আলীর অনেক নাম । কেউ ডাকে আলী , কেউ ডাকে ভাইরাস , কেউ ডাকে শুভ্র , কেউ ডাকে আরিফ , কেউ ডাকে পাপ্পু , কেউ ডাকে কাব্য । কেউ ডাকে "বজরা" । এমন ১৭ টা নাম আছে আলীর । "বজরা" নাম টা স্কুলের টিচার দিসিল । স্কুলের ছাদ টপকিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ত । বজ্র এর মত তার ক্ষিপ্ত গতি ছিল । তাই স্যার আদর করে "বজরা" ডাকত ।
সেই স্যার অনেক দিন পড় কল দিছে । আলী প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে তাঁর সাথে কথা বলল । স্যারের শরীর খুব একটা ভাল নেই । যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।
আজকে তাই আলীর মন টা মোটেও ভাল নেই । সে আজকে " বাংলাদেশ সাইবার আর্মির " দেওয়া নতুন ভাইরাস টা টেস্ট করতে পারছে না । সাইবার জগতের একজন ত্রাস আলী । সাইবার জগতের নাম " থান্ডার" । সেই স্যারের দেওয়া নামেই নাম টা রাখা । জাস্ট খালি ইংরেজিতে কনভারট করা । সারা দিন হতাশায় কাটার পর রাত ২ টায় পিসিতে বসল "ভাইরাস" টা ঘেটে ঘুটে দেখার জন্যে । এমন সময় একটা কল আসলো ...। ক্রিং ক্রিং ...।
অপরিচিত নাম্বার না । নাম্বার টা আগেই "প্রান প্রিয়া" দিয়ে সেইভ করা আছে । কিন্তু আলীর তো কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই । জীবনে কোন মেয়ের সাথে ১ ঘন্টার বেশী ফোনে কথাও বলেনি । তবে " প্রান প্রিয়া" আসলো কোথা থেকে ? ফোন রিসিভ করল আলী ...।
হ্যালো ? কাকে চান
- এই টা কি "কাব্যের" নাম্বার ? ( একজন বয়স্ক মহিলা )
হ্যা , আমি কাব্য । বলুন । ( আলীর আরেক নাম কাব্য )
- আমার মেয়ে অসুস্থ । সে কথা বলার মত পজিশনে নেই । তাঁর ফোনে শুধু তোমার নাম্বার সেইভ করা আছে বাবা । বিভিন্ন মেসেজ ও আছে । মেসেজ পড়ে জানলাম তোমরা প্রেম করো প্রায় ২ বছর হল । বাবা , তোমার ভালবাসার মানুষ টি খুবই অসুস্থ । পিজি তে আছে । একটু এসো । আমার মন বলছে তুমি আসলে সে খুব খুশি হবে ।
আলী সম্পূর্ণ হতবাগ!! হোয়াট হেপেন ম্যান ? জীবেন কোন মেয়ের দিকে ঠিক মত তাকাইলাম না আর আমার ২ বছরের রিলেশান আছে ? অথচ আমি নিজেই জানি না ? বাট হোয়াই ? ওয়েট ওয়েট ...নিজের মেমোরি চেক করতে হবে । কই ছিলাম আমি ? কই ছিল আমার ফোন ? :O
৩০ মিনিট চিন্তার পরে মনে পড়ল আমাদের মেসে ৭ মাস আগে একটা ছেলে থাকত । তাঁর ফোন নস্ট হয়ে গেছিল । তাই আমার সেট ও সিম ইউজ করত । আমি "ডিজুস" চালাইতাম আর সে আমার "সিটিসেল" চালাইত । ইয়্যাস ...। হুররে সব মনে পড়ছে । সাবাস ।
কিন্তু ছেলেটা তো ইটালী চলে গেছে । আর এখন আমার কাছে মোবাইল । ছেলেটার কোন খবর ও এখন জানি না । ছেলেটা আমার থেকে ১ বছরের জুনিয়র ছিল । আমার নাম ইউজ করে ফোনে প্রেম টেম করে নি তো ? হতেই পারে । যাই হোক আমাকে ওর অসুস্থ "জিএফ" এর পাশে দাড়ান উচিত । মানুষ হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না ? যদি ওর জিএফ টার পিছে টাকা ঢালতে হয় তবে আমি কেটে পড়ব । আমি এসব টাকা পয়সার লেনদেন এ নেই । কিছু টাকা জমিয়েছি , একটা গেমিং পিসি কিনা লাগবে ।
কিন্তু এতো রাতে বাইর যাব কিভাবে ? মেসের গেট তো বন্ধ !!! :O
আরে "বজরা " । খাম ওয়ান বেইবী । ছাদ আছে না ?
