somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দার্জিলিং জু (পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক) ভ্রমণ - (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৮)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ দার্জিলিং পিস প্যাগোডা ভ্রমণ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৭)

পিস প্যাগোডা চত্বরে এতো বেশী মেঘ, কুয়াশা থাকায় আমরা বেশীক্ষণ সময় এখানে না থেকে রওনা হলাম পরবর্তী গন্তব্য দার্জলিং চিড়িয়াখানার দিকে। আমাদের দলে ছিলেন একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের প্রফেসর স্যার, উনার জন্য এদিনের অনেকগুলো স্থান ভ্রমণের তালিকায় সবচাইতে বেশী সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো এই চিড়িয়াখানা’র জন্য। স্যার তার মত করে ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে ছবি তুলছিলেন, আর আমরা বাকীরা আমাদের মত করে ঘুরে বেড়ালাম। সবাইকে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হলো, এর মধ্যে চিড়িয়াখানা দেখে আমরা দেখবো “হিমালায়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনিস্টিটিউট”ও, কেননা একই কমপ্লেক্স এ দুটিরই অবস্থান। দুটি দেখা শেষ হলে আমরা সবাই নির্ধারিত সময়ে চলে আসবো প্রবেশমুখে।



দার্জিলিং চিড়িয়াখানা’র অফিসিয়াল নাম “পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক”। প্রায় সত্তর একর জমির উপর এই চিড়িয়াখানা সমুদ্রসমতল হতে প্রায় সাত হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। চিড়িয়াখানাটি ১৯৫৮ সালের ১৪ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা বিভাগের অধীনে দার্জিলিং শহরের পার্শ্ববর্তী বার্চ হিলে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালেই তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্কটিতে ভ্রমণ করেন এবং এর নতুন নামকরণ করেন “পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক”; যা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম (ভারতীয়) নির্বাচিত মহিলা সভাপতি, স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ‘সরোজিনী নাইডু’র মেয়ে ‘পদ্মাজা নাইডু’ এর নাম অনুসারে যিনি তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।


============================Himalayan Goral============================


============================Asian Black Bear============================


====================Markhor – National Animal of Pakistan===================


============================Leopard============================

হিমালয় অঞ্চলের প্রাণীকূলের বিভিন্ন প্রজাতিকে বিপন্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে তাদের নিয়ে গবেষণা এবং সংরক্ষণ এর নিমিত্তে এই চিড়িয়াখানার গোড়াপত্তন হয়েছিলো যার উদ্দেশ্য ছিলো একটা জুওলজিক্যাল পার্ক গড়ে তোলা। পরবর্তী সময়ে হিমালয় অঞ্চলের প্রাণী সংরক্ষনাগার হিসাবে চিড়িয়াখানাটি ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছে। পাহাড়ি প্রজাতির নানান প্রাণীর প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে স্নো লেপার্ড, হিমালয় অঞ্চলের বিপন্ন প্রজাতির নেকড়ে এবং লাল পান্ডা প্রভৃতি প্রাণীর সফল কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো হয়েছে। এখানে নানান বিপন্ন প্রজাতির পাহাড়ি প্রাণী রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্নো লেপার্ড, লাল পান্ডা, সাইবেরিয়ান বাঘ, হিমালয়ের স্যালামাণ্ডার, তিব্বতীয় নেকড়ে, গোরাল (এক ধরনের পাহাড়ি ছাগল) ইত্যাদি।


============================Black Leopard============================


============================Sambar Deer============================


============================Yak============================


============================Himalayan Wolf============================

চিড়িয়াখান্য ঘুরে বেড়ানোর সময়ই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো, যদিও আমরা নাস্তা শেষে হোটেল হতে বের হওয়ার সময় ছাতা নিয়েই বের হয়েছিলাম, তাই রক্ষে। আমরা নানান প্রাণীর দেখা পাওয়ার পাশাপাশি স্নেক গার্ডেন অংশ দেখে চমৎকৃত হলাম, দেশী বিদেশী নানান ধরণের সাপের মেলা; যদিও যাদের সাপ নিয়ে ফোবিয়া আছে তাদের জন্য “ওহ নো”…। আমার পরিচিত একজন’কে দেখেছি সাপের নাম শুনলেও তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়!!! এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিত যার মধ্যে কোন কোনটির বয়স শ’ পেড়িয়েছে অনেক আগে। এখানে শতবর্ষী ওক গাছ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে পঞ্চাশ এর বেশী প্রজাতির অর্কিড। পাখির জন্য রয়েছে আলাদা জোন যেখানে দেখা মিলবে ব্লু গোল্ড ম্যাকাও, রেড আইড কুকু, বিভিন্ন ধরণের প্যারাকিট, গ্রে পিকক, হিমালায়ান মোনাল প্রভৃতির। বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর কথাতো আগেই বলেছি, এছাড়াও এখানে দেখা মিললো এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ার, ইন্ডিয়ান টাইগার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ব্ল্যাক প্যান্থার, লেপার্ড ক্যাট, তিব্বতীয়ান উল্ফ, ইয়াক, নীল গাই, হিমালায়ান পাম সিভেট, স্নো লরিস সহ আরও অনেক অনেক প্রাণীর। ২০১৪ সালে এই চিড়িয়াখানা সারা বিশ্বের প্রায় তিন শতাধিক চিড়িয়াখানার মধ্যে থেকে ‘দ্যা আর্থ হিরো’ সম্মাননা অর্জন করে আলোচনার পাতায় স্থান করে নেয়।


============================Blue Sheep============================


============================Snow Leopard============================


============================Red Panda============================

চিড়িয়াখানে দেখা শেষ করে আমরা চলে এলাম “হিমালায়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনিস্টিটিউট” এর গেটে। ছোট ছোট দলে নিজেরা এখানে ঢুঁকে পড়লাম।

ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬

এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
মিরিকের জলে কায়ার ছায়া (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৪)
কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৫)
ঘুম মনেস্ট্রি হয়ে রক গার্ডেন (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৬)
দার্জিলিং পিস প্যাগোডা ভ্রমণ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৭)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×