somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন স্মৃতি রোমন্হন!! যে স্বপ্নগুলো মনে করে এখনো হেসে খুন হই বারবার!!

২৬ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আসলে স্বপ্নচেকা খাওয়া মানুষ। সময় পেলেই স্বপ্ন দেখতে বসি, চেকা খাই। কিন্ত সমস্যা হল স্বপ্ন দেখতে গেলেই দেখি সুন্দর শুরু আর ভয়ানক সমাপ্তি!! সত্যি বলতে গেলে কি, আসলে আমি স্বপ্নই দেখতে পারি না। স্বপ্ন দেখতে গেলে নিজেকে কেমন যেন নিরামিষ ভোজীদের মত মনে হয়। দেখি মাছ মাংস খাচ্ছি আর খেতে গিয়ে দেখি আলু, লতা-পাতা।
আমার ছোট বেলার কথা।
ক্লাস টু'তে ১ম হয়েছি । আব্বা বললেন আমাকে ডাক্তার বানাবেন। এটাই তার স্বপ্ন। ব্যাস! আব্বার স্বপ্নই আমার স্বপ্ন হয়ে গেল। স্বপ্নে দেখি আমি স্টেথোসস্কোপ গলায় সাইকেল চালিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছি। বন্ধুদের সাথে দেখা হতেই বললাম কালকের স্বপ্নের কথা। বন্ধুরা তো আমার ডাক্তার হবার কথা শুনেই থ! কারণ আমাদের দৃষ্টিসীমার ভেতর ডাক্তার বলতে আছে নরেন্দ্র মশাই। তিনি এক বিরাট ডাক্তার। তার কাছে রোগী গেলে তার প্রথম কাজই হল রোগিকে ইনজেকশন দেয়া। রোগী যায় অসুস্থ হয়ে, আসে সংকটাপন্ন হয়ে। জ্বরে আক্রান্ত কেউ গেলেই ধরে ইনজেকশন দিয়ে দিবে। জ্বর যদি হয় ১০১'C , ভয়ের চোটে হয়তো তা বেড়ে গিয়ে দাড়াবে ১০৪'C । আর তাই কেউ একবার গেলে আবার যাবার কথা ভেবেই বোধহয় জ্বর পালায়। (গত মাসে আমাকে ফুঁটো দিয়েছিল ৩টা , একেবারে নিতম্বের কোটরে!! ব্যাথা আজও আছে) তার এই ইনজেকশন প্রিতির কারনে আমরা সবাই তাকে ফুঁটো ডাক্তার বলে ডাকি । আর আমি যে তার মত ফুঁটো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, সেটা তাদের কাছে পুরোই অপছন্দ। আব্বার দেখানো স্বপ্ন মাঠেই মারা গেল, উল্টো ডাক্তার হওয়ার কথা মনে হলেই নিতম্বে শিনশিন করে উঠে । এর পরের দুই বছর গেল ফুঁটো না হওয়ার কামনা করে করে ।
আরেক ঘটনা।
সিক্সে উঠলাম। নিজের ব্যাট বল নাই। খেলতে হয় তপনের(আমাদের ক্লাসের ৩৯th বয়) ব্যাট বল দিয়ে। ব্যটারে বিকেলে ডাকতে যাই, আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকি আর ব্যাটা এমন ভাবে আসে মনে হয় সে খেলতে আসছে না সম্রাট বাবরে মত সিংহাসনে আরোহন করতে আসছে!! এবার আবার স্বপ্ন দেখলাম । নিজের ব্যাট, বল, স্টাম্প। যেমনেই হোক আব্বার কাছ থেকে উসুল করতে হবে । স্বপ্নের বিভোরতায় তপনরে ধরে দিলাম এক মার। সালা!! কাল থেকে আমার ব্যাট বল দিয়ে খেলিস!! কিছুই করবো না ! যা ! সন্ধায় বাসায় গিয়ে দেখি তপনের আপু আম্মার সামনে দাঁড়িয়ে , আর আম্মার হাতে তিনটা বাঁশের কঞ্চি । ব্যাস!! বেধম প্রহার শেষে আম্মা বাঁশের কঞ্চিএয় আমার হাতে দিয়ে বললেন , এগুলো হল তোমার খেলার স্টাম্প! সুন্দর করে গুচিয়ে রাখ। পরে আবার কাজে লাগানো যাবে। ব্যাট বলের স্বপ্ন মাটি চাপড়ে মুখ লুকাল ।
