somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাইনোসরের বিলুপ্তি (গল্প)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে বহু কাল আগের কথা। তখন বাংলাদেশ নামে কোন দেশ ছিল না। বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তখন কোন মানুষ বসবাস করতো না। মানুষের পরিবর্তে বসবাস করতো ডাইনোসর। তাদের মধ্যে দুইটি ধরণ ছিল। কেউ কেউ উড়তে পারতো আর বেশিভাগই উড়তে পারতো না। যারা উড়তে পারতো তারা রাজকীয়। আর যারা উড়তে পারতো না তারা সাধারণ। ডাইনোসরের পদচারনায় মুখর ছিল এই অঞ্চল। নদ-নদী, বনজঙ্গল জুড়ে ছিল তাদের রাজত্ব। তখনকার দিনে তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠন করতো। প্রতি ৫০ বছর পর পর নির্বাচন হতো। তাদের মধ্যে সবাইকেই ভোট দিতে হতো। কেউ ভোট দিতে না চাইলে বা অস্বীকার করলে তাকে শাস্তি পেতে হতো। একটি ডাইনোসর প্রধানমন্ত্রী হতে হলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে উড়তে জানা লাগতো। প্রধানমন্ত্রী হবার ন্যূনতম যোগ্যাতাই ছিল উড়তে জানা। একই সময়ে শুধু একজনই উড়বার শক্তি প্রদর্শন করতে পারতো এবং সে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হতো। তবে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ উড়তে পারলেও তার উড়ার অধিকার ছিল না। কখনোই প্রধানমন্ত্রী পদে দুই জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেনি। যদি প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ উড়তে চাইতো তাহলে সে রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তির সম্মুখীন হতো। তাকে সবার সামনে পুড়িয়ে মারা হত। তাই তাকে সাধারণ ডাউনোসরদের মত থাকতে হতো। উড়ে উড়ে প্রধানমন্ত্রী সমগ্র এলাকার ডাইনোসরদের খোঁজ খবর নিতো এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন নতুন আইন প্রবর্তিত হতো। এভাবে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তারা বেশ সুখে শান্তিতেই বসবাস করছিল।

একবার খুব বন্যা হয়। মাঠঘাট সব পানির নীচে চলে যায়। সব ডাইনোসর পানিতে ভাসতে শুরু করে। তারা নিরাপত্তার অভাবে ভুগতে থাকে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী একটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যেহেতু তখন নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না তাই রাষ্ট্রের নিয়ম অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হতো সবচেয়ে বয়ষ্ক ১০টি ডাইনোসর। কিন্তু উক্ত প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী উড়তে জানতো না বিধায় পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী এতে ভেটো দেয়। ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীকে উড়তে শিখতে ৭ দিনের নোটিশ দেওয়া হয়। সে আপ্রাণ চেষ্টা করেও উড়তে শিখতে ব্যর্থ্য হয়। ফলে কার্যনির্বাহী পরিষদ তাকে বরখাস্ত করে এবং মৃত প্রধানমন্ত্রীর সন্তানকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ছিল নারী এবং বয়সে খুব কম। কিন্তু সে এক রাতের মধ্যেই উড়তে শিখে তাক লাগিয়ে দেয়। তাছাড়া তার ব্যক্তিত্বও ছিল খুবই উচ্চমানের। সে স্রষ্টার কাছে বিপদমুক্তির জন্য প্রার্থনা করে। ৭ দিনের মধ্যে বেড়িবাঁধ, বন্যাপ্রাচীর, সমুদ্রপ্রাচীর, বাঁধ ইত্যাদি তৈরী হয়ে যায়। এগুলো অলৌকিকভাবেই হয়ে যায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণে আসে। সবাই আগের মতো সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। তার এই অবিশ্বাস্য কাজে মুগ্ধ হয়ে তাকে আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সকল ডাইনোসর আন্দোলন করে। কার্যনির্বাহী পরিষদ পরিস্থিতির চাপে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু সবাই প্রধানমন্ত্রীকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কারণ, বিবাহিত হওয়াও প্রধানমন্ত্রী হবার একটি শর্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাতে রাজী হয় না। সে বলে, “আমি যদি বিয়ে করি, তাহলে আমি আপনাদের সেবা করতে পারবো না। তাছাড়া আমি কোন রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাই না। আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আপনারা কেউ আমাকে মনে না রাখেন।” কিন্তু লোক চক্ষুর অন্তরালে সে একটি প্রেম করে বসে। সে প্রেম করে একটি সাধারণ ডাইনোসরের সাথে। তাকে পিঠে নিয়ে গভীর রাতে সে দূর দূরান্তে উড়ে বেড়ায়। বিষয়টি কারো নজরে আসে না। এভাবেই চলতে থাকে প্রেম। তবে এটা ছিল আত্মিক প্রেম। তারা শারীরিক মিলনে লিপ্ত না হবার গভীর সংকল্প করে।

এদিকে দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর একটি রোগ। নাম না জানা সেই রোগে আক্রান্ত হয় একের পর এক ডাইনোসর মরতে শুরু করে। মহামারীর কবলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ডাইনোসরের সংখ্যা। প্রধানমন্ত্রী তার প্রেমিককে নিয়ে আকাশে ভাসতে থাকে। একসময় দেশের সব ডাইনোসর মারা যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী মাটিতে নেমে আসে। পুরুষ ডাইনোসর বলে এখনতো আমাদের প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতেই শারীরিক মিলন করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলে, “আমি আমার শপথ থেকে বের হয়ে আসতে পারবো না। আমি সবাইকে সাক্ষী রেখেই শপথ করেছিলাম, কোন সন্তান আমি চাই না। তুমি চাইলে আমাকে ধর্ষণ করতে পারো, যদি তুমি সফল হও তাহলেই ডাইনোসর প্রজাতি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পাবে এবং আমার নীতিতে আমি ঠিক থাকবো” তখন পুরুষ ডাইনোসরটি তার পেছনে ছুটতে শুরু করে। কিন্তু পুরুষ ডাইনোসরটি যেহেতু উড়তে পারে না, তাই সে উড়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে এবং খুব শীগ্রই সে উড়তে শিখে যায়। এরপর উড়তে উড়তে দিন, মাস, বছর পেরিয়ে যায়। কোটি কোটি বছর ধরে তাদের এই প্রচেষ্টা চলছে। একজন ধর্ষণ করতে চাইছে। আরেকজন বাঁচতে চাইছে। কবে সেই ধর্ষণ ঘটবে এবং কবে এ দেশ ডাইনোসরে আবার ভরে উঠবে তা কেউ জানে না।



সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×