somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষবেলার মুগ্ধতা!!! ((দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - শেষ পর্ব))

২৯ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ বর্ষাবেলায় কালিম্পং!!! (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ১২)

কালিম্পং এর ডেলো ভিউ পয়েন্ট সংলগ্ন সায়েন্স সিটি থেকে আমরা রওনা হলাম আমাদের কালিম্পং এর ডেরা, রিশি রোডের সাড়ে আটমাইল এলাকার হোটেল মনার্চ এর উদ্দেশ্যে। চমৎকার একটা হোটেল, এই হোটেলে বসেই দুই'তিন দিন অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায়। হোটেল রুমের জানালা খুললে (৬ ফুট উঁচু বিশাল লম্বা সাইজের টানা জানালা) সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, নীচে বয়ে চলা প্রমত্ত তিস্তা, একপাশে পাহাড়ের মাঝে খোদাই করা কালিম্পং শহর। এক সম্পুর্ন অপার্থিব জগত.... তার মাঝে আমাদের ছোট্ট ভ্রমণ দল আগত মিষ্টি একটা বিকেল, মধুর সন্ধ্যা আর মায়াময় রাতের ডালির মুখোমুখি.....!!!



















বর্তমানে হোটেলটি OYO এর অধীনে রয়েছে, OYO27940 Monarch Hotel নামে। হোটেলে চেকইন করার আগে গেলাম “পাইন ভিউ নার্সারী” নামে পাহারের ঢালের ঠিক উপরে চমৎকার একটি ক্যাকটাস গার্ডেন কাম নার্সারী দেখতে। নানান প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন নানান ক্যাকটাসের অপূর্ব সমাহার। এখানে বেশ চমৎকার আবহাওয়ার মাঝে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে সবশেষে দুপুর দুটার পর আমরা চেকইন করলাম হোটেল "Hotel Monarch" এ।






হোটেলে চেকইন করে চারিপাশের ভিউ দেখার পর সবাই সত্যি মুগ্ধ ছিলাম আমরা। দুপুরের লাঞ্চ করে রেস্টুরেন্টের ব্যালকনিতে বসে রইলাম অনেকটা সময়, কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ আড্ডায়, কেউ শুধু প্রকৃতির রূপসূধা পাণে। এই দার্জিলিং ট্রিপে খারাপের মধ্যে অন্যতম ছিলো খাবার দাবার। আগে থেকে ফুল বোর্ড প্যাকেজ বুক করেছিলাম, মেন্যুতে ছিল যে পরিমাণ খাবার, আমি ইন্ডিয়ার কোন ট্রিপে এমন খাবার পাই নাই। দুপুরের মেন্যুতে ছিলো কয়েকটা আলু ভাঁজা, একটা সেদ্ধ ডিমের তরকারী আলু দিয়ে, সাথে ভাত আর পাঁপড় ভাঁজা!!! যাই হোক, খাবারের অসন্তোষ পুষিয়ে দিলো হোটেলের চারিপাশে থাকা চমৎকার ন্যাচারাল ভিউ।









লাঞ্চ শেষে নিজেদের রুমে হালকা বিশ্রাম নিয়ে বিকেল চারটার পরে আমরা হোটেল হতে বের হয়ে শপিং এর উদ্দেশ্যে মার্কেট এলাকায় চলে এলাম। আমাদের হোটেল ছিল যে এলাকায়, সেটার নাম সাড়ে আট মাইল। সেখান থেকে মাইক্রো বাস করে মিনিট দশেকের মধ্যে চলে এলাম কালিম্পং মার্কেট এলাকায়। নিজেদের মত করে মার্কেট এলাকায় ঘোরাঘুরি আর কেনাকাটা করে আমরা শেষ বিকেলের পরে গোধূলি লগনে ফিরে এলাম হোটেলে।







সম্মুখের করিডোরে বসে দিগন্ত রেখায় বিস্তৃত পাহাড়ের ভাজে ভাজে মেঘেদের খেলা দেখার ফাঁকে কাটল বেলা। আলো হারিয়ে গেল কালের নদীতে, পাহাড়ে বুকে তখন ফূটে উঠল হাজারো আলোর জোনাক পোকা হয়ে দুরের বাড়িঘরে জ্বলে থাকা বাতিগুলো। সাথে আকাশে মেঘের হুটোপুটি ভেদ করে সত্যিকারের তারাদের ইতিউতি উকি দেয়া। এই প্রকৃতির মাঝে চলল আড্ডা, চা পাণ সাথে মিষ্টি খাওয়া।









রাত সাড়ে নয়টার পরে রাতের খাবার শেষে আরো বেশ কিছুটা সময় সেখানে বসে রইলাম, এক এক করে রুমে ফিরে এসে ফের সেই রুমের লাগোয়া ব্যালকনিতে বসে আড্ডা আর গান শোনা চলল ঘন্টা দুয়েক আরো। আমি রাত সাড়ে এগারোটার পরে রুমে গিয়ে ঘন্টা দুয়েক বৃথা ঘুমের চেষ্টা করে ফের ঐ ব্যালকনিতে গিয়ে বসে পড়লাম, কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গভীর রজনীর নেশা ধরানো বিসন্ন প্রকৃতির অদ্ভুত রুপ... একে একে কমে গেল পাহাড়ের বুকের আলোকবিন্দু সব, মেঘে ঢেকে গেল সম্মুখের পাহাড়ের সারি, প্লে লিস্টে থাকা গানগুলোও কোন ফাঁকে ফুরিয়ে এল, ভোররাতে ঘোর লাগা মন নিয়ে রুম ফিরে গেলাম, বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে। গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম একসময়, তাও অল্প সময়ের জন্য।