দিন যায় রাত হয়। সকালে নামাজ না পড়ার জন্য আর রাতে টেবিলে ঘুমানোর জন্য কয়েকপ্রস্থ মার খাই।এরি মাঝে আবার স্বপ্নের হাতচানি।
আরেক দিন,
শাহিন মেয়েটা কেন যে এত সুন্দর!!একটু কম সুন্দর হলে কি হত!? বন্ধুর কথামত চিঠি লিখলাম।সুন্দর একটা খামসমেত একটা গোলাপ দিলাম। মেয়েটা হেসে হেসে নিল। নাচতে নাচতে বাসায় গেলাম। মনে হাজারো স্বপ্ন উকি দিচ্ছে। বাসায় গিয়ে দেখি খামটা আব্বার হাতে নাচচে!! ব্যাস! কে আর ঠেকায় , মারের চোটে রাতের ঘুম পর্যন্ত পালিয়ে গেছে, স্বপ্নতো বহুহুহুহু দূর। এরপর থেকে যতবারই শাহিন কে দেখি, ততবারই পিঠের ব্যাথায় আঁতকে উঠি । আর ভাবি নারী, তোমার হাসিতে যে কি লুকায়িত, সেটা বোধহয় সয়ং কবিগুরুও বুঝেন নাই। পুরো ক্লাস নাইন টা কাটলো ওই দুঃস্বপ্নের রেশ ধরে।
এস এস সি পরিক্ষা দিলাম। রেজাল্টের অপেক্ষায় দিন যাচ্ছে। সারা দিন খেলি, আড্ডা মারি, বন্ধুর বাসায় বসে মুভি দেখি। আগামি সপ্তাহে রেজাল্ট দিবে। খুব টেনশনে আছি।
রাতে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ দেখি আমার বিয়ে হচ্ছে। আম্মা-আব্বা খুবেই খুশি। ঘর ভর্তি মেহমান। বর হয়ে যাচ্ছি মেয়ের বাড়ি। মেয়ের বাড়িতে গেলাম। গেটের জামেলা শেষে আমাকে নিয়ে বসানো হল কলা পাতা বিছানো এক স্টেজে (আজব ব্যাপার! দুনিয়ায় এত পাতা থাকতে কলা পাতা কেন!?)।
যাক, বসে আছি। বিয়ে পড়ানো হবে এবার, তাই মেয়েকে আমার পাশে এনে বসানো হয়েছে। কনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আমি আতঙ্ক গ্রস্থ ! মেয়ের গায়ের রঙ একেবারে দুধে-আলকাতরা রকমের! চেহারার দিকে চেয়ে দেখে আমি আড়ষ্ঠ হয়ে গেলাম। মেয়ের নাক গোখরা সাপের ফণার মত!! মেয়ের মাথা ক্লিনসেভ করা ! মাথায় তেল চিকচিক করছে !! দেখেই যত জোরে সম্ভব দিলাম এক চিৎকার ! ঘুম ভেঙে গেছে। উঠে দেখি বিছনা পুরো ঘামে নেয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে ছেয়ে দেখি রাত ৩:৪৫ মিনিট। ওপপপ!! অপ্লের জন্য রক্ষা পেলাম!!
পুরো সপ্তাহ কেটে গেল এর রেশ ধরে। রেজাল্ট দিল। ভালো পাশ করলাম !
এখনো যখন স্বপ্লগুলোকে স্মৃতির পাতায় মলাট মোড়া অবস্থায় পাই। মোড়ক খুলে নিজে নিজেই হেসে খুন হই।
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×