somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য কোন ভ্রমণ নেই। অবশ্য আমরা ভ্রমণ করতেও চাইনা। পুরোটা জীবন পায়ের উপর পা তুলে নির্ঝঞ্ঝাট যাপন করাটাই যেন আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমাদের কাছে পৃথিবী যেন নব্বই মিনিটের ফুটবল মাঠ। প্রবেশ করলাম, পাঁচ টাকার মুড়ি কিনলাম, মুড়ি চিবুতে চিবুতে বার দুয়েক হাত তালি দিলাম, খেলা শেষে জয় পরাজয় নিয়ে চার পঙক্তি উত্তেজনা বিনিময় করতে করতে বাড়ি ফিরলাম।

একজন আপাদমস্তক তথাকথিত জীবন বিমুখ মানুষকে কাছ থেকে দেখবার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ভ্রমণ সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণা ধারণ না করেই পুরোটা জীবন ভ্রমণ করেই কাটিয়েছেন যিনি। প্রথম দেখাতেই তিনি আমাকে একটা উদ্ভট প্রশ্ন করেছিলেন এবং সে প্রশ্নটাই সম্ভবত আমাকেও অচিরেই একজন জীবন বিমুখ মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত করবে অথবা করে ফেলেছে এতদিনে।

প্রশ্নটা ছিল, 'আমি যদি তোমাকে অমরত্ব দেই, বাকী জীবনটা তুমি কিভাবে পার করবে?'

আমি কোন কিছু না ভেবেই উত্তর দিলাম,
-কেন? এখন যেভাবে পার করছি!

-এখন কিভাবে পারছো?

-এইতো খেয়ে-না খেয়ে, সঙ্গমে, ঘুমে।

-কাকে খাওয়াচ্ছো? কার সাথে সঙ্গম করছো? কোথায় ঘুমাচ্ছো?

-আমাকে, স্ত্রীর সাথে, খাঁটে।

-দেহটা তুমি নও। আর আমি শুধু তোমাকেই অমরত্ব্ব দেব। আর তোমার স্ত্রী কিংবা পৃথিবীর এক বিন্দু ধূলিকণাও বাঁচিয়ে রাখবোনা। এবার বলো তুমি কিভাবে বাকীটা জীবন পার করবে?

-আমি অমরত্ব চাইনা।

আমার এই কথায় উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলেন তিনি। বললেন,

-তুমি অমরত্ব এড়াতে পারবে না কিছুতেই। তোমার জন্মই তোমাকে অমরত্বের নিকট পৌঁছে দেবে।

-আপনি মিথ্যে বলছেন। সত্য এটা যে, প্রত্যেক প্রাণীই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে। তাহলে আমি কিভাবে অমরত্ব এড়াতে পারবোনা?

এবার মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন তিনি,

-মৃত্যু অমরত্ব নয় তোমায় কে বললো?

২)

সে রাতে ভালো ঘুম হলোনা। উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখতে দেখতে রাত কাটলো। একবার মনে হলো আমি একটা ধূসর কাক হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছি আর শত শত মানুষ লাশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক, দিকবিদিক। একবার মনে হলো আমি মরে গেছি। অসীম শূণ্যতা চেপে ধরেছে আমায়। আমি এখন কি করবো? এর থেকে পরিত্রাণ কোথায়? আরেকবার মনে হলো মুখ ধুবড়ে পড়ে আছি ধূলোয়। উঠে দাঁড়াবার তাড়া নেই। পড়ে থাকার ধৈর্যও নেই। বড্ড নিস্পৃহ জীবন পার করে চলেছি।

খুব ভোরেই আমি তার তাবুতে চলে গেলাম। তিনি চলে যাওয়ার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর আমাকে পেতেই হবে। তিনি তাবু গুটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এমন সময় আমি উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞেস করলাম,

-তাহলে বাকী জীবনটা আমি কিভাবে পার করবো?

-যাপন পাল্টাও। পাল্টাতেই থাকো। অমরত্বে তোমার ভয় নেই। তোমার ভয় যাপনে, তোমার ভয় একঘেমেয়িতে। কিভাবে, কি করে যাপন করবে সেটা জেনে নিয়ে সেই অভ্যেস তৈরী করো যত পারো। যখন চোখের পলকে দুই আঙ্গুল এক করে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে প্রবেশ করতে পারবে তখনই তুমি সফল, অমরত্বে আর কোন ভয় নেই।

৩)

অবশেষে আমি জেনেছি যাপন পাল্টানোটাই হলো ভ্রমণ। এই মূহুর্তে আমি একটা লেবু গাছের জীবনে ঢুকে পড়েছি। জীবনকে যাপন করছি লেবু গাছের মত করে।
স্নিগ্ধ সবুজ হাওয়ায় দুলে বেড়াচ্ছি হেলেদুলে। একঘেয়েমি চলে আসলে আরেকটা জীবনে ঢুকে যাবো চোখের পলকে। আর নিমিষেই পালটে যাবে যাপন!

ছবি: (ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৪০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×