৭ তলা ছাদ টপকিয়ে অন্য বিল্ডিঙ্গের ছাদ বেয়ে নিচে নেমে আসল আলী । রাত বাজে ৩ টা কুড়ি । পিজিতে এসে কেবিন খুজে পেতে আরেকবার ফোন লাগাতে হল ভদ্র মহিলা কে ।
অবশেষে পাওয়া গেল । মেয়ের অবস্থা খুবই সাংঘাতিক । নাকে - মুখে পাইপ । মেয়ের নাকি "ব্রেন টিউমার" ধরা পড়ছে আর অপারেশান করার মত স্পেস নেই তাই এভাবেই থাকতে হবে । অলরেডি এভাবেই নাকি ৮ মাস ছিল । মানে মেয়ে অসুস্থ হয়েছে ছেলেটা চলে যাওয়ার আগেই ? শালা একটা কাপুরুশ । অসুস্থ দেখে কেটে পড়ছে ।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে আলী আরো জানতে পারল মেয়ে আর বেশি দিন বাচবে না । ইন্ডীয়া নিয়ে গেলে কিছু হতে পারে । আলী খুবই চিন্তিত । একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের এতো দামি অসুখ কেন দিবে আল্লাহ ? খুব খারাপ লাগছে আলীর । মেয়ের বাবা-মা আলীকে পেয়ে যেন একটা ছেলে পেল এমন ভাব করতেছে । বেচারাদের ১০ লাখের মত খরচ হয়ে গেছে !!! তাঁর বাবা-মা আলীকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল । এই কান্না থামানোর ভাষা আলির জানানেই । "বজরা" এখানে নিশ্চুপ !! সে ও নিরবে কেদে যাচ্ছে ।
আলী মেয়েটার হাত ধরে বসে আছে । কি সুন্দর মেয়ে । ৮ মাসের অসুস্থ শরীরেরও কি সুন্দর মুখ টা । মুখে যেন ভালবাসা উতলে উঠছে । বয়স কত হবে ? ১৭ বা ১৮ । ইন্টার পরীক্ষা নাকি দেওয়ার কথা ।তাঁর খুব ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়বে । অনেক মাথা ব্যাথাও নিয়ে রাত জেগে পড়ত । তখন নাকি খুব ভাল ব্রেন ছিল । ভিকারুন্নেসা থেকে এস এস সি তে গোল্ডেন পেয়েছিল । ছাত্রী হিসেবে ও আর্ট শিল্পে অকল্পনীয় মেধা আছে তাঁর । এসব কথা মেয়ের মায়ের মুখে শুনা । বেচারী মা টার মুখ থেকে কৌশলে শুন্তে হল সব । কারন তাঁর ধারনা আলীই হচ্ছে সেই কাব্য ।
আলী মেয়েটার জন্যে সুপ নিয়ে আসছে । মেয়েটাকে উঠিয়ে খেতে দিল । নার্স ও মেয়ের-বাবা মা ভেবেছে একজন প্রেমিক তাঁর প্রেমিকাকে খাওয়াবে । এখানে ভিড় না করে রুম খালি করে দেওয়াই বেটার । সবাই চলে গেল । মেয়েটার চোখ দেখে বুঝা গেল সে কিছু বলতে চায় । আলী বলল " দেখুন , আমি আপনাকে চিনিনা । আপনার বাবা-মা আমাকে যে ভাবছে আমি সে না , আর আমি যা সে উনি না । মানে আমি আর উনি আলাদা । "
ধুর বাল!! কি কইতাসি? মেয়ে মানুষের সামেন কথা বলায় আমার কোন তুলনা নেই । আজকে তোতলাচ্ছি কেন ? শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ তোতলায় । আমি কি এই মেয়ের প্রেমে পড়লাম নাতো ?
