
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বৈদিকদের জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে নক্ষত্র হল চন্দ্রপথের ২৮টি ভাগ যেগুলো "চন্দ্রনিবাস" হিসেবে পরিচিত । সূর্যের গতিপথকে যেমন ১২ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে রাশি তেমনি চন্দ্রপথকে ২৮ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে নক্ষত্র ।
বিভিন্ন দেশে এই চন্দ্রনিবাসসমূহের নাম বিভিন্ন । ভূমধ্যাঞ্চলীয় আরবে ও পূর্বাঞ্চলীয় চীনে সময় পরিমাপের এ প্রাকৃতিক ঘড়িটিকে ২৮ ভাগেই ভাগ ক'রে নিয়েছে । আরবরা একে বলে "মঞ্জিল" ।
চীনাদের কাছে এ "সিউ" নামে পরিচিত । মিশরেও এমন এক আকাশবিভাজন পাওয়া যায় , যা ৩৬ ভাগে বিভক্ত "দেকান" নামে পরিচিত।
প্রাচীন গ্রিসে এধরনের কোন চন্দ্রনিবাস চর্চার কথা জানা যায় না ।
যোগতারা ভোগ
চাঁদ প্রত্যেক তিথিতে একেকটি নক্ষত্রের সীমানায় অবস্থান করে। পূর্ণিমার দিন চাঁদ যে নক্ষত্রে অবস্থান করে তদনুসারে মাসের নাম বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ইত্যাদি রাখা হয়েছে । প্রত্যেক নক্ষত্রের আকাশস্থানের পরিমাণ (৩৬০ / ২৮ = ১২ ডিগ্রী ৮৬ মিনিট)। প্রতিটি নক্ষত্রের একটি বিশেষ তারাকে (সাধারণত উজ্জ্বলতম তারাকে) নির্দিষ্ট করা হয় এবং একে যোগতারা বলা হয়। কোন নক্ষত্রের আদিবিন্দু থেকে ঐ নক্ষত্রের যোগতারা পর্যন্ত ভূকক্ষের অংশকে উক্ত নক্ষত্রের ভোগ বলা হয়।
শাস্ত্রে নক্ষত্রের অবস্থান এবং যোগতারা নির্দিষ্ট করা আছে। তাই প্রত্যেক নক্ষত্রের ভোগ নির্দিষ্ট। এর কোন পরিবর্তন হয়না।
Western Astrology
পাশ্চাত্য জ্যোতিষে constellation বা fixed stars-এর আলাদা ইংরেজি নাম আছে, কিন্তু সেগুলো ভারতীয় ২৭টি নক্ষত্রের সঙ্গে একে-একটি mapping নয়। অর্থাৎ পাশ্চাত্য জ্যোতিষশাস্ত্রে (Western Astrology) ভারতীয় বৈদিক ২৭টি নক্ষত্রের সরাসরি কোনো সমতুল্য নেই। বৈদিক জ্যোতিষে যেখানে চন্দ্রপথভিত্তিক ২৭টি নক্ষত্র ব্যবহৃত হয়, পাশ্চাত্য জ্যোতিষে মূলত ১২টি রাশি (Zodiac Signs) এবং ৮৮টি আধুনিক নক্ষত্রপুঞ্জ (Constellations) ব্যবহৃত হয়, যা একেবারে আলাদা একটি গণনা।
বৈদিক নক্ষত্র Indian astrology অনুযায়ী প্রচলিত (উদাহরণ: Ashwini, Bharani, ইত্যাদি) এবং পাশ্চাত্যেও সেভাবেই ব্যবহৃত হয়। পাশ্চাত্যে মূলত ১২টি zodiac sign: Aries, Taurus, Gemini, Cancer, Leo, Virgo, Libra, Scorpio, Sagittarius, Capricorn, Aquarius, Pisces।
প্রতিটি নক্ষত্রের নিজস্ব পাত্র, শক্তি, চরিত্র ও প্রভাব রয়েছে, যা বৈদিক জন্মকুণ্ডলীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো চন্দ্রের গতিপথ অনুসারে বিভক্ত এবং প্রতিটি নক্ষত্র প্রায় ১৩° ২০’ (ডিগ্রি) করে অবস্থান করে। এই নক্ষত্রগুলোর প্রতিটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, শক্তি, প্রতীক ও দেবতা দ্বারা চিহ্নিত। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে ২৭টি নক্ষত্রের নাম ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হলো:
