
দৃষ্টিকোণ ও বর্ণনাঃ
বৈজ্ঞানিকভাবে ~~~ Pleiades হলো Taurus রাশিতে অবস্থিত একটি বাস্তব তারাগুচ্ছ, প্রায় ৪৪৪ আলোকবর্ষ দূরে।
আধ্যাত্মিকভাবে~~~ বিশ্বাস অনুযায়ী এটি একটি উচ্চ স্পিরিচুয়াল সভ্যতার কেন্দ্র, যেখান থেকে Pleiadians আসে।
পৌরাণিকভাবে~~~ সাত কন্যার কাহিনি থেকে নামকরণ করা হয়েছে; অনেক সংস্কৃতিতেই “সপ্তর্ষি” বা “সপ্ততারা” ধারণার সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
গুরুত্ব
* নৌ-পথ নির্ণয়ে সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল সর্বকালেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
* এটি উত্তর দিক চিনতে সাহায্য করে কারণ এর লাইনে “Polaris” নক্ষত্রকে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
* পুরাণে সপ্তর্ষির ভূমিকা সৃষ্টিতত্ত্ব ও ব্রহ্মাণ্ডের শৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত।
“সপ্তর্ষি” সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলোঃ
### ✅ জ্যোতির্বিজ্ঞানে
সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল হলো **উরসা মেজর (Ursa Major)** বা “Great Bear” নক্ষত্রমণ্ডলের একটি প্রসিদ্ধ অংশ। এটি সাতটি উজ্জ্বল নক্ষত্র নিয়ে গঠিত, যেগুলো একসঙ্গে দেখতে **একটি ডোল বা খুপরির মতো** লাগে। অধিকাংশ দেশেই এটি Big Dipper নামে পরিচিত।
এই সাতটি নক্ষত্র হলো—
1. ডুবহে (Dubhe)
2. মেরাক (Merak)
3. ফেকদা (Phecda)
4. মেগ্রেজ (Megrez)
5. এলিওথ (Alioth)
6. মিজার (Mizar)
7. আলকািদ (Alkaid)
### ✅ ভারতীয় পুরাণ অনুসারেঃ
১. ভৃগু ঋষি
ভৃগু হলেন ব্রহ্মার সন্তান এবং ঋষিদের মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত।
✦ বিশেষত্ব
দেবতা, অসুর ও মানুষ— তিন বর্গের শিক্ষক
বহু রাজবংশের পূর্বপুরুষ
পরশুরামের পূর্বপুরুষ
✦ উল্লেখযোগ্য গল্প
“ত্রিদেবের পরীক্ষা” - এক গল্পে বলা হয়, একবার ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব— এই তিন মহাদেবের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা যাচাই করতে ভৃগু পরীক্ষা করতে গেলেন।—ঋষিগণের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে ত্রিদেবের মধ্যে—ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর— কে শ্রেষ্ঠ। এই দায়িত্ব দেওয়া হয় ভৃগু মুনিকে।
✦ ব্রহ্মার কাছে ভৃগু
ভৃগু ব্রহ্মার নিকট গিয়ে তাঁকে সম্মান জানালেন না। ব্রহ্মা অপমান সহ্য করলেও রাগ দমন করলেন। ভৃগু বুঝলেন—ব্রহ্মা রাগী।
✦ শিবের কাছে ভৃগু
শিবের সামনে গেলে শিব ভৃগুকে দেখে আনন্দিত হন। কিন্তু ভৃগু তাঁর গলায় পরা সাপ দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। শিব রাগে ক্ষিপ্ত হন এবং তাঁকে ধ্বংস করতে উদ্যত হন। পার্বতীর অনুরোধে শিব নিজেকে সংযত করেন।
✦ বিষ্ণুর কাছে ভৃগু
শেষে ভৃগু বিষ্ণুর বুকে লাথি মারেন! বিষ্ণু বিনম্রভাবে বলেন—
“হে ঋষি, আপনার পা ব্যথা পেয়েছে কি? আমার বুকে আপনার পদচিহ্ন থেকে গেলে আমি ধন্য।”
এই বিনয় দেখে ভৃগু উপলব্ধি করেন—বিষ্ণুই সর্বশ্রেষ্ঠ।
কবির ভাষায়ঃ
'আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি চির-বিদ্রোহী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!'