মেয়েটা ২ চামচ সুপ খেয়ে আর খেলনা । আমি মেয়েকে সব খুলে বললাম । মেয়েটার মুখে একটা করুন চাহুনী । দেখে মনে হচ্ছে সে বলছে " দেখুন মিস্টার আলী । আমি কারো করুণা চাই না । আপনি আমার জন্যে আনেক করেছেন । আমি ওকে ভুলে গেছি । আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যায় প্লিজ "
আলী পারলনা যেতে । কি যেন এক টান আলী কে বেধে রাখল । ২-৩ দিন আলী এদিক উদিক ছুটল পাসপোর্ট করার জন্যে । মেয়েকে রেগুলার খাওয়ানো , হাত -পা ধুয়ে দেওয়া , মাথা টিপে দেওয়া , গল্পের বই পড়ে শুনান আর ইঞ্জেকশান লাগাতে নার্সকে হেল্প করা সব করে যাচ্ছিল একজন বয় ফ্রেন্ডের মত । মেয়ে প্রথম প্রথম খারাপ মনে করলেও তাঁর পরে আর বাধা দিল না । তাঁর চোখের ভাষা আলী পড়তে পারে । মেয়ে ভাবছে " আমার আর কি বা আছে ? বাচব মাত্র ২-৩ দিন । ছেলেটা যদি আমার সাথে থাকতে চায় তবে থাকুক । কিন্তু ছেলেটাকে দিন দিন কেন জানি ভাল লাগছে । এতো কেয়ার কেউ মনে হয় কোন দিন আমার জন্যে করে নি । "
এভাবে ৮ দিন চলে গেল । আলী এই ৮ দিন ইন্ডিয়ায় চিকিতসার জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করল ।
আলী তাঁর জমানো টাকা সব খরচ করল । ১ লাখ ২০ হাজার ছিল ।বাড়ি থেকে টাকা আনল ২ লাখ । আরো কিছু টাকা লাগবে । কিন্তু টাকা আনতে দেশের বাড়ি যেতে হবে । ভিসা আরো ১০ দিন পড়ে পাওয়া যাবে । আলির ঐ স্যারের শরীর খুবই খারাপ । ওনাকেও শেষ বারের মত দেখার দরকার । তাই আলি মেয়ের বাবা-মা এর কাছে বিদায় নিয়ে মেয়ের কাছে গেল । তাঁর হাত ধরল । মেয়ে আলির দিকে তাকিয়ে কেন জানি একটা মুচকি হাসি দিল । মেয়েটা কি যেন বলতে চায় । হঠাত মেয়ের খুব মাথা ব্যাথা হল । মেয়েটা আলীর হাত শক্ত করে ধরে থাকল । এই ধরার অর্থ " তুমি পাশে থাকলে আমি মৃত্যুকেও জয় করতে পারব আলী । আমাকে ছেড়ে যেও না " ।। আলী পারলনা বাড়ি যেতে । সেই রাত থেকে গেল মেয়েটার পাশে । মেয়ের অবস্থা আজকে খুবই খারাপ । সকাল ৬ টায় মেয়ে একটু চোখ খুলল । আলি মেয়েটার হাত ধরে বলল " দেখ "স্নিগ্ধা" । আমি তোমার জন্যে একটা আলাদা অনুভুতি ফিল করছি । আমি তোমাকে ইন্ডিয়া নিতে চাই । তুমি ভাল হবে আমি জানি । আমার বিশ্বাস । বিলিভ মি । আমি তোমাকে ...মানে আমি ... । ( কিভাবে যে বলি ) । মানে আমি তোমাকে ইন্ডীয়া নিব । অবশ্যই নিব । প্রমিস
