somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আ ফর্টি সিক্স মিনিটস রাইড

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-যাবেন? মোহাম্মদপুর।
-(হ্যা বোধক ভাব)
- মিটারে তো?
- ২০ ট্যাকা বাড়ায়ে দিয়েন।
অগত্যা কিছু করার না থাকায় উঠে পড়লাম। গুলশান ১ –এ স্যামসোনাইটের সামনে অসহায় দাঁড়িয়ে আছি প্রায় ৩০ মিনিটের উপরে।
-কোন দিয়া যাইবেন? মিটার হইয়া তো আপনারা রাস্তা বেশি চিন্যা ফালাইসেন।
গেট টেনে ধরে বললাম- যেদিক দিয়ে ইচ্ছা যান।
-মিটার হইয়া আপা গরীব আরো গরীব হইসে। আপনারা তো ভাড়া কম দিয়া যান গা। ১০/২০ টাকা বাড়াইতে কইলে সার্জনরে বিচার দেন। আমগো ক্যাশ টাকা লইয়া যায়। গুলশান থেইক্যা মোহাম্মদপুর কত লাগত কন? নিম্নে ২৫০ টাকা? অখন যান ১৫০-১৬০! আর আমাগো জমাই দেয়ন লাগে ৯০০-১০০০ টাকা। মাফ নাই।
-তো, আপনারা আন্দোলন করেন! জমা কমানোর আন্দোলন।
- লাভ নাই। সরকার খালি আমগোরেই টাইট দিবো। জমা দিয়া হাতে আর কিছু থাকেনা। সেই দিন দুপুরে হোটেলে খাইলাম- ভাত, ডাউল আর কাচাঁ কলা ভর্তা। আর একটা শাক। ৬৫ টাকা নিসে। ভাত একলা খাইলে ভালা লাগেনা। কত দিন মাছ-মাংস খাইনা। চাইলে পারিনা? পারি! খাইনা। ঘরে বৌ বাচ্চা আসে, কি খায় না খায়। হয়না আপা। কিচ্ছু হাতে থায়না। পড়ার খরচ! ভর্তি –বই-খাতায় পাচঁ হাজার টাকা গেসে। কই পামু এত টাকা! তাই পারুটি খাই। আইজক্যা দুপুরে দুইটা পুরি খাইসি।
(কিছুক্ষণ থেমে)
আমার চেহারা এত খারাপ আছিলোনা। এক্ সপ্তা ধইরা শরীলডা ভালা না। মালিকরে কইলাম –কইল চালাইতে না পারলে পার্মেন্ট লোক নিব, গাড়ী বসায়া রাখবনা। বাইধ্য হইয়া অসুইখ্যা শরীল লইয়া ক্যামনে যে প্রতিদিন ৯০০ টাকা জমা দিসি। তাও গাড়ীটা থাউক। নাইলে একমাস বেকার থাকন লাগব।
বউ বাইচ্চাদের দ্যাশে রাখছি। ঢাকা শহরডা ভালা না। রাখবারো পারুম না।
সাইড ভিউ মিরর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই কথা বলছে ড্রাইভার। খারাপ লাগছেনা শুনতে। এক একটা মানুষ এক একটা উপন্যাস! মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল সরে বসা উওচিত, যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক না।
-আপনার কয়টা বাচ্চা?
-একটা মেয়ে, একটা ছেলে। মেয়ে ব্যস কম তের, ছলের নয়। মেয়ের মা নাই।
-মানে? কি হয়েছিল?
-লিভারে জন্ডিস! ঢাকা মেডিকেলে ছিল।পরে মগবাজার আদ্ব-দ্বীণে মারা গেছে।
-আপনার এই বৌ মেয়েকে আদর করে?
-ছেলেডারে যেমন দ্যাখে, মেয়েটারেও তেমন দ্যাখে। ব্যস কম নাই। আমার আগের বৌটা খুব ভালো ছিল। মুখ দিয়ে কোন কথা বাইর হইত না। কেও কইতেই পারতনা বাড়ীতে একটা মেয়ে লোক আছে।
-১ম টা প্রেমের বিয়ে ছিল?
