
ভূমিকা:
অণু পরিমাণ সৎকর্ম সম্পর্কে পবিত্র কুরানের সূরা যিলযালে বলা হয়েছে, পরকালে অণু পরিমাণ সৎকর্মও হিসাবে আনা হবে৷ আবার অণু পরিমাণ অসৎ কর্মের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা হয়েছে। এটা একটি ব্যাপক ধারণা, যা আমার মতো ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের দ্বারা অনুধাবন করা অসম্ভব।
আমার চিন্তা:
অনেক সময় দেখা যায়, গাড়ির চাকার একটি সূক্ষ্ণ ছিদ্র থাকার কারণে সম্পূর্ণ গাড়িটি বাতিল হয়ে যায়। এখানে কত ছোট ছিদ্রের কারণে চাকাটি অচল হবে তা নিয়ে তর্ক করা বাহুল্য। আবার একটা ফেলনা জিনিসকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সামান্য উপকার বা সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হয়। চিন্তার সামান্য অসংগতি, বৃহৎ পরিসরে দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। সেটাকেও অণু পরিমাণ অসৎ কর্মের পাল্লায় রাখা উচিৎ। দিন শেষে হিসাব করা উচিৎ, কি চিন্তা করে আমি সম্পূর্ণ দিনটি কাটাচ্ছি। কারণ শেষ পর্যন্ত চিন্তাই মানসিক শক্তি ও দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই জানেন যে, অবচেতন মন থেকেই মানুষের চেতন মন শক্তি ও সাহস পায় বা হারায়। সেক্ষেত্রে চিন্তার স্বাধীনতা বা অধীনতা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী।
চিন্তা বিষয়টি কেমন:
আমাদের চিন্তাকে যদি আমরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকি, তাহলে কোন খারাপ কাজ আমাদের পক্ষে করা সম্ভব না। কারণ, সবাই আমরা জানি যে, খারাপ চিন্তার ফলাফল ভাল হয় না। সেজন্যই মহান সাধকেরা নিভৃতে চিন্তা করতেন। তারা তাদের চিন্তার ফোকাস ধরে রাখতে পারতেন। মানুষ একই সাথে যেমন দুইটি জিনিস দেখতে পারে না, তেমনি একই সাথে দুইটি চিন্তাও করতে পারে না। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমাদের মনোযোগ প্রতিনিয়ত হাইজ্যাক করা হচ্ছে। আমাদেরকে সুচিন্তা করার মতো মানিসিক অবস্থায় থাকতে দিচ্ছে না। লোভনীয় সব বিজ্ঞাপন ঘুরতে থাকে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের স্ক্রীনে, যা থেকে মন সরিয়ে রাখা অসম্ভব। অণু পরিমাণ কুচিন্তার বীজ আমাদের অজান্তেই মস্তিষ্কে ঢুকে পরছে। নানা ভাইরাল টপিক আমাদের মনের মধ্যে জমা হয়ে অসংখ্য অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করিয়ে নিচ্ছে আমাদের দ্বারা। যার সামষ্টিক পরিণতি হিসেবে আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা, ঘৃণা, হিংসার মতো ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী। এগুলো এমনভাবে আমাদের সাথে মিশে গেছে যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর কোন প্রতিবাদ করতে পারছি না। বরং শতশত অন্যায়কে আমরা নিজেরাই প্রোমোট করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
আমার ধারণা:
নৈতিকতা চর্চা করতে যা করা উচিৎ তা হলো, ভাল পরিবেশে থাকা। অণু পরিমাণ হলেও সৎকর্মের চেষ্টা করা। ভাল কাজের চিন্তা করতে হবে। যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদেরও উচিৎ ভালো চিন্তা করা। কারণ এটা সত্য যে, ভাল কাজের অবশ্যই একটা বিনিময় মূল্য আছে। এটা প্রাকৃতিক। সেই বিনিমিয় হলো প্রশান্তি। আর নাস্তিক হয়ে লাভটা কি? মৃত্যুর পরে যদি কিছু না থাকে তবে মানুষের মনে এত অপূর্ণ আশা থাকার কথা না। মানুষের মধ্যে যে অসীম চাহিদা আছে, তাকে বিশ্লেষণ করলেই অসীম জগৎ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ জীবন যে ক্ষুদ্র তা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ স্বীকার করে। তার জন্য বেদ-কুরআন পড়াটা বাধ্যতামূলক নয়।
উপসংহার:
পারমাণবিক বোমা যেমন ছোট ব্যাপার না, তেমনই অণু পরিমাণ সৎ বা অসৎ কর্মও ছোট ব্যাপার না। বিন্দু থেকেই সিন্ধু। কোন কিছুকেই ছোট ভাবার সুযোগ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