মেয়ের মুখে একটা সুন্দr হাসি দেখতে পেল আলী । আলী মেয়ের চোখে চোখ রেখে মনে মনে বলল " তুমি অপেক্ষা করো সুন্দরী । আমি দেশের বাড়ি থেকে ফিরে এসেই তোমাকে ইন্ডীয়া নিব । অপেক্ষা করবে তো ...। ? "
আজব । মেয়েটা আলীর চোখের ভাষা বুঝে ফেলল । আর তাঁর সুন্দর হাসি মলিন হয়ে গেল । চোখ দিতে টপটপ করে জল বেড়িয়ে এলো । আর মেয়ের চোখ বলছে " আমার আপন সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায় । কেন চলে যায় ? যেওনা আলী । দুনিয়ার শেষ আলো দেখার সময় আমি তোমার ঐ হাসি দেখতে চাই প্লিজ " :'(
আলীর কিছু করার নেই । টাকা তাকে আনতেই হবে । বাড়ি গিয়ে সবার হাতে পাইয়ে ধরে টাকা মেনেজ করতে হবে । বাইক বিক্রি করতে হবে । অনেক কাজ হাতে ।
পর দিন বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল । বাড়ি এসে বাইকটা বিক্রি করল । সে দিন সারা দেশে হরতাল । লাগাতার ৫ দিনের হরতাল!!
দুপুরে স্যারের সাথে দেখা করে আসল আলী ।স্যার এখন মোটামুটি সুস্থ । বাইরে পুকুর পাড়ের পানিতে সে মেয়েটার মুখ দেখছে । কেন জানি মেয়েটা সব সময় তাঁর আশে পাশে থাকে । হঠাত একটা ফোন আলির মন কে অনেক বড় ধাক্কা দিল । মেয়েটা আর নেই । তাঁর বাবা কল দিছিল । আলী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । মন কে বুঝাতে পারছে না যে সে কেউ নয় তোমার । কারন এই টা মনের কান্না । এখানে চোখ আলীর কথা শুনবে না । এখানে মনের কথা মত সব হয় । বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে । পুকুরের পানির থেকে বেশী পানি যেন চোখে । কেন ?
৫ দিন পড়ে "আজীম পুর গোরস্থানে" মেয়েকে দেখতে গেল আলী । তাঁর বাবা ও ছিলেন । মেয়ের বাবা এখন ও জানে না সে আলি । আঙ্কেল কে আর বলা হল না । ২ ঘণ্টা কবরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কথা হল মেয়েটার সাথে । মেয়েটা মনে হয় বলছে সে অপেক্ষা করতে ট্রাই করেছিল । কিন্তু শক্তি পায় নি । আলী ভালবাসার নতুন সজ্ঞা পেল " ভালবাসা মানে শক্তি " ।
ফোন আসল ক্রিং ক্রিং ...। মমিনের ফোন ...।
হ্যালো আলী তুই কই ?
