somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিক্রিয়ার সৌকর্যেই পাঠের সৌন্দর্য

৩০ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






আমি মনে করি, বই পড়াটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, বইয়ের একটা মানসম্মত রিভিউ লেখা তার চেয়ে এন্তার গুণে মহিমাণ্বিত। রিভিউ লিখবার পর বই থেকে স্বোপার্জিত চিন্তাগুলো নিজের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকেনা, তা বিস্তার লাভ করে, এবং এর মধ্য দিয়ে একজন মানুষের মনোজগত, চিন্তা করবার ধরন সম্পর্কেও অবগত হওয়া যায়। অর্থাৎ রিভিউ লেখা প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে বস্তুত সংশ্লিষ্ট লিখিয়েরও অবচেতন একটা রিভিউ হয়ে যায়। রিভিউ আসলে ব্যক্তি মানুষটিকেই অনেক বেশি দৃশ্যমান করে তোলে।

মানুষ বই পড়ে কেন? যদি বলা হয়, জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে, কথাটা সর্বাংশে ভুল। মানুষ আসলে বই পড়ে তার মানসজগতটাকে পরিপাটি করবার অভিপ্রায়ে, যেহেতু মানস দ্বারাই সে চালিত। যারা বই পড়ে না তাদের মানসিক ভুবন কি অনালোকিত-অপরিচ্ছন্ন? এই প্রশ্নটি তর্কসাপেক্ষ। এই লেখাতে আমি তর্কের মুডে নেই। সাধারণ বিবেচনায়, বই একজন মানুষকে চিন্তার চর্চা শেখায়; বই পড়ার এটাই সবচেয়ে বড় ফায়দা। কিন্তু তত্ত্বকথা ততক্ষণ পর্যন্ত অসাড় যতক্ষণ না তাকে ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। আমি বললাম বই মানুষকে চিন্তার চর্চা শেখায়, কিন্তু সেই চর্চার প্রমাণ পাব কীভাবে? উন্নাসিক জন বলতে পারেন, কারও কাছে কিছু প্রমাণের দায় থেকে কেউ বই পড়েনা। কথা সত্যি, তবে দায়টা যদি নিজের কাছেই নিজেকে প্রমাণের হয় সেক্ষেত্রে জবাব কী হবে?সর্বোপরি, আত্মসর্বস্ব জ্ঞান প্রকৃত প্রস্তাবে অচল মুদ্রার সমতুল্য, কেননা সেই জ্ঞানের কোন বিচ্ছুরণ কখনো কেউ অবলোকন করেনি। এই ধরনের জ্ঞানচর্চা প্রকারান্তরে ছারপোকার প্রজনন হারকে উৎসাহিত করে। ছারপোকা প্রতিপালনকে অস্বীকারের তাগিদ থেকেই আবশ্যক হয়ে উঠে আলোচনা-পর্যালোচনা-সমালোচনামুখী চিন্তাচর্চার। এ প্রকারের চর্চাকেই আমরা রিভিউ হিশেবে আখ্যা দিতে পারি।


রিভিউ প্রতিযোগ কেন?


শোনা যায়, একদা বাঙালির পাঠরুচি উন্নত ছিল, প্রচুর পাঠ্যাভ্যাস ছিল। ‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরতি গরু’ উপকথার ন্যায় পাঠ্যাভ্যাসও বিলুপ্তির হুমকিতে তটস্থ। বিপরীতক্রমে, পাঠ্যাভ্যাসটিকে যারা এখনো টিকিয়ে রেখেছেন তাও একান্ততার সীমায় আবদ্ধ। এসবের বাইরে বেরিয়ে যদি সরাসরি রিভিউ শিল্পের প্রতি দৃষ্টিপাত করি, সেখানে রুগ্নতা ছাপিয়ে অন্যকিছু চোখে পড়াটা দুষ্কর। শিল্প হিসেবে বাংলা ভাষায় রিভিউ কোন সম্মানজনক পর্যায়ে পৌঁছুতে অদ্যাবধি ব্যর্থই বলা চলে। চাঞ্চল্য-উদ্দীপনার অভাব প্রকট। গণ্ডিবদ্ধ পরিসরে যতটুকু রিভিউ চর্চা হচ্ছে এবং সবচেয়ে বড় কথা যেভাবে হচ্ছে, তা হওয়ার চেয়ে না হওয়াই কল্যাণকর। আমাদের জনপদে, রিভিউয়ের নামে হয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্তুতিগান,মোসাহেবি চলে, অথবা চলে নিন্দা-রটনা। রিভিউগুলো ব্যক্তিগত পক্ষপাতের ঘেরাটোপ পেরুতে পুরোপুরিই অক্ষম। এই ধরনের রিভিউ পড়ে বইটি থেকে রিভিউয়ারের উপলব্ধ চিন্তা, কিংবা বইয়ের কোন একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা বা লেখকের দার্শনিক অবস্থানের সঙ্গে দার্শনিক সংঘর্ষ বা পক্ষ-বিপক্ষতা নিরূপণ করা যায়না। ঢালাওভাবে ‘অসাধারণ, মুগ্ধ হয়ে গেলাম’ ধর্মী নির্যাস লেখার নিয়তি হয়ে থাকে। অথবা ‘কিছুই হয়নি, লেখক অমুক-তমুক মতাদর্শী’ জাতীয় একটা টোন থাকে; ফলে বিশ্লেষণটা গৌণ, গলার জোরটা কলমে বা কী-বোর্ডে ভর করে।



