somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক এর সাতকাহন

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাস্তিক! নাস্তিক !নাস্তিক!
নাস্তিক মানে কি ??? নাস্তিক কি করে ??? নাস্তিক খায় না মাথায় দেয় ??? এর মানে এ বা কি ???? নাস্তিক মানে ই হল খারাপ নাস্তিক মানে ই হল সকল অপরাধ এর কেন্দ্র নাস্তিক মানে ই হল মিথ্যার বসতি আহা ! কি মজা পাইলাম উত্তর এ নাস্তিক এর সাথে সম্পর্ক মানে ই হল নাউজুবিল্লাহ আর যদি বলতে পারি আমি নাস্তিক তা হলে তো অস্তাকফিরুল্লাহ ছাড়া উপায় নাই>>> এই হল আমাদের বাঙ্গালিদের অবস্থা । কিন্তু ওহে আস্তিকগন কোনদিন কি ভেবে দেখেছেন নাস্তিক কেন ???? জানি তো উত্তর দিবেন এই সকল চুদুর-বুদুর বিষয় নিয়ে ভাবার সময় নাই কিন্তু অপ্রিয় হইলেও সত্যি আপনাগো চিন্তা চেতনা এখন নাস্তিক গো লয়াই । তাইলে আসেন আজ জাইনা জান নাস্তিক কি জিনিস এবং কেন ই বা নাস্তিক রা নাস্তিকতা করে ।
নাস্তিক কি এবং কেন ???
নাস্তিকেরা ধর্মকে ও তার অবদানকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এটা আরো একটা ভুল ধারণা। ধর্মকে তুচ্ছজ্ঞান করা আর ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করা একই ব্যাপার নয়। এটা সত্যি যে কোনো একটা বিশেষ ধর্মের সমস্ত কিছু নাস্তিকেরা মেনে চলে না, বরং নিজস্ব বিবেক বা চিন্তাই তাদের পরিচালিত করে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক ভালো কাজের পেছনে যে ধর্মের বড় ভূমিকা আছে তাকে অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। আবার উল্টোদিকে ধার্মিকেরা তাদের ধর্মের প্রতিটি পঙতিকে সঠিক ও নির্ভুল বলে দাবী জানিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন ব্যাখ্যা এনে তার সত্যতা প্রতিষ্ঠার যে ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে - নাস্তিকেরা তা থেকে বিরত থাকে।প্রচলিত আরেকটি ভুল ধারণা হল নাস্তিকতার সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। কথাটা আক্ষরিক অর্থে সত্যি হলেও বাস্তবে এর ব্যতিক্রম খুব কমই দেখা যায়। আমেরিকা ও ব্রিটেন - এই দুটি দেশই বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবথেকে বেশী সাহায্য করছে। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের মধ্যে ভোটে ৯৩%-ই দাবী জানিয়েছেন যে তারা নাস্তিক। যেখানে আমেরিকার জনসংখ্যার ৯০%ই আস্তিক। তাহলে, বিজ্ঞানী হওয়ার সাথে নাস্তিকতাবাদের সম্পর্ক খুবই গভীর – নব্বই শতাংশ আস্তিকের জনতা থেকে বিজ্ঞানীদের মধ্যে উলটো নব্বই শতাংশ নাস্তিক হওয়া এই দৃঢ় সম্পর্কেরই পরিসংখ্যান।সাধারণভাবে দেখে এসেছি অনেক ধার্মিকই নাস্তিক বলতেই হিটলার, স্ট্যালিন, মাও আর পল পটের মত দাম্ভিক ডিক্টেটরের কথাই বলে থাকেন। এখানে একটা ব্যাপার বলে রাখা ভাল, ব্যক্তির ব্যাপারে পরিসংখ্যান কখোনো সামগ্রিক পরিসংখ্যানের জায়গা নিতে পারে না। দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা বিশ্বের অন্য জায়গার থেকে বেশী বলে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েরা অন্য জায়গার থেকে বেশী অগ্রসর - এটাও যেমন ভুল ধারণা, তেমনই কয়েকজন বিচ্ছিন্ন নাস্তিক ডিক্টেটরের আচরণ থেকে বাকি নাস্তিক বিজ্ঞানীদের মাপা যায় না। নিজ দেশ বা জাতির শ্রেষ্ঠত্বে অন্ধ অনেক ডিক্টেটর যেমন অন্য দেশ বা জাতির ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন তেমনই নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচারের নমুনাও ইতিহাসে কম কিছু নেই। তাই আলাদা করে নাস্তিকদের এ জন্য দায়ী করার কোনো কারণ দেখি না।