আমি আমার দূর সম্পর্কের এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে আসছি । পরে কল দিব ।
আসলেই এই বান্ধবী অনেক দূরে চলে গেছে । পরপারে । বাস্তব জীবনে অনেক দূর সম্পর্কের হলেও মাত্র ৮ দিনের শর্ট সময়ে অনেক অনেক কাছে চলে আসছে মেয়েটা । এখন তো সব সময় মেয়েটাকে দেখতে পায় আলী ।
এত কাছে আগে কেউ আসেনি । কেউ না ...।।
--আমার লিখা "আলী" উপন্যাস থেকে সংগ্রহীত ---
আলীর অনেক নাম । কেউ ডাকে আলী , কেউ ডাকে ভাইরাস , কেউ ডাকে শুভ্র , কেউ ডাকে আরিফ , কেউ ডাকে পাপ্পু , কেউ ডাকে কাব্য । কেউ ডাকে "বজরা" । এমন ১৭ টা নাম আছে আলীর । "বজরা" নাম টা স্কুলের টিচার দিসিল । স্কুলের ছাদ টপকিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ত । বজ্র এর মত তার ক্ষিপ্ত গতি ছিল । তাই স্যার আদর করে "বজরা" ডাকত ।
সেই স্যার অনেক দিন পড় কল দিছে । আলী প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে তাঁর সাথে কথা বলল । স্যারের শরীর খুব একটা ভাল নেই । যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।
আজকে তাই আলীর মন টা মোটেও ভাল নেই । সে আজকে " বাংলাদেশ সাইবার আর্মির " দেওয়া নতুন ভাইরাস টা টেস্ট করতে পারছে না । সাইবার জগতের একজন ত্রাস আলী । সাইবার জগতের নাম " থান্ডার" । সেই স্যারের দেওয়া নামেই নাম টা রাখা । জাস্ট খালি ইংরেজিতে কনভারট করা । সারা দিন হতাশায় কাটার পর রাত ২ টায় পিসিতে বসল "ভাইরাস" টা ঘেটে ঘুটে দেখার জন্যে । এমন সময় একটা কল আসলো ...। ক্রিং ক্রিং ...।
অপরিচিত নাম্বার না । নাম্বার টা আগেই "প্রান প্রিয়া" দিয়ে সেইভ করা আছে । কিন্তু আলীর তো কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই । জীবনে কোন মেয়ের সাথে ১ ঘন্টার বেশী ফোনে কথাও বলেনি । তবে " প্রান প্রিয়া" আসলো কোথা থেকে ? ফোন রিসিভ করল আলী ...।
হ্যালো ? কাকে চান
- এই টা কি "কাব্যের" নাম্বার ? ( একজন বয়স্ক মহিলা )
হ্যা , আমি কাব্য । বলুন । ( আলীর আরেক নাম কাব্য )
- আমার মেয়ে অসুস্থ । সে কথা বলার মত পজিশনে নেই । তাঁর ফোনে শুধু তোমার নাম্বার সেইভ করা আছে বাবা । বিভিন্ন মেসেজ ও আছে । মেসেজ পড়ে জানলাম তোমরা প্রেম করো প্রায় ২ বছর হল । বাবা , তোমার ভালবাসার মানুষ টি খুবই অসুস্থ । পিজি তে আছে । একটু এসো । আমার মন বলছে তুমি আসলে সে খুব খুশি হবে । :'(
আলী সম্পূর্ণ হতবাগ!! হোয়াট হেপেন ম্যান ? জীবেন কোন মেয়ের দিকে ঠিক মত তাকাইলাম না আর আমার ২ বছরের রিলেশান আছে ? অথচ আমি নিজেই জানি না ? বাট হোয়াই ? ওয়েট ওয়েট ...নিজের মেমোরি চেক করতে হবে । কই ছিলাম আমি ? কই ছিল আমার ফোন ? :O
৩০ মিনিট চিন্তার পরে মনে পড়ল আমাদের মেসে ৭ মাস আগে একটা ছেলে থাকত । তাঁর ফোন নস্ট হয়ে গেছিল । তাই আমার সেট ও সিম ইউজ করত । আমি "ডিজুস" চালাইতাম আর সে আমার "সিটিসেল" চালাইত । ইয়্যাস ...। হুররে সব মনে পড়ছে । সাবাস ।
কিন্তু ছেলেটা তো ইটালী চলে গেছে । আর এখন আমার কাছে মোবাইল । ছেলেটার কোন খবর ও এখন জানি না । ছেলেটা আমার থেকে ১ বছরের জুনিয়র ছিল । আমার নাম ইউজ করে ফোনে প্রেম টেম করে নি তো ? হতেই পারে । যাই হোক আমাকে ওর অসুস্থ "জিএফ" এর পাশে দাড়ান উচিত । মানুষ হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না ? যদি ওর জিএফ টার পিছে টাকা ঢালতে হয় তবে আমি কেটে পড়ব । আমি এসব টাকা পয়সার লেনদেন এ নেই । কিছু টাকা জমিয়েছি , একটা গেমিং পিসি কিনা লাগবে ।
কিন্তু এতো রাতে বাইর যাব কিভাবে ? মেসের গেট তো বন্ধ !!! :O
আরে "বজরা " । খাম ওয়ান বেইবী । ছাদ আছে না ?
