somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকার মিষ্টি!!!

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমানে টিকে থাকা ঢাকার মিষ্টির দোকানগুলোর মধ্যে সবচাইতে পুরাতন মিষ্টির দোকান হল “আলাউদ্দিন সুইটমিট”। আলাউদ্দিন হালওয়াই নামক এক ব্যক্তি ভারতের লখনোউ থেকে পুরান ঢাকার চকবাজারে এসে ১৮৬৪ সালে গোড়াপত্তন করেন এই মিষ্টির দোকানের। ১৮৬৪ সালে তিনি লখনোউ থেকে ঢাকার চকবাজারে এসে একটি মিষ্টির দোকান খুলেন এবং পরবর্তীতে তার এই মিষ্টান্ন ব্যবসা সফলতা লাভ করার পরে আলাউদ্দিন তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সেই সূত্রধরেই ১৮৯৪ সালে তিনি দোকানটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন "আলাউদ্দিন সুইটমিট"। অনেক ইতিহাসবেত্তার মতে আধুনিক ঢাকার মিষ্টির আদি কারিগর এই আলাউদ্দিন হালওয়াই যার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় আধুনিক ঢাকার মিষ্টির জগতের এক শতকের বেশী সময়ের যাত্রা। চার প্রজন্মের বেশী সময় ধরে তারা সুনামের সাথে করে যাচ্ছে এই মিষ্টান্নের ব্যবসাটি। বর্তমানে চকবাজারে দুটি শাখা সহ ঢাকার নিউ মার্কেট, গ্রিন রোড, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী, বিমানবন্দর, চানখাঁরপুল, মহাখালী, সিক্কাটুলী, নবাবপুর, নারিন্দা, কদমতলি এবং নয়াবাজার এ রয়েছে তাদের দোকানের শাখা। দেশের বাইরে জ্যাকসন হাইটস, নিউ ইয়র্ক, ব্রিকলেন, লন্ডন, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভারতে রয়েছে তাদের শাখা। যদিও তাদের মিষ্টির সেই আদি স্বাদ আর সুনাম এখন অনেকটাই হারিয়েছে, হারিয়েছে জৌলুশ। মাঝে ২০০৫-২০০৯ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ ছিলো তাদের এই আদি ব্যবসাটি, যা ২০০৯ হতে চতুর্থ প্রজন্মের সদস্যদের দ্বারা আবার পুনরায় যাত্রা শুরু করে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আলাউদ্দিনের মিষ্টির চাইতে চকবাজারের বোম্বের মিষ্টি বেশী পছন্দ করি। বকশীবাজার হয়ে উর্দুরোড দিয়ে চকবাজারে ঢুকতেই যে চাররাস্তার মোড়ের জটলা, সেখান থেকে “চকবাজার শাহী মসজিদ” এর রাস্তার শুরুতে হাতের বাম দিকে পেয়ে যাবেন এই দোকানটি। পঞ্চাশ বছরের বেশী সময় ধরে ব্যবসা করে আসা এই দোকানের মিষ্টির মূল বৈশিষ্ট্য হল দিনে তৈরী হয়ে দিনে শেষ হয়ে যাওয়া; বিশেষ করে এখানকার কাঁচা ছানা সারা ঢাকা শহরের মধ্যে সেরা, সব সময় তা পাওয়াও যায় না। তবে আলাউদ্দিন এবং তারপর বোম্বে সুইটস এর হাত ধরে র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো স্পেশাল মিষ্টির বক্স এর যাত্রা, যা পুরাতন ঢাকায় বিয়ে, সুন্নতে খাতনা সহ নানান অনুষ্ঠানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলো সত্তর-আশির দশক থেকে। এখনো এই বক্সগুলো পাওয়া যায়, তবে আগের মত জনপ্রিয় নয়। একটা বক্সে আট পিস ভিন্ন ভিন্ন পদের ঢাউস সাইজের মিষ্টি থাকতো এসব বক্সে।