সবশেষে আসা যায় বিবেকের কথায়। এটা খুব প্রচলিত যে নাস্তিকেরা বিবেকদংশনে জর্জরিত হন না। কারণ নাস্তিকদের কাছে তাদের নৈতিকতার জন্য কোনো ভিত্তি নেই - আস্তিকদের কাছে ধর্মগ্রন্থ যেমন। এমন ভাব যেন - খুন, জখম বা ডাকাতির অভিযোগে যারা অভিযুক্ত হয় তারা অধিকাংশই নাস্তিক। বাস্তবে, যে নাস্তিকেরা কোনো বইকে ধর্মগ্রন্থ স্বরূপ গণ্য করে নিজ মত প্রতিষ্ঠা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তারাই বরং অনৈতিক কাজ করে এসেছে। আস্তিকদের দাবীমত যদি ধর্মগ্রন্থই তাদের নৈতিকতার ভিত্তি হয় - তাহলে সময়ে সময়ে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা পরিবর্তিত হয় কেন? কেনই বা সমস্ত ধর্মপরিচালিত সমাজেও দাসপ্রথা, জাতিভেদ আর লিঙ্গবৈষম্য জায়গা করে নেয়? নাস্তিকদের নৈতিকতার ভিত্তি মানুষের স্বতস্ফূর্ত বিবেক, যে পরিবেশে বড় হয় তার শিক্ষা আর জাতিগত চেতনা। তাই একই ধর্মের বিভিন্ন রূপ দেখা যায় বিভিন্ন অঞ্চলে। আমার নৈতিকতার একটা বড় ভিত্তি আছে আমাদের জিনে - তাই বিচ্ছন্নভাবে বা একাকী বেড়ে ওঠা মানুষও অনৈতিক না হতেই পারে - যতটা একজন তথাকথিত নৈতিক বা ধার্মিক মানুষ হতে পারে।সামগ্রিকভাবে দেখলে ভাল আর খারাপ এই দুটো বিশেষণ নাস্তিক আর আস্তিকতার সাথে জুড়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। ধর্মের অন্ধ সমর্থকেরা নিজের ধর্ম আর বিশ্বাস বাঁচিয়ে রাখতে সদা-সচেষ্ট বলে তারাই এই ভাল-খারাপ ধার্মিকতা দিয়ে বিচার করার স্কেলটা আবিষ্কার করেছেন। নাস্তিকেরা বেশী প্রশ্ন করে বলে দুর্নাম আছে। আমি নাহয় কয়েকটা প্রশ্নের উত্তরই দেবার চেষ্টা করলাম। আমার ব্যক্তিগত মতামতে মানুষকে বিচার করতে গেলে তার মানবিক গুণাবলীর দিকে তাকানোই ভাল - বিশ্বাস নিজস্ব। নাস্তিকদের ঈশ্বর-অবিশ্বাস যদি নতুন নতুন বিজ্ঞানের তত্ত্ব উদ্ভাবনে সাহায্য করে তাহলে ঈশ্বর অবিশ্বাস করে ক্ষতিটা কি হয়?সাম্প্রতিক ভোটে আমেরিকায় অনেকবারই দেখা গেছে যে নাস্তিকতার সাথে কেমন একটা কলঙ্ক জড়িয়ে গেছে। নাস্তিকদের রাজনীতিতে তো আসাই উচিন নয় কারণ নিউসউইকের সার্ভেতে দেখা গেছে মাত্র ৩৭% আমেরিকান একজন যোগ্য নাস্তিক প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। কারণ, নাস্তিকদের একদল হতাশ, বিবেকহীন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুখ এবং মহাজাগতিক পরম শক্তির প্রমাণ বিরোধী মানুষের গোষ্ঠী বলেই মনে করা হয়েছে। এখনও আমেরিকার মাটিতে ৮৭% লোক "কোনোদিনও ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দেহ কিংবা অবিশ্বাস করে নি", আর মাত্র ১০% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে মনে করেছে। এরই মধ্যে আবার নাস্তিকেরা দুর্নামের ভাগিদার। এই দুর্নামের মিথগুলোকে আরো একবার পর্যালোচনা করে দেখা দরকার, কারণ প্রায়ই দেখা যায় সমাজের সবথেকে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞানমনস্করাই নাস্তিক হয়ে থাকে।
১) নাস্তিকেরা মনে করে জীবন অর্থহীন

