somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেজাল আর বিষে ভরা খাদ্য

২৫ শে জুন, ২০১১ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাকসবজি থেকে শুরু করে ফলমূলসহ নিত্যদিনের খাবারেই রয়েছে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিকের ঝুঁকি। পকেটের টাকা খরচ করে যা কেনা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই প্রকৃতপক্ষে বিষ। আর বিষাক্ত এ খাবার গ্রহণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে দেশবাসী। বিশেষ করে শিশুরাই এর প্রধান শিকার। চিকিৎসকরা শিশুদের নানা রোগের জন্য ভেজাল ও রাসায়নিকযুক্ত খাবারকেই দায়ী করছেন।
অধিক মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের হাতে বিষ তুলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ সর্বত্র। হাতেনাতে ধরা পড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা নিজ মুখেই বলছেন রাসায়নিক মেশানোর কথা। শুধু নিজের দায়টুকু স্বীকার করছেন না। পাইকারি ব্যবসায়ী দুষছেন খুচরা বিক্রেতাকে। আর খুচরা বিক্রেতা বলছেন, আড়ত থেকেই চলছে এসব। ভেজাল রোধে সরকারি-বেসরকারি নানা চেষ্টা সত্ত্বেও চলছেই এ কারবার। প্রশ্ন এখন_এদের রুখবে কে? সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধান এবং ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে খাবারে ভেজালের ভয়াল চিত্র। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।
মাছে মিলছে বিষাক্ত ফরমালিন, ফলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, প্রোফাইল প্যারা টিটিনিয়াম (পিপিটি) পাউডার, বিস্কুটসহ বেকারিদ্রব্যে রয়েছে বিষ সমতুল্য রং আর মুড়িতে মেশানো হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ইউরিয়া সার। এর বাইরেও রয়েছে নানা রাসায়নিক সংমিশ্রণের কারসাজি।
জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভেজাল খাবারের কারণে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। তাদের শরীর স্পর্শকাতর। রাসায়নিক মেশানো খাবারে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয় শরীরের। তিনি বলেন, কোনো প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই বলা যায়, কার্বাইড মেশানো খাবারে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ভোজ্য তেলসহ তরল খাবারে জন্ডিস হতে পারে। ক্ষতিকর উপাদান মেশানো খাবারে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ভেজাল নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ল্যাবে পরীক্ষায় দেখা গেছে ফলের মধ্যে আঙ্গুর, আপেল ও নাশপাতিতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। এতে ফলটি দীর্ঘদিন দোকানে রাখার পরও নষ্ট হয় না, ঝরে পড়ে না। এসব ফল খেলে গ্যাস্ট্রিক-আলসারের সমস্যা বেড়ে যায়। এসব ফল লিভারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। গর্ভের শিশুরও ক্ষতি হতে পারে। ফুসফুসে ব্যাধি ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও রয়েছে। ২০০৫ সালের পর থেকে মাছে ফরমালিন কিছুটা কম পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচকি মাছেও ফরমালিন পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে।
চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আম, পেঁপে ও আনারস পাকানো হয় ক্যালসিয়াম কাবাইড দিয়ে। কেমিক্যাল মেশানো এসব ফল একটু ভালো করে দেখলেই বোঝা যায়। প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম বা পেঁপের মুখের দিকটা হলুদ হয়ে নিচে আস্তে আস্তে রঙ বদলায়। পেকে যাওয়ার পরও নিচের দিকটায় সবুজ থাকার প্রবণতা থাকে। কিন্তু কেমিক্যাল মেশানো ফলে ছাকরা ছাকরা রং থাকে। স্বাভাবিক গন্ধও থাকে না। অর্গানিক এসিড মিশে ফলকে একটি মিষ্টি স্বাদ এনে দেয়, খোসাতেও মিষ্টি একটা ভাব চলে আসে। আরো কেমিক্যাল মেশালে তা হয়ে যায় তেতো। এসব কার্বাইড মেশালে ফলের কোনো পুষ্টিগুণই থাকে না। এসব ফল খেলে হজমের সমস্যাও হতে পারে।
খাবারে রং মেশানো প্রসঙ্গে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, আমের জুস বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। এতে আছে ফলের গন্ধ মেশানো কেমিক্যাল এবং কাপড়ে ব্যবহার করা রং। এসব রং শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খাবারের রঙের দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীরা কাপড়ের রং ব্যবহার করছেন। দুধেও ফরমালিন দেওয়া হয়। ওই দুধের স্বাদ কখনোই ঠিক থাকে না। কলা পাকাতে পটাশিয়াম কার্বাইড এখন একটু কম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে 'হিট ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি'। একটি বদ্ধ ঘরে কলা জড়ো করে রেখে তাতে তাপ দেওয়া হয়, ধোঁয়াও তৈরি করা হয়। এতে ফলটি পাকে না, একটি রং আসে, কিন্তু শক্তই থেকে যায়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, খাদ্যে ভেজালের ব্যাপারে দেশবাসীর অভিযোগ শতভাগ সত্য। ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে ক্রেতাকে বিষ মিশিয়ে খাবার দিচ্ছে। তাদের মধ্যে নূ্যনতম মানবিকতা দেখা যাচ্ছে না। হাতেনাতে ধরা পড়ে জেল-জরিমানার পরও তাদের একই কাজ করতে দেখা গেছে।