২. মরি্চি — ব্রহ্মার প্রথম মানসপুত্রদের অন্যতম; সূর্যদেবের পূর্বপুরুষ।
✦ বিশেষত্ব
বিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে “প্রজাপতি” বা সৃষ্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত
সূর্যদেব (বৈবস্বত মনু) তাঁর বংশধর
✦ গল্পঃ “সূর্যবংশের পূর্বপুরুষ”ঃ মরীচির স্ত্রী উরুণা ছিলেন অতুল সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু তিনি রাগী ও অভিমানী ছিলেন।
✦ অভিশাপের গল্প -বলা হয়, একদিন মরীচি ক্ষণিকের জন্য মাতৃসম অনুশোচনায় থাকা অবস্থায় উরুণা তাঁর ওপর রাগ করেন। মরীচি তাঁকে অভিশাপ দেন— “তুমি পাথর হয়ে যাবে।” অভিশাপ সত্যি হয়। পরবর্তীতে ব্রহ্মার অনুরোধে মরীচি অভিশাপ লাঘব করেন।
✦ মরীচির বংশধর
মরীচি → কশ্যপ → সূর্য, ইন্দ্র, বসুধা, গণেশ, অসুর, নাগ— এইভাবে পুরো দেবতা ও অসুর বংশ মরীচির বংশধর বলে গণ্য।
৩.অত্রি — অত্রি মুনির স্ত্রী অনসূয়া; তাঁদের সন্তান দত্তাত্রেয় (বিষ্ণু অবতার)।
অত্রি মুনি তপস্যার জন্য বিখ্যাত। তাঁর স্ত্রী ছিলেন অনসূয়া— যিনি স্ত্রীর সতীত্বের আদর্শ।
✦ বিশেষত্ব
তপস্যার শক্তিতে দেবতারা তাঁর কাছে হার মানত
দত্তাত্রেয় তাঁদের সন্তান— যিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব— তিন শক্তির মিলিত রূপ
✦ গল্পঃ দানবদের অত্যাচার থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য অত্রির তপস্যা এত শক্তিশালী হয়েছিল যে তিন দেবতা নিজেই তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন দত্তাত্রেয় রূপে।
✦ তিন দেবতার পরীক্ষা -লোককথায় বলা হয়, দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী ও পার্বতী তাঁদের স্বামীদের প্রশংসা করেন। তিন দেবী রুষ্ট হয়ে অত্রির গৃহে তিন দেবতা—ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব—মানুষ রূপে গিয়ে অনসূয়াকে পরীক্ষা নিলেন। তারা শর্ত রাখলেন—
“আমাদের নগ্ন করে আহার করাতে হবে!” অনসূয়া তখন তাঁদের শিশুতে রূপান্তরিত করেন এবং মায়ের মতো খাওয়ান। দেবীশক্তিতে তিন দেবতা পরাজয় স্বীকার করেন।
✦ দত্তাত্রেয় জন্ম - এই ঘটনার পর তিন দেবতা খুশি হয়ে অনসূয়ার গর্ভে জন্মান— দত্তাত্রেয়— তিন দেবতার সম্মিলিত রূপ।
অত্রি–অনসূয়া পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী তপস্যাশক্তির দম্পতি হয়ে ওঠেন।
৪.অঙ্গিরা — দেবতাদের পুরোহিত এবং আগ্নেয়বিদ্যার বিশেষজ্ঞ।
অঙ্গিরা ঋষি অঙ্গিরা দেবতাদের পুরোহিত হিসেবে পরিচিত।
✦ বিশেষত্ব
আগ্নেয়বিদ্যা (Fire science)–এর জনক
ব্রহ্মবিদ্যা ও মন্ত্রশক্তিতে পারদর্শী
✦ গল্পঃ ইন্দ্র বহুবার অঙ্গিরার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। অসুরদের বিরুদ্ধে দেবতাদের জয়ী করার পেছনে অঙ্গিরার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“আগ্নেয়বিজ্ঞান ও দেবতাদের উদ্ধার” - অঙ্গিরা ছিলেন আগুনের সৃষ্টিতত্ত্ব-জ্ঞ।
✦ ত্রিশিরাসের যুদ্ধ -অসুর ত্রিশিরাস দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ দখল করেছিল। দেবতারা অসহায় হয়ে অঙ্গিরাকে ডাকলেন।
অঙ্গিরা অগ্নিমন্ত্র উচ্চারণ করে ত্রিশিরাসকে দুর্বল করেন। ইন্দ্র তাঁর সুযোগে আঘাত করে তাকে পরাজিত করেন।
✦ অঙ্গিরার “ব্রহ্মবিদ্যা” - “অঙ্গিরস” নামে উপনিষদের একটি শাখা তাঁর নামে পরিচিত। অনেক অস্ত্র মন্ত্রের জনক বলেও তাঁকে গণ্য করা হয়।
৫.পুলস্ত্য — রাবণের পিতামহ; পুরাণে অসুরদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পুলস্ত্য ঋষি পুরাণে এক রহস্যময় ও বহু-বর্ণনার চরিত্র।
✦ বিশেষত্ব
অসুর বংশের পূর্বপুরুষ
রাবণের পিতামহ
