আগে নিজের বাড়িতেই পান করতাম, কিন্তু আমার স্ত্রী বরাবরই পান করার বিরুদ্ধে। তার মতে অকর্মা লোকেরাই পান করে সময় কাটায়। আমি তার সাথে একমত নই, কারণ নিজে অকর্মন্য হলেও বহু কর্মঠ ব্যাক্তিকে অহরহ পান করতে দেখি।
কিন্তু কোন যুক্তিতেই স্ত্রীকে মানাতে পারিনি, শেষে বাধ্য হয়ে বাড়িতে পান করা ছেড়েই দিয়েছি। জ্ঞানীরা কখনো স্ত্রীকে চটায় না, সেটা বুদ্ধিমানের কাজও নয়।
কিন্তু পান না করলে জীবনটা বড্ড পানশে মনে হয়, তাই বারে গিয়েই পান করা শুরু করলাম। বিচিত্র সব মানুষ, বিচিত্র পানাভ্যাস দেখতে দেখতে পান করতে মন্দ লাগে না। কয়েক পেগ বেশি হয়ে গেলে, একটু দেরিতেই বেড় হই।
পানের ব্যপারে আমি খুব সাবধানতা অবলম্বন করি, স্ত্রী যেন কোনভাবেই টের না পায় সে বিষয়ে আমি সদা সতর্ক।
আজ কয়েক পেগ বেশিই পান করেছি, বুঝতে পারলাম যখন বাসগুলোকে মাটির কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে সাঁ সাঁ করে ছুটে যেতে দেখলাম।
ঘোর লাগা চোখে রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে নামতে গেলাম, ওমনি রিক্সাওয়ালা বলে উঠল, স্যার আপনে বেশি ভাড়া দেছেন। খাড়াঁন এট্টু, ভাংতি লয়া আহি।
রিক্সাওয়ালার দিকে ভালকরে তাকালাম, মূলোর মত দাঁত বেড় করে চেয়ে আছে। দাঁত তো নয়, যেন মুখের ভিতরে আস্ত মুলোর দোকান খুলেছে ব্যাটা। বললাম, ভাংতি লাগবে না, বাকি টাকা দিয়ে আরও বেশি মুলো কিনিস।
রিক্সাওয়ালা উজবুকের মত তাকিয়ে আছে যেন মুলোর দোকান সম্পর্কে কিছুই জানে না।
বাহিরে থাকা আমার জন্য সমীচীন নয়, কারণ ইতিমধ্য আকাশে একসাথে আধ ডজন চাঁদ দেখা দিয়েছে।
সাবধানে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলাম, স্ত্রী তখন রান্না ঘরে। স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললাম, প্রথমেই মুখোমুখি হতে চাই না, এ বিষয়ে আমি সদা সতর্ক। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আলমাড়ি থেকে একটা বই বেড় করে সোফায় বসে পড়তে লাগলাম, এতে আমার স্ত্রী সহসা সন্দেহ করতে পারবে না, আগেই বলেছি, এসব ক্ষেত্রে আমি বেশ সতর্কতা ও বুদ্ধি খাঁটিয়ে কাজ করি। এই মুহূর্তে যদি বুদ্ধি করে বই না খুলতাম, তবে নির্ঘাত ধরা খেতাম।
বুদ্ধি কাজে দিয়েছে, কারণ ঘন্টা তিনেক বই পড়ছি, আমার স্ত্রী কোন কথা বলেনি।
হঠাৎ রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল, একঘন্টা ধরে স্যুটকেস খুলে বসে আছো কেন? চোখে মুখে জলের ছিটে দাও, তাহলে মাতালভাব কমে যাবে।
রাশিয়ান রম্য গল্পের ছায়া অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৪