কিছু কিছু ছেলেপেলে প্রতিটা এক্সামে ১ম অথবা ২য় হবেই । তাদের মধ্যে টগরের ছোট মামা অন্যতম । টগরের ছোট মামার নাম " শুভ্র" । এই বার সে ঢাকা ভার্সিটিতে কয়েকটা বিভাবে ১ম হয়ে চান্স পেয়েছে । এতো ভাল ভাল সাব্জেক্ট থাকতে সে কিনা নিয়েছে "বাংলা সাহিত্য !!! " এই নিয়ে বাসায় বিরাট "সিডর" গেছে । বাসার সব প্রবলেম যিনি সমাধান করেন তিনি হচ্ছেন টগরের বড় চাচা "চৌধুরী আজমল হোসেন" ।
হিমু হওয়ার অপরাধে চৌধুরী আজমল হোসেন "শুভ্র" কে ২টা রসগোল্লা সাইজের চক্ষু দিয়েও দেখতে পারেন না ।
এবার ঢাকা ভার্সিটি শুভ্রকে দিয়ে গান গাওয়াবে । তাই একটি জমকাল আনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে । "হুমায়ুন আহমেদ স্যারের " মৃত্যু বার্ষিকীতে নুহাশ পল্লীতে এই অনুষ্ঠান টা হবে । আজমল সাহেবের ফুল ফ্যামিলিকে সেই অনুষ্ঠানে ভিয়াইপি গ্যালারীতে বসিয়ে সম্মান দেওয়া হবে । আর "শূভ্রকে" গোল্ড মেডেল দেওয়া হবে ।
আজমল সাহেব মনে মনে খুব খুশী কিন্তু মুখে প্রকাশ করছেন না । সেহেরী খেয়েই কাজের মেয়েকে বলে দিয়েছেন ঈদের কেনা সাদা পাঞ্জাবীটা যেন সুন্দর করে ধুয়ে দেওয়া হয় । কাজের মেয়ে পাঞ্জাবীটা ধুয়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু রাতের বৃষ্টিতে তা আর শুকাচ্ছে না ।
বড় বিপদে পড়ে গেলেন আজমল সাহেব । মন্ত্রী মিনিস্টারের সাথে ভিয়াইপি গ্যালারীতে এই প্রথম বসবেন , অথচ পাঞ্জাবী শুকায় নি !!! কি মহা মছিবত !! :/
তিনি রাশিফলে বিলিভ করেন না । তবু ও আজকের প্রথম আলো পত্রিকার রাশি ফলের পাতাটা ভাল করে পড়ে দেখছেন । । দিনের শুরু টা শুভ হবে নাকি শেষ টা !! । কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি ভুলেই গেছেন তার জন্ম তারিখ টা আসলে কত । কি মহা মছিবত !!!
এ দিকে শুভ্র হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে রেডী । সকাল সকাল যেতে হবে । ৯ টা থেকে অনুষ্ঠান । ১৯ শে জুলাই এই অনুষ্ঠান শুভ্র কিছুতেই মিস করতে পারে না । আজকে তার জনকের মৃত্যু বার্ষিকী । যথা সময়ে গাড়ি নুহাশ পল্লীতে এসে পৌঁছল । অনেক সাহিত্যিক ও জ্ঞ্যানীগুনী ব্যাক্তির আগমন ঘটেছে । আজমল সাহেব কেন যেন একটু ইতস্ত বোধ করছেন । কারন তার ঐ সাদা পাঞ্জাবী টা আর শুকায় নি । শেষ দিকে "আইরন" করা হয়েছে । তাও ভিজা ভিজা করছিল । ফলে শুভ্র থেকে একটা পাঞ্জাবী ধার নিয়েছেন তিনি । শুভ্রের পাঞ্জাবী মানেই "হলুদ পাঞ্জাবী " । বয়স্ক একটা লোক হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে এদিক উদিক ঘুড়ছে দেখতেই কেমন যেন লাগে । তার লজ্জা কেটে গেল শুভ্রের কন্ঠে "হুমায়ুন স্যারের উদ্দেশ্যে" গাওয়া গান শুনে । ছেলেটা এতো সুন্দর গান গায় আর তিনি কিনা "হিমু" হওয়ার অপরাধে থাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন । শুভ্রের গান হুমায়ুন স্যারের কবর ঘেঁষে চলে যায় দূর দুরান্তে । ছুটে বেড়ায় নুহাশ পল্লির আনাচে কানাচে । নুহাশ পল্লি যেন হয়ে ওঠে "হিমু" ও " মিসির আলীর" সম্পত্তি । আজকে এখানে কেউ থাকবে না । থাকবে হিমুরা । থাকবে কয়েক মিনিটের অশ্রু বিসর্জন আর হিমুদের আর্তনাদ । কেন আমাদের কাহিণী অসম্পূর্ণ রেখে গেলে হে হিমুর জনক ? কেন এভাবে মায়ার বাঁধনে বেধে গেলে ?
আসলে দুনিয়া বড়ই রসিক । মানুষকে কাদিয়েও মজা নেয় !!!