somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঁচ হাজার বছর আগের মিশরে বাংলাদেশের স্কুলছাত্র অনন্য;অবশিষ্ট অংশ

২৮ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আমি বুঝতেও পারিনি ব্লগটি শেষ অংশ বারবার কেটে গিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার ভুল। পরে বুঝলাম সামু'র লিমিটি ক্রস করে যাচ্ছে। যাই শেষ অংশটুকু এখানে দিলাম)
মূল অংশ



পূর্ব প্রকাশের পর-----------

কথা বলতে বলতে তারা নীল নদের পাড়ে চলে এসেছে। অনন্য খেয়াল করেছে- যে সব রাস্তা দিয়ে তারা এসেছে তার প্রায় সবই নীল নদ থেকে ফসলের জমিতে পানি নিয়ে যাওয়ার জন্য খাল খননের ফলে গড়ে উঠেছে। বিশাল নীল নদের পাড়ে এসে ইমহোটেপ গাধার পিঠ থেকে নামলেন। অনন্য নেমে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। দূরে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট নৌকা ভেসে যাচ্ছে। ইমহোটেপ অনন্যকে সাথে নিয়ে কিছুটা হেটে একেবারে নদীর কাছে গেলেন।

‘তুমি নিশ্চয়ই জান, নীল হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী। নীল আবার দুই ধারায় প্রবাহিত হোয়াইট নীল এবং ব্লু নীল। বহু চেষ্টার পর তোমাদের সময়ে ২০০৬ সালে ‘গ্লোবাল পজিসনিং সিস্টেম(জিপিএস)’ ব্যাবহার করে তোমরা জানতে পেরেছ যে, নীল নদের মূল উৎপত্তি স্থল রুয়ান্ডা। ভিক্টোরিয়া লেক, ইথিওপিয়া, সুদান এবং মিশর হয়ে ৬,৭০০ কি.মি. দীর্ঘ নীল নদ মিশেছে ভূ-মধ্য সাগরে। আর এই বিশাল পথ পরিক্রমায় সে জন্ম দিয়ে মিশরীয় সভ্যতা এবং নুবিয়ার (বর্তমান সুদান) মত সভ্যতার। এই নদীই আমাদের জীবন-জীবিকা সবকিছুর গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। চলো আমাদের নৌকা প্রস্তুত আছে। তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসি সাক্কারার পিরামিড থেকে।

ইমহোটেপ অনন্য-কে সাথে নিয়ে রাজকীয়ভাবে সাজানো বৃহৎ নৌকাটিতে চড়ে বসলেন। পথে যেতে যেতে অনেক স্থানে অনন্য দেখতে পেল কৃষকরা এক প্রকার লিভার যন্ত্রের সাহায্যে ফসলের জমিতে অনেক উঁচু করে পানি তুলছে। অনন্য জানে এই পদ্ধতি প্রায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে মিশরীয়রা ব্যবহার করছে। একে বলে সাডফ (Shaduf)। এটি মূলত হাইড্রোলিক বিজ্ঞান।


সাক্কারার সেই স্টেপ পিরামিড, রাজা জেসেরের সমাধি

দীর্ঘ সময় ধরে চলার পর অবশেষে একটি স্থানে এসে ইমহোটেপ নৌকা থামাতে নির্দেশ দিলেন। নদীর তীর থেকে আবার গাধার পিঠে চড়ে এক সময় তারা থামল একটি বিরাট স্থাপনার সামনে। দেখেই অনন্য চিনতে পারল। এই সেই পিরামিড, যা পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম পিরামিড। এখানে শায়িত আছেন রাজা জেসের। এই পিরামিডটি ইতিহাসে স্টেপ পিরামিড নামে প্রসিদ্ধ। পিরামিডটিতে ছয়টি ধাপ থাকাতেই এর এমন নাম হয়েছে। ইমহোটেপ বললেন, ‘এই আমার কীর্তি যা তোমাদের পৃথিবীতেও টিকে রইবে।’ অবশ্য সবচেয়ে অক্ষত পিরামিডটি তোমরা আবিস্কার করবে গিজায়। গিজায় চতুর্থ রাজবংশের রাজা খাফরির বৃহৎ ঐ পিরামিডটির পাশাপাশি একক পাথরের বৃহত্তম মূর্তি স্ফিংসও তোমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হবে। অনেকক্ষণ ঘুরে পিরামিড দেখে অনন্য এবং ইমহোটেপ আবার ফিরতে লাগল নীল নদের তীরের দিকে। এক সময় তারা আবার ফিরে এলো যেখান থেকে রওনা দিয়েছিল সেখানে।

