একটা সাদা বক কাশবনের উপর দিয়ে উড়তে উড়তে শরতের মেঘের সাথে মিলিয়ে গেল। দিঘির পাড়ে বসে দৃশ্যটা দেখছিল কবির। এত দ্রুত উড়ে গেল বকটা! বুকটা কেমন ছ্যাত করে উঠে তার। অনেকদিন দেশের বাইরে থাকায় এরকম দৃশ্য নিছক কল্পনা ব্যতীত দেখা সম্ভব না। এই গ্রামের নাম জামতলী। শহর থেকে ৩০/৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চুপচাপ বসে ছিল কবির। কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন সাদিয়া তাকে ভালবাসেনি? সাদিয়া কেন সরকারী চাকরিজিবী শহিদুলকে বিয়ে করেছিল? কেন সাদিয়ার বাচ্চাটা প্রতিবন্ধী হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারে মারা গিয়েছিল? কবির কি তাকে অভিশাপ দিয়েছে নাকি!
সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে সাদিয়া। বয়স ২৩ বছর। গঞ্জের নিমতলা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ৪ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। তখনই কবির লন্ডনে পাড়ি জমায়। শেষ পর্যন্ত সাদিয়ার স্বামীটা করোনা মহামারীতে মারা গেলো। সাদিয়া কবিরকে ভালবাসেনি। কবির সাদিয়াকে ভালবেসেছিল। সাদিয়া কবিরকে ভালবাসেনি কারণ কবির ছিল আনস্মার্ট। কবির সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারত না। সবসময় কুঁজো হয়ে থাকত। ইমুতে পরিচয় হয়েছিল তাদের। বিগো লাইভে গিয়ে একটা নাম্বার পায় কবির। নাম্বারটা সাদিয়ার। সাদিয়ার এক বান্ধবী শত্রুতা করে দিয়েছিল নাম্বারটা। সেখানে লেখা ছিল ইমুতে কাজ করি। কবির তাকে ভিডিও কল দেয়। কলটা সাদিয়া রিসিভ করে। সাদিয়াকে দেখে কবির বিমোহিত হয়ে যায়। এত সুন্দর হয় কি করে মেয়ে মানুষ! তখন ১৯ বছরের টিন এজ মেয়ে সে। প্রোফাইলে ছিল একটা বধূবেশী মেয়ের ছবি। এক ঘন্টা কথা বলেছিল সাদিয়ার সাথে প্রথম দিন। সেতো ইমুতে কাজ করে না- কেন বলেছিল এত কথা! রাত ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত কথা বলেছিল তারা। সাদিয়া জানিয়েছিল, সে মনে করে যে, মানুষ শুধু নিজেকেই ভালবাসে। মানুষ কাউকে ভালবাসতে পারে না।
কবির দিঘির পাড়ে বসেই সাদিয়াকে ইমুতে ভিডিও কল দেয়। এখন সাদিয়া স্বামী ও সন্তান হারানোর শোকে ম্রিয়মাণ। এখনো সে ইমুতে যার-তার ভিডিও কল রিসিভ করে! রিসিভ করা কলটা কবির কেটে দেয়।