সাতটা নাগাদ ঘুম ভেংগে গেল, কিন্তু এদিন কিছু করা নেই আমাদের শিডিউলে, ফলে বিছানায় গড়াগড়ি করে সময় কাটল। নয়টার পর বিছানা ছেড়ে বের হয়ে দেখি সবাই কমবেশি রেডি। দশটা নাগাদ নাস্তা করে নিজেদের মত করে সবাই সময় কাটালাম, বারোটা নাগাদ হোটেল হতে চেক আউট করে অপেক্ষায় রইলাম গাড়ীর, যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত সমস্যার কারনে আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়ী পরিবর্তন হয়েছে। অন্য আরকটি গাড়ী পাঠানো হয়েছে আমাদের ফিরতি যাত্রার জন্য। সেই গাড়ী প্রায় দুই ঘন্টা দেরী করে পৌঁছানোর পর তাতে চেপে বসে আমরা যখন নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম, তখন ঘড়িতে দুপুর দেড়টা বাজে...







শেষ বিকেলে নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে এসে ব্যাগপত্তর রেখে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে কাটালাম অনেকটা সময়। যে কোন ট্রিপেই ফিরতি যাত্রার সময় অদ্ভুত একটা আলস্য চেপে বসে, মনটা কিছুটা বিষন্ন হয়ে ওঠে, আবার সেই গৎবাঁধা একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে ফিরে যাওয়া!!! রাতের ট্রেনে চেপে ফিরতি যাত্রা কলকাতার উদ্দেশ্যে। আমাদের সকলের ভিসা করা ছিলো বেনাপোল বর্ডার দিয়ে, আর তাই এই দীর্ঘ ঘোরা পথে যাত্রা। ঈদের সময়ে হওয়ার দার্জিলিং মেইলের এসি টিকেট পাওয়া যায় নাই, যাওয়া আসা দুই পথেই ছিলো নন এসি স্লিপার ট্রেনের টিকেট। গরমে সেদ্ধ হয়ে, কেউ কেউ সারা রাত জেগে বসে থেকে ভোর বেলা বিধ্বস্ত হয়ে শিয়ালদহ পৌঁছে ট্যাক্সিযোগে চলে এলাম মারকিউস স্ট্রিট, এখান থেকে দশটার বাস, WBTC’র বাস, ঢাকা হয়ে আগরতলা যাবে।









মারকিউস স্ট্রিট পৌঁছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটা হোটেল দরকার, ঈদের সিজনে সেই সাত সকালে ভাল কোন হোটেল পেলাম না। অবশেষে হোটেল সম্রাট এ আমাদের তিনটি রুম দেয়া হল, সেখানে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সকালের নাস্তা শেষে চেপে বসলাম বাসে। দিনের বেলা বাসে কলকাতা থেকে বেনাপল হয়ে ঢাকার যাত্রা খুবই ক্লান্তিকর এবং তারচেয়ে বেশী বিরক্তিকর। বাসে আমাদের সিট ছিলো সামনের দিকে, দেখলাম ড্রাইভারের পেছনে একজন শিখ ভদ্রলোক বসে আছেন একটা সিঙ্গেল সিটে। সুপারভাইজারকে জিজ্ঞাস করে জানা গেল উনিও ড্রাইভার। যেহেতু কলকাতা থেকে আগরতলা লম্বা পথের জার্নি, তাই অর্ধেক পথ একজন ড্রাইভ করবে, পরবর্তীতে ড্রাইভার চেঞ্জ হয়ে অন্যজন গাড়ী চালিয়ে নিয়ে যাবে। আমি আগে কখনো এরকম দেখি নাই, পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল অনেক লম্বা পথের জার্নি অনেক বাসেই এরকম থাকে।

রাত প্রায় বারোটার দিকে ১৪ ঘন্টার জার্নি শেষে ঢাকায় ফেরার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছিলো সেবারের আট দিনের সংক্ষিপ্ত কিন্তু ঘটনাবহুল ভারত ভ্রমণের পর্ব।

ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬

এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
মিরিকের জলে কায়ার ছায়া (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৪)
কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৫)
ঘুম মনেস্ট্রি হয়ে রক গার্ডেন (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৬)
দার্জিলিং পিস প্যাগোডা ভ্রমণ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৭)
দার্জিলিং জু (পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক) ভ্রমণ - (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৮)
মাউন্টেনিয়ারিং ইনিস্টিটিউট এবং অন্যান্য (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৯)
"লামাহাট্টা" হয়ে "রাংগপো" (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ১০)
লোলেগাও এ কাঞ্চনজঙ্ঘা’র দেখা!!! (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ১১)
বর্ষাবেলায় কালিম্পং!!! (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ১২)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×