২৭টি নক্ষত্রের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১. অশ্বিনী (Ashwini)
দেবতা: অশ্বিনী কুমার, প্রতীক: ঘোড়ার মাথা
বৈশিষ্ট্য: চটপটে, দ্রুত কর্মক্ষম
২. ভরণী (Bharani)
দেবতা: যম, প্রতীক: যোনি
বৈশিষ্ট্য: শক্তি, সহনশীলতা
৩. কৃত্তিকা (Krittika)
দেবতা: অগ্নি, প্রতীক: ছুরি
বৈশিষ্ট্য: তেজস্বী, কঠোর
৪. রোহিণী (Rohini)
দেবতা: ব্রহ্মা, প্রতীক: গরু
বৈশিষ্ট্য: সৃষ্টিশীল, আকর্ষণীয়
৫. মৃত্যু (Mrigashira)
দেবতা: সোম (চন্দ্র), প্রতীক: হরিণের মাথা
বৈশিষ্ট্য: অনুসন্ধানী, কৌতূহলী
৬. আর্দ্রা (Ardra)
দেবতা: রুদ্র, প্রতীক: জলবিন্দু
বৈশিষ্ট্য: আবেগপ্রবণ, পরিবর্তনশীল
৭. পুনর্বসু (Punarvasu)
দেবতা: অদিতি, প্রতীক: ধনুক
বৈশিষ্ট্য: পুনর্জন্ম, আশাবাদী
৮. পুষ্য (Pushya)
দেবতা: বৃহস্পত, প্রতীক: ফুল বা স্তন
বৈশিষ্ট্য: পুষ্টিদাতা, শুভ
৯. আশ্লেষা (Ashlesha)
দেবতা: নাগ, প্রতীক: সাপ
বৈশিষ্ট্য: রহস্যময়, বুদ্ধিমান
১০. মঘা (Magha)
দেবতা: পিতর, প্রতীক: সিংহাসন
বৈশিষ্ট্য: নেতৃত্ব, ঐতিহ্য
১১. পূর্ব ফল্গুনী (Purva Phalguni)
দেবতা: ভগ, প্রতীক: দোলা
বৈশিষ্ট্য: আনন্দপ্রিয়, সৃজনশীল
১২. উত্তর ফল্গুনী (Uttara Phalguni)
দেবতা: অর্যামান, প্রতীক: বিছানা
বৈশিষ্ট্য: সহানুভূতিশীল, বন্ধুত্বপূর্ণ
১৩. হস্ত (Hasta)
দেবতা: সাভিতৃ, প্রতীক: হাত
বৈশিষ্ট্য: দক্ষ, চতুর
১৪. চিত্রা (Chitra)
দেবতা: বিশ্বকর্মা, প্রতীক: মুক্তা
বৈশিষ্ট্য: রূপসজ্জা, নান্দনিকতা
১৫. স্বাতি (Swati)
দেবতা: বায়ু, প্রতীক: অঙ্কুর
বৈশিষ্ট্য: স্বাধীন, নমনীয়.
১৬. বিশাখা (Vishakha)
দেবতা: ইন্দ্র-অগ্নি, প্রতীক: ধনুক
বৈশিষ্ট্য: উচ্চাকাঙ্ক্ষী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
১৭. অনুরাধা (Anuradha)
দেবতা: মিত্র, প্রতীক: পদ্মফুল
বৈশিষ্ট্য: বন্ধুত্বপূর্ণ, আনুগত্য
১৮. জ্যেষ্ঠা (Jyeshtha)
দেবতা: ইন্দ্র, প্রতীক: কানঝুমকা
বৈশিষ্ট্য: কর্তৃত্ব, অভিজ্ঞ
১৯. মূলা (Mula)
দেবতা: নিরৃতি, প্রতীক: গিঁট
বৈশিষ্ট্য: গভীর, অনুসন্ধানী
২০. পূর্বাষাঢ়া (Purva Ashadha)
দেবতা: অপ্সরা, প্রতীক: হাতির দাঁত
বৈশিষ্ট্য: নির্ভীক, আশাবাদী
২১. উত্তরাষাঢ়া (Uttara Ashadha)
দেবতা: বিশ্বদেব, প্রতীক: হাতি
বৈশিষ্ট্য: বিজয়ী, স্থিতিশীল
২২. অভিজিৎ (Abhijit)
(অনেক তালিকায় ২৮তম, অনেক সময় বাদ দেওয়া হয়)
২৩. শ্রবণা (Shravana)
দেবতা: বিষ্ণু, প্রতীক: কান
বৈশিষ্ট্য: মনোযোগী, শ্রবণক্ষম
২৪. ধনিষ্ঠা (Dhanishta)
দেবতা: অষ্টবসু, প্রতীক: ড্রাম
বৈশিষ্ট্য: সংগীতপ্রেমী, সামাজিক
২৫. শতভিষা (Shatabhisha)
দেবতা: বরুণ, প্রতীক: বৃত্ত
বৈশিষ্ট্য: নিরাময়কারী, রহস্যময়
২৬. পূর্ণাভাদ্র (Purva Bhadrapada)
দেবতা: অজ একপাদ, প্রতীক: তরবারি
বৈশিষ্ট্য: আদর্শবাদী, গভীর
২৭. উত্তরাভাদ্র (Uttara Bhadrapada)
দেবতা: অহিভৃৎ, প্রতীক: যমজ বিছানা
