somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ : অঙ্গ রাজ্যের মত আচরণ

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

07 Jan, 2014 মোবায়েদুর রহমান
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন তারা বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে নিয়ে এমন সব কান্ড-কীর্তি করছে, যার ফলে বহির্বিশ্বে ভ্রম হয় যে, বাংলাদেশ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। গত ৫ জানুয়ারী জাতীয় সংসদের সাজানো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুস্পষ্টভাবে একটি পক্ষের প্রতি অন্ধ সমর্থন জানায়। শুধু অন্ধ সমর্থন জানানোই নয়, সেই পক্ষ বা দলটির অবস্থানকে সমর্থন করা নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি শুরু করে যে এর ফলে বিশ্বসম্প্রদায় সুস্পষ্টভাবে ভারতের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। আর ভারতের এই স্বঘোষিত মুরুব্বীগিরির শিকার হয় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থানকে শুধু অন্ধভাবে সমর্থন করাই নয়, সেই অবস্থানকে ভারত দুনিয়া জোড়া গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড এবং গণচীন ভারতীয় অবস্থানের বিরোধিতা করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের অনেক সিনিয়র নেতা প্রকাশ্যে বলেন যে, জামায়াতে ইসলামী একটি মৌলবাদী দল। তাকে সমর্থন করে বিএনপি মৌলবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল। তারা যদি আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশে মৌলবাদ এবং সেই সঙ্গে ইসলামী জঙ্গীবাদ নির্মূল হবে।
সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার জামায়াতে ইসলামী মৌলবাদী দল কিনা, তারা জঙ্গিবাদকে প্রমোট করে কিনা, সেগুলি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করে বিএনপি মৌলবাদ এবং ইসলামী জঙ্গীবাদকে উৎসাহিত করছে কিনা, সেটিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে কিনা, সেটিও একান্তভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই বিষয়গুলি স্থির করবে বাংলাদেশের জনগণ। আওয়ামী লীগকে অন্ধভাবে সমর্থন করার ফলে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এই মতানৈক্য প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের সাথে মতবিরোধ দূর করার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা দিল্লি সফর করেন। তার পরেও এই বিরোধ দূর হয়নি।
ভারত বনাম বিশ্ব
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অনড় কিন্তু অযৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেন, সেটি ভারতীয় চাপের ফল। ভারত চায় যে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল সমূহকে বাদ দিয়ে প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগ ভারতপন্থী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলোকে নিয়ে একা একাই নির্বাচন করুক। ভারতের এই চাপের ফলে অবশেষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অন্যান্য ভারতপন্থী ছোট দল যথা, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি প্রভৃতিকে নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে। নির্বাচনটি যে ছিল এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম তামাশা সেটি গত ৫ জানুয়ারী নানান অপকর্মের মাধ্যমে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৪৭টি আসনে মাত্র ১২টি দল এবং ৩৯০ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। তারপরেও সেখানে মাস্তানি ও জাল ভোটের ছড়াছড়ি সেই নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগার ছাড়া আর কারও কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল না। ১৫৩ জন সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ১৪৭টি আসনে যে ভোট প্রদান করা হয়েছে সেটি মোট ভোটারের কত শতাংশ সেই তথ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ২৮ ঘন্টা