৭ তলা ছাদ টপকিয়ে অন্য বিল্ডিঙ্গের ছাদ বেয়ে নিচে নেমে আসল আলী । রাত বাজে ৩ টা কুড়ি । পিজিতে এসে কেবিন খুজে পেতে আরেকবার ফোন লাগাতে হল ভদ্র মহিলা কে ।
অবশেষে পাওয়া গেল । মেয়ের অবস্থা খুবই সাংঘাতিক । নাকে - মুখে পাইপ । মেয়ের নাকি "ব্রেন টিউমার" ধরা পড়ছে আর অপারেশান করার মত স্পেস নেই তাই এভাবেই থাকতে হবে । অলরেডি এভাবেই নাকি ৮ মাস ছিল । মানে মেয়ে অসুস্থ হয়েছে ছেলেটা চলে যাওয়ার আগেই ? শালা একটা কাপুরুশ । অসুস্থ দেখে কেটে পড়ছে ।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে আলী আরো জানতে পারল মেয়ে আর বেশি দিন বাচবে না । ইন্ডীয়া নিয়ে গেলে কিছু হতে পারে । আলী খুবই চিন্তিত । একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের এতো দামি অসুখ কেন দিবে আল্লাহ ? খুব খারাপ লাগছে আলীর । মেয়ের বাবা-মা আলীকে পেয়ে যেন একটা ছেলে পেল এমন ভাব করতেছে । বেচারাদের ১০ লাখের মত খরচ হয়ে গেছে !!! তাঁর বাবা-মা আলীকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল । এই কান্না থামানোর ভাষা আলির জানানেই । "বজরা" এখানে নিশ্চুপ !! সে ও নিরবে কেদে যাচ্ছে ।
আলী মেয়েটার হাত ধরে বসে আছে । কি সুন্দর মেয়ে । ৮ মাসের অসুস্থ শরীরেরও কি সুন্দর মুখ টা । মুখে যেন ভালবাসা উতলে উঠছে । বয়স কত হবে ? ১৭ বা ১৮ । ইন্টার পরীক্ষা নাকি দেওয়ার কথা ।তাঁর খুব ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়বে । অনেক মাথা ব্যাথাও নিয়ে রাত জেগে পড়ত । তখন নাকি খুব ভাল ব্রেন ছিল । ভিকারুন্নেসা থেকে এস এস সি তে গোল্ডেন পেয়েছিল । ছাত্রী হিসেবে ও আর্ট শিল্পে অকল্পনীয় মেধা আছে তাঁর । এসব কথা মেয়ের মায়ের মুখে শুনা । বেচারী মা টার মুখ থেকে কৌশলে শুন্তে হল সব । কারন তাঁর ধারনা আলীই হচ্ছে সেই কাব্য ।
আলী মেয়েটার জন্যে সুপ নিয়ে আসছে । মেয়েটাকে উঠিয়ে খেতে দিল । নার্স ও মেয়ের-বাবা মা ভেবেছে একজন প্রেমিক তাঁর প্রেমিকাকে খাওয়াবে । এখানে ভিড় না করে রুম খালি করে দেওয়াই বেটার । সবাই চলে গেল । মেয়েটার চোখ দেখে বুঝা গেল সে কিছু বলতে চায় । আলী বলল " দেখুন , আমি আপনাকে চিনিনা । আপনার বাবা-মা আমাকে যে ভাবছে আমি সে না , আর আমি যা সে উনি না । মানে আমি আর উনি আলাদা । "
ধুর বাল!! কি কইতাসি? মেয়ে মানুষের সামেন কথা বলায় আমার কোন তুলনা নেই । আজকে তোতলাচ্ছি কেন ? শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ তোতলায় । আমি কি এই মেয়ের প্রেমে পড়লাম নাতো ?