মজার কথা হল বরং ধার্মিকেরাই মনে করেন জীবন হল অর্থহীন আর কল্পনা করে নেন যে ইহজীবন শেষে পরলোকে গিয়ে তারা ইহজীবনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে তারা আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। বরং নাস্তিকেরাই স্থিরনিশ্চিত যে জীবন হল মূল্যবান। আর যেহেতু আমাদের ভালবাসার কিছুই চিরকাল থাকবে না, তাই তারা বিশ্বাস করেন যে এ জীবনে সব ভালবাসাই অর্থপূর্ণ।

২) মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবথেকে বড় অপরাধগুলোর জন্য দায়ী হল নাস্তিকতা

আস্তিকেরা প্রায়ই দাবী করেন যে পল পট, স্ট্যালিন বা মাও সে তুং-এর হত্যালীলার কারণ তাদের নাস্তিকতা। ফ্যাসিজম আর কমিউনিসমের মূল সমস্যা তাদের ধর্ম-বিরোধিতা নয়, বরং তারা নিজেরাই একেকটা ধর্ম হয়ে উঠেছিল। এদের রাজত্ব তাই একরকমের অনমনীয় বিশ্বাসে চলেছে, আর প্রত্যেকের ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাসী একদল মানুষের তাকে সমর্থন করেছে। এর সাথে বরং ধর্মে মহাপুরুষ-বন্দনার তুলনা করা যায়। আর এদের হাতে মারা গেছে যারা তাদের রাজনৈতিক শত্রু, জাতিগত ভাবে বিরোধী বা দেশের অন্ধ-উন্নতির পথে অন্তরায়। মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠার কারণে কোনো সমাজই কোনোকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

৩) নাস্তিকতা একটি অনমনীয় বিশ্বাস

আব্রাহামিক ধর্মগুলোর ধর্মগ্রন্থগুলোর দাবীমত সেগুলো কোনো না কোনো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের লেখা এবং তাতে মানুষের প্রয়োজনীয় সব তথ্যই দেওয়া আছে। আর তাদের মতে, যারা এই তথ্যের বিরোধিতা করে বা এই দাবী অযৌক্তিক বলে মনে করে তারাই হল নাস্তিক। তাই এই সংজ্ঞানুসারে কাউকে নাস্তিক হতে হলে তার নিজের বিশ্বাসে অনমনীয় না হয়ে শুধু যুক্তিবাদী হলেই চলে। ঐতিহাসিক স্টেফান হেনরী রবার্টস একবার এক আস্তিককে লক্ষ্য করে বলেছিলেন - "আমার মনে হয় আমি আর তুমি দুজনেই নাস্তিক। তুমি যতগুলো ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমি তার চেয়ে একটি কম ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। যখন তুমি বুঝে উঠতে পারবে যে তুমি কেন আর অন্যান্য (ধর্মের) সম্ভাব্য ঈশ্বরকে অস্বীকার করছ, তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে কেন আমি তোমার (ধর্মের) ঈশ্বরকে অস্বীকার করছি"।