ইমহোটেপ এবার অনন্যকে নিয়ে এলেন তার বিজ্ঞানাগারে। বিজ্ঞানাগারে অসংখ্য শিষ্যকে তিনি চিকিৎসা, স্থাপত্যবিদ্যা এবং গণিত শেখান। বিরাট ঘরটিরে মধ্যখানে লম্বা একটি মানবদেহ দেখে অনন্য সেদিকে এগিয়ে গেল। আসলেইতো এটি মানুষর শরীর। কিন্তু এর চেহারা এতটা শুকিয়ে গেল কিভাবে? অনন্য ইমহোটেপকে জিজ্ঞাসা করল,‘আপনি কি কারও মমি প্রস্তুত করছেন?’। ইমহোটেপ এগিয়ে এলেন অনন্যর কাছে। তার চোখে-মুখে হাসির ঝলক। তিনি বললেন,‘তুমি অত্যন্ত প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, অনন্য।’ হ্যা এটি রাজ পরিবারের একজন সদস্যের মৃতদেহ। আমি এই দেহটিকে মমি করছি। এর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭০ দিন আগে। মমি প্রস্তুত করার জন্য এখনও এই দেহটিকে এইভাবে কেমিক্যাল দেয়া অবস্থায় আরও ৫ দিন রাখতে হবে।


মমিকরণের শেষ পর্যায়ে ইমহোটেপের বিজ্ঞানাগারে রাখা মৃতদেহ

অনন্য বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে রইল মমি হতে চলা মৃতদেহটির দিকে। এই তাহলে সেই পদ্ধতি যার ফলে মানবদেহকে হাজার হাজার বছর সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে! সে ইমহোটেপকে বলল, ‘আপনি সত্যিকার অর্থেই একজন বিষ্ময়কর প্রতিভা! এই প্রাচীন যুগে এমন প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জন করে আপনি বিশ্বকে ধন্য করেছেন।’ ইমহোটেপ অনন্যকে এবার বললেন, ‘তুমি অনেকক্ষণ এসেছ। তোমাকে আবার ফিরে যেতে হবে। তোমার শরীরে আরও শক্তি সঞ্চয় করার প্রয়োজন। চলো টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে।’

খাবার টেবিলটি পাথরের। সুদৃশ্য টেবিলে সাজানো রয়েছে নানা ধরণের পাথরের পাত্র যার সবই খাবার এবং পানীয় দ্বারা পরিপূর্ণ। ইমহোটেপ অনন্যর দিকে একটি ফলের পাত্র এগিয়ে দিয়ে খেতে বললেন। অনন্য খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল,‘ আপনার সময়ের পরের মিশরের ইতিহাস কি আমাকে আরও কিছুটা বলবেন? বিশেষ করে গিীক এবং রোমানদের আগমনের বিষয়ে।’