মেয়েটা ২ চামচ সুপ খেয়ে আর খেলনা । আমি মেয়েকে সব খুলে বললাম । মেয়েটার মুখে একটা করুন চাহুনী । দেখে মনে হচ্ছে সে বলছে " দেখুন মিস্টার আলী । আমি কারো করুণা চাই না । আপনি আমার জন্যে আনেক করেছেন । আমি ওকে ভুলে গেছি । আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যায় প্লিজ "
আলী পারলনা যেতে । কি যেন এক টান আলী কে বেধে রাখল । ২-৩ দিন আলী এদিক উদিক ছুটল পাসপোর্ট করার জন্যে । মেয়েকে রেগুলার খাওয়ানো , হাত -পা ধুয়ে দেওয়া , মাথা টিপে দেওয়া , গল্পের বই পড়ে শুনান আর ইঞ্জেকশান লাগাতে নার্সকে হেল্প করা সব করে যাচ্ছিল একজন বয় ফ্রেন্ডের মত । মেয়ে প্রথম প্রথম খারাপ মনে করলেও তাঁর পরে আর বাধা দিল না । তাঁর চোখের ভাষা আলী পড়তে পারে । মেয়ে ভাবছে " আমার আর কি বা আছে ? বাচব মাত্র ২-৩ দিন । ছেলেটা যদি আমার সাথে থাকতে চায় তবে থাকুক । কিন্তু ছেলেটাকে দিন দিন কেন জানি ভাল লাগছে । এতো কেয়ার কেউ মনে হয় কোন দিন আমার জন্যে করে নি । "
এভাবে ৮ দিন চলে গেল । আলী এই ৮ দিন ইন্ডিয়ায় চিকিতসার জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করল ।
আলী তাঁর জমানো টাকা সব খরচ করল । ১ লাখ ২০ হাজার ছিল ।বাড়ি থেকে টাকা আনল ২ লাখ । আরো কিছু টাকা লাগবে । কিন্তু টাকা আনতে দেশের বাড়ি যেতে হবে । ভিসা আরো ১০ দিন পড়ে পাওয়া যাবে । আলির ঐ স্যারের শরীর খুবই খারাপ । ওনাকেও শেষ বারের মত দেখার দরকার । তাই আলি মেয়ের বাবা-মা এর কাছে বিদায় নিয়ে মেয়ের কাছে গেল । তাঁর হাত ধরল । মেয়ে আলির দিকে তাকিয়ে কেন জানি একটা মুচকি হাসি দিল । মেয়েটা কি যেন বলতে চায় । হঠাত মেয়ের খুব মাথা ব্যাথা হল । মেয়েটা আলীর হাত শক্ত করে ধরে থাকল । এই ধরার অর্থ " তুমি পাশে থাকলে আমি মৃত্যুকেও জয় করতে পারব আলী । আমাকে ছেড়ে যেও না " ।। আলী পারলনা বাড়ি যেতে । সেই রাত থেকে গেল মেয়েটার পাশে । মেয়ের অবস্থা আজকে খুবই খারাপ । সকাল ৬ টায় মেয়ে একটু চোখ খুলল । আলি মেয়েটার হাত ধরে বলল " দেখ "স্নিগ্ধা" । আমি তোমার জন্যে একটা আলাদা অনুভুতি ফিল করছি । আমি তোমাকে ইন্ডিয়া নিতে চাই । তুমি ভাল হবে আমি জানি । আমার বিশ্বাস । বিলিভ মি । আমি তোমাকে ...মানে আমি ... । ( কিভাবে যে বলি ) । মানে আমি তোমাকে ইন্ডীয়া নিব । অবশ্যই নিব । প্রমিস :/ :'(
মেয়ের মুখে একটা সুন্দr হাসি দেখতে পেল আলী । আলী মেয়ের চোখে চোখ রেখে মনে মনে বলল " তুমি অপেক্ষা করো সুন্দরী । আমি দেশের বাড়ি থেকে ফিরে এসেই তোমাকে ইন্ডীয়া নিব । অপেক্ষা করবে তো ...। ? "