৪) নাস্তিকেরা বিশ্বাস করে মহাবিশ্বে সবকিছুই ভাগ্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে

এখন অবধি কেউই জানেন না ঠিক কি ভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা স্থান-কালের সূচনা নিয়ে আদৌ আলোচনা করতে পারি কি না সে নিয়েও আমরা স্থিরনিশ্চিত নই। এই ভাগ্যক্রমে সৃষ্টির যুক্তিটা আসলে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের বিরুদ্ধে বারবার বলা হয়ে এসেছে। রিচার্ড ডকিন্স তার "দ্য গড ডিলিউশন" বইটিতে এই ভুল ধারণাগুলো খন্ডন করেছেন। যদিও আমরা এখনও জানি না আমাদের গ্রহের রসায়ন কিভাবে প্রাণের উদ্ভবে সাহায্য করেছিল, কিন্তু আমরা জেনে গেছি যে আমাদের এই জৈববৈচিত্র্য ভাগ্যক্রমে আসে নি। বিবর্তনের মূল স্তম্ভ হল হয়ত ভাগ্যক্রমে ঘটা কিছু মিউটেশন আর তার পরে প্রাকৃতিক নির্বাচন। ডারউইন এই প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের নামকরণ করেছিলেন কৃত্রিম নির্বাচনের সাথে এর সাদৃশ্য থেকে। কৃত্রিম নির্বাচনে পালিত পশুর ওপর এই নির্বাচন চালানো হয় - যার ফলে আরো ভাল উৎপাদনশীল পালিত পশু পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নন-র্যান্ডম এবং নির্দিষ্ট অভিমুখেই এগোয়।

৫) নাস্তিকতার সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই

কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মত বিজ্ঞানী হয়েও ধার্মিক হওয়া সম্ভব কিন্তু এটা মেনে নিতেই হবে বিজ্ঞানমনস্কতা ধর্ম থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমেরিকার জনগণের কথাই ধরা যাক। অধিকাংশ সার্ভেতেই দেখা গেছে যে প্রায় ৯০% জনগণই ঈশ্বর-বিশ্বাসী, আবার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের ৯৩% বিজ্ঞানীই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। বিজ্ঞানীরা তো সাধারণ জনগণেরই অংশ। এর মানে বিজ্ঞানচিন্তা তাদের নাস্তিকতার পথে নিয়ে গেছে।

৬) নাস্তিকেরা উগ্র
বিজ্ঞানীরা যখন কোনো বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন না, তখন তারা সেটা সরাসরি স্বীকার করে নেন। যা জানি না তাকে জানি বলে ভাব দেখানোটা বিজ্ঞানে অপরাধ বলেই মনে করা হয়। অথচ এটাই ধর্মের মূলভিত্তি। এটা খুবই বিপরীতধর্মী দাবী যে ধার্মিকেরা একাধারে নম্র ও মিতভাষী অথচ তারা মহাকাশবিদ্যা, জীববিদ্যা বা রসায়নের এমন জ্ঞানও রাখেন বলে দাবী জানান যা একজন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীও রাখেন না। নাস্তিকেরা বিজ্ঞান থেকেই নিজেদের জ্ঞান আহরণ করেন। এটা কোনোমতেই উগ্রতা নয় - এটা একরকম সততা।

