somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা দিবস

১৫ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হালিমা খাতুন বেশ ক্লান্ত। রাতের কাজ শেষে বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছেন, দীর্ঘদিনের পিঠের ব্যাথায় বিশ্রামে আরাম আসে না। বড় মেয়ে বীথি এসে বললো, 'মা আসো তোমার পিঠটা মালিশ করে দিই।'
'তুই হিটিং ল্যাম্পটা চালিয়ে দে, মালিশ লাগবে না, একটু হিট দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।'

বীথি ল্যাম্প প্লাগে লাগাতে যেয়ে নিচে পড়ে যায়। মেঝতে পড়ে সেটার কাঁচ ফেঁটে গেলো। বীথির বাবা হিটিং ল্যাম্পটি কিনে দিয়েছিলেন। সেটা দিলে পিঠের ব্যথা কমে খুব আরাম হতো। বীথি মুখ কালো করে বললো, সর্বনাশ মা, ল্যাম্পটা ভেঙে গেলো।
হালিমা মোটেও দুঃখ পেলেন না, স্বাভাবিক গলায় বললেন, রান্নাঘরটা গুছিয়ে রাখিস, আজ আর শরীরে কুলাচ্ছে না।
বীথির চোখে পানি আসবার উপক্রম হলো, সামলে নিয়ে বললো,
'আসো তোমার পিঠটা মালিশ করে দিই।'
'আচ্ছা দে'

বীথি মালিশ করতে করতে বললো,'স্কুলের বড়আপা একজন ভালো ফিজিওথেরাপিষ্টের খোঁজ দিয়েছে, পিঠের ব্যাথার জন্য। তোমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবো।'
'সে তো অনেক টাকা, লাগবে না, যুঁথির পড়াশোনা শেষ হোক।'


দিনশেষে মা ও মেয়ে দুঃখ কষ্টে একে অপরের অবলম্বন হয়ে উঠে। বীথি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
'মা, ভাইয়া কতদিন আসে না। তুমি গহনা বিক্রি করে রিহ্যাবে দিলে, কিন্ত সেখান থেকে সেই যে চলে গেলো আর এলো না।!'
হালিমা চুপ করে থাকেন, ছেলে ঘরছাড়া বহুদিন, ছেলেকে দেখতে না পাওয়ার এক চাপা কস্ট বোবা করে দেয় মুহূর্তগুলো।
এরই মধ্যে যুঁথি এসে বলে, মা একটু চা করে দাও না? আজ অনেক রাত জাগতে হবে, কালকে একটা কঠিন ক্লাস টেস্ট আছে'
হালিমা খাতুন উঠতে যাবেন, সেই সময় বীথি বললো, তুমি শুয়ে থাকো মা আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

রান্না ঘরে যাবার পথে যুঁথি বিথীকে কি যেন একটা বলে নিজেই খিল খিল করে হেসে উঠে। শত দুঃখের মাঝে যুঁথির হাসি হালিমার সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। রান্না ঘরে ঠুন ঠুন হাড়ি পাতিলের আওয়াজ হয়, সেই আওয়াজে হালিমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে।

আজ মা দিবস। বীথি সে উপলক্ষে কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের সমস্ত ছোট ছোট বাচ্চাদের হাগ দিলো। বাচ্চা বাচ্চা ছাত্র ছাত্রী তাঁকে ভীষণ পছন্দ করে, কেউ কেউ দুবার হাগ দিলো। ক্লাসের ফাঁকে ভাবতে লাগলো মাকে কি গিফট দেয়া যায়। হটাৎ ফেসবুকে বড় ভাই রফির নোটিফিকেশন, "মা, আজ মা দিবস, ছোট বেলায় দুধভাত কলা মেখে খাইয়ে দিয়েছো কত, খুব মনে পড়ে সেসব কথা।"
বীথি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সে তো কোনদিন কোন স্ট্যাটাস দেয় না। মেসেঞ্জারে কোন মেসেজ দেখে না, ফোনও ধরে না।

বীথি প্রথম শিফটে পড়ায়, সকাল দশটায় ক্লাস শেষ, তারপর দোকানে যেতে হবে মা দিবসে কিছু একটা কিনতে। কিন্তু ভাইয়ের স্ট্যাটাসে মন বড় অস্থির হয়ে উঠে, ক্লাস শেষে মায়ের জন্য আর গিফট কেনা হয় না, সরাসরি বাসায় ফিরে আসে।

