somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিয়েল স্টুডেন্ট, ভেজাল স্টুডেন্ট এবং অন্যান্য গল্প!

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত এক দশক সময়ে কাজ, পড়াশোনার পরে আমার নিজস্ব সময় বলতে যেটুকু ছিল, তার বেশির ভাগ ব্যয় করেছি বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের বিদেশগমনে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করায় - সেটা লিখালিখির মাধ্যমে কিংবা ইউটিউবে ভিডিও বানানোর মাধ্যমে কিংবা ব্যাক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে। আমি সবসময় চেয়েছি সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার। কারণ আমি মনে করি,সঠিক তথ্যের অভাব কিংবা তথ্যগত ভ্রান্তির কারণে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রির পুরা প্লানটাই ভেস্তে যায় এবং তারা উদ্ভ্রান্তের মত ছুটাছুটি করতে থাকে। আর প্লান ছাড়া এসব সিদ্ধান্ত নেয়া অর্থ-সময়-স্বাস্থ্যের ক্ষতি ব্যতিত আর কিছুই নয়। আর আমি রিয়েল স্টুডেন্টদের কথাই বলছি যারা নিচের দুইরকমের বিদেশভ্রমনেচ্ছুদের মধ্যে পড়ে না। আমার দেখা এই দুইরকমের বর্ণনা দেয়ার আগে 'রিয়েল স্টুডেন্ট' কি জিনিষ একটু ভেবে দেখা যাক।
আসলে প্রায় সময় এই 'রিয়েল স্টুডেন্ট' শব্দটা শোনা যায়। তার মনে ভেজাল স্টুডেন্টও আছে। আমার মতে রিয়েল স্টুডেন্ট ব্যাপারটার সাথে বয়স বা আর্থিক সঙ্গতি প্রাসঙ্গিক নয়, যতটা প্রাসঙ্গিক তার উদ্যম এবং মানসিক জোর তথা প্লান মোতাবেক আগানোর ক্ষমতা। কিছু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়।
১। ধরুন আপনি বিদেশে পড়াশোনা করতে আগ্রহী - কিন্তু ব্যাপারটা আপনার কোন প্লানে ছিল না, তাই আপনি হুট করে সিদ্ধান্ত নিলেন বিদেশ যাবেন এবং ছুটাছুটি শুরু করলেন। আপনি রিয়েল না।
২। আপনি কোন দেশে যাবেন আপনি জানেন না - সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন, আপনার জন্য কোন দেশ ভাল হবে? তার মানে আপনি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে অক্ষম কিংবা ঝোঁকের বশে বাত-চিত করছেন।
৩। আপনি যোগ্যতা বিবেচনা না করে কোথায় কম-খরছে (এবং আইইএলটিএস না দিয়ে) যাওয়া যায় খুঁজছেন বিগত ৩ বছর ধরে, কিন্তু তেমন কোন জায়গা এই ধরনীতে পাচ্ছেন না, আপনার উদ্দেশ্য ভেজালময়; আপনি রিয়েল না।
৪। কয়দিন পরপর আপনার বিদেশ যাওয়ার ঝোঁক উঠে - টাকা-পয়সার কথা আসলে আবার দেমাগ ঠান্ডা হয়ে যায়। আপনি ভেজাল।
৫। আপনি বিদেশে বসবাসরত পরিচিতজনদের সহযোগীতা চান - সিরিয়াস তথ্য-উপাত্ত জানতে চান, কিন্তু কোনোদিন গুগল করে একটা ইউনিভার্সিটি ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারেননি। আপনিও ভেজাল।
৬। আপনি আপনার বাকী জীবন ভিন্ন একটা দেশে বসবাসের ইচ্ছে পোষন করছেন কিন্তু সেই দেশ কেমন হওয়া উচিত - তাতে আপনার মাথাব্যাথা নাই। আপনি খালি 'গেলেই বাঁচি' টাইপ ভুংভাং এর মধ্যে আছেন। আমি ভেজাল সাইডে আছেন।