৭) নাস্তিকেরা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বিমুখ

নাস্তিকদের কেউ ভালবাসা, বিস্ময় বা মুহূর্তের আনন্দ থেকে বঞ্চিত রাখে না। শুধু নাস্তিকেরা সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনো অবাস্তব বা অবৈজ্ঞানিক দাবী করে না। অনেক খ্রীষ্টান আছেন যারা বাইবেল পড়ে ও যীশুর কাছে প্রার্থনা করে আনন্দময় জীবনযাপন করছে। কিন্তু এতে কি প্রমাণিত হয়? এতে প্রমাণিত হয় কিছু কিছু কোড অব কনডাক্ট বা আচার-আচরণের নীতিমালা ও উপযুক্ত সুশৃঙ্খলতা মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কি দাবী করা সম্ভব যে যীশুখ্রীষ্টই হলেন মানবজাতির একমাত্র রক্ষাকর্তা? সম্ভব নয় - কারণ সময়ে সময়ে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এমনকি নাস্তিকেরাও এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
আইবার আসেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাস্তিক এর অবদান নিয়ে একটু ঝোলা-ঝুলি করি
একজন নাস্তিক নবী রাসুল নিয়ে কটুক্তি করার অপরাধে সারা বাংলাদেশের জাগরণ মঞ্চগুলোর লাখ লাখ মানুষকে নাস্তিক বানানো হল, দেশের জন্য কষ্ট করা ছেলেমেয়েদের মানুষ ঘৃণা করা শুরু করলো।আর এই জামাত, শিবির, মোনাফেক ইসলামি লেবাসধারী দলেরা জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিল, শহীদ মিনার ভাংলো, মানুষের কোন খবরই নাই। বাংলাদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানো হল, অথচ বাঙালির কোন বিকারই নাই।এ দেশ কিভাবে বড় হবে? নিজের দেশের প্রতি যে দেশের মানুষের ভালবাসা নাই, সে দেশের কিভাবে কি হবে?বেশ ভালোই একটা চাল চালল জামাত। যখন এরা দেখলো সরাসরি রাজাকারদের বাচানোর এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তো ঠিক আছে, এই
ধর্ম ভিরু বাংঙ্গালীকে একটু উসকে দিয়ে যদি কছু হাসিল করা যায়।
প্লটটা হচ্ছে ব্লগ, ইন্টারনেট, ফেসবুকে পবিত্র ধর্ম ইসলাম কে অবমাননা করা হচ্ছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে হেয় করা হচ্ছে এই সব বলে খুব সহজেই সাধারণ মানুষকয়ে খেপিয়ে তোলা যাবে। আর যেমনটা ভাবা তেমনই কাজ!! মজার ব্যাপার হলো, যারা এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রসী কাজে আজকে সহযোগিতা করেছে এদের অনেকেই ব্লগ, ইন্টারনেট বা ফেসবুক কি জিনিষ জীবনেও দেখেনি।এই উপমহাদেশে ধর্মকে পুজি করে এক শ্রেনীর ধর্ম গুরুদের সমাজে ব্যাবসা, প্রতিপত্তি অর্জন করার রেওয়াজ বহুদিনের পুরোনো একটা প্রথা। কখনো আর্থ আবার কখনো রাজ-অনুগ্রহ এসব পেতেই এরা ধার্মিকের ভেক ধরে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে সেই হাজার বছর ধরে। এরা জানে সাংস্কৃতিক ভাবেই এই আঞ্চলের মানুষ, সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো, সে ধর্ম ভিরু। আর এই সরলতার সুযোগ কজে লগিয়ে এই সব ধর্ম ব্যাবসায়িরা যুগের পর যুগ ধরে তদের ব্যাবসা চালিয়ে আসছে। এই ২১ শতকে এসেও বাংলদেশে এর ব্যাত্বয় ঘটেনি।আমরা যেন হঠাৎ করেই দেখলাম শাহাবগের আন্দলোনকে ইসলাম বিরোধী একটা রূপদেয়ার চেষ্টা চলতে লাগলো। অথচ শাহাবাগের এই জাগরণ কখনোই পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলোনা, এই আন্দলোনের দাবি খুবই পরিষ্কার আর সহজ "রাজাকারের ফাসি চাই এবং দেশ দ্রোহী জামাত শিবিররের রাজনিতি বাংলাদেশে চিরতরে নিষিদ্ধ দেখতে চাই" - ব্যাস।
