somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কিছু সুন্দর স্বপ্নের অপমৃত্যু

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এই সীমা এই, আরে এইদিকে আয়।
-এইতো আসছি আপু।
-কি ব্যাপার? কতক্ষণ ধরে দাঁড়াইয়া আছি, তোর কোন খবর নাই। আজকে এত দেরি হল কেন?
-আর বোল না আপু, স্কুল থেকে ঠিক করছে পিকনিকে যাবে। তো সেটার জন্য জায়গা ঠিক করা নিয়ে সবাই মিলে আলোচনা করতেছিল। এই কারনে একটু দেরি হয়ে গেল। তুমি রাগ কর নাই তো আপু?
একবারে অনেক কথা বলে ভয়ে ভয়ে আপুর দিকে তাকাল।
-রাগ আর কি করব? কিন্তু কথা হল, এখন পিকনিকে যে যাবি টাকা পাবি কই? আম্মুর কাছে তো মনে হয় এখন টাকা পাওয়া যাবে না।
-ওইটা নিয়ে চিন্তা কর না আপু, আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে।
-তুই আবার টাকা পাইলি কই?
-এই মাঝে মাঝে পাওয়া টাকা গুলা জমাই রাখছিলাম। এতদিনে বেশ কিছু টাকা হয়ে যাওয়ার কথা।
-ঠিক আছে, দেখা যাক। লাগলে আমাকে বলিস, দেখি ব্যবস্থা করতে পারি নাকি।
-না না আপু, তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। আমার কাছে যা আছে তা দিয়ে হয়ে যাবে।

রীমার কাছ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। কেন যে সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে বিত্তবান করে পাঠাল না, অন্তত বাবা বেঁচে থাকলেও এতটা কষ্ট করতে হত না। ছোট বোনটা অনেক আহ্লাদি, ঘোরাঘুরি করার অনেক শখ। কিন্তু টাকার অভাবে সব সময় যেতে পারে না। ওর কষ্ট গুলার কথা কাউকে বলেও না, নিজের ভিতরেই সব কিছু জমিয়ে রাখে। মেয়েটার জন্য কষ্ট হয়, কিন্তু করার কিছুই নেই। তার নিজের পড়াশোনার পেছনেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এখনো কলেজ শেষ করতে পারল না। তার উপর ডাক্তার হওয়ার খুব শখ, কিন্তু কতটুকু পূরণ করতে পারবে সেটা জানা নাই, যদিও ছাত্রী হিসেবে সে খারাপ না। তারপরও ডাক্তারি পড়তে খরচ অনেক।

রীমা মনে মনে ভাবে, যা কিছুই হোক। একদিন ঠিকই ডাক্তার হবে সে। তারপর ছোট বোনটাকে নিয়ে অনেক ঘোরাঘুরি করবে। মনে মনে খানিকটা আনন্দ পায় সে। একদিন সুখ নিশ্চয় দেখা দিবে।

হঠাৎ করে তীক্ষ্ণ শিষের শব্দে রীমার ঘোর ভাঙ্গে। তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে বিচ্ছিরি ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।

ওই ছেলেটা আবারো বিরক্ত করতে এসেছে। ভাবতেই সীমার মুখের দিকে চেয়ে দেখে বেচারী ভয়ে কুঁকড়ে আছে।
-আপু, ওই মাস্তানটা আবারো এসেছে। এখন কি হবে?
-চিন্তা করিস না, দেখি কি করা যায়।

রীমা ছেলেটার দিকে না তাকিয়ে সোজা হাঁটা ধরল। তাড়াতাড়ি করে হেঁটে আসার সময় কিছু অশালীন শব