আজব । মেয়েটা আলীর চোখের ভাষা বুঝে ফেলল । আর তাঁর সুন্দর হাসি মলিন হয়ে গেল । চোখ দিতে টপটপ করে জল বেড়িয়ে এলো । আর মেয়ের চোখ বলছে " আমার আপন সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায় । কেন চলে যায় ? যেওনা আলী । দুনিয়ার শেষ আলো দেখার সময় আমি তোমার ঐ হাসি দেখতে চাই প্লিজ "
আলীর কিছু করার নেই । টাকা তাকে আনতেই হবে । বাড়ি গিয়ে সবার হাতে পাইয়ে ধরে টাকা মেনেজ করতে হবে । বাইক বিক্রি করতে হবে । অনেক কাজ হাতে ।
পর দিন বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল । বাড়ি এসে বাইকটা বিক্রি করল । সে দিন সারা দেশে হরতাল । লাগাতার ৫ দিনের হরতাল!!
দুপুরে স্যারের সাথে দেখা করে আসল আলী ।স্যার এখন মোটামুটি সুস্থ । বাইরে পুকুর পাড়ের পানিতে সে মেয়েটার মুখ দেখছে । কেন জানি মেয়েটা সব সময় তাঁর আশে পাশে থাকে । হঠাত একটা ফোন আলির মন কে অনেক বড় ধাক্কা দিল । মেয়েটা আর নেই । তাঁর বাবা কল দিছিল । আলী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । মন কে বুঝাতে পারছে না যে সে কেউ নয় তোমার । কারন এই টা মনের কান্না । এখানে চোখ আলীর কথা শুনবে না । এখানে মনের কথা মত সব হয় । বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে । পুকুরের পানির থেকে বেশী পানি যেন চোখে । কেন ?
৫ দিন পড়ে "আজীম পুর গোরস্থানে" মেয়েকে দেখতে গেল আলী । তাঁর বাবা ও ছিলেন । মেয়ের বাবা এখন ও জানে না সে আলি । আঙ্কেল কে আর বলা হল না । ২ ঘণ্টা কবরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কথা হল মেয়েটার সাথে । মেয়েটা মনে হয় বলছে সে অপেক্ষা করতে ট্রাই করেছিল । কিন্তু শক্তি পায় নি । আলী ভালবাসার নতুন সজ্ঞা পেল " ভালবাসা মানে শক্তি " ।
ফোন আসল ক্রিং ক্রিং ...। মমিনের ফোন ...।
হ্যালো আলী তুই কই ?
আমি আমার দূর সম্পর্কের এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে আসছি । পরে কল দিব ।
আসলেই এই বান্ধবী অনেক দূরে চলে গেছে । পরপারে । বাস্তব জীবনে অনেক দূর সম্পর্কের হলেও মাত্র ৮ দিনের শর্ট সময়ে অনেক অনেক কাছে চলে আসছে মেয়েটা । এখন তো সব সময় মেয়েটাকে দেখতে পায় আলী ।
এত কাছে আগে কেউ আসেনি । কেউ না ...।।
--আমার লিখা "আলী" উপন্যাস থেকে সংগ্রহীত ---
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১৩