somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ব্যর্থ বিপিএল! অথবা একটি “দেশীয় ত্রয়ী’র সফল ব্রান্ড” এর জয়।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





শেষ হল বিপিএল তথা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ২০১৯ এর আসর। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডাইনামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দ্বিতীয়বারের মত ট্রফি ঘরে তুলল। শেষ হল ব্যর্থ বিপিএল! অথবা সফল.... যাই হোক, আয়োজনের চাইতে মাঠে খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্স দিয়েই সফল হল এবারের আয়োজন। কিন্তু এই টুর্নামেন্ট কি আরও সফল হতে পারতো। কতটুকু ছিল আয়োজকদের সফলতা? মোটা দাগে অনেক প্রশ্নই ছিল এই আয়োজন ঘিরে... তারপরও এবারের সফলতা দেশীয় কোচ সালাহউদ্দিন এবং নতুন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস এর হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উঠে। আর এবারের আসরের আসল সফলতা এখানেই। ইমরুল ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে ব্যর্থ হলেও দলকে শিরোপা উঁচু করে ধরিয়েছেন ঠিকই। তাই সফল না বিফল এবারের আয়োজন আসুন একটু চোখ বুলিয়ে নেই বোকা মানুষের পর্যালোচনায়ঃ

শুরু করি সফলতার কথা বলেঃ

দেশীয় ত্রয়ী'র দেশীয় ব্রান্ডঃ কোচ সালাহউদ্দিন, অধিনায়ক ইমরুল কায়েস আর ব্যাটসম্যান কাম হেল্পিং হ্যান্ড অফ ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল এর ট্রিলজি এবারের বিপিএল এর কাপ তুলে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এর হাতে। কুমিল্লার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের প্রথম পাঁচ জনের চার জনই দেশীয় খেলোয়াড়; একমাত্র বিদেশী লুইস। বোলিং এ সেরা পাঁচের তিনজনই দেশীয় খেলোয়াড়। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল, উইকেট শিকারী মোহাম্মদ সফিউদ্দিন। প্রায় ৭৫% সফলতার সাথে ১৪ ম্যাচ খেলে ১০টি'তে জয়ী হয়ে এবারের আসরের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাই এবারের আসর ছিল সফল দেশীয় একটি ব্র্যান্ড এর জয়।

প্রি প্রোডাকশন প্রচারণাঃ নির্বাচনের ডামাডোলে চাপা পড়েছিল বিপিএল এর প্রচারণা, এমনটা বলা হলেও আসলেই কি তাই? দেশীয় ক্রিকেটের এই সর্বোচ্চ আয়োজন এর প্রচারণা প্রতিবারই শুরুর দিকে তেমন ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে না। প্রি-প্রোডাকশন এডভার্টাইজিং কিভাবে এবং কত জোরালোভাবে হয় “আইপিএল” এর তা ভারতের মিডিয়াতে চোখ রাখলেই দেখতে পারবেন। ২০১৪ সালের আইপিএল নির্বাচনের কারনে আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তারপরও তার জৌলুশ বা জনপ্রিয়তা এতটুকু কমে নাই। তাই আমাদের কর্তাব্যাক্তিদের “বিপিএল” শুরুর আগে প্রচারণায় আরও পেশাদারিত্ব আনতে হবে, আরও পেশাদারি মানসম্মত ফার্মকে দেয়া যেতে পারে এর প্রচারণার দায়িত্ব। এবারের এত সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিপিএল আসর দর্শক কম হওয়ার পেছনে আরেকটি কারন কিন্তু পোস্ট প্রোডাকশন প্রচারণাও অবশ্যই। তাই এই দিকে আগামীর আসরগুলোতে দৃষ্টি দেয়া উচিত।