-না আপা! আমার মা, আমার আল্লাহ্‌র পরেই। মায়ে যদি কয় এহন ‘দিন’, এহন ‘দিন’, মায়ে কইলে এহন ‘রাইত’। ভায়ের শ্বশুর বাড়ি গেসিলাম। সেইদিনই আমার কাবিন হইছে। কইতেও পারুমনা। মায়ের পছন্দ ছিল। আমার বৌরে মায়ে মাইয়ার মতন দ্যাখত। কেউ দেখলে সবাই মনে করত এইটা আমার মায়ের প্যাটের মাইয়া।
-বাহ্‌! বেশ।
সিএনজি তখন নভো থিয়েটারের সামনে। কথার গাড়ি চলছে। মন্দও লাগছেনা, আবার একটানা ভালোও লাগছেনা। মিশ্র অনুভূতি।
আমারে দেখলে কেওই কয়না আমার এতবড় ছেলে-মেয়ে আছে। শরীরডা এই কয়দিন ভালা না। এই আংগুলের আংটিটা টাইট হইতো-এহন দ্যাখেন ঢিলা হয়। টাকার শোক। দেড় লাখ টাকা পানিতে ফেলসি আপা। এই দেড় লাখ টাকা আমার কাসে এক কোটি টাকার মতন। অনেক কষ্টে জমাইসিলাম। বিদেশ যাওয়ার তালে সব শ্যাস। পাচঁ লাখের কন্টেক হইসিল। ভিসাও পাইসিলাম। আমার বুকের দুইটা হাড় ভাঙ্গা। আগে টেরাক চালাইতাম-কত দেশ ঘুরছি-এই বয়সেই। মানুষ কত ট্যাকা খরচ করে –বেড়াইতে! আর আমি এম্‌নি-ই ঘুরসি- টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। একদিন ইস্পিড হারাইয়া বিশ টন চাউলের টেরাক উল্টাইল। লাফ দিসিলাম-কিন্তু দেরি হইয়া গেসে। একটা বস্তা বুকে আইসা পরল। কেও ভাবেনাই বাচুম। আমি বাচলাম। মায়ের কসমে ট্রেরাক ডেরাইভারী ছারসি। বিদেশ যাইতে পারিনাই হাড্ডি ভাঙ্গা বলে। মেহনতের কাম করতে পারিনা। জিদ্দে পাসপোট ছিইর্যার ফেলসি।
সিএনজি তখন ক্রিসেন্ট লেক ধরে ছুটে চলছে। রাস্তার দুই পারে অসংখ্য জুটি। হাতে হাত, কাধেঁ কাধঁ। আচ্ছা ড্রাইভার ভাইয়ের নাম তো জানা হল না। জেনে লাভও নাই। মনে থাকবে না। আর কখনো দেখা হলেও হয়ত চিনব না।
২য় স্ত্রীকে সাজতে মানা- ড্রাইভারের বৌ বলে কেও যেন তাকে মন্দ না ভাবে। ড্রাইভারের বৌ কে কেন মানুষ মন্দ বলবে বুঝিনাই। এ বিষয়ে অবশ্য সে অনেক কথা বলেছিল। মন দিয়ে শুনি নাই। রাস্তায় কড়া জ্যাম বেধেছে রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের সামনে থেকেই। বিরক্ত লাগছিল।
-আমার রাগ এক্টু বেশি। একবার এই বৌটারে মারসিলাম- মা’র কথা শুনে নাই তাই। উনার ভাই আইস্যা নিয়া গেসিল। আমি উনার ভাইরে কইসিলাম- আমার বৌরে আটকাইবার পারবেন না। পারেনাই। আমি একবার ফুন দিয়া হ্যালো কইসি, চইলা আইসে। উনি আমারে অনেক ভালোবাসে, আমিও বাসি। নাইলে কি আইত??
অবশেষে পৌছলাম-জাপান গার্ডেন। ভাড়া মিটালাম-১৯২ টাকা। নামতেই সে বলল- আপা, অনেক কথা কয়া ফালালাম। কিছু মনে কইরেন না । আমাদের জীবনের অনেক গল্প- শুধু শোনার মানুষ নাই।
ভালোবাসা- বিচিত্র। গল্পগুলো ভালোলাগছিল; কারণ গল্পগুলো ছিল –ভালোবাসার। ভালোবাসা- মা, স্ত্রী হয়ে প্রবাহিত হয়েছে সন্তানে। আশায় স্বপ্ন বোনা, স্বপ্ন ভঙ্গ, আবার নতুন স্বপ্নের প্রত্যাশায় ছুটে চলা-ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্যই। বুকের ভাঙ্গা হার বেয়ে সেই ভালোবাসা গড়িয়ে বাষ্প হয়ে যায়না- সেই ভালোবাসা শুকনো রুটি কিংবা দুটো পুরি দিয়ে দিন পারি দিতে শেখায়। সেই ভালোবাসা মোবাইল ফোনে প্রেম কে হ্যাচকা টানে বাড়ি ফেরত আনতে পারে। ঘড়িতে সময় মিলালাম- ৪৬ মিনিট লেগেছে বাড়ি ফিরতে। আমার জন্য ভালোবাসায় জড়ানো দুই জোড়া চোখের অপেক্ষা শেষ করতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×