somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্বয়ৈতৎ ধার্য্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ

২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেবী দুর্গা। মাতৃরূপে, পিতৃরূপে, শক্তিরূপে, শান্তিরূপে, বিদ্যারূপে আবির্ভুতা এক মহাশক্তি। তিনি সম্মিলিত দেব শক্তির প্রতীক। অসুর অর্থাৎ অপশক্তি বিনাশে দেবতাগণ তাদের সম্মিলিত শক্তিতে সৃষ্টি করেন মহাশক্তি মহামায়া। তিনিই দুর্গতিনাশিনী। তিনি জগজ্জননী। এই মহাশক্তিরই আরাধনা করি আমরা। বাঙালি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই মহাশক্তি মহামায়ার আরাধনার প্রচলন অনেকাংশে বেশী। এরও একটি কারণ আছে। বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাচ্যের রাণী। "নদ" নদনদী" মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। প্রতিদিন বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে লক্ষ্মী হয় পূজিত। পিতৃ বন্দনার চেয়ে মাতৃ বন্দনার আধিক্য এই দেশে। তাই শরতের অকাল বোধনে এই দুর্গা দেবীর সমাদরও এই বাঙালি সমাজে বেশী। শরতে শারদীয় উৎসব, বসন্ত কালের বোধন-বাসন্তী উৎসব। শাশ্বত বাঙালির ঘরে ঘরে, পিত্রালয়ে বেড়াতেন এই মহাশক্তি মা দুর্গা। তাইতো অফুরন্ত প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় সবার হৃদয়ে। এই অফুরন্ত প্রাণে দোলা দেয় মহালয়া থেকে কালী পূজা পর্যন্ত। ঢাক, ঢোল, কাঁসা, ঘণ্টা, পূজা, আরতি, উলুধ্বনি, চণ্ডীপাঠ, সংগীত সবকিছু মিলিয়ে যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে এই উৎসব পরিণত হয় সর্বজনীন উৎসবে। সর্বসত্মরের মানুষের অংশ গ্রহণে এই উৎসব প্রাণময় হয়ে ওঠে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দরতম অধ্যায়। স্বর্গের সুখ যেন নেমে আসে মর্তে। স্বর্গ-মর্তের এই মহাশক্তি, আধ্যাশক্তি মহামায়া, জগজ্জননী-মা দুর্গা যেন মমতাময়ী মায়ের মতোই। সকল সৃষ্টি ও সন্তানই তাঁর চোখে সমান। ঋগ্বেদের দেবীসূক্তে আদ্যাশক্তির যে সকল গুণ বর্ণনা করা হয়েছে তার সবই পরম সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের গুণ-যথা "বাত ইব প্রবামাযারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা" (ঋক্-দেবীসুক্ত-১০।১০।১২৫।৮)। মার্কণ্ডেয় চণ্ডীতে চণ্ডিকা দেবীকে "নিত্যৈব সা জগন্মুর্তিস্তয়া সর্বমিদং ততম্; (চণ্ডী-১।৬৪,৭৫); "ত্বয়ৈতৎ ধার্য্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ" ইত্যাদি ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ আদ্যাশক্তি মহামায়া সর্বব্যাপিনী এবং সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের শক্তিরূপিণী (চণ্ডী ৫।৩৪)। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর যে শক্তি বা প্রকৃতির সহায়তায় ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেন, সেই শক্তিকেই হিন্দুরা মহামায়ারূপে পূজা করেন। দুর্গা, কালী, চণ্ডিকা, যে নামেই ব্যবহৃত হোক না কেন, বিভিন্ন নামে এবং রূপে সেই ব্রহ্মময়ী, ব্রহ্মরূপা মহামায়ারই পূজা করা হয়। ঈশ্বরের শক্তি বহুমুখী, সে জন্যেই ভিন্ন ভিন্ন শক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে উপাসনা করা হয়। এর মধ্যে যে রূপটি সাধকের প্রচলিত সংস্কার, ধারণা ও রুচি অনুসারে গ্রহণীয় হয়, তিনিই সেই মূর্তিকে ইষ্ট বা উপাস্য বলে বরণ করেন। এজন্যেই হিন্দু ধর্মে বহু দেব-দেবী; বহুরূপে একেশ্বরবাদ। কিন্তু তাদের পট ভূমিকায় আছে সেই "একমেবাদ্বিতীয়ম্"। আর মূর্তি পূজার সার্থকতা হলো "মৃন্ময়ী" অবয়বে "চিন্ময়ী"র আরাধনা। সাধারণ কথা বলা হয়-মাটির চেয়ে নেইতো কিছু খাঁটি। ভক্তিমার্গীগণ বিশ্বাস করেন যে, অননত্মশক্তি ঈশ্বরের পক্ষে যে কোন রূপই অবলম্বন করা সম্ভব। সুতরাং যে রূপে তাঁকে ঐকানিত্মকভাবে ধ্যান করা যায়, সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত হলে-ঈশ্বর সে রূপেই তাঁকে দর্শন দেন-"সেয়ং শক্তির্মহামায়া সচ্চিদানন্দরূপিণী। রূপং বিভর্ত্যরূপা চ ভক্তানুগ্রহহেতবে ॥" [দেবী ভাগবত ৫।৮]। তাই মহাসাধকগণ তাঁদের স্ব স্ব ইষ্ট মূর্তিতেই সিদ্ধিলাভ করেন। আদ্যাশক্তি মহামায়া বহুরূপে বিরাজিত। তিনি অনন্ত অসীম, প্রেমময়।
