somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: লোভী মানুষ

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-পেশা বাদে মানুষ যে কাজ করে আনন্দ লাভ করে সেটাই শখ। নানানরকম জিনিস সংগ্রহ করা মানুষের অন্যতম শখের মধ্যে একটি। যেমন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ডাকটিকেট, দুর্লভ কোন বস্তু, প্রত্নতাত্ত্ব্বিক জিনিসপত্র, নানান নথিপত্র ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু আমি এমন একজন মানুষের গল্প বলতে চলেছি যার শখ ছিল 'লোভী মানুষ' সংগ্রহ করা। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো! 'লোভী মানুষ' সংগ্রহের জন্য সে বেছে নিয়েছিল শহরের শেষ দিকে অপেক্ষাকৃত কম জনাকীর্ণ একটি পথকে। সে সেই পথে একটি সুন্দর হীরের আংটি ফেলে রাখতো। সে আংটিটা এমনভাবে ফেলে রাখতো যে কেউ ওই পথে গেলেই তার দৃষ্টিগোচর হতে বাধ্য। আর কেউ যদি আংটিটা কুড়িয়ে আঙুলে পরতো সে সাথে সাথেই একটা আংটিতে রূপান্তরিত হতো। আর সেই লোকটি যার শখ ছিল 'লোভী মানুষ' সংগ্রহের, সে সেই 'লোভী মানুষ' আংটিটা নিয়ে তার সংগ্রহশালায় রেখে দিতো।

তোমরা চাইলে আমি তোমাদের সেই সুন্দর হীরের আংটিটা দেখাতে পারি।

আচানক বুড়ো থামলেন।

আর আমরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। আমরা মানে আমি সজিব আর আমার বন্ধু শিশির। আমাদের ধারণা ছিল এটা নিছক একটা গল্প কিন্তু আচানক বুড়ো যখন সেই আংটিটা দেখাতে চাইলো আমরা বেশ অবাক হলাম।

খানিকবাদে বুড়ো একটি সুন্দর হীরের আংটি হাতে করে ঘর থেকে বেরুলেন।

-এটা কি সত্যিই কাজ করে? আপনি এটা কোথায় পেয়েছেন?

শিশির বেশ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো বুড়োকে।

-হ্যাঁ। সত্যি সত্যিই কাজ করে এটা। আমিও সেই পথে যাচ্ছিলাম একদিন। আমার আগে আগে হেঁটে চলেছিল এক বৃদ্ধ। কিন্তু একটু পর খেয়াল করলাম সেই বৃদ্ধ ভ্যানিস হয়ে গেছে আমার সামনে থেকে। পথটি অনেকাংশেই ফাঁকা ছিল। আর ওই বৃদ্ধের পক্ষে এত দ্রুত কোথাও চলে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম আরেকটি লোক সেই পথে উবু হয়ে কি যেন খুঁজলো খানিকক্ষণ এবং দ্রুত চলে গেল।

-তারপর কি হলো?

আমি তাড়া দিলাম বুড়োকে।

-তারপর আমি ওখান থেকে চলে এলাম। এবং পরদিন ওই একই সময়ে এমন একটা যায়গায় গিয়ে লুকোলাম যাতে ওখান থেকে আমাকে খুব সহজে দেখা না যায় কিন্তু আমি সেই পথটিকে স্পষ্ট দেখতে পাই। দুইঘন্টা চলে গেল, অনেক মানুষ সেই পথ দিয়ে হেঁটে গেল কিন্তু কিছুই ঘটলো না। ফিরে আসবো সেই মুহুর্তে দেখি একজন মধ্য বয়স্ক নারী সেই পথের একটা যায়গায় উবু হয়ে কিছু একটা তুললো আর ভ্যানিস হয়ে গেল। তারপর গতকালের সেই লোকটি এলো, উবু হয়ে কিছু একটা তুলে পকেটে ভরে দ্রুত চলে গেল। আমি সাথে সাথে লোকটির পিছু নিলাম। কিন্তু লোকটিকে কিছুতেই খুঁজে পেলাম না আর।

