somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ এক, রাসূল এক, ধর্ম এক মাযহাব এত কেন?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ﺑﺴْﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮّﺣْﻤﻦ ﺍﻟﺮّﺣﻴْﻢ
উত্তরঃ-
ﺣﺎﻣﺪﺍﻭﻣﺼﻠﻴﺎﻭﻣﺴﻞﻣﺎ
আপনি ছোট বলে অনেক বড় প্রশ্নই করে ফেলেছেন। কেননা, এ প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘ হবে। নিম্নে উত্তর প্রদান করা হলো। আশা করি মনযোগ সহকারে উত্তরটি পড়বেন এবং অনুধাবন করবেন। তবে উত্তর প্রদানের পূর্বে একটি বিষয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করা প্রয়োজন। আর তা হলো যে, আপনি প্রশ্নটি করার ক্ষেত্রে নিজের কাছে কোনো উত্তর খুঁজেননি। আমাদের বিশ্বাস আপনি নিজের কাছে জিজ্ঞাসা করলেও এসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতেন। যেমন দেখুন! আপনার প্রশ্ন হলো, ধর্ম এক, আল্লাহ এক, রাসূল এক, তাহলে হাদিস প্রণেতা এত কেন? আপনি বলুন তো! ক্লাস এক, শিক্ষক এক, ছাত্র এত কেন?
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তা‘আলা কি এ সব মানুষকে হাদিস সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন? তার উত্তর হলো, হ্যাঁ, কেননা কোরআন হাদিসের অসংখ্য স্থানে অন্যের নিকট দ্বীন পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, ﻳﺤﻤﻠﻬﺬﺍﺍﻟﻌﻠﻤﻤﻨﻚﻟﺨﻠﻔﻌﺪﻭﻟﻪ ‘দ্বীনের এই ইলম প্রত্যেক পরবর্তীদের নিষ্ঠাবানরা বহন করবে।’ (মেশকাতুল আসার:8/373)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ، ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻗﺎﻝ : ﺑﻠﻐﻮﺍ ﻋﻨﻲ ﻭﻟﻮ ﺁﻳﺔ ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বিষয় হলেও তোমরা অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দাও।’ (বুখারী শরিফ: 1/491)
মনে রাখতে হবে, এই আদেশের আওতায় হাদিস প্রণেতা, ফিকাহবিদসহ সকল স্তরের মুসলমান এমনকি আপনি, আমিও অন্তর্ভূক্ত। হাদিস সংকলনকারী মুহাদ্দিসগণ অনেক ত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্বটি যথাযথভাবে পালন করেছেন। যা তাদের সমগ্র মুসলিম জাতির ওপর এক অসাধারণ কৃপা ও অনুগ্রহ। মুসলমানগণ কোনো দিন তাদের এ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। একাধিক মাযহাব ও ফিরকার জন্য তাঁরা কোনোভাবেই দায়ী নন। কারণ তাদের দায়ী করতে হলে আগে যিনি হাদিসগুলো বলেছেন, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ স. ﻧﻌﻮﺫﺑﺎﻟﻠﻪতাঁকেই দায়ী করতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত ﻧﻌﻮﺫﺑﺎﻟﻠﻪ আল্লাহ তা‘আলাকে দায়ী করতে হবে। যা হবে চরম জ্ঞান পাপ ও ধৃষ্টতা। কেননা, এসব কিছুর পেছনে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাই মূল নিয়ামক। আর তাঁর কোনো কাজই অহেতুক ও রহস্য মুক্ত নয়। মানুষ চিন্তা করলে অনেক সময় সে রহস্য বুঝতে সক্ষম হয়। আবার অনেক সময় সক্ষমহয় না। হাদিস সংগ্রহ যদি একজনই করতো, তারপরও মাযহাব এক না হয়ে একাধিক হতো এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের বুঝের ভিন্নতা এর বড় কারণ। একই বিষয় একজন এক রকম বুঝলেও অন্যজন অন্য রকম বুঝেন। একই রুগী দুই ডাক্তারের কাছে গেলে দুইজন দুই ধরণের চিকিৎসা করে থাকেন। বুখারী শরিফের একটি হাদিসে এসেছে,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ ‏( ﻻ ﻳﺼﻠﻴﻦ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﻌﺼﺮﺇﻻ ﻓﻲ ﺑﻨﻲ ﻗﺮﻳﻈﺔ ‏) ﻓﺄﺩﺭﻙ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﻓﻘﺎﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﻻ ﻧﺼﻠﻲ ﺣﺘﻰ ﻧﺄﺗﻴﻬﺎ ﻭﻗﺎﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺑﻞ ﻧﺼﻠﻲ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻣﻨﺎ ﺫﻟﻚ . ﻓﺬﻛﺮ ﺫﻟﻚ ﻟﻠﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻠﻢ ﻳﻌﻨﻒ ﻭﺍﺣﺪﺍ ﻣﻨﻬﻢ .