এদিকে বাদামতলী, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি এলাকার ফল ও মাছের আড়ত ও বাজার ঘুরে মিলেছে একই অভিযোগ এবং একই রকমের কৈফিয়ত। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের দায় এড়িয়ে বক্তব্য দিলেও স্বীকার করছেন খাবারে ভেজাল মেশানোর বিষয়টি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাগান থেকে কাঁচা আম পাড়ার পরই তাতে কেমিক্যাল মেশানো হয়। বাগান থেকে আম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করার জন্য যখন ঝুড়ি বা কার্টনে ভরা হয়, তখন প্রথমে সেগুলো ভালো করে সাজানো হয়। এরপর ওই ঝুড়ি বা কার্টনের মাঝখানে একটি কাগজের পোঁটলার মধ্যে ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা অন্য কেমিক্যাল রাখা হয়। এর পর ওই কেমিক্যাল থেকে প্রথমে ইথিলিন গ্যাস তৈরি হয়। গ্যাস থেকে তাপ উৎপন্ন হয়ে আম পাকে ও রং হয়।
ভেজাল প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে আমসহ যেসব ফল পাকিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে তার ৯০ শতাংশ 'ইথেফেন' নামের এক ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত। ইথেফেন আসলে এক ধরনের বিষ। এটা পরিমাণমতো ব্যবহার করা হয় উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য। আর এখন এটা ব্যবহার করা হচ্ছে আম, পেঁপে, কলা, টমেটো, কাঁঠাল, আনারসসহ নানা ধরনের ফল ও সবজিতে। মুড়িতে হাইড্রোজ ও ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা দিলে মুড়ির রং ভালো হয়। গত বছর রমজান মাসে অনেক মুড়ি ব্যবসায়ীকে এ কারণে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বিস্কুট তৈরি করতেও ক্ষতিকর হাইড্রোজের পাশাপাশি ঘনচিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষাক্ত জিনিস খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে ব্যবহার করছেন। হাইড্রোজ সাধারণত কাপড় সাদা করতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে তা মুড়ির পাশাপাশি জিলাপি তৈরি করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সোয়ারীঘাটে ফরমালিন অভিযান : ভ্রাম্যমাণ আদালত মাছে ফরমালিন শনাক্ত করতে কয়েক দফা অভিযান চালান সোয়ারীঘাটে। আগে বেশ কয়েকবার সফল হলেও সম্প্রতি সেখানে ফরমালিন মেলেনি। এ বিষয়ে কথা হয় আড়তদার আবেদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, সোয়ারীঘাটে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। ভালো রাখার জন্য বেশির ভাগ মাছে ফরমালিন দেওয়া হয়। তিনি ফরমালিন দেন না দাবি করে বলেন, অন্য ব্যবসায়ীরা দেন। বিভিন্ন কৌশলে দেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবহনের সময় এ কাজটি হয়। আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে গিয়েও হয়। ফরমালিন ব্যবহার বন্ধ হলে ব্যবসায়ীদের অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই এ এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। নদীর নাব্যতা নেই, যানজটের কারণে ট্রাক আসতে দেরি করে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মাছ আসতে সময় লাগে। শুধু কোল্ডস্টোরেজে রেখেই মাছ ভালো রাখা যায় না।
ফরমালিনের এ কারসাজির কথা মুখে বললেও কোনো ব্যবসায়ী নিজ দায় স্বীকার করতে রাজি নন।
বরফে ফরমালিন : মাছে ফরমালিন দেওয়া অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন। মাছে নয়, এখন ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে বরফে! মাছ হিমায়িতকরণের জন্য ব্যবহৃত বরফ তৈরি করা হচ্ছে ফরমালিন-মিশ্রিত পানি দিয়ে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ কৌশল অবলম্বন করায় মাছের ফরমালিন ধরা পড়ছে না। মাছ ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য জেনেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, বরফকল মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে বরফে ফরমালিন মেশাচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ী। এতে মাছ হিমায়িতকরণের সময় বরফের ফরমালিন খুবই কম তাপমাত্রায় মাছে খোলসের মাধ্যমে মিশে যায়। এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ফরমালিন পরীক্ষায় যে কিট ব্যবহার করেন, তাতে ওই ফরমালিন ধরা পড়ে না।
বিস্কুট, মুড়িতেও রাসায়নিক : চম্পাতলী লেন, সোয়ারীঘাট। এখানে ১৫টি বিস্কুট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর মধ্যে রঙ্ িফুডের প্রোডাকশন ম্যানেজার আমির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিসু্কট তৈরিতে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সুগন্ধি ও সোডা ব্যবহার করা হয় দীর্ঘদিন মান ধরে রাখার জন্য। এ ছাড়া বিস্কুটে ফ্লেভার আনার জন্য ফুড কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁর জানা নেই। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করলে ক্ষতি নেই। বিস্কুট তৈরির সব কেমিক্যাল মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে থেকে কেনা হয়।
অনিয়ন্ত্রিত কেমিক্যাল মার্কেট : পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালসহ আশপাশে রয়েছে অসংখ্য রাসায়নিক ও ওষুধের দোকান। সেখানে দেদার বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক। কোনো ধরনের বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রণ নেই ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিতে।
