আমার নাম তমাল। সম্প্রতি আমার একটা চাকরি হয়েছে। এতে আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। কারণ চাকরিটা আমার পাবার কথা না। আমি এই এক জীবনে অসংখ্যবার অবাক হয়েছি। জন্মের পর হয়তো প্রথমবারের মত অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এ আমি কোথায় এসেছি! প্রথমবার আলো দেখে হয়তো অবাক হবার পাশাপাশি চরম বিরক্তি এবং অস্বস্তি নিয়ে চিৎকার করে- করেছিলাম প্রতিবাদ। তারপর কেটে গেছে সুদীর্ঘ ঊনত্রিশ বছর। এখনো ভাবি, এ আমি কোথায় আছি? এখনো আলো দেখে মাঝে মাঝে বিরক্তি এবং অস্বস্তিতে ভুগি। আমি জানি, জীবন একবার গেলে আর ফিরে আসে না। একদিন মায়ের কাছে শুনি আমার এই সাধের জীবন চলে যাবার উপক্রম হয়েছে। আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে। বিয়ে এবং মৃত্যু আমার কাছে সমার্থক। এতদিন ভেবে এসেছি বিয়ে নামক দুর্ঘটনার মুখোমুখি আমাকে কখনো হতে হবে না। চিরকুমার হবার পণ করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আমার বিয়েটা শেষ পর্যন্ত পাকা কথায় পৌঁছে গেলো। ফল পাকলে যেমন টুপ করে ঝরে পড়ে- ঠিক তেমনি আমিও ঝরে পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।
যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার নাম অনন্যা। কচি জাম পাতার মতো গায়ের রঙ। চোখের মণি হালকা বাদামী। হাঁটু পর্যন্ত লালচে কালো চুল। লম্বায় আমার চেয়ে হাফ ইঞ্চি বড়ই হবে হয়তো। পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে আমি আগ বাড়িয়ে বেশি কথা বলতে যাইনি অনন্যার সাথে। দেখতে দেখতে আমার বিয়ের বাজার করা শেষ হলো। বিয়ের বাজনা বাজতে শুরু করলো। শেরওয়ানির মাপ ঠিক আছে কিনা তা দেখা হলো। শেরওয়ানি পড়ে ট্রায়াল দিতে গিয়ে আমি পুরোপুরি ঘেমে গিয়েছিলাম। ভরপুর জ্যৈষ্ঠ মাসে এসব পড়ে বিয়ে করতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে এই নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।
শেষমেশ কিন্তু আগ বাড়িয়ে কথা না বলাটাই আমার জন্য কাল হলো। বৃহস্পতিবার দুপুরে জানতে পারলাম, অনন্যা তার খালাতো ভাইয়ের সাথে পালিয়ে গেছে। ক্রিকেট খেলায় ক্যাচ মিস হলে ব্যাটসম্যান যেভাবে জীবন ফিরে পায়, আমিও সেভাবে জীবন ফিরে পেলাম। সেদিন আমাদের বাসায় চাঁদের হাট বসেছিল। গায়ে হলুদের সব আয়োজন সমাপ্ত- তখনই এই খবরে যেন বিনা মেঘে ব্জ্রপাত হলো। আমি মনে মনে খুশি হব নাকি দুঃখিত হবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার খালাতো ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ❝মন খারাপ করিস না ভাই।❞ আমি হয়তো মন খারাপ করলাম।
বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। বিয়ে নামক প্রথম মৃত্যু দণ্ডাদেশ পেতে আমি রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রথম মৃত্যু দ্বিতীয় চেষ্টায় সফল হলো। এবার আর কাউকে দাওয়াত দিলাম না। আগ বাড়িয়ে কনের সাথে কথা বললাম। শেরওয়ানি পড়ে ট্রায়াল দিলাম না। হঠাৎ একদিন অতি সাধারণভাবে আমি প্রথম মৃত্যুকে বরণ করলাম। তেমন উত্তেজনা বোধ না করলেও জ্বরে আক্রান্ত হলাম। জ্বর নিয়েই শেরওয়ানি, পাগড়ী পড়ে কনের বাড়িতে হাজির হয়েছিলাম। বিয়ের পর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম, কেন পুরুষ মানুষ দুই প্রকার: জীবিত আর বিবাহিত।