এই গণজাগরণ কে প্রতিহত করতেই জামাত শিবিরেরে এটা একটা জঙ্গি প্রচেষ্টা।যে সব ব্যাক্তি এ যুগে তাদের নামের আগে পীর, আউলিয়া, হযরত, ওলামা, মাশাএখ বিশেষন ব্যাবহার করছেন তার কি আদৌ এই সব সুন্দর বিশেষেনে উপযুক্ত? এরা কেউই একবারও বলেননি যে তারা রাজাকারের ফাসি চান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে রাজনৈতিক দল হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণের মত ঘৃন্য আপরাধ করেছিলো তাদের এদেশের রাজনিতি থেকে নির্বাসন চান! এরা যদি সত্যিকরারের মুমিন মুসলমান হতেন, ধর্ম ব্যাবসায়ি নাহতেন তাহলে এরা শাহাবগের মঞ্চে এসে একাত্বতা জানাতেন, সত্যি যদি ধর্মের কোথাও আবমাননা হতো তারা বোঝাতেন এটা ঠিক হচ্ছেনা বা এটা ঠিক আছে। কিন্তু তারা এসবের ধারের কাছে না যেয়ে পবিত্র মসজিদে জুম্মার নামাজের পর নারকিয় কান্ড করে বসলেন, নিরিহ সাংবাদিকদের পেটালেন।
এটা কখনোই ইসলামের নির্দেশিত পথ হতে পারেনা।
যুক্তি আনে চেতনা, আর চেতনা আনে সমাজ পরিবর্তন।
আমার মনে হয় বাংলাদেশে নাস্তিকতা নিয়ে যারা কাজ করেছেন এবং করছেন, তাদের মূল লক্ষ্য একটাই। সেটা হলো মনুষ্যত্বের বিকাশ, জ্ঞাণ ও বিজ্ঞাণ চর্চার সহায়ক একটি পরিবেশ সৃষ্টি। কালের স্রোতে শান্তিপ্রিয় বাঙালী যখন ধীরে ধীরে বাঙালী মুসলিম এবং সম্প্রতি বাঙালীত্ব ছেড়ে মুসলিম হবার দিকে পা বাড়াচ্ছিলো, তখন এই একদল তারুণ্যে বিদ্রোহ ব্লগিঙের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করেছিলো। বাংলার বিশাল জনগোষ্ঠীকে জাকির নায়েকের উদ্ভট তত্ব, সৌদি/পাকি/আফগানী উগ্র ধর্মীয় জঙ্গীবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে টিকে থাকা, দেশের রাজনৈতিক দলগুলির ধীরে ধীরে ধর্মের প্রতি আরো বেশি করে ঝুঁকে পড়ার আত্মঘাতী চক্র এবং এসবের কুফল বিষয়ে সচেতন করে তুলতে তারা বেছে নিয়েছিলো ব্লগের আপাতঃ নিরাপদ আশ্রয়। বিভিন্ন মত ও পথের নাস্তিকের বিবিধ আক্রমনে ধর্মকে পুঁজি বানিয়ে ব্যবসা করা ধর্মজোঁকের দল মুহুর্মুহ মুর্ছা যাচ্ছিলো, এমনি সময় প্রথম প্রতি-আক্রমন আসে ধর্মকারী নামক একটি বিপুল বিনোদন ভিত্তিক ওয়েবসাইট সরকারের বন্ধ করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ততোদিনে নাস্তিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মুভমেন্টের রূপ পেয়ে গিয়েছিলো।
