘুরে যেতে হবে ১২ কিমি। রাস্তার আশেপাশে মনে হচ্ছিল কোন এক গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টির কারনে কোন কোন রাস্তায় পানি উঠে গেছে, তার মধ্য দিয়েই অজানার উদ্দেশে ছুটে চলা।
২৫ মিনিটের মধ্যে আমরা মরিজম বিচে। বিচটা এককভাবে অনেক লম্বা, বাম পাশে সেই চাপোড়া ফোরট, যা কিনা কিছুক্ষণ আগে ঘুরে এলাম। স্কুটার নিয়ে বিচে যেতে চাইলে এক ভদ্রলোক যেতে বাধা দিলেন, অগত্যা হেটেই আমাদের বিচ ভ্রমন শুরু হল। একপাশে জেলেরা মাছ ধরছে জাল দিয়ে, সেখানে গিয়ে তাদের সাথে জাল টেনে আমাদেরও জেলে সাজার প্রাণপণ চেষ্টা। সাগর উত্তাল থাকায় তাদের জালে খুব বেশি মাছ উঠে নাই, তবে একটা স্কেট ফিশ আর রূপচাঁদা সহ আর ২-৩ মাছ ধরা পড়েছিল। স্কেট ফিশের লেজে একটা বিষাক্ত কাঁটা আছে যা যদি মানুশের কোন অংশে ঢুকে যায় আর সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয় তবে অঙ্গহানি হতে পারে। স্কেট ফিশের দাম ১২০০ রুপি চাইলো, কিন্তু রান্না করার জায়গা না থাকায় তা আর নেয়া হয় নাই। এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে লাইফ গার্ডদের ডেরার পাশে আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি থেমে গেলে আবার স্কুটার নিয়ে ছুটে চলা শুরু, এবারের গন্তব্য কোকো বিচ।
চলতে চলতে মনে হল আঞ্জুনা বিচ বাদ পড়ে গিয়েছে, কোকো বিচ যেহেতু নর্থ গোয়ার সর্ব দক্ষিনে তাই আঞ্জুনা বিচ ঘুরে তারপর কোকো বিচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। জিপিএস এর সহায়তায় ৫-৭ মিনিটেই আঞ্জুনা বিচে পৌঁছে গেলাম। বিচটার উত্তাল ঢেউয়ে দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ, পানিতে পা ভিজিয়ে আর স্কুটার নিয়ে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলে প্রায় ২০ মিনিট পরে কোকো বিচের দিকে যাত্রা শুরু করি। প্রায় ১ কিমি পরে মনে হলো আমি আমার হেলমেট ফেলে এসেছি, যতক্ষণে নিয়ে আসলাম ততক্ষণে বাকি সবাই ফুচকা খাচ্ছিল। ওদের দেখে আমি আর খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। গোয়াইন ফুচকাতে মিষ্টির পরিমান বেশি ছিল, তবে খেতে দারুন ছিল। ৩ প্লেটের দাম ৯০ রুপি।
কোকো বিচের দিকে যেতে যেতে স্কুটারের জন্য বাড়তি তৈল কিনে নিলাম আর খাবারের জন্য এক হোটেলে গেলাম। কিন্তু খাবার দিতে দেরি হবে আর অর্ডার নেওয়ার পর আবার দাম বাড়ানোতে সিদ্ধান্ত নিলাম এখন না খেয়ে আগে ঘুরে আসি নয়তো সময় পাওয়া যাবে না। কোকো বিচে পৌছাতে ৩০ মিনিটের বেশি লাগলো। আমার কাছে আহামরি মনে হয়নি বিচটা, মনে হল কোন একটা নদীর অংশ।
প্লান ছিল যাওয়ার সময় ফোরট এগোডা দেখে যাব, কিন্তু ২-১ জনের অসম্মতিতে আর যাওয়া হল না। সবাই হোটেলে ফিরার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু আমি আর হালিম ভাই একটু চালাকি করে ওদের সবাইকে ক্যান্ডলিম বিচে নিয়ে গেলাম। সারাদিন আর বৃষ্টি না হওয়ায় পানি পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। বিচের পরিবেশ, মানুষের ভিড়, আর সাগরের শুভ্র ফেনা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে যথেষ্ট। আমার দেখা সারাদিনের সবচাইতে সুন্দর বিচ ছিল এটা। মনে হচ্ছিল দিনের শুরুতে যদি এখানে আসতাম তাহলে হয়তো আর অন্য কোথাও জেতাম না। সন্ধ্যার একটু আগে এখন হোটেলে ফেরার পালা। স্কুটারের কাছে আসার আগেই অনুভব করলাম স্কুটারের চাবি আমার কাছে নেই, মনে হচ্ছিল জগতের সব বোঝা আমার উপর উঠিয়ে দিয়েছে কেউ। সবার কাছে জিজ্ঞাস করার পরেও যখন পেলাম না তখন আমার টেনশন চরমে। স্কুটারের কাছে গিয়ে দেখি চাবিটা স্কুটারে রেখেই আমি চলে গিয়েছি। তখন সকালের আলী ভাইয়ের সকালের কথাটা আমার মনে হল, যে গোয়াতে বাইক চুরি হয় না...
হোটেলে ফিরে সবাই ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের জন্য চলে গেলাম ডিনারে রূপচাঁদা, সবজি আর একটা কি মাছ যেন নিয়েছিলাম। ৬ জনের বিল ১৪২০ রুপি... খেয়ে দেয়ে হোটেলের সামনের বিচে বসে গভীর রাত পর্যন্ত বসে আড্ডা দিয়ে সময় কেটেছে।
৪র্থ দিনের খরচঃ
স্কুটার ভাড়া- ১৫০ রুপি (জনপ্রতি)
পার্কিং- ১৫ রুপি (জনপ্রতি)
সকালের নাস্তা- ১৩৫ রুপি (জনপ্রতি)
কফি, ডাব, নুডুলস, ফুচকা- ৭২ রুপি (জনপ্রতি)
জরিমানা- ৩৪ রুপি (জনপ্রতি)
ডিনার- ২৪৮ রুপি (পানি সহ জনপ্রতি)
মোট- ৬৫৪ রুপি জনপ্রতি
আগের ৩ দিনের খরচঃ ১৫৮৮ রুপি এবং ৮৯৫ টাকা
৪ দিনের মোট খরচঃ ২২৪২ রুপি এবং ৮৯৫ টাকা