বীথি বাসায় ঢুকেই 'মা মা' ডেকে মায়ের কাছে ছুটে গেলো। মাকে সে স্ট্যাটাস দেখালো, মা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখ বেয়ে পানি পড়ে। মায়ের কান্না দেখে মেয়েও কান্নায় ভেঙে পড়ে, মাকে জড়িয়ে ধরে, সহস্র দুঃখের মাঝে এক টুকরা আশার আলো দেখতে পায় হালিমা, জানালা দিয়ে রোদ বেয়ে আসে, চোখের পানি এক সময় শুকিয়ে আসে।

সারাক্ষণ ছেলের কথাই মনে হতে লাগলো, কতদিন ছেলে বাসায় নেই, ভালোমন্দ শেষ কবে খাইয়েছেন তিনি মনে করতে পারেন না। থেকে থেকে মৃত স্বামীর প্রতি অভিমান চেপে বসে, কেন তিনি এত বড় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়ে পরপারে চলে গেলেন।

হালিমা বিথীকে বললেন, রফিকে আসতে ব‍ল্, সে নিজে থেকে আসতে ভয় পাচ্ছে, ওকে আসতে ব‍ল্।
'ভাইয়া তো কোন মেসেজ দেখে না, ফোনও ধরে না।'
'ওকে আসতে ব‍ল্, আমার মন বলছে আসবে।'

বীথি অনিচ্ছাসত্ত্বেও টেক্সট করলো ফেসবুক মেসেঞ্জারে, "ভাইয়া, মা তোর স্ট্যাটাস দেখে খুব মন খারাপ করেছে। তুই বাসায় ফিরে আয়।" কিছুক্ষন পরেই উত্তর আসলো, "তোরা সব কেমন আছিস? কতদিন দেখি না তোদের, আমি বিকালে আসছি।"

ছেলে ঘরে ফিরে আসছে, হালিমার মন চাপা আনন্দে উদ্বেলিত। তিনি বিথীকে নিয়ে বাজারে যেয়ে ছেলের পছন্দের বাজার করে আনলেন। মা এবং মেয়ে মনের আনন্দে রান্না করতে লাগলেন।

বীথি ফোনে মেসেজ দিয়ে যুঁথিকে তাড়াতাড়ি আসতে বললো, জানালো, রফি ফিরে আসছে। বীথি জানালো তাঁর ফিরতে দেরী হবে, ক্লাস শেষে বিকালে গ্রূপ স্টাডি আছে।

রান্না শেষে মা ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন, কিন্ত মনে হলো ছেলের সেমাই খেতে খুব পছন্দ, সেটা করতে ফের রান্না ঘরে গেলেন। বীথি ঘরে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো, মাঝে মাঝে রান্নাঘরে যেয়ে দেখে ভাইকে খুশি করার জন্য কোথাও কোন ত্রুটি আছে কিনা।

অবশেষে, দরজায় নক করার আওয়াজ এলো, বীথি দৌড়ে যেয়ে দরজা খুললো, ভাইযের প্রতি নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলো, ভাই তাঁর একা আসেনি, আরেক বন্ধুর কাঁধে ভড় করে এসেছে, নেশাতুর চোখ ঢুলুঢুলু, মাথা বারবার বন্ধুর কাঁধে হেলে পড়ছে। রফি জড়ানো গলায় বললো, আমার ব্যাথাটা খুব বেড়েছে রে বীথি, ডাক্তারের ওষুধে এমন হচ্ছে। আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।
রফি রিহ্যাবে যাবার আগের দিনগুলোতে এভাবে এসেছিল, নেশা ছাড়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে, একবার যাচ্ছেতাই ব্যাবহার করে তার কানের দুলটাও খুলে নিয়ে গিয়েছিল। এসব দুঃসহ স্মৃতি মুহূর্তের মধ্যে মূর্ত উঠে। বিথীকে এখন মহাবিশ্বের কঠিন এক ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে দরজা বন্ধ করে মায়ের সামনে কেউ না আসার নাটক সাজাবে নাকি মা'র চলমান দুঃখ যন্ত্রণা আরো বাড়ানোর সাক্ষী হবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩১
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×