ইমহোটেপ আবার বলা শুরু করলেন,‘ নানান চড়াই উৎরাই পার হয়ে মিশর এগিয়ে যেতে থাকবে। আমাদের পাশের আর একটি উন্নত সভ্যতা হলো নুবিয়া যাকে তোমরা সুদান নামে চিনবে। অধিকাংশ সময় মিশর কর্তৃক নুবিয়া অধিকৃত থাকবে আবার কখনও কখনও তারাও মিশর দখল করবে তবে সাংস্কৃতিক আধিপত্য থাকবে মিশরেরই। খ্রিস্টপূর্ব ২১৩৪ সময়ের দিকে রাজা মেনতুহোতেপ এমনই এক বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে মিশরকে আবার একত্রিত করবেন। মিশরের ইতিহাসকে আরও গৌরবময় করবেন এক রানি। হাটসেপটসুট হবেন বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাধর নারী। ইতিহাসে তার সাথে শুধু তুলনা করা যেতে পারে ক্লিওপেট্রা, ক্যাথেরিন দ্যা গ্রেট এবং রানি প্রথম এলিজাবেথের। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর পর পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিতে প্রস্তুত থাকলেও তার সৎ ভাই দ্বিতীয় থুতমস অল্প কিছুদিন রাজত্ব করবেন, যার সাথে নিয়মানুযায়ী হাটসেপসুটের বিবাহ হবে কিন্তু তাদের জন্মাবে না কোন সন্তান। ঐ সময়েও হাটসেপসুটই সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্র পরিচালনা নীতির বিষয়ে। তিনি প্রায় পনের বছর মিশর শাসন করবেন এবং নকল দাড়ি-গোফ রাখবেন এবং পুরুষের পোশাক পরিধান করবেন তার কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য। এমনকি তিনি নিজেকে পরিচয় দেবেন ঈশ্বরের কন্যারূপে। হাটসেপসুটকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন আরেক প্রখ্যাত ফারাও তৃতীয় থুতমস যে কিনা তার ভাগ্নে। আমি পূর্বেই তোমাকে আখেনআটেন সম্পর্কে বলেছি। তার কিছুকাল পরে আসবে তোমাদের সময়ে বিস্ময় হয়ে থাকা বালক রাজা তুতেনখামেন। ৮ বছর বয়সে ফারাও হওয়া এই বালক মাত্র ১৮ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মারা যাবে। এই রাজার স্বর্ণখচিত মুখমণ্ডলের প্রতিকৃতি সম্ভবত তোমাদের বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিকৃতি। এই রাজার সমাধি পিরামিডে অসংখ্য ধনরত্ন পাওয়া যাবে যা তোমাদের বুঝতে সাহায্য করবে প্রাচীন মিশর কতটা ধনী। আর এক ফারাও তোমাদের কাছে খুবই পাঠ্য বিবেচিত হবেন। তিনি উনিশতম রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় রামেসিস। তিনি সুদীর্ঘ ৬৭ বছর মিশর শাসন করবেন। অসংখ্য স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততির অধিকারী এই রাজা তার নাম যেন সবাই স্মরণ রাখে সে উদ্দেশ্যে সকল স্থাপনায় নিজের নাম খোদাই করে রাখবে। এমনকি নিজের সুবৃহৎ প্রতিকৃতিও করে রাখবে সে। দ্বিতীয় রামেসিসকে তোমরা বিবেচনা করে থাক ফারাওদের মডেল হিসেবে।মিশরের এই জৌলুস অবশ্য চিরস্থায়ী হবে না।


ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস-এর মমিকৃত মরদেহ


দ্বিতীয় রামেসিসের বিশাল মূর্তি

ইমহোটেপের কথার সূত্র ধরে অনন্য বলল, ‘আমি শুনেছি একসময় পারসিকরা মিশর দখল করে। তারপর আবার মহাবীর আলেকজান্ডার পারসিকদের কাছ থেকে মিশর দখল করেন। স্থানীয় অধিবাসীরা আলেকজান্ডারকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানায়।