দর্শক খরাঃ মোট ম্যাচের প্রায় সত্তর ভাগ এর বেশী ম্যাচ ছিল উত্তেজনায় ভরপুর অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা। পরতে পরতে বদলেছে ম্যাচের রূপ। কিন্তু মাঠে ছিল দর্শক উপস্থিতির খরা। মনে রাখতে হবে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের মূল চালক এর দর্শক, দর্শকপ্রিয়তার কারনেই অন্য দুই ফরম্যাটকে পিছনে ফেলে সর্বকনিষ্ঠ এই ফরম্যাট আজ পুরো ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করছে। তাই কিভাবে আরও বেশী দর্শক মাঠে আনতে হয় তা নিয়ে ভাবতে হবে আয়োজকদের। এর জন্য দায়ী ম্যাচ টাইম। ভারতে যেখানে বিকেলের দিকে প্রথম ম্যাচ শুরু করে পরের ম্যাচ শেষ হয় প্রায় রাত বারোটার কাছাকাছি সময়ে। কারন? একটাই, মানুষ যেন সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে মাঠে গিয়ে খেলা উপভোগ করতে পারে। দুপুর দেড়টায় খেলা শুরু হলে কিভাবে দর্শক মাঠে যাবে। অর্ধবেলা ছুটি নিলেও তো মাঠে যেতে যেতে প্রথম ম্যাচের অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে। তার উপর যদি খেলা হয় ঢাকায়, তাও মিরপুরে; যে এলাকায় মেট্রো রেলের নির্মানের জন্য শহরের সবচেয়ে স্থবিরতা বিরাজ করে যানবাহনের চলাচলে; তাহলে তো কথাই নেই।

টিকেট মূল্যঃ টিকেট এর প্রারম্ভিক মূল্য ২০০ টাকা থেকে শুরু। এটি আরেকটি সমস্যা। যেহেতু আপনি দুপুর থেকে খেলা শুরু করছেন; সেহেতু কর্মজীবি মানুষের চাইতে বেকার অথবা স্টুডেন্ট’দের হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে এই শিডিউল মিলিয়ে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারার। কিন্তু এদের পক্ষে ২০০ টাকা মূল্যে টিকেট কেটে খেলা দেখা অনেকটাই খরুচে হয়ে যায়। তাই স্টুডেন্টদের জন্য হাজার পাঁচেক টিকেট হলেও ১০০ টাকা মূল্যের রাখা উচিত; যা স্টুডেন্ট কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে বিক্রয়যোগ্য হবে। এর চাইতেও আরও অনেক ভাল উপায় থাকতে পারে; এগুলো ভেবে দেখার জন্য অনেক অভিজ্ঞ লোকবল নিশ্চয়ই রয়েছে আয়োজকদের মাঝে।

ভেন্যুঃ এবারের আয়োজনে ভেন্যু নিয়ে রয়েছে আমার চরম আপত্তি। সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় খেলা হয়েছে; ফলে এই তিন দলের খেলার অধিকাংশ রাখা হয়েছে তাদের নিজস্ব ভেন্যুতে; যা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। হয় আপনি হোম এন্ড এওয়ে সিস্টেমে খেলা ফেলুন, প্রতিটি দলের নিজস্ব ভেন্যুর ব্যবস্থা করুন; নইলে সাম্যতার ভিত্তিতে খেলা ফেলুন। যদিও সিলেট আর চট্টগ্রাম ভেন্যু সুবিধার কিছুই আদায় করতে পারে নাই এবারের টুর্ণামেন্টে।

অফিসিয়াল সাইটঃ সবচেয়ে হতাশ হয়েছি বিপিএল এর অফিশিয়াল ওয়েব সাইট না থাকায়। যদিও tigercricket.com.bd ছিল কিছুটা তথ্য উপাত্ত নিয়ে; কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে হয় নাই। তার চাইতে শতগুণ পেশাদারী তথ্যভান্ডার উপহার দিয়েছে espncrickinfo । তাদের এত বিশাল ওয়েবসাইট এর একটি সাব মেন্যুতে ছিল বিপিএল এর সকল তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কিত পাতাগুলো। আমাদের কি সেই সক্ষমতা নেই? অতি অবশ্যই আছে, নেই শুধু মননশীল চিন্তা আর উদ্যোগের অভাব। খুব বেশী মিস করেছি বিপিএল এর অফিশিয়াল একটি ওয়েব সাইট এর।