✦ গল্পঃ পুলস্ত্য যখন তপস্যায় মগ্ন ছিলেন, তখন তাঁর ছায়া থেকে জন্ম হয় বিশ্ব্রবা ঋষির। তাঁর থেকেই রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ জন্মগ্রহণ করে। তাই রাবণী বংশ তাঁরই বংশধর।
“রাবণ বংশের উৎস” - পুলস্ত্য ঋষি ব্রহ্মার সন্তান হলেও তাঁর গল্পে আলাদা রহস্য আছে।
✦ মেনকা–বিভিন্না গল্প
বিশৃবা ঋষি, যিনি লঙ্কার রাবণের পিতা, পুলস্ত্যের বংশধর।
বিশৃবার দুই স্ত্রী— কেশিনী (যার গর্ভে রাবণ, কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ)। মালিনী (যার গর্ভে কুবের)। ফলে, রাবণ কুবেরের সৎ ভাই।
এই বংশসূত্র পুরাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✦ পুলস্ত্যকে নিয়ে কিংবদন্তি - বলা হয়, পুলস্ত্য রাগ করলে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হতো, তাই দেবতারা সবসময় তাঁকে শান্ত রাখতে ভয় পেতেন।
৬.পুলহ — তপস্যা এবং যোগের সাধনা দিয়ে পরিচিত।
পুলহ ঋষি শান্ত ও ধ্যানী এক চরিত্র।
✦ বিশেষত্ব
যোগ ও ধ্যানের গুরু
বহু প্রাণীর বংশধর তাঁর থেকেই এসেছে
✦ গল্পঃ বিভিন্ন যোগ–সংপ্রদায়ের ও তপস্যাবিদের দীক্ষা তিনি দিয়েছেন। তাঁর তপস্যা দ্বারা প্রকৃতি শান্ত হয়েছে বলে পুরাণে উল্লেখ আছে।
ধ্যান ও প্রাণীদের বংশ” - পুলহ মুনির তপস্যা ছিল নিভৃতপ্রিয় ও শান্ত।
✦ প্রাণীদের জন্মকথাঃ পুরাণে বলা হয়, বহু বন্যপ্রাণী— সিংহ, বাঘ, ভালুক, হরিণ ইত্যাদি অনেক বংশ তাঁর তপস্যাশক্তি থেকে উদ্ভূত।
✦ পুলহের আশ্রমঃ কথিত আছে, হিমালয়ের গভীরে তাঁর আশ্রম ছিল। অন্যরা তাঁর তপস্যার প্রতি কোনও বাধা দিলে ভয়াবহ অভিশাপে আক্রান্ত হতো।
৭.ক্রতু — যজ্ঞ ও আচার-বিচারের বিশেষজ্ঞ ঋষি।
ক্রতু যজ্ঞসংক্রান্ত জ্ঞান ও আচার-বিধিতে বিশেষজ্ঞ।
✦ বিশেষত্ব
যজ্ঞের মাধ্যমে শক্তির সঞ্চার
দেবতা ও মানুষকে যজ্ঞ করতে শিক্ষা দিয়েছেন
✦ গল্পঃ ক্রতু তাঁর কঠোর যজ্ঞসাধনার মাধ্যমে দেবতাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন। ফলে অসুরদের আক্রমণ থেকে দেবতারা রক্ষা পেয়েছে। তাঁরা জ্ঞান, যোগ, আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মাচরণে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেন।
“যজ্ঞ ও শক্তিবৃদ্ধির মহাগুরু”ঃ ক্রতু ছিলেন যজ্ঞবিশারদ।
✦ যজ্ঞের শক্তিঃ একবার দেবতারা অসুরদের দ্বারা পরাজিত হয়। শক্তি ফিরে পেতে ক্রতুকে আহ্বান করা হয়। তিনি অগ্নিকুণ্ডে যজ্ঞ শুরু করেন— যজ্ঞ থেকে উৎপন্ন শক্তি দেবতাদের শরীরে প্রবেশ করে তাঁদের আবার শক্তিশালী করে তুলেছিল। দেবতারা পুনরায় জয়লাভ করেন।
✦ ক্রতুর কন্যাসন্তানঃ তাঁর কন্যারা ঋষিগণের স্ত্রী ছিলেন, যা বিভিন্ন বংশগাথায় গুরুত্বপূর্ণ।
✅ সপ্তর্ষিদের প্রধান ভূমিকা
ধর্ম প্রতিষ্ঠা: মানুষের আচার-বিচার, ব্রত, যজ্ঞ ও নীতির শিক্ষা দিয়েছেন।
তপস্যা: কঠোর তপস্যার মাধ্যমে শক্তি অর্জন করেছেন।
ব্রহ্মাণ্ডের শৃঙ্খলা: সৃষ্টির চক্র অব্যাহত রাখতে ব্রহ্মাকে সহায়তা করেছেন।
মানবজাতির পূর্বপুরুষ: বহু রাজার, দেবতার ও বংশের সূচনা তাঁদের থেকেই।
✅ সপ্তর্ষিদের সাথে নক্ষত্রমণ্ডলের সম্পর্ক
পুরাণে এই সাত ঋষির প্রতীক হিসেবে উরসা মেজর (সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল)-এর সাতটি নক্ষত্রকে ধরা হয়। প্রতিটি নক্ষত্র একটি ঋষির প্রতিরূপ।
✅ চক্র অনুযায়ী সপ্তর্ষি
প্রতি যুগে (মন্বন্তর) সপ্তর্ষির তালিকা বদলে যায় বলে পুরাণে উল্লেখ আছে। এখন যে মন্বন্তর চলছে তাকে “বৈবস্বত মন্বন্তর” বলা হয়, এবং এই সময়ে এই সাতজন ঋষিকে সপ্তর্ষি হিসেবে গণ্য করা হয়।
view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