অপশক্তি তথা অসুর; মহিষাসুর বধেও মহাশক্তি মহামায়ার মমতাময়ী প্রাণের স্পর্শ লক্ষ্য করা যায়। বর দিলেন মহিষাসুরকে। "তুমিও পূজিত হবে আমার" সাথে। তাইতো অসুরও পূজিত হয় ঘরে ঘরে। রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও ঐ একই নিয়ম। স্বয়ং মহাশক্তি-মহামায়া যেখানে বর দেন অসুরকে, সেখানে রাষ্ট্রের কী দোষ? সৃষ্টির শুরু থেকেই সুরের পাশাপাশি অসুরের অবস্থান আমরা লক্ষ্য করি। দিন আছে, রাতও আছে। একটি না থাকলে আরেকটির অসিত্মত্ব উপলব্ধি করা যায় না। অসুর-সন্ত্রাসী না থাকলে পুলিশ-আর্মির প্রয়োজন হতো না। প্রয়োজন হতো না কোর্ট-কাছারির, অফিস-আদালতের। রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সবতন্ত্রের চাবিকাঠিই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অসুরের হাতে। সাধারণ মানুষ সেখানে অসহায়। রাজা তাঁর দেশ চালান লাঠিয়াল-কোতোয়াল দিয়ে; বর্তমানে দেশের কর্ণধাররা দেশ চালান রাজনৈতিক সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে এবং পরাশক্তি বিশ্ব চালান "অর্থ" "ডলার" নামের পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে। শ্রীকৃষ্ণ-শ্রী চৈতন্যের আহ্বান-"প্রেম" হোক অস্ত্র আমাদের-এ বাণী কেউ স্মরণ করেন কি? কেউ মেনে চলেন কি এই আহবান? নিজের স্বার্থ রক্ষায় ধর্মের নামে অপরের সর্বনাশ করা মানুষের সহজাত অভ্যাস। মানুষ মনে করেন, পারলৌকিক জীবন থেকে ইহলৌকিক জীবন অধিকতর গুরুত্বপুর্ণ। বাস্তবতাও তাই। সুসভ্য ও উন্নত জাতির ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কি কি করা কর্তব্য তা সবিসত্মারে ভগবান মনু"র মনু সংহিতার সপ্তম, অষ্টম ও নবম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। "দেব-দানব-গন্ধর্বা রক্ষাংসি পতগোরগাঃ। তেহপি ভোগায় কল্পন্তে দণ্ডেনৈব নিপীড়িতাঃ" (মনুসংহিতা-৭/২৩) অর্থাৎ দেব, দানব, গন্ধর্ব, নিশাচর, বিহঙ্গ এবং সর্প-এরাও কেবল ঐশ্বরিক দণ্ড ভয়ে ভীত হয়ে জগতের উপকার সাধনে প্রবৃত্ত হয়ে থাকেন।
স্বর্গের দেবতারাও অসুর, মহিষাসুর অর্থাৎ অপশক্তির ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আরাধনা করেন মহাশক্তির। রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও ক্লিনহার্ট-যৌথ বাহিনীর অপারেশনের মাধ্যমে অসুর দমনের পদক্ষেপ নিতে হয়। তারপরেও বলতে হয় ব্রহ্মারূপী রাষ্ট্র কর্ণধারদের আশীর্বাদে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য অসুর। বিষ্ণু বা নারায়ণরূপী কর্ণধাররা লালন পালন করছেন সেই অসুরদের এবং দেবাদিদেব মহাদেবরূপী রাষ্ট্র প্রধান কলমের আঁচরে কখনো কখনো সন্ত্রাসীদের ফাঁসি কার্যকর করার আদেশ দিচ্ছেন অর্থাৎ সংহার করার আদেশ দিচ্ছেন সন্ত্রাসীকে। কিন্তু সংহার হয় কি? কাজীর মোকামে বিচারকার্যের যে গতি তা বড়ই মর্মান্তিক।
প্রতিবারের পুজোয় যাতে কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যে স্ব স্ব এলাকায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন স্ব স্ব প্রশাসন। তবে, অসুর-সন্ত্রাসী বসে থাকে সুযোগের অপেক্ষায়। এবারের শারদ উৎসব উপলক্ষে মহাশক্তি মহামায়া মা দুর্গার কাছে এই দীন-হীন মুর্খের আকুল আবেদন: বিশ্ব শান্তির বৃহত্তর স্বার্থে-মাগো আর বর দিওনা রাঘবারিকে অর্থাৎ অসুরকে, রাক্ষসকে। বরঞ্চ চলো যাই রাঘবারি দুর্গে-পৃথিবীর যেখানে যেখানে সন্ত্রাস আছে, সন্ত্রাসীর দুর্গ আছে, চলো যাই সেখানে। সংহার করো বিশ্ব শান্তি বিঘ্নকারী সকল সন্ত্রাসীকে, মহিষাসুরকে, রাক্ষসকে। মানুষ নামের জীবগুলো মনুষ্যত্বে বিকশিত হোক আবার। গড়ে উঠুক নিরাপদ বিশ্ব। মানুষ হোক মানবতার গুণে গুণান্বিত। জয় হোক মানুষের, মানবের। সুন্দর সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হোক পৃথিবীর সকল মানুষ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×