অর্থাৎ- নবী করীম স. আহযাবের দিন সাহাবায়ে কেরামের একটি জামাতকে ‘বনী কুরাইজা’ নামক স্থানে এবলে পাঠালেন যে, তোমাদের কেউ যেন বনী কুরাইজায় না পৌঁছা পর্যন্ত আছরের নামায না পড়ে। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে পৌঁছতে দেরী হওয়ায় পথিমধ্যে আছরের নামাযের সময় ঘনিয়ে আসে। তখন একদল সাহাবী (রাসূল স. এর আদেশের প্রতি লক্ষ্য করে) বললেন, আমরা বনী কুরাইজাতে পৌঁছার আগে আছরের নামায আদায় করবো না। কিন্তু আরেক দল সাহাবী (রাসূল স. এর আদেশের উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য করে) বললেন, আমরা আছরের নামায রাস্তায় পড়ে নিব। কেননা, রাসূল স. আমাদের থেকে এই বাহ্যত অর্থ উদ্দেশ্য নেননি। (বরং রাসূলের উদ্দেশ্য হলো, আমরা যেন অতিদ্রুত বনী কুরাইজায় যাই এবং আছরের নামায সেখানে গিয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের দূর্বলতা ও অলসতার কারণে পৌঁছতে দেরী হয়ে যায়। তাই আছরের নামায কাযা করবো না) এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ স. কে জানানো হলে তিনি কোনো দলকেই ভর্ৎসনা করেননি। (বুখারী শরিফ : 2/591) এখানে আদেশ ও আদেশদাতা একই হওয়া সত্বেও বুঝ ভিন্ন হওয়ায় আদেশ পালনে মতভেদ দেখা দিয়েছে।
এত মাযহাবের জন্য আমরা কাউকে দায়ী মনে করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, এমনটি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছিলো, তাই তা হয়েছে। বলাবাহুল্য যে, এ ভিন্নতার প্রয়োজন ছিলো। কেননা, মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিগতভাবে সব ক্ষেত্রে ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করে অভিন্ন কোনো বিধান চাপিয়ে দেয়া যৌক্তিকতার পরিপন্থী। আর আল্লাহ পাক অন্যায় অযৌক্তিক সব বিষয় থেকে মুক্ত।
আপনার আর একটি প্রশ্ন হলো, হাদিস সংগ্রহের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা একজনকে দিতে পারতেন। এ প্রশ্নের উত্তর অনেকখানি পূর্বের বর্ণনায় এসে গেছে। তারপরও আপনি নিজেও একজন মানুষ। আপনি নিজে অন্যের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত না হলেও নিজের ব্যাপারে অবশ্যই অবগত রয়েছেন যে, একজন মানুষের মেধা, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তার কি পরিমাণ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সীমাবদ্ধতা দিয়েই আল্লাহ মানুষকে তৈরী করেছেন। তাহলে একজনকে হাদিস সংগ্রহের দায়িত্ব প্রদান করার প্রস্তাব নিতান্তই হাস্যকর। কেননা, তা সম্ভবই নয়।
আপনার সর্বশেষ প্রশ্ন হলো, হাদিস ছাড়া কোরআন পূর্ণাঙ্গ কি না? উত্তর হলো, কোরআন পূর্ণাঙ্গি একটি কিতাব। হাদিস ছাড়াও কোরআন পূর্ণাঙ্গ। তবে এর অর্থ এই নয় যে, হাদিসের কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা, কোরআন হলো মূল আর হাদিস হলো তার ব্যাখ্যা। সুতরাং কোনোটিই অপরটির অপূর্ণতার দলিল বহন করে না। কোরআন অপূর্ণ নয়। তবে কোরআনের সকল বিষয় সকলের বোধগম্য নয়। তাই সম্ভবত এই কোরআনকেﺃﻟﻢ দ্বারা শুরু করে প্রথমেই এই বার্তা দেয়া হয়েছে যে, এই কোরআনে পরিবেশিত সকল বিষয় সকলের বোধগম্য নয়। এটি কোরআনের অপূর্ণতা নয়; বরং মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। আর হাদিসের অনুসরণ মূলত কোরআনেরই অনুসরণ। কেননা, কোরআন শরিফের বিভিন্ন জায়গায় ইরশাদ হয়েছে,
{ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎﺍﻝَّﺃﺍﻮُﻨَﻣﺂَﻨﻳِﺫَﻃِﻴﻌُﻮﺍﺍﻟﻠَّﻬَﻮَّﺮﻟﺍﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﺳُﻮﻝَ } ‘তোমরা আল্লাহর অনুসরণ করো এবং রাসূলের অনুসরণ করো।’ (সূরা সূরা নিসা- 59)
আর রাসূলের অনুসরণ তাঁর কথা ও কাজের অনুসরণ ব্যতীত সম্ভব নয়। তাঁর কথা ও কাজকেই তো হাদিস বলা হয়। তাই হাদিসের অনুসরণ মানে কোরআনেরই অনুসরণ করা।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
copyright by:-
https://facebook.com/hedayet1293
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×