''দাজ্জালের আবির্ভাব''
যে সকল স্থানে দাজ্জালের আগমন ঘটবে
আনাছ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর এমন কোন শহর নেই, যেখানে দাজ্জাল গিয়ে পৌঁছবে না।-” (বুখারী-মুসলিম)
অপর বর্ণনায়- “উহুদ পর্বতের চূড়ায় উঠে মসজিদে নববীর দিকে তাকিয়ে অনুসারীদের বলবে- তোমরা কি ঐ সাদা প্রাসাদটি দেখতে পাচ্ছ? (অর্থাৎ মসজিদে নববী) অতঃপর ফেরেশতারা তার চেহারাকে শামের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন। সেখানেই তার বিনাশ ঘটবে।-” (মুসলিম)
অপর বর্ণনায়- “মদীনার দরজায় সবসময় ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। দাজ্জাল এবং মহামারী মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।-” (বুখারী-মুসলিম)
“মাছীহুদ দাজ্জাল-” নামকরণঃ
আরবী ‘মাছীহ’ (مسيح) শব্দের অর্থ- বিকৃত করে দেয়া হয়েছে, মোছে দেয়া হয়েছে এমন। তার বাম চক্ষুটি বিকৃত ও মোছিত হবে। কানা, সবকিছু একচোখে দেখবে।
অনেকে বলেছেন যে, সঠিক শব্দটি আসলে -‘মিছছীহ’ বা -‘মিছছীখ’।
আরবীতে مسح শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে- ঘুরাফেরা করা, ভ্রমণ করা। এ হিসেবে অনেকেই বলেছেন যে, দাজ্জাল যেহেতু সারাবিশ্ব ভ্রমণ করবে, তাই তাকে ‘মাছীহ’ (অতি ভ্রমণকারী) বলা হয়ে থাকে।
কেউ কেউ বলেছেন যে, তার চেহারার এক পার্শ্ব ভ্রু ও চক্ষুবিহীন হবে।
অপরদিকে দাজ্জাল এসেছে আরবী শব্দ দাজাল (دجل) থেকে। যার অর্থ- সত্য ঢেকে দেয়া, ছদ্ম আবরণে লুকিয়ে রাখা, প্রতারিত করা, মিথ্যা বলা ইত্যাদি। দাজ্জাল শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে মহা-মিথ্যুক।
কোরআনে কেন দাজ্জালের আলোচনা আসেনি?
নবী করীম সা. সবচে’ বেশি যে ফেতনাটি নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন, তা হচ্ছে দাজ্জালের ফেতনা। আর তাই প্রত্যেক নামাযের শেষে দাজ্জালের মহাফেতনা থেকে বাঁচার জন্য সাহাবাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন।
কোরআনে কিছু নিদর্শনের উল্লেখ এসেছে, কিছু অনুল্লেখ রয়েছে। যেমন, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ এভাবে বলেছেন- “মহা প্রলয় কাছিয়ে গেছে, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে গেছে।” (সূরা ক্বামার-১) ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভবে বলেছেন- “যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে-” (সূরা আম্বিয়া-৯৬)। কিন্তু মহাফেতনার নেপথ্য নায়ক ‘দাজ্জাল’-এর বিষয়ে পরিস্কার ভাবে কোরআনে কিছুই বলা হয়নি। কোন প্রজ্ঞা নিহিত?
কয়েকভাবে এর উত্তর দেয়া হয়েছেঃ
১) কোরআনে পরোক্ষভাবে এর উত্তর এসেছে। আল্লাহ পাক বলেন- “যেদিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোন ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্যে ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্বে থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনরূপ সৎকর্ম করেনি-” (সূরা আনআ’ম-১৫৮)। (এর ব্যাখ্যাস্বরূপ) নবী করীম সা. বলেন- “তিনটি নিদর্শন প্রকাশ হয়ে গেলে ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবে না, যতক্ষণ না সে পূর্বে থেকে ঈমান এনে সৎকর্ম জমা করে থাকেঃ ১) দাজ্জাল ২) অদ্ভুত প্রাণী ৩) পশ্চিম প্রান্তে প্রভাতের সূর্যোদয়।-” (তিরমিযী)
২) ঈসা বিন মারিয়াম আ.-অবতরণের কথা-ও কোরআনে পরোক্ষভাবে এসেছে। আল্লাহ পাক বলেন- “আর আহলে -কিতাবদের মধ্যে যত শ্রেণী রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ঈসার উপর তার মৃত্যুর পূর্বে।-” (সূরা নিসা-১৫৯)
আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, দাজ্জাল হত্যার জন্য-ই ঈসা বিন মারিয়াম আ. আসমান হতে অবতরণ করবেন। সুতরাং পরস্পর বিপরীতমুখী একটা উল্লেখের মাধ্যমে অপরটার প্রয়োজন নিঃশেষ হয়ে গেল।
দাজ্জাল সম্পর্কে আমাদের বলতে হবে, কারণঃ
জ্ঞান-ই উত্তোরণের একমাত্র পথ। ফেতনা গ্রাস করে ফেলবে- এই ভয়ে হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. সবসময় নবীজীর কাছে অনিষ্টকর ফেতনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন।
দাজ্জালের ফেতনাটি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ফেতনা। সকল নবী-রাসূল স্ব স্ব উম্মতকে তার ব্যাপারে সতর্ক করতেন। শেষনবী মুহাম্মদ মুস্তফা সা. তার ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে উম্মতকে বারংবার সতর্ক করে গেছেন।
সামনে আরো বিস্তারিত বিবরণ আসছে...