কিন্তু আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি, অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।

রিভিউয়ের এমন রুগ্ন দশা কেন? কারণ, রিভিউ নিয়ে কখনোই খুব উচ্চবাচ্য হয়না, সেই পরিবেশ আমাদের এখানে অনুপস্থিত অনেকাংশেই। আমরা তো বই-ই পড়িনা, রিভিউ পড়বো কেন? তাহলে লিখবো কেন? এই প্রশ্নও জাগে অনেকেরই মনে।কিন্তু কথা হচ্ছে, পরিবেশটা নিজেদের সৃষ্টি করে নিতে হবে। ফেসবুকে বই পড়ুয়া নামে একটা গ্রুপ আছে, বিভিন্ন বই নিয়ে সেখানে এত প্রাণবন্ত আলোচনা হয় যে মনে হয় যেন কোন মানব লাইব্রেরীতে ঢুকে পড়েছি, একটি বই না পড়েও সেখানকার আলোচনা থেকে বইটির অনেকটুকু জ্ঞানই আহরণ করা সম্ভবপর হয়। ফেসবুক আগ্রাসনকেও যে ইতিবাচক পদ্ধতিতে কাজে লাগানো যায়, বই পড়ুয়া গ্রুপ তার সার্থক দৃষ্টান্ত।

অনুরূপভাবে, রিভিউকেও যদি পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়, তবে পরিবেশ সৃষ্টি হবেই। পরিবেশ আপনাআপনি আগত হয়না, মানুষই পরিবেশের বিকাশ-বিনাশ নির্ধারণ করে। চিন্তচর্চার মানোন্নয়নে রিভিউয়ের বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার। অনেকটা এ ধরনের একটা মনোভাব থেকেই রকমারি.কম প্রথমবারের মত আয়োজন করেছে রকমারি রিভিউ প্রতিযোগ।

রকমারি.কম (http://www.rokomari.com) এর বয়স এখনো ৩ মাস পেরোয়নি, তাই নিজেদের সুসংগঠিত করতে আমাদের আরও কিছুটা সময় দরকার। তবে, সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও গন্তব্যের ব্যাপারে আমরা এরই মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। রিভিউ প্রতিযোগ এসবের অন্যতম। আমাদের ইচ্ছা আছে, রিভিউ প্রতিযোগটি প্রতি মাসেই পরিচালনা করবার। তবে, এটাও সত্যি প্রথমবারের মত এত ব্যাপক পরিসরে প্রতিবারে করা সম্ভব হবেনা বাস্তবিক কারণেই। পরিসর যেমনই হোক, মাসিক ভিত্তিতে প্রতিযোগ চালাতে চাওয়ার যে অভীপ্সা, আমি মনে করি, এটাও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে যথেষ্ট হবে।


রকমারি শব্দের অর্থ হরেক রকম, বা অনেক রকম। বিবিধ চিন্তার সমাবেশ রকমারি.কম এ আমরা ঘটাতে চাই। নিয়মতান্ত্রিক কারণে অল্প কিছু মানুষই হয়তো আমরা সরাসরি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করি, কিন্তু চিন্তার দিক থেকে সকলকেই আমাদের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাই। এজন্যই মানুষ তাদের ধারণা, অভিজ্ঞতা শেয়ার করে রকমারি.কম কে সমৃদ্ধ করবে এটাও আমরা কামনা করি। বুক রিভিউয়ের বাইরে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়েও তাই আলাদা প্রতিযোগ হবে। প্রতিযোগ আলাদা হলেও চূড়ান্ত বিচারে, এটাও এক ধরনের রিভিউ। মানুষের প্রতিটি আচরণই আসলে রিভিউ।


প্রতিযোগের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে আমাদের ইভেন্ট পেজ এ। ইভেন্ট পেজ এর লিংক:

Click This Link
১২টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×