পরেও, অর্থাৎ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেনি। এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, তারা অর্থাৎ সরকারের অঙ্গুলি হেলনে নির্বাচন কমিশন ভোটার উপস্থিতির হার বেশি করে দেখানোর জন্য ক্যালকুলেটর নিয়ে বসেছেন। অনেক বুদ্ধিজীবী এটিকে একটি বিতর্কিত নির্বাচন তো দূরের কথা, নির্বাচন বলতেই নারাজ। তেমন একটি অবাঞ্ছিত নির্বাচনের পক্ষে ভারত বিশ্ব সভায় দালালী করতে নেমেছে। এই খবর দিয়েছে ঢাকার একাধিক পত্রিকা। তাদের সংবাদের উৎস দিল্লীর শাসক গোষ্ঠী। অথচ ভারতের এই উদ্যোগে মোটেই সাড়া দিচ্ছে না অবশিষ্ট বিশ্ব। এই নির্বাচন তথা নতুন সরকারকে ভারত ছাড়া অবশিষ্ট বিশ্ব কত সহজে স্বীকৃতি দেবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে যে, ভারতের প্ররোচনায় বাংলাদেশ আমেরিকার অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করেছে দুই বার, জাতিসংঘ মহাসচিবের টেলিফোন বার্তা অগ্রাহ্য করেছে দুই বার এবং মহাসচিবের প্রতিনিধিকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, এমনকি এই সরকারের মিত্র রাশিয়াও এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। এখন আমেরিকার ইশারায় জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যাতে করে অবরোধ আরোপ না করে সে ব্যাপারে ভারত তদবির শুরু করেছে। যদি কোন স্যাংশন আসে তাহলে সেটা ভারতীয় কুবুদ্ধির কারণেই আসবে।
বাংলাদেশ সিকিম ভুটান নয়
১৯৯১সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শ্লোগান ছিল “সিমিক নয় ভুটান নয়, এদেশ আমার বাংলাদেশ।” অবশ্য পরবর্তীকালে বিএনপির কন্ঠে এই শ্লোগানটি ম্লান হয়ে যায়। একদিকে বিরোধী দলের দুর্বলতা অন্যদিকে সরকারী দলের নতজানু ভূমিকার কারণে ভারত বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসার সাহস পায়। অথচ বাংলাদেশকে একটি করদরাজ্য বা আশ্রিত রাজ্য হিসাবে ব্যবহার করার যে মানসিকতা দিল্লীর কংগ্রেস সরকার দেখাচ্ছে তার সমালোচনা উঠেছে খোদ ভারতের মধ্যেই। দি ‘হিন্দু’, ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ প্রভৃতি পত্রিকা শিব শংকর মেননদের এই বাংলাদেশ নীতির সমালোচনা করছে। এমনকি কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিও এই মনোভাবের সমালোচনা করছে। বিজেপি, দি হিন্দু, দি হিন্দুস্তান টাইমস প্রভৃতি ভারতীয় দল ও পত্রিকা শেখ হাসিনাকে বলছে যে, বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাথে মিলেমিশে তার উচিৎ হবে একটি অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
বাংলাদেশ সেক্যুলার হবে না
স্বাধীনতার পূর্বে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র এবং কোন নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে ধর্ম নিরপেক্ষতার উল্লেখ ছিল না। এমনকি গত ৫ তারিখের নির্বাচন উপলক্ষে প্রণীত নির্বাচনী ইস্তেহারেও স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন আওয়ামী সরকার প্রণয়ন করবে না। অথচ স্বাধীনতার পর ভারতীয় সংবিধানের আদলে বাংলাদেশের সংবিধানে সেক্যুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত হয়। এবারও ভারতের চাপে সেক্যুলারিজম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে চালু রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র ৫ জানুয়ারী অর্থাৎ নির্বাচনের দিন ২৪ ব্যক্তি প্রাণ দিয়েছেন। বিগত ফেব্রুয়ারী থেকে ৫ জানুয়ারী পর্যন্ত কমপক্ষে ৪শতাধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এরা কেউ সেক্যুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দেন নাই। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার উৎখাত এবং ইসলামের শাশ্বত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্যই তারা প্রাণ দিয়েছেন। ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে তার অঙ্গরাজ্যের মত আচরণ করে তাহলে সেদিন সুদূর নয় যেদিন এই সব লড়াকু মানুষ ভারতের দাদাগিরির বিরুদ্ধে অযুত কন্ঠে আওয়াজ তুলবে।
উৎসঃ Daily Inqilab
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×