বৈশিষ্ট্য: স্থিতিশীল, সহানুভূতিশীল
২৮. রেবতী (Revati)
দেবতা: পুষান, প্রতীক: মাছ
বৈশিষ্ট্য: সুরক্ষাদাতা, কোমল
* কখনও কখনও অভিজিৎ নক্ষত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন মোট নক্ষত্র হয় ২৮টি।
ভারতীয় নক্ষত্রসমূহের অবস্থান কোন zodiac sign অনুসারেঃ
বৈদিক নক্ষত্র ----প্রধানত যে রাশিতে অবস্থিত (Western Zodiac Sign)
অশ্বিনী (Ashwini) মেষ (Aries)
ভরণী (Bharani) মেষ (Aries)
কৃত্তিকা (Krittika) মেষ (Aries) ও বৃষ (Taurus)
রোহিণী (Rohini) বৃষ (Taurus)
মৃগশিরা (Mrigashira) বৃষ (Taurus) ও মিথুন (Gemini)
আর্দ্রা (Ardra) মিথুন (Gemini)
পুনর্বসু (Punarvasu) মিথুন (Gemini) ও কর্কট (Cancer)
পুষ্য (Pushya) কর্কট (Cancer)
আশ্লেষা (Ashlesha) কর্কট (Cancer)
মঘা (Magha) সিংহ (Leo)
পূর্ব ফল্গুনী (Purva Phalguni) সিংহ (Leo)
উত্তর ফল্গুনী (Uttara Phalguni) সিংহ (Leo) ও কন্যা (Virgo)
হস্ত (Hasta) কন্যা (Virgo)
চিত্রা (Chitra) কন্যা (Virgo) ও তুলা (Libra)
স্বাতি (Swati) তুলা (Libra)
বিশাখা (Vishakha) তুলা (Libra) ও বৃশ্চিক (Scorpio)
অনুরাধা (Anuradha) বৃশ্চিক (Scorpio)
জ্যেষ্ঠা (Jyeshtha) বৃশ্চিক (Scorpio)
মূলা (Mula) ধনু (Sagittarius)
পূর্বাষাঢ়া (Purva Ashadha) ধনু (Sagittarius)
উত্তরাষাঢ়া (Uttara Ashadha) ধনু (Sagittarius) ও মকর (Capricorn)
শ্রবণা (Shravana) মকর (Capricorn)
ধনিষ্ঠা (Dhanishta) মকর (Capricorn) ও কুম্ভ (Aquarius)
শতভিষা (Shatabhisha) কুম্ভ (Aquarius)
পূর্বভাদ্রপদ (Purva Bhadrapada) কুম্ভ (Aquarius) ও মীন (Pisces)
উত্তরভাদ্রপদ (Uttara Bhadrapada) মীন (Pisces)
রেবতী (Revati) মীন (Pisces)
রোহিণী
রোহিণী আকাশের ১৪তম উজ্জ্বল প্রভার নক্ষত্র। এটি সূর্য থেকে ৬৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বৃষরাশির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে ২৮ নক্ষত্রের ৪র্থ এ সদস্যার প্রাচীন তথা ঋগ্বেদের ঋষিদের দেয়া নাম বিধাতা, প্রজাপতি, ব্রহ্মা, স্বপস্যমান বা স্বয়ম্ভূ, সূনুর্দ্দাধার(সূনু=সৃষ্টি+দায়+আধার) ইত্যাদি, সৈন্ধান্তিকরা যাকে রোহিণী নামে চিহ্নিত করছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে এই নক্ষত্রের নাম Aldebaran (আলফা টাউরি)।
রোহিণী একটি লোহিত দানব, যা সূর্যের থেকেও ঠান্ডা। রোহিণীপৃষ্ঠের উষ্ণতা ৩৯০০K। এটির আয়তন সূর্র্যের প্রায় ৪৪ গুন্। নিজের অক্ষের চারদিকে একবার পাক খেতে রোহিণী ৫২০ দিন সময় নেয়।
স্পেস প্রোব পায়োনীয়ার ১০ রোহিণীর দিকে ধাবমান, যা আনুমানিক কুড়ি লক্ষ বছর পর রোহিণীর কাছাকাছি আসতে পারে।
আকাশে অবস্থান
বৃষ রাশি নক্ষত্রমন্ডলভুক্ত রোহিণী পৃথিবী থেকে উজ্জ্বল দেখালেও দূরত্ব ১৩০ আলোকবর্ষ আর দীপ্তি সূর্যের ৯০ গুণ। আকাশমন্ডলের ৩৬০ অংশের ৪০ থেকে ৫৩ অংশ ২০ কলা(কোণ পরিমাপ একক) পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