এতো গেল ভেজালদের গল্প। রিয়েলদের গল্পটা সোজা। আপনি বিদেশে পড়াশোনার ব্যাপারে সিরিয়াস (সেটা কেবল মুখেই নয়)। আপনি বেশকিছু দেশের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন, কি কি যোগ্যতা লাগে চেক করেছেন। আপনার কি কি ঘাটতি আছে দেখছেন, এবং পূরনের চেষ্টা করছেন। ইংরেজি শিখছেন, প্রফেসরদের সাথে মেইলে যোগাযোগ করছেন। সর্বোপরি, কখন কিভাবে আবেদন করবেন এবং কতবার চেষ্টা করবেন - সব মোটামুটি প্লান করে আগাচ্ছেন। টাকা পয়সা কিভাবে ম্যানেজ করা যায় ভাবছেন, কিংবা স্কলারশীপ-ফি ওয়েবারের চেষ্টা করছেন। সফল হোন বা ব্যর্থ - আপনি রিয়েল স্টুডেন্ট।
মজার বিষয় হলো, রিয়েল স্টুডেন্টরাই সফল হয়, ভেজালরা না। এইটা নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু বর্ডার পার হওয়া মানেই সফলতা নয়, গল্প যে অনেক বাকী। প্রাসঙ্গিক হলো, ভেজাল মানে যে খারাপ তা কিন্তু না। এরা খুব ভালো মানুষ, আমার-আপনার ভাই-বোন কিংবা আত্বীয়। নানা কারণে তিনারা ভেজালের আওতায় পড়ে গেছেন। আমার অভিজ্ঞতায় দুইটা প্রধান সাইকোলজিক্যাল কারনে তিনাদের পাল্লাটা ভারী হয়ে চলেছে।

১। আপনার কাজিন/আত্বীয় বাইরে থাকে, পড়াশোনা করে। পাশাপাশি ভালই টাকা-পয়সা কামায়। আর সে যে খুব ভাল আছে, তার প্রমান তার ফেসবুক পোস্ট। সারাক্ষন দামি দামি রেস্টুরেন্টে চেক-ইন দিচ্ছে, সমুদ্রতীরে অর্ধউলঙ্গ হয়ে ভেকেশান করছে, একপাশে ছাতা, আরেকপাশে বরফমেশানো লেবুর সরবত না কি যেন, নতুন নতুন ড্রেস এ চমতকার সব সেলফি তুলছে। আর এসব দেখে আপনার হতাশা বাড়ছে। যদিও আপনি দেশে ভাল একটা চাকরি করে দিনকাল ভালই চলে যাচ্ছে। তবুও এই দেশটাকে মরার দেশ মনে হয়।
(এটাকে ফেসবুক ফ্রাস্টেশান বা সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রাস্টেশান বলা হয় - যেখানে সবাই নিজের জীবনের চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরে (সকল দু:খ বেদনা লুকিয়ে) যা দেখে তাদের কাছের কানেকশানগুলো নিজেদের জীবনের সাথে তুলনা করতে শুরু করে - এবং নিজের জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে যায়। যাই হোক, এটা নিয়ে আরেকদিন লিখব ডিটেইলস।)

২। দ্বিতীয় কারণটা হলো পলায়নপরতা - ব্যক্তিগত হতাশা, বিষন্নতা, ব্যর্থতা থেকে পালানো। সামহাউ আপনি অসুখী (দু:খবিলাসও হতে পারে), আর আপনি অনেক ভেবে দেখেছেন - সবকিছু থেকে পালানোর একটাই উপায় - বাইরে চলে যাওয়া। বাইরে চলে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অনেক দূরে অজানা কোন গন্তব্যে তো আর এযুগে যাওয়া সম্ভব না, তাই কোন দালাল-টালাল (ভদ্রভাষায় এদের স্টুডেন্ট এজেন্সী বা কন্সাল্টেন্সী ফার্ম বলা হয়) ধরে ছাত্র সেজে কিংবা ইমিগ্রান্ট প্রত্যাসী সেজে ঐসব স্বপ্নের দেশে চলে যাওয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা। ওপারে পৌছে গেলেই কম্মসারা, সব দু:খ-ব্যর্থতা মুছে যাবে। যেই আপনি ৩০ বছরে জীবনটাকে সাজাতে পারেননি, নিজের যা আছে তা নিয়ে সুখী হতে পারেননি - ওই খানে পা রেখেই আপনি হয়ে যাবেন সফল পুরুষ। এন্ড ইট মেকস সেন্স। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাই হলো - নিজের সম্ভাবনা-প্রাচুর্যকে উপলব্ধি করতে না পারা। আর এই ব্যর্থতাকে উস্কে দেয়ার জন্য যত উপকরণ দরকার তা ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের চারপাশেই।

এনিওয়ে, রাত অনেক হয়েছে, ঘুমাতে গেলাম। আপনি রিয়েল কিংবা ভেজাল যাই হোন না কেন - আপনার জন্য শুভ কামনা। কাল ভোরে জেগে উঠুন নতুন আশা, নতুন উদ্যমে, সব ব্যর্থতা মুছে হাসিমুখে সূর্যোদয় দেখুন কাল- কামনা রইলো। বাই দ্য ওয়ে, পরবর্তী পর্বে ভেজালদের জন্য চমতকার সব টিপস এন্ড ট্রিক্স নিয়ে হাজির হবো। সেই পর্যন্ত লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করতে থাকুন। শুভরাত্রি!

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৪৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×