ইমহোটেপ আবারও শুরু করলেন,‘তুমি ঠিকই জেনেছ। ৫২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারসিকদের দখলে যাবে মিশর। কিন্তু ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেসিডোনিয়ার রাজা গ্রিক বীর তৃতীয় আলেকজান্ডার(দ্যা গ্রেট) মিশর দখল করবেন। তাকে অবশ্য স্থানীয়রা স্বাগত জানাবে পারসিকদের হাত থেকে জনগণের রক্ষাকর্তা হিসেবেই। আলেকজান্ডার একের পর এক রাজ্য দখলে ব্যস্ত থাকতে থাকতে এক সময় মৃত্যুবরণ করবেন। ইতিহাসের এক অনন্য পরিণতি হবে এই যে, তাকে শেষ পর্যন্ত আলেকজান্দ্রিয়ায় এনে সমাহিত করা হবে। আলেকজান্দ্রিয়ার নাম তারই নামে রাখা হবে। ক্রমেই এটি হয়ে উঠবে গ্রিক-রোমান শাসনকালের মিশরের প্রধান শহর ও রাজধানী। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার অন্যতম প্রধান জেনারেল প্রথম টলেমি সটার ৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে এবং টলেমি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করবে যার রাজধানী হিসেবে তারা গড়ে তুলবে অপূর্ব সুন্দর আলেকজান্দ্রিয়াকে। এই টলেমি রাজবংশের সময় নির্মিত হবে আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত বাতিঘর যা হয়ে উঠবে প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যগুলোর অন্যতম। আলেকজান্দ্রিয়ায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের অসাধারণ অগ্রগতিও হবে এই সময়ে যার সর্বশেষ পুরোধা হবেন থিওনের কন্যা হাইপেশিয়া যার কথা তোমাকে আমি আগেই জানিয়েছি। মিশরে টলেমি রাজবংশের শেষ শাসক হবেন রানি সপ্তম ক্লিওপেট্রা। ১৭ বছরের ক্লিওপেট্রা ৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রানি হলেও তাকে বিয়ে করতে হবে ছোট দুই ভাই যথাক্রমে অষ্টম ও নবম টলেমিকে।’ এ পর্যন্ত বলে ইমহোটেপ একটু থামলেন।


ক্লিওপেট্রা

‘এরপর রোমানদের কাছে কিভাবে ক্লিওপেট্রার পতন ঘটবে তা একটু বলুন।’ অনন্য উৎসাহের সাথে জানতে চাইল।

ইমহোটেপ আবারও বলতে আরম্ভ করলেন, ‘৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অষ্টম টলেমি তার উপদেষ্টাদের পরামর্শে ক্লিওপেট্রাকে নির্বাসনে পাঠাবে সিরিয়ায়। এর ফলশ্র“তিতে ইতিহাসের আরেক মহানায়ক রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার আক্রমণ করবে আলেকজান্দ্রিয়া এবং পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে ক্লিওপেট্রাকে। নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ক্লিওপেট্রা রোমান সেনানায়ক সিজারের সাথে সম্বন্ধ রাখবে। সহজ বিজয়ের অহমিকায় করা সিজারের একটি উক্তি হয়ে যাবে বিখ্যাত। তিনি বলবেন,‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।’ ইংরেজি জুলাই মাসের নাম জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে করা হয়েছে। সিজারের সাথে ক্লিওপেট্রার প্রণয় হবে ইতিহাসের আরেক উপাখ্যান। ক্লিওপেট্রার গর্ভে সিজারের একটি সন্তানও হবে। সিজারের সাথে সে রোমেও কিছুকাল অবস্থান করবে। কিন্তু সিজারের হত্যাকাণ্ডের পর রোম থেকে আলেকজান্দ্রিয়ায় ফিরে আসবে ক্লিওপেট্রা।’


সিজারের জীবদ্দশায় তৈরি একমাত্র এই প্র্রতিকৃতিটিই পাওয়া যায়

অনন্য আবারও জিজ্ঞেস করল, ‘আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরিটির ভাগ্যে কি ঘটবে?’

ইমহোটেপ একটু বিমর্ষভাবে বললেন, ‘সিজার মানব সভ্যতার এক অপুরণীয় ক্ষতি করবে আলেকজান্দ্রিয়ার বিশ্বশ্রেষ্ঠ লাইব্রেরিটি পুড়িয়ে দিয়ে। কত অমূল্য জ্ঞানের ভাণ্ডারকে যে এই জেনারেল ধ্বংস করবে তা ভাবতে আমার কষ্ট হয় অনন্য। তুমি যে বইটির সাহায্যে এখানে আসতে পেরেছ সে বইটিও ঐ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ছিল। বইটির মূল লেখক আমি। অনেক পরে আমার এক অনুগামী এটি পুনরায় লিখবে তবে মূল লিপির তেমন কোন পরিবর্তন করবে না। আর ভাগ্যক্রমে অনেকটা অক্ষত অবস্থায় বইটির টিকে যাওয়ায় তুমি বইটি পাবে।’