সম্প্রচার দৈন্যতাঃ গাজী টিভি আর মাছরাঙা টেলিভিশন ছিল সম্প্রচারে এবারের বিপিএল এর। পুরো বিপিএল এর ধারাভাষ্য, সম্প্রচার অনুষ্ঠান আর উপস্থাপক উপস্থাপিকা নিয়ে কথা বলতে গেলে একটি পোস্ট লিখতে হবে। প্রফেশনালিজম বলতে কিছুই কি ছিল তা প্রশ্ন রাখে। টস করতে গিয়ে টিম ক্যাপ্টেন এর নাম ভুলে যান উপস্থাপক; হাতে কাগজ নিয়ে উপস্থাপনা করতে থাকা উপস্থাপিকা তথ্য উপাত্ত দিতে থাকেন ভুলভাল... ব্লা ব্লা ব্লা... সবচেয়ে বিরক্তিকর এবং ভদ্রতা বহির্ভুত ছিল গ্যালারীতে থাকা দর্শকদের ব্যক্তিগত ক্লোজআপ ফুটেজ যেগুলোর বেশীরভাগই ছিল ভদ্রতা বহির্ভুত এবং আমার কাছে আপত্তিকর।

আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তঃ এবারের আসরে দেশী আম্পায়রদের পাশাপাশি বিদেশী আম্পায়রদের ভুলগুলোও খুব চোখে পড়েছে। সবচেয়ে অবাক হয়েছি টেকনোলজি নিয়ে বসে থাকা থার্ড আম্পায়ারদের অদ্ভুত ভুল দেখে। শুরুতে তো রিভিউ থাকলেও ছিল না আল্ট্রা এজ, নয়েজ ডিটেক্টর সহ আরও কিছু টেকনোলজি; যদিও তা দু’তিন ম্যাচ পরেই যুক্ত হয়েছিল। এরকম একটি টুর্নামেন্টের আয়োজনে কোয়ালিটি আম্পায়ারিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; এটাতে এক শতাংশ ছাড় দেয়ারও কোন সুযোগ নেই।

দেশীয় কোচঃ এবারের বিপিএল এ টম মুডি, ল্যান্স ক্লুজনার, ওয়াকার ইউনুস, জয়াবর্ধনে, সিমন হেলমট’দের বিপক্ষে দেশীয় কোচ ছিল মাত্র দুইজনঃ ঢাকা ডাইনামাইটস এর খালেদ মাহমুদ সুজন আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এর মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। সবাইকে চমকে দিয়ে এই দুই দলই কিন্তু খেলেছে ফাইনাল। ফাইনাল এর আগের দিন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, এখন যদি দেশীয় কোচদের কদর বাড়ে। তারা প্রমাণ করেছেন, দেশীয় কোচেরাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই বিদেশী হাই প্রোফাইল কোচদের চাইতে।

দেশীয় বোলারদের দাপটঃ এবারের বিপিল এর সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক ছিল দেশীয় বোলারদের জয়জয়কার। টুর্নামেন্টের শীর্ষ পাঁচ বোলারের তালিকার সবাই আমাদের দেশীয় বোলার! প্রথম দশজনের আটজনই দেশীয়। সাকিব, তাসকিন, মাশরাফি, রুবেল’দের পাশাপাশি সফিউদ্দিন, আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ’রা দাপটের সাথেই পুরো টুর্নামেন্টের বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের ঘাম ছুটিয়েছেন।

দেশীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতাঃ বোলারদের মত উজ্জ্বল ছিলেন না দেশীয় ব্যাটসম্যানরা। প্রায় পুরো টুর্নামেন্টে দাপট ছিল বিদেশী ব্যাটসম্যানদের। সেরা পাঁচ এ দেশীয় দুজনঃ তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম; যার মধ্যে ধারাবাহিক ছিলেন মুশফিক। তারপরও সাকিব, রনি তালুকদার, জুনায়েদ সিদ্দিক’রা ভালই করেছেন। শেষের দিকে সাব্বিরও কিছুটা রান পেয়েছেন যদিও, কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নাই। হতাশ করেছেন বিজয়, ইমরুল, লিটন দাস, মমিনুল’রা। আমাদের টি-টুয়েন্টি পারফরমেন্স বরাবর খারাপ কেন তা আরও একবার জানা গেল এই বিপিএল থেকে।

পুরানোদের উঠে আসাঃ এই বিপিএল ছিল বেশ কিছু পুরাতন খেলোয়াড়দের উঠে আসার আসর; বিশেষ করে তাসকিন, শফিউল, আরাফাত সানি’দের কথা না বললেই নয়। এর সাথে ফরহাদ রেজা, জুনায়েদ সিদ্দিক, অলক কাপালি, তাইজুল’রাও ভাল পারফর্ম করেছেন।

মেধার অপচয়ঃ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নাই লিটন, সাব্বির, নাসির, আশরাফুল, শাহাদা, শাহরিয়ার নাফিস’রা। এর মধ্যে আশরাফুল এর দুটি ম্যাচ দেখে হাসতে হাসতে শেষ। শেষ ম্যাচে পর পর দুটো সহজ ক্যাচ মিস করে ব্যাটিং এ ওপেনিং এ নেমে দুই বল খেলে শূন্য রানে আউট! মেধার কি অপচয়... মেধার সাথে ধৈর্য, স্থিরতা, একাগ্রতা সহ আরও অনেক ফ্যাক্টর লাগে সফল হতে হলে তা উনারা ভুলে গেছেন বোধহয়।

নতুন প্রতিভাঃ এবারের বিপিএল এ আলো ছড়িয়েছেন নতুন করে সফিউদ্দিন, আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ, রাব্বি, রনি তালুকদার, ইয়াসির আলি, আফিফ হোসেন’রা।

বিদেশী লাইন-আপ নির্ভরতাঃ বিদেশী ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে তরতর করে এগিয়ে যাওয়া রংপুর রাইডার্স কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে অতিরিক্ত এই বিদেশী ব্যাটিং লাইন আপ নির্ভরতার কারনেই। টপ অর্ডারের চারজনই বিদেশী রিক্রুট ছিল; টুর্নামেন্ট এর শেষের দিকে দুজন নিজ দেশে চলে গেলে ভেঙ্গে পড়ে তাদের ব্যাটিং লাইন আপ। যে রাইডি রুসু’র ব্যাটে ভর করে উড়ছিল রাইডার্স; সেকেন্ড কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে তার শূন্য রানে আউটে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে দলকে। তাই প্রতিটি দলের উচিত দেশী বিদেশী মিলিয়ে ভারসম্যপূর্ণ দল গঠন এবং অতি অবশ্যই দেশীয় প্লেয়ারে ফোকাস রাখা। মনে রাখতে হবে দীর্ঘ টুর্নামেন্টে যে কোন কারনে বিদেশী তারকা খেলোয়াড় চলে যেতেই পারে, কিন্তু দলে যেন তার প্রভাব অতি গুরুতর না হয়। সিলেট এর ওয়ার্নার চলে যাওয়া আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেই সত্যি বুঝিয়ে দিয়েছে।