আলাউদ্দিন, বোম্বে সুইটস এর গল্প থামিয়ে রেখে ঢাকা শহরের আরেক বিখ্যাত মিষ্টি ত্রয়ী “মরণ চাঁদ”, “মহন চাঁদ” এবং “যাদব ঘোষ” এর কথা বলা যাক। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকেই ঢাকা শহরের মিষ্টির ব্যবসায় অবদান রাখতে শুরু করে এই তিন হিন্দু ময়রাদের মিষ্টির দোকান। আলাউদ্দিন হালওয়াই এর মুসলিম ঘরনার মিষ্টান্নের পাশে দাপটের সাথে ব্যবসা জমিয়ে বসে ঢাকা শহরে এই তিনটি মিষ্টির ব্র্যান্ড। এর মধ্যে তিন পুরুষের বেশী সময় অতিবাহিত করে ১৪৫ বছরের পুরাতন মিষ্টান্ন ভান্ডার “মরণ চাঁদ” থেকে হয়েছে "মরণ চাঁদ গ্রান্ড সন্স”। একই ঘটনা ঘটেছে বাকী দুই মিষ্টির দোকানের ক্ষেত্রেও, প্রজন্মান্তরে তারাও আজ “মহন চাঁদ গ্রান্ড সন্স” এবং “যাদব ঘোষ এন্ড গ্রান্ড সন্স”। এদের তিনজনের মিষ্টিই ঢাকাবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে ফেলে আসা দিনে। যদিও অধুনা নানান নতুন ব্র্যান্ড এর ভীড়ে এদের অতীতের জৌলুশ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে, কিন্তু ঢাকার আদি বাসিন্দারা আজও কদর করে এই তিন দোকানের মিষ্টির। বিশেষ করে “মরণ চাঁদ” এর কদর রয়েছে ঢাকার অনেক পুরাতন বাসিন্দাদের কাছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রিয় মহন চাঁদ এর দই, ভীষণ প্রিয়।

এদের বাইরে মুন্সিগঞ্জ ভিত্তিক দুই মিষ্টির দোকান “ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডার” এবং “বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার” রয়েছে ঢাকাবাসীর পছন্দের তালিকায়। যদিও মূল ভাগ্যকূল বাজারে বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং বিখ্যাত মিষ্টির দোকান রয়েছে যাদের মধ্যে “গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডার” ও “চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডার”। ভাগ্যকুল এবং বিক্রমপুর মিষ্টান্ন’র মিষ্টিও স্বাদে-গুণে কোন অংশেই অন্যদের থেকে পিছিয়ে ছিলো না, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এদের মান কিছুটা পরতির দিকে। সরাসরি বিক্রমপুর এর আদি সোর্স হতে সরে গিয়ে ঢাকায় নিজেরা তৈরী পর্যন্ত ঠিক ছিলো, কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তারা থার্ড পার্টি থেকেও সোর্সিং করে থাকে।

এদের বাইরে পুরাতন ঢাকায় বেশ কিছু স্থানীয় ৫০ বছরের কম-বেশী বয়সী পুরাতন মিষ্টান্নর দোকান রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে খুবই জনপ্রিয়। পাটুয়াটুলির “দিল্লি সুইটস”, লালবাগের “মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডার”, নর্থ-সাউথ রোডের “মাজহার সুইটস”, নবাবগঞ্জ-হাজারীবাগ এলাকার “কায়সার সুইটমিট”, সাতরওজা আবুল হাসনাত রোডের “দয়াল ভান্ডার”, নারিন্দার “তানয়ীমস সুইটমিট”, নবাবপুরের গ্রিন সুইটমিট, গেন্ডারিয়ার “সোনামিয়ার মিষ্টি”, মিরপুরের “মুসলিম সুইটস” এর মত মিষ্টির দোকানগুলো।

অধুনা জনপ্রিয় হয়েছে যে সকল দোকানগুলো তার মধ্যে চট্টগ্রামের “বনফুল”, জেমকন গ্রুপের “মীনা সুইটস”, “প্রিমিয়াম সুইটস”, “রস”, “খাজানা”, “মিঠাই” সহ নানান উচ্চমূল্যের এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন মিষ্টির দোকানগুলোর। স্বাদে এবং আঙ্গিকে ভিন্নতা নিয়ে শতবর্ষের অধিক সময় ধরে ঢাকার মিষ্টি রসনা বিলাস মিটিয়েছে হাজারো ভোজন রসিকদের। আগামীতে ঢাকার বেকারী এবং কনফেকশনারি নিয়ে লেখা থাকছে আমার ব্লগে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×