সন্ধ্যা ৭ টা (শেরে বাংলা হলের একটি রুম)
-মা, কাল ২০০০ টাকা পাঠিয়ে দিও...পরীক্ষার ফি জমা দিতে হবে...
-সেদিন না তোকে ১৫০০ টাকা দিলাম...
-সেটাতো ছিলো মাসের খরচ...সেটা ও তো শেষ...সামনের মাসের খরচ টা ও পাঠিও মা...
-কিন্তু আমার কাছে তো এতো টাকা নাই বাবা...
-সেটা তো আমি বুঝি ই মা...কিন্তু কি করবো বল...একটা টিউশনি ও কেউ জোগাড় করে দেয় না...এ শহরে কেউ কারো না মা...
-ঠিক আছে বাবা, আমি চেস্টা করবো...
-আর কয়টা দিন মা...পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে তো আর ৪ বছরের কোর্স ৪ বছরে শেষ হয় না...মা আমি পড়া শেষ করেই একটা চাকরি করবো...তখন তোমাকে আর এত কষ্ট করতে হবে না.....আচ্ছা মা,আমি তাহলে রাখলাম,কাল আমার একটা পরীক্ষা আছে...দোয়া করো মা...
-আচ্ছা বাবা...ভালো করে পড়...রাখলাম...
রাত ৮ টা (হলের ক্যন্টিন)
-ওই, কি শুনলাম, কাল নাকি একটা ক্লাস টেস্ট আছে...
-এটা তো অনেক আগে থেকেই ডেট দেয়া ছিলো...
-কইলেই হইলো নাকি, সারাদিন আড্ডা মারলাম...কাল আমার একটা ডেট ও আছে...অসম্ভব...কাল পরীক্ষা দেয়া-ই যাবে না...তোর মনে হয় পড়া সব শেষ,তাই না?
-তোর মাথা খারাপ, আজ আমার ডেট ছিলো...মাত্র আসলাম হল এ...
- তাহলে কাল তো আর পরীক্ষা দেয়া জাচ্ছে না,তাই না...
-ঠিকাছে...তাহলে নিউ হলের পোলাপান রে একটা ফোন দে...আর লেডিস হলে-ও একটা ফোন দে।
রাত ৯ টা (হলের মাঠ)
-এতো কম পোলাপান দিয়া কি পরীক্ষা পিছানো যায়...আর কই?
-আর কইস না...কতগুলা মুরগি আছে না...পড়তেসে রুমে বইসা...আমরা কষ্ট কইরা পরীক্ষা পিছামু আর তারা সুবিধা খাইবো...
- কথা না বাড়িয়ে স্যার কে ফোন দে...
-“স্লামালাইকুম স্যার...স্যার, কাল তো একটা পরীক্ষা র ডেট ছিলো...কিন্তু ছেলেপেলেড়া তো পরীক্ষা দিতে চাচ্ছে না...অনেক বড় সিলেবাস...আর কাল রাতে হলে কারেন্ট ও ছিলো না...
-কি বলছ...কাম্পাসে তো লোডশেডিং হয় না...আর সিলেবাস ও তো খুব বড় না...সেই কবে পরীক্ষার ডেট দেয়া হয়েছে...পরীক্ষা দিয়ে দাও...
-না স্যার...মেয়েরা ও পরীক্ষা দিতে চাইছে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে...তাহলে কাল তোমরা পরীক্ষা হলে কেউ এসো না...একজন এলেও পরীক্ষা নিতে হবে...বুঝেছ বেপারটা?
-জি স্যার, ঠিকাছে স্যার...কেউ আসবে না...আচ্ছা স্যার স্লামালাইকুম...”
-ওক্কে...তাহলে লেডিস হলে একটা ফোন করে জানিয়ে দে...
রাত ১০ টা (লেডিস হল)
-এই শুনেছিস কাল তো পরীক্ষা হচ্ছে না...
-ওয়াওও...কি মজা...আমার কাল একটা ডেট আছে...খুব মজা করে ডেট দেয়া যাবে...ইয়াহু...
-তোর তো খালি ডেট আর ডেট...চল নতুন হিন্দি সিরিয়াল শুরু হয়েছে, চল দেখি...
ওক্কে...চল...সবাইকে জানা...আজ হেভি মজা হবেরে...
রাত ১১ টা (শেরে বাংলা হলের একটি রুম)
-কিরে...এখনো পড়ছিস মুরগি কোথাকার...পরীক্ষা তো হচ্ছে না...
-কি! আমি কাল থেকে পড়ছি...আমার পড়া প্রায় শেষ...কবে হবে এই পরীক্ষা?
-স্যার ডেট দেয় নাই...
-এটা কোন কথা হল...আমার পড়াটা শুধু শুধু হল। মা এত করে বললো, আমি এই পরীক্ষার জন্য বাড়ি যেতে পারি নি...এটা কি মগের মুল্লুক!
- কি করবি দোস্ত, এটা-ই আমাদের ইউনিভার্সিটির রেওয়াজ...
এটা হলো শেরে বাংলা কৃষি ইউনিভার্সিটির একটি নিত্য নৈমিত্তিক চিত্র। একটি সেমিস্টার শেষ হতে যেখানে ৬ মাস লাগার কথা সেখানে এসব কারনেই লেগে যাচ্ছে ৯-১০ মাস। ইয়ার সিস্টেম থেকে সেমিস্টার সিস্টেম-এ উন্নিতকরন এর মূল উদ্দেশ্য ই যেন সেশন জট না থাকে...কিন্তু সেই উদ্দেশ্য রয়ে যাচ্ছে কাগজে কলমে ই।
আজ যেখানে অন্যান্য ইয়ার সিস্টেম পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে আজ কোন জট নেই সেখানে সেমিস্টার সিস্টেম এ পরিনত হয়ে একটা টেকনিকাল ইউনিভার্সিটিতে ১ বছর জট মানা যায় না। তা-ও মানা যেত যদি কোন সঙ্গত কারন থাকতো। এখানে নেই কোন আন্দোলন, নেই কোন ছাত্র রাজনিতির অপচ্ছায়া...তবুও পিছিয়ে পড়ছে এই ইউনিভার্সিটি...তার কারন তো উপরোক্ত কেস স্ট্যডি থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
আসলে এই পিছিয়ে যাওয়ার জন্য একদিকে যেমন কিছু ছাত্র নামের অছাত্র দায়ী, তেমনি ভাবে দায়ী দূর্বল প্রশাসন। আজ পিছিয়ে দেয়া পরীক্ষা যদি কোন শিক্ষক আর না নিতো তাহলেই ছাত্ররা আর পরীক্ষা পিছানোর সাহস পেতো না।
যে জায়গায় আজ আমাদের দেশ সম্পূর্নভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল, সেখানে প্রাচীনতম এবং দেশের রাজধানী-তে অবস্থিত একমাত্র কৃষি ইউনিভার্সিটির এমন পিছিয়ে পড়াটা মোটে ও কারো কাম্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ রাত ১২:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