পরদিন আমিও সেই পথে হেঁটে গেলাম। খানিক যেতেই চোখে পড়লো একটা সুন্দর হীরের আংটি। আমি সাহস করে উবু হয়ে আংটিটি তুললাম কিন্তু আমার কিছুই হলোনা। আমি আসলে বুঝতে পেরেছিলাম এটা আঙ্গুলে না পরলে সম্ভবত কিছুই হবেনা! আমি চলে আসবো এমন সময় দেখি কেউ একজন আমার হাত চেপে ধরেছে। তাকিয়ে দেখি সেই লোকটি।

-আমার আংটি ফেরত দাও।

গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো লোকটি।

আমি দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে লোকটিকে বললাম,

-কিন্তু কে আপনি? আর মানুষকে কেন এভাবে ভ্যানিস করছেন?

-আমি মানুষকে ভ্যানিস করিনা! ওরা 'লোভী মানুষ'। লোভই ওদের ভ্যানিস করছে!

-ঠিক বুঝলাম না!

-আংটিটা আঙ্গুলে পরো তাহলেই বুঝতে পারবে।

-না। আমি জানি এটা আপনার চালাকি। এটা পরলে আমিও ভ্যানিস হয়ে যাব।

-হ্যাঁ। যদি তুমি লোভী হও!

আমার মনে হলো লোকটি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছে। আমি আংটিটি আঙ্গুলে পরলাম।

আমি দেখলাম লোকটি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

-এটা অবিশ্বাস্য! লোভহীন মানুষ হয়?

যেন নিজেকেই শোধালো লোকটি।

-আসলে আমি এইভাবে "লোভী মানুষ" সংগ্রহ করে থাকি। এটাই আমার একমাত্র শখ। কিন্তু আমি আজকে লোভহীন মানুষ পেয়ে গেছি ওই আংটিটার আর কোন প্রয়োজন নেই আমার। আংটিটা তোমাকে দিলাম। যত্ন করে রেখো। সেই থেকে আংটি আমার কাছেই আছে।

-তোমরা কি আংটিটা পরে দেখতে চাও?

-আপনি কি আমাদের চ্যালেঞ্জ করছেন?

-হ্যাঁ। যদি তোমরা লোভী না হও!

-কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
বলে উঠলো শিশির।

-কি শর্ত?

-আপনাকে একবার আমাদের সামনে আংটিটা পরে দেখাতে হবে।

-জেদ করো না। তোমাদের উচিত নিজেদের পরীক্ষাটা নিজেদেরই দেয়া।

গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো আচানক বুড়ো।

এমন সময় শিশির অদ্ভুত একটা কাজ করে বসলো। হঠাৎ লাভ দিয়ে উঠে সে বুড়োকে ঝাপটে ধরলো। আর আমাকে ইশারা করলো বুড়োর আঙ্গুলে আংটিটা পরিয়ে দিতে। আমি দ্রুত আংটিটা বুড়োর আঙ্গুলে পরিয়ে দিলাম।

২)

আমাদের সামনে দুইটা আংটি পড়ে আছে। একটা সুন্দর হীরের আংটি আর একটি রঙচটে যাওয়া একটি রূপার আংটি। আমি শিশিরকে বললাম,

-তুই কি করে জানলি বুড়োই সেই 'লোভী মানুষ' সংগ্রহকারী?

-আগেই আন্দাজ করেছিলাম। নজর রাখছিলাম বুড়োর উপর। একটা অজ্ঞাত লোক আমাদের গ্রামে কেন এসে বাসা বেঁধেছে? এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছিলো। আর নিশ্চিত হয়েছিলাম এটা শুনে যে, সে লোভহীন মানুষ পেয়ে গেছে। আসলে মানুষ কখনো লোভহীন হতে পারেনা। ভালবাসার লোভ কার না আছে? কার নেই বেঁচে থাকার লোভ কিংবা মরে যাওয়ার?

ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২০
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×