তবে এ কথা সত্য, নাস্তিকতা বলে আসলে কিছু নেই। এটি কোনো ধর্ম নয়, এর কোনো পুরোহিত নেই, নেই কোন পুস্তক। কেউ কারো চেয়ে বড়ো নয়, ছোটো নয়।কিন্তু ধর্ম, নৈতিকতা, সংষ্কারের কারবারী এই ধর্মবাজেরা কখনোই সোজা পথে প্রতিবাদ বা লড়াই করে নি। নাস্তিক, নিধার্মিক কিংবা মুক্তমনাদের গলা চেপে ধরতে বরাবরই তারা বেছে নিয়েছে পিঠে ছুড়ি মারা কিংবা রাতের অন্ধকারে গলা কেটে রেখে যাওয়া। বাঘের সাথে লড়াই করতে তারা বেছে নিয়েছে হায়েনার মতো নীচ যুদ্ধ কৌশল।বিপুল জনগোষ্ঠীকে তারা বুঝিয়েছে, ধর্মের নামে ব্যবসায়ীদের আক্রমন করার অর্থই হলো ধর্মকেই মুছে ফেলা। অথচ সত্য হচ্ছে এই, যে নাস্তিকতা সবসময়ই ধর্মকে তার সঠিক স্থানে ‘ফেরৎ’ পাঠানোর কথাই বলে এসেছে, আর তা হলো ব্যক্তিগত পরিসর। ব্যক্তি তার ইশ্বরের সাথে কি আদান প্রদান করবে, কিংবা কি অনুনয় বিনয় করবে, তার গন্ডি ব্যক্তি পর্যায়েই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু এই ব্যবসায়ীরা ব্যক্তির দুর্বলতাকে পুঁজি করে, তাদের ভুল বুঝিয়ে দেশজোড়া জঙ্গী ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার বাড়িয়েছে। আমরা একে বলে এসেছি ভুল, এবং ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার রাষ্ট্রের কর্মকান্ডে ধর্মের কোন স্থান থাকতে পারে না।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারন আমরা দেখতে পাই নাস্তিকতা উত্থানের। সেটি হচ্ছে দীর্ঘ চার দশক ধরে একাত্তরে ধর্মের নামে করা অপরাধগুলি বিচারহীনতার চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছিলো। যতোবারই রাজাকারদের বিচারের কথা উঠেছে তারা ধর্মের রক্ষাকবচ ব্যবহার করেই বেঁচে গিয়েছে। এবার অসহিষ্ণু তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ তাদের এই রক্ষাকবচ ধরেই টান দিয়েছিলো, যাতে রাজাকারের পাল পালাতে গেলেও কোথাও জায়গা না পায়।আজকে যখন দেশের তরুণ প্রজন্ম ফুঁসে উঠেছে রাজাকারদের বিচার নিয়ে চুদুরবুদুরের বিরূদ্ধে, তখন ঘড়ির কাঁটার মতোই আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজাকারদের ছানাপোনারা সেই ধর্ম নিয়েই চিৎকার শুরু করেছে। দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়কে পরিনত করেছে ‘হত্যা করে সেই অপরাধকেই জায়েজ করবার হাতিয়ার’ হিসেবে। তারা এতোই দুর্ধর্ষ যে, স্বাধীন দেশের ভেতরে বসে খোলা ময়দানে জনসমক্ষে তারা দেশের নাগরিকদের জবাই করবার হুমকি দেয়।ঠিক এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যেই নাস্তিকতা নামের আন্দোলন শুরু হয়েছিলো, যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ অপরাধ সংঘটন করতে পারবে না, কারো জীবন বিপন্ন হবে না কথা বলবার ‘অপরাধে’,,,,,,সুস্থ চর্চার পরিবেশ সৃষ্টিতে নাস্তিকেরা তাই বাংলার ‘বেয়াদব’ সন্তানের দল।এরা কারো ক্ষতি করে নাই কোনোদিন, করার উদ্দেশ্যও ছিলো না, হত্যা তো দুরে থাক। শুধুমাত্র মনের কথা বলবার অপরাধে আজ এদের জীবন হুমকির সম্মুখীন, এমন রাষ্ট্র কি সত্যিই আমরা চাই?
প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আপনাদের কাছে আমি ছোট মানুষ তাই বড় কোন কথা বলতে চাই না শুধু বলতে চাই আমি বাংলা মায়ের বেয়াদপ সন্তান কিন্তু আমি আমার বাংলা মা কে অনেক ভালোবাসি >>> জয় বাংলা ।
কৃতজ্ঞতা ঃ স্যাম হ্যারিস, সামু, মুক্তমনা ব্লগ এর বন্ধুরা ।
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×