এবার অনন্যর অনেক কিছু বুঝতে সহজ হলো। তাহলে ইমহোটেপই এই বইয়ের মূল স্রষ্টা! সে কারণেই বইটি প্রথম দিকের হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লেখা। পরবর্তী লেখক এই মৌলিক কাঠামোতে যেন কোন পরিবর্তন না হয় সেজন্য পুরোনো লিপি অক্ষুণœ রেখেছে।

‘ইতিহাস কত নির্মম দেখ- সিজারের হত্যাকাণ্ডের পর তারই এক জেনারেল এ্যান্টনির সাথে প্রণয়ে আবদ্ধ হবে ক্লিওপেট্রা এবং ফলশ্র“তিতে সিজারের উত্তরসূরি অক্টভিয়ান আক্রমণ করবে এ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রার সাম্রাজ্য। এই অক্টভিয়ানই পরে অগাস্টাস নাম গ্রহণ করবে এবং তার নামেই ইংরেজি আগস্ট মাসের নাম করা হবে। পরে অপরাজিত এ্যান্টনি আত্মহত্যা করবে নিজের তরবারিতে এবং রোমানদের হাতে ধৃত ক্লিওপেট্রাও পরবর্তীতে আত্মহননের পথ বেছে নেবে। সম্ভব হলে তুমি সেই সময়ে পরিভ্রমণ করবে এক সময়। এসব ইতিহাস নিয়ে তোমাদের বিশ্বের কবিরা লিখবেন অসংখ্য কবিতা, নাটক ও গল্প। এভাবেই মূলত সমাপ্তি ঘটবে বিশ্ব সভ্যতার এক অনন্য অধ্যায়ের। হাজার বছরের ঐতিহ্যময় আমার মিশর এরপর একের পর এক বিদেশি শক্তির দখলের খেলায় পতিত হবে। ৬১৭ সালে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য দখল করে নেবে জার্মান ‘ট্রাইব’-রা। রোমানদের সেই দুর্বলতার সুযোগে ৫ বছর পরে পারসিকরা আবারও আলেকজান্দ্রিয়ার দখল নেবে। ৬৪২ সালে আরব জেনারেল আমর ইবনে আল আস মিশর দখল করবে পারসিকদের হটিয়ে। তিনি অবশ্য তার রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সরিয়ে নেবেন নীলের পূর্ব অববাহিকায় আল ফোসাত নগরে যা তোমাদের সময়ে এসে আধুনিক কায়রো নগরীতে পরিণত হবে। আলেকজান্দ্রিয়ার হৃত গৌরব পরবর্তী ১০০০ বছরে আর ফিরে আসবে না যতদিন না সুয়েজ খাল খনন করা হবে।’ একটানা অনেকক্ষণ কথা বলে ইমহোটেপ এবার একটু দম ফেললেন।