ব্রান্ড নেমঃ ব্রান্ড ভ্যালু কি জিনিশ তার প্রমাণ ঢাকা ডাইনামাইটস। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন, আগের পাঁচ আসরের চারটি ফাইনাল খেলা ঢাকা ভারসম্যপূর্ণ একটি দল নিয়ে শুরু করেছিল ভালই। কিন্তু শেষের দিকে এসে পরপর পাঁচটি হারে যখন টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ছিটকে গিয়েছিল; সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা পুনরায় ফাইনালে। একেই বলে ব্র্যান্ড নেম। নামের ভারেই দল চাঙ্গা হয়ে যায়; প্রমাণ ঢাকা নিজেই। ম্যান বাই ম্যান কম্পেয়ার করে দেখলে আমার কাছে ঢাকার চাইতে চিটাগং, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী অনেক শক্তিশালী দল ছিল। কিন্তু এদের তিন দলকে পিছে ফেলে কুমিল্লার সাথে ফাইনালে কিন্তু ঢাকাই।

কোয়ালিট বিদেশী খেলোয়াড় এর ঘাটতিঃ সবশেষে বিদেশী খেলোয়াড় প্রসঙ্গে বলা। কেন জানি বিপিএল এ খুব বেশী কোয়ালিটি বিদেশী খেলোয়াড় দেখা যায় না। আর যাদের যায়, তাদের প্রায় বেশীর ভাগই অবসরে অথবা দলের বাইরে। মাঝারি মানের খেলোয়াড়ই বেশী। বর্তমানে খেলতে থাকা বিশ্বমানের খেলোয়াড় এর সমাহার কেন ঘটে না বিপিএল এ? জানা নেই। উদ্যোগ এর সাথে বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা অথবা কুটনৈতিক দুর্বলতা? কোনটার কারনে এমনটা হয়েছে জানা নেই। তবে দর্শক হিসেবে আমরা চাইবো বর্তমান সময়ের তারকা খেলোয়াড়দের দেখতে। থারাঙ্গা, বোপারা, আফ্রিদি, ওয়াহাব রিয়াজ, শোয়েব মালিক, ডেসকাট, শেহজাদ দের চাইতে অনেক বেশী কোয়ালিটি সম্পন্ন বর্তমানে খেলা খেলোয়াড়দের হাজির করার উদ্যোগ দেখতে চাই আগামী আয়োজনে।
সবশেষে বলি, কেমন হল এবারের আয়োজন? আমি বলব, খেলার প্রেক্ষিতে নব্বইভাগ সফল, উত্তেজনায় ভরপুর ছিল বেশীরভাগ খেলাই। পয়েন্ট টেবিলে ওঠানামা, শেষের দিকের নাটকীয়তা সহ এমনকি আজকের ফাইনাল... আমি তো ১০০ তে ৯০ দিব। আয়োজনে ৬০ শতাংশ পেতে পারে বিসিবি। খেলোয়াড়দের কারনে সফলতার মুখ দেখলো এই আয়োজন।

আসুন দেখি কিছু তথ্য কনিকাঃ

চ্যাম্পিয়নঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

রানার্সআপঃ ঢাকা ডাইনামাইটস

ম্যান অব দ্যা ফাইনালঃ তামিম ইকবাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)

ম্যান অব দ্যা সিরিজঃ সাকিব আল হাসান (ঢাকা ডাইনামাইটস)


দলীয় পারফরমেন্সঃ
১। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স – ১৪ ম্যাচে ১০টি জয় (চ্যাম্পিয়ন)
২। ঢাকা ডাইনামাইটস – ১৫ ম্যাচে ০৮টি জয় (রানার্সআপ)
৩। রংপুর রাইডার্স – ১৪ ম্যাচে ০৮টি জয়
৪। চিটাগং ভাইকিংস – ১৩ ম্যাচে ০৮টি জয়
৫। রাজশাহী কিংস – ১২ ম্যাচে ০৬টি জয়
৬। সিলেট সিক্সার্স – ১২ ম্যাচে ০৫টি জয়
০৭। খুলনা টাইটানস – ১২ ম্যাচে ০২ জয়।

সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকঃ
১। রাইডি রুসো (রংপুর রাইডার্স) ১৪ ম্যাচে ৫৫৮ রান
২। তামিম ইকবাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ১৪ ম্যাচে ৪৬৭ রান
৩। মুশফিকুর রহিম (চিটাগাং ভাইকিংস) ১৩ ম্যাচে ৪২৬ রান
৪। নিকোলাস পুরান (সিলেট সিক্সার্স) ১১ ম্যাচে ৩৭৯ রান
৫। এলজে ইভান্স (রাজশাহী কিংস) ১১ ম্যাচে ৩৩৯ রান

সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীঃ
১। সাকিব আল হাসান (ঢাকা ডাইনামাইটস) ১৫ ম্যাচে ২৩ উইকেট
২। তাসকিন আহমেদ (সিলেট সিক্সার্স) ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট
৩। মাশরাফি বিন মুর্তজা (রংপুর রাইডার্স) ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট
৪। রুবেল হোসেন (ঢাকা ডাইনামাইটস) ১৫ ম্যাচে ২২ উইকেট
৫। মোহাম্মদ সফিউদ্দিন (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ১৩ ম্যাচে ২০ উইকেট।

সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকিয়েছেনঃ
১। নিকোলাস পুরান (সিলেট সিক্সার্স) ১১ ম্যচে ২৮টি
২। আন্দ্রে রাসেল (ঢাকা ডাইনামাইটস) ১৫ ম্যাচে ২৮টি
৩। রাইডি রুসো (রংপুর রাইডার্স) ১৪ ম্যাচে ২৪টি
৪। তামিম ইকবাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ১৪ ম্যাচে ২৩টি
৫। মুশফিকুর রহিম (চিটাগং ভাইকিংস) ১৩ ম্যাচে ১৮টি

সর্বোচ্চ ইনিংসঃ
১। তামিম ইকবাল (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) ঢাকা ডাইনামাইটসের বিপক্ষে ৬১ বলে ১৪১ রান
২। এভিন লুইস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ৪৯ বলে ১০৯ রান (অপরাজিত)
৩। এলজে ইভান্স (রাজশাহী কিংস) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এর বিপক্ষে ৬২ বলে ১০৪ রান (অপরাজিত)
৪। রাইডি রুসো (রংপুর রাইডার্স) চিটাগাং ভাইকিংস এর বিপক্ষে ৫১ বলে ১০০ রান (অপরাজিত)
৫। এবি ডি ভিলিয়ার্স (রংপুর রাইডার্স) ঢাকা ডাইনামাইটস এর বিপক্ষে ৫০ বলে ১০০ রান (অপরাজিত)
৬। এন্ডু হলস (রংপুর রাইডার্স) চিটাগাং ভাইকিংস এর বিপক্ষে ৪৮ বলে ১০০ রান

অন্যান্য তথ্য কনিকাঃ এবারের টুর্নামেন্টে মোট ১৭ বার একজন বোলার এক ইনিংসে ০৪টি করে উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের তাসকিন আহমেদ আর ঢাকার রুবেল হোসেন দুইবার করে ইনিংসে চার উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া শহীদ আফ্রিদি, সুনীল নারায়ণ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাঈম হাসান এবং মাশরাফি মুর্তজা সবচেয়ে ইকোনমি বোলার ছিলেন কমপক্ষে দশটি করে ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে। পেরারা, পুরান, শফিউল, আন্দ্রে রাসেল, রাইডি রুসো ছিলেন সবচেয়ে বেশী স্ট্রাইক রেটের ব্যাটসম্যান কমপক্ষে দশটি করে ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তামিম ইকবাল ১১ টি ফাইনালে ঢাকার বিপক্ষে। উইকেট রক্ষকদের মধ্যে ঢাকার নুরুল হাসান এর ১৫ ম্যাচে ১৫টি ক্যাচ এবং ০৪টি স্ট্যাম্পিং এ মোট ডিসমিসাল ১৯টি। সিলেটের আফিফ হোসেন এবং সাব্বির রহমান ১২ ম্যাচে ০৯টি করে ক্যাচ ধরেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×