গণিত এমন একটা বিষয় যেটা কারও কাছে অত্যন্ত প্রিয় আর কারও কাছে যমের মত। অংক করার কথা বললেই কারো কারো মাথা ঘুরে ওঠে। ছোটবেলা থেকে বেসিক শিক্ষায় গলদ থাকার কারণে অনেকের মনেই গণিতভীতি ঢুকে যায়। এই ভীতি কেউ কেউ প্রচুর অনুশীলনের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠে আর কারও কারো মনে এই ভীতি স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসে। শুধুমাত্র এই গণিতভীতির কারণেই অনেক সম্ভাবনাময় মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের অভীস্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না! বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা আরও চরম পরিমাণে সত্য।
বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষাগুলো সাধারণত বিজ্ঞানের ৪টি বিষয়ের উপর হয়- গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান।কোন কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, সাধারণ জ্ঞান এবং ইংরেজীর উপরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে বিজ্ঞানের বাইরের বিষয়গুলোর প্রশ্ন খুব একটা কঠিন হয় না। চোখকান সামান্য খোলা রাখলেই এসব বিষয়ে ভালো করা সম্ভব। পরিক্ষার্থীদের আসল পরীক্ষা দিতে হয় বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর উপরই। এই চার বিষয়ের মাঝে রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে নম্বর তোলা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এবং চালাক পরিক্ষার্থীরা এখানে বেশ ভালো নম্বরও তোলে, কারও কারওতো জীববিজ্ঞানে পূর্ণ নম্বর পাওয়ারও রেকর্ড আছে। কিন্তু সেই একই পরিক্ষার্থী দেখা যায় গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানে নম্বর তুলতে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। কেউ কেউ আবার গণিতে ফেলও করে বসছে! এই তো গত বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার কথা। সে সময় বহু পরিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় অকৃ্তকার্য হওয়ার মুল কারণ হচ্ছে গণিত।পরীক্ষা শেষে গুজব ছড়িয়ে গেছে যে স্মরণকালেরসবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন হয়েছে গণিতে! অথচ ব্যাপারটা কখনই এমন ছিল না। এই প্রশ্নতেই কিছু কিছু পরিক্ষার্থী গণিতে ৩০ এ ২৫ কিংবা তার উপর পেয়েছিলো!
ফলাফলে কেন এই পার্থক্য হল এই প্রশ্ন করলে অনেকেই নিরাপদ উত্তর দিতে চায়, যেমন- যারা ভালো করেছে তারা আসলে অনেক জিনিয়াস, গণিতে ভালো করা একটা ব্যতিক্রমী বিষয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার বলে, “আমিতো ভালো প্রস্তুতিই নিয়েছিলাম কিন্তু পরীক্ষার হলে ভাগ্যটা খারাপ থাকায় এবার হল না…….”। কিন্তু কেউই স্বীকার করতে চায় না যে গণিতের প্রতি একটা আগাম ভীতির কারণেই তার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে! অনেকে অবশ্য ব্যাপারটা ঐভাবে বুঝতেও পারে না।অবচেতন মনে গণিতের প্রতি তার যে বিতৃষ্ণা আছে সেটা তার মাঝে কোন বোধেরও সৃষ্টি করে না।এজন্য অবশ্য তাকে খুব একটা দোষও দেওয়া যায় না। সমস্যাটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। গোড়াতেই গলদ রয়ে গেলে সেই গলদ সারাজীবন খাটলেও দুর করা সম্ভব না। আমাদের অনেকের গণিতের বেসিকের গোড়াতেই গলদ রয়ে গেছে তাই এই গণিতভীতি।
এখন এই গণিতভীতি কিভাবে কাটিয়ে উঠা সম্ভব? নাকি আদৌ গণিতে পরিপূর্ণ দক্ষ সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব। কারণ যারা গণিতে ভালো করে তারা আপনার আমার মতই রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ এবং ছাত্র।এবং একটু হিসেব করলে হয়তো দেখা যাবে তাদের আইকিউ লেভেলও আমাদের মতই। তাহলে তারা কিভাবে গণিতে ভালো করে যেখানে আপনি পারছেন না! আপনি পারছেন না কারণ আপনি পরীক্ষার হলে যাবার আগেই গণিতভীতিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে অনেক সময় সহজ প্রশ্নের উত্তরও আপনি দিতে পারছেন না। পরীক্ষার হলে আপনার সময় ব্যবস্থাপনায় ভুল হয়ে যাচ্ছে। আপনি সব প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ে দেখারও সুযোগ পাচ্ছেন না! ফলশ্রুতিতে ফেল করছেন এবং ভাগ্যকে দুষছেন!
যাই হোক এভাবে নিজের ব্যর্থতার দায়ভার ভাগ্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে কোন লাভ নেই। আমাদেরকে অবশ্যই এই গণিতভীতি কাটিয়ে উঠতে হবে। এবং এই ভীতি কাটিয়ে উঠা এমন কোন কঠিন বিষয়ও না। কিভাবে গণিতভীতি কাটিয়ে উঠা যায় সে ব্যাপারে আমি পরবর্তী পর্বগুলোতে আলোচনা করব।