অনন্য মুগ্ধচিত্তে তন্ময় হয়ে শুনছিল এই মহান জ্ঞানীর কথা। অনন্যর কাছে যা অতীত ইতিহাস ইমহোটেপের কাছে তা ভবিষ্যৎ। অথচ অনন্যর থেকেও অনেক বেশি তথ্য দিয়ে তিনি বলে গেলেন তার দেশের ভবিষ্যতের কথা। ফেরার সময় হয়ে এসেছে। অনন্য কথা শুনতে শুনতে অপরিচিত খাবারগুলো বেশ স্বচ্ছন্দে খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষ করে সে ইমহোটেপকে আলিঙ্গন করে নিল গভীর আবেগে। অনন্য জানালো,‘হে মহান জ্ঞানতাপস, আমি আজ বিদায় নিচ্ছি। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার আতিথ্য আমি আবারও গ্রহণ করব। আমি আবারও ফিরে আসব এই কালো মাটির নীল নদ অববাহিকায়। আমার যদি জ্ঞান এবং সক্ষমতা থাকত আমিও এমন কিছু করতাম যা আপনাকে নিয়ে যেতে পারত আমার কালে, আমার সোনার বাংলাদেশে।’
ইমহোটেপ অনন্যর আলিঙ্গন ছেড়ে ঘরের কোণের তাক থেকে একটি পাথরের পাত্র এনে অনন্যকে দিয়ে বললেন,‘এটি সাথে করে নিয়ে যাও। তোমার যখন আবার এরকম ভ্রমণে যেতে ইচ্ছে করবে, এটি থেকে কিছুটা পান করে নেবে। তোমার শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা এই পানীয় ভালোমতই পূরণ করবে। আর তোমার জন্য আমার একটি উপদেশ-মানুষের কল্যাণে কাজ করো, তোমার জীবন যেন অপরের জন্য কল্যাণকর হয় সেই ব্রত সদাই বহন করো আপন হুদয়ে। আর হ্যা আমি গর্বিত তুমি এমন একটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছ যে প্রতিষ্ঠান তোমার মনে বিশ্বকে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তোমার বিদ্যালয়ের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানিও। আবার যদি আসতে চাও আমার মিশরে, চলে এসো নির্দ্বিধায়। শুভ বিদায়।’

‘শুভ বিদায়।’ -অনন্যর চোখের কোণে জল। হাত নেড়ে অনন্য আবারও বিদায় জানাল মহান ইমহোটেপকে। এবার সে বের করল তার রহস্যময় সেই বইটিকে। ইমহোটেপের প্রতিকৃতির পৃষ্ঠাটি বের করল। একবার ছবির দিকে একবার স্বয়ং ইমহোটেপের দিকে তাকিয়ে নিল। না, ঠিকই আছে, হুবহু একই প্রতিকৃতি। অনন্য সূত্র প্রয়োগ করে চাপ দিল নির্দিষ্ট স্থানে। ধোয়া আসতে শুরু করেছে। সমস্ত শরীর কিছুক্ষণ পরই ঝাকুনি দিয়ে উঠল।
----------------০--------------০---------------------০----------------
চোখ মেলে অনন্য নিজেকে আবিস্কার করল হোস্টেলে নিজের রুমের মেঝেতে। বুকের কাছে ধরা আছে সেই বইটি। এতক্ষণ কি তবে স্বপ্ন দেখছিল সে? একে একে সব মনে পড়তে লাগল। ইমহোটেপের দেয়া পানীয়ের কথা মনে পড়তেই হাত চলে গেল কোমরের কাছে। একটি পাথরের পাত্র আবিস্কার করল সে। না, স্বপ্ন নয়, সত্যি! ইমহোটেপের দেয়া সেই পরম উপাদেয় পানীয়। প্রাত্রটি খুলে কিছুটা পান করে আবার মুখ আটকে দিল। অনন্য উঠে নিজের আলমারিটা খুলে বইটি এবং পানীয়ের পাত্রটি স্বযতেœ ভিতরে ঢুকিয়ে আবার বন্ধ করে দিল।

‘অনন্য, এই অনন্য! কি ব্যাপার কখন থেকে ডাকছি, ঘুমিয়েছিস না কি?’-শিহাব চিৎকার করছে দরজার বাইরে থেকে। অনন্য দরজাটি খুলে দিল। শিহাব ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঘরে ঢুকল। ‘কি রে ঘুমিয়েছিলি?’- শিহাব পা থেকে কেডস খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল। অনন্য মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল,‘তুইতো এখন গোসল করবি। আমি একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি।’ অনন্য বের হয়ে এলো রুম থেকে রাস্তায়। হাঁটতে হবে কিছুক্ষণ।
--------------------------------------শেষ---------------------------
উৎসর্গ: নাফিস ইফতেখার ও ইমন জুবায়ের যাদের ব্লগ আমার এই লেখার প্রেরণার অন্যতম উস।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:৩৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×