বোরহান পারফিউমারির মালিক আবদুস সামাদ জানালেন, তাঁর দোকানে কোনো ফরমালিন নেই। তবে বিস্কুটসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদানের ফ্লেভার বাড়ানোর ফুড আইটেমের কেমিক্যাল আছে। এ রকম বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার এনে যে বিস্কুট বাজারজাত করা হয়, তার কেমিক্যাল এখানকার সব দোকানে আছে। এগুলোর দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।
রনি পারফিউমস অ্যান্ড কেমিক্যালসের মালিক জীবন জানান, তাঁর কাছে প্রোফাইল প্যারা টিটিনিয়াম (পিপিটি) নামে এক ধরনের কেমিক্যাল আছে। এ পাউডার যেকোনো ফলে ছিটিয়ে দিলে কমপক্ষে এক বছর পচন রোধ করে। এ পাউডার এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি। এটি জাপানের তৈরি।
শাস্তি-জরিমানার পরও একই কাজ : খাবারে ভেজাল মেশানোর কারণে ব্যবসায়ীদের মাঝেমধ্যেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে শাস্তি ও জরিমানার। তারপরও একই কাজে তাঁরা লিপ্ত। একই প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কয়েক দফায় সাজার মুখোমুখি হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালত গত দেড় বছরে খাদ্যে ভেজাল ও কেমিক্যাল মেশানোর দায়ে প্রায় দুই কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। সেই সঙ্গে সাজা দিয়েছেন প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে।
আনোয়ার পাশা আরো বলেন, প্রতিনিয়ত র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত খাদ্যে ভেজাল রোধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। গত দেড় বছরে শতাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিটা অভিযানে বিপুল কেমিক্যালযুক্ত ফলসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রচুর আম ধ্বংস করা হয়েছে। এরপরও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এসব অপরাধ বন্ধ করতে সামাজিক প্রতিরোধ দরকার।
অকার্যকর ভোক্তা অধিকার : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় লোকবল। ভোক্তা অধিকার আইন পাস হওয়ার পর গত বছরের ৬ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর আগে ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর ২৯ সদস্যের কাউন্সিল গঠনের পর থেকেই মূলত এর কার্যক্রম শুরু হয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগ হয় ২০০৯ সালের নভেম্বরে। অধিদপ্তরের জন্য ২২৩টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০১ জন অফিসার। তবে এ পর্যন্ত প্রেষণে এবং সংযুক্তির মাধ্যমে সাতজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। সারা দেশে ৭২টি অফিসের মধ্যে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও খুলনায় দুটি অফিস চালু করা হয়েছে। ওই দুই অফিসেই থাকছেন দুইজন কর্মকর্তা। তবে এই জনবল নিয়েই চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার অভিযান চালানো হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন আদালত। জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, কার্যক্রম শুরু হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই বিধিমালা ও প্রবিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। লোকবল নিয়োগও প্রক্রিয়াধীন। নকল, ভেজালসহ ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার কার্যক্রম চলছে জোরদারভাবেই। তবে লোকবল পাওয়া গেলে আরো সক্রিয় হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
ক্যাব সূত্র জানায়, এখন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাসে আট দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। আগে করা হতো ২২ দিন। তবে অভিযান নিয়মিত চলছে।
ক্যাবের উদ্বেগ : কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, মানহীন ও ভেজাল খাবারই এখন পাওয়া যায় বাজারে। সবজি, মাছ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত খাবার_সবখানেই ভেজাল। চাষাবাদে এখন এমন বিষ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগুনেও নষ্ট হয় না। তিনি আরো বলেন, বাজারে এখন পাকা ফল পাওয়া যায় না; পাওয়া যায় পাকানো ফল। দিনের পর দিন একই রকম থাকছে দামি সব বিদেশি ফল। সবচেয়ে ক্ষতিকর 'জাঙ্ক ফুট বা ফাস্ট ফুড'। আমাদের শিশু-কিশোররা এসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন এফসির নামে দোকানগুলোতে যা পাওয়া যাচ্ছে, তার পুরোটাই অস্বাস্থ্যকর, ক্ষতিকর ও ভেজাল।
কাজী ফারুক বলেন, ভেজাল ও ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারকারীদের জন্য কঠিন আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু টাকা জরিমানা আর কারাদণ্ড দিলে হবে। ক্ষতিকর সব রাসায়নিক উপাদান মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে। তাই এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনেরও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এককথায় ভেজালের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা উচিত, ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×