সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা যে সব মন্তব্য করি তার বেশিভাগই ফালতু এবং অহেতুক। আমি ভেবে পাই না, মানুষ এতো সময় পায় কই? যদিও বা সময় পায়, এদের রুচির এই অবস্থা কেন? রুচির কথাও না হয় বাদ দিলাম, এদের কি বিবেক বুদ্ধি সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে না'কি? জটিল জটিল সব হিসেব তারা এক তুড়িতেই কষে দিতে চায়। এদের মধ্যে মধ্যে বেশি ভাগই তথাকথিত শিক্ষিত সম্প্রদায়ের লোকজন। যে শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়, এ শিক্ষা কি সেই শিক্ষা?
আসলে এসব ট্রল, তামাশা, তাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ যারা করে, না পাওয়ার বেদনা কি তাদের অন্তরে নেই? তারা কি পরিপূর্ণ? নির্ভুল? সবকিছুর উর্ধ্বে? আজকাল কেন মানুষ কাউকে অপমান করার আগে একবারও এই চিন্তা করে না যে, ধীরে ধীরে সেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে? এসব অযাচিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াগুলো তাদের মানসিক শান্তি, রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। তার ভেতরে থাকা পুণ্য আত্মার মৃত্যু ঘটাবে। না বোঝে, না বুঝুক গে। হুজুগের এই দেশে বেশি কিছু বললেও, মানুষ ভাবে লেকচার দিচ্ছে!
আসলে সম্মিলিতভাবে কিছু করার জন্যই সোশ্যালাইজেশন। অথচ আমরা ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি।
যেমন ধরুন, যে বছর বন্যা হয়, সে বছর ফসল খারাপ হবে। এটা একটা কো রিলেশন। কিন্তু বন্যার কারণেই যে ফসল খারাপ হবে, এটা জোর দিয়ে বলা যায় না। আরো অন্যান্য অনেক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। অথচ, একদল লোক থাকবে, যারা এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে কোন যুক্তিই খুঁজে পাবে না। এবং বিরোধী পক্ষকে ভাববে বোকা, গর্ধব ইত্যাদি।
আবার, বাংলাদেশে গরমকালে অপরাধ বেশি হয় এবং গরমকালে মানুষ আইস্ক্রিম বেশি খায়। তাহলে অপরাধের সাথে আইস্ক্রিমের একটা রিলেশন বের করা হলো। এখন যদি বলা হয়, আইস্ক্রিম খাওয়ার কারণে অপরাধ বেড়ে যায়, তাহলে কি সেটা ঠিক হবে? না। কারণ, কো রিলেশন থাকলেই কারণ সেটা হবে না।
অন্য দিকে, বাংলাদেশে সাংবাদিক হল বিশেষ এক প্রজাতি। এদের কাজ হল সব সময় সেনসেশনাল বস্তু নিয়ে নিউজ করা এবং সাধারণ মানুষকে দিয়ে উল্টা পাল্টা কমেন্ট করতে প্রলুব্ধ করা। কিন্তু আমি যে নিউজ করছি, সেটা ঠিক কিনা, সাধারণ জনগণ বুঝতে পারছে কিনা, এটাও মাথায় রাখতে হবে। নিউজের ইম্প্যাক্ট কি এটাও বুঝতে হবে। যে কোন ধরণের সেন্সিটিভ টপিক খুব সাবধানতার সাথে হ্যান্ডেল করতে হয়। আমাদের দেশে সেটা করা হয় না।
মনে করেন, অনলাইন পেপারে নিউজ আসল "নেইমারের মুখে থুতু মারল গ্রিজম্যান।"
ভিতরে গেলে দেখা যাবে আসল নিউজ হল গ্রিজম্যান উত্তর দিকে থুতু মেরেছে। আর ঐ সময় উত্তর দিকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে নেইমার দাঁড়িয়ে ছিল। অথচ, "টেকনিকালি" অনলাইন পেপারের ভাষায় এই থুতু নেইমারের মুখে গিয়ে পড়েছে।
আবার মনে করুন, নিউজ হয়েছে, "শিক্ষিত মেয়েরাই ডিভোর্সের শীর্ষে"। এই নিউজের কমেন্টে গেলে দেখা যাবে সবাই তাদের জ্ঞান ফলাতে এসে পড়েছে।
"মেয়েদের পড়াশোনার কি দরকার?"
"শিক্ষিত মেয়েরাই সমাজ নষ্টের মূল।"
"এই সব মেয়েরা নিজের ইনকাম শুরু করলে জামাইকে গোনায় ধরে না।"
ব্লা ব্লা ব্লা...
ঘটনা হলো, এই সব মেয়েরা যে ডিভোর্স দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে? ডিভোর্সের কারণ কিন্তু এটা না, যে তারা শিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী।
ডিভোর্সের কারণ হতে পারে হাসবেন্ডের নির্যাতন, হয়তো হাজবেন্ড পরিবারের খেয়াল রাখে না, হয়ত বনিবনা হচ্ছে না। হাজারটা কারণ আছে। কিন্তু কারণটা "শিক্ষিত" আর "স্বাবলম্বী" মেয়ে না।
মেয়েরা শিক্ষিত হলে, নিজের ইনকাম থাকলে সেই মেয়েকে নির্যাতন করাটা কঠিন। নির্যাতন করলেও সেই মেয়ে মুখ বুজে থাকবে - এটা ভাবা ভুল। একটা মেয়ে যদি পড়াশোনা না করে, নিজের ইনকাম সোর্স না থাকে, তাহলে সেই মেয়ে মুখ বুজে সকল নির্যাতন সহ্য করে। কারণ, তার আসলে যাওয়ার কোন জায়গা নাই। আর এটাই চায় বাংলাদেশী সোসাইটি!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২১ সকাল ৯:৩৮