আজ বাংলা নববর্ষ পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে, আমাদের প্রতিবেশী কলকাতায় পালিত হবে আগামীকাল। শুধু দুই বাংলায় নয়, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক এলাকায় ১৩-১৫ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নববর্ষ উদযাপিত হয়ে থাকে। এর একটি ঐতিহাসিক কারন রয়েছে। আর তা হচ্ছে খাজনা প্রথা, এবং ফসলের চাষ হতে সেই খাজনা প্রদান’কে কেন্দ্র করে। তার আগে আসুন দেখে নেই কোথায় কোথায় এই সময়ে নববর্ষ উৎসব পালিত হয়ঃ
• তামিলনাড়ু’র নববর্ষ উৎসব পুথান্দু (Puthandu) যা এপ্রিলের ১৩, ১৪ অথবা ১৫ তারিখে উদযাপিত হয়। কারন তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডারের চিতারাই (Chithrai ) মাসের প্রথম দিনে এই উৎসব হয়ে থাকে।
• পাঞ্চাবে তাদের নানকশাহি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল “ভাইশাখি (Vaisakhi)” উদযাপন করা হয়।
• নেপালে তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার “ভিক্রাম সামভাট (Vikram Samvat )” অনুযায়ী ১২-১৫ এপ্রিল এর যে কোন দিন ১লা বৈশাখ এ নববর্ষ উদযাপিত হয়।উল্লেখ্য যে, নেপালে আরেকটা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়, যা Nepal Era নামে পরিচিত, যা সরকারী নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়।
• আসামে এপ্রিলের ১৪-১৫ তারিখে রোঙ্গালি বিহু বা বোহাং বিহু (Rongali Bihu or Bohag Bihu) নামে নববর্ষ উৎসব হয়ে থাকে।
• কলকাতায় পহেলা বৈশাখ উৎসব পালিত হয় ১৫ এপ্রিলে। আর বাংলাদেশে উদযাপিত হয় ১৪ এপ্রিলে।
• উড়িষ্যাতে মাঘী সংক্রান্তি পালনের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপিত হয় ১৪ এপ্রিল।
• মনিপুরে “চৈরুবা” নামে নববর্ষ উৎসব পালিত হয়ে থাকে ১৪ এপ্রিলে।
• শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ নববর্ষ উদযাপিত হয় এপ্রিল মাসের ১৩ অথবা ১৪ এপ্রিল।
• কেরালা’র মালায়ালি নববর্ষ পালিত হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে, উৎসবের নাম ভিশু (Vishu)।
• এপ্রিলের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে কর্ণাটক এর নববর্ষ উৎসব পালিত হয়।
• মহারাষ্ট্রে “গুড়ী পার্বা (Gudi Padwa)” নামে নববর্ষ উদযাপিত হয়ে থাকে।
• মায়ানমারে ১৩-১৫ এপ্রিল “থিংগান (Thingyan )” নামে ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়ে, যা মূলত বর্ষবরণ উৎসব।
• একই ধরনের উৎসব হয়ে থাইল্যান্ডে যার নাম “সংক্রান (Songkran )”
• লাওসে এই উৎসবের নাম “পি মাই লাও (Pi Mai Lao )”
• এই উৎসব কম্বোডিয়াতে “চল চনাম থিমে (Chaul Chnam Thmey )” নামে পরিচিত।
• চায়নার ইউনান প্রদেশের দাই জনগোষ্ঠীর ট্র্যাডিশনাল নববর্ষ উৎসব পালিত হয় এই মধ্য এপ্রিলেই।
• কাশ্মীরের নববর্ষের নাম নাবরেহ, যা এপ্রিলের শুরুতে অথবা মার্চের শেষে পালিত হয়।
• আফগানিস্তানে “নওরোজ” নামে নববর্ষ উৎসব পালিত হয়ে ২১ মার্চ তারিখে।
এতগুলো নববর্ষ এটাই প্রমাণ করে যে, এপ্রিল মাস তথা বাংলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে অধিকাংশ এশিয় অঞ্চলে নববর্ষ পালিত হত। কারন ছিল, এখানকার আবহাওয়া এবং প্রকৃতি। ফসল পাকার পর কেটে ঘরে তুলে প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে করতে চৈত্র মাস এসে যেত এবং সেই সময়ে তৎকালীন প্রচলিত খাজনা প্রথা’র কর প্রদান করে বিগত বছরের হিসেব মেটানো হত এই সময়ে। ফলে বর্ষ শুরুর গণনার জন্য এই সময়টাই অত্র দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনপ্রিয় ছিল। সম্রাট আকবরের প্রচলিত অধুনা বাংলা নববর্ষ ক্যালেন্ডার একই কারনে বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আশা রাখি আগামী নববর্ষে নতুন কোন লেখা আপনাদের উপহার দিতে পারব। আগের দুটি বাংলা নববর্ষের লেখাঃ
বাংলা বর্ষ এবং বর্ষবরণ (একটি ইতিহাস ভিত্তিক পর্যালোচনা)
বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ এবং বর্তমান উদযাপন (সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা)
শুভ নববর্ষ, সুন্দর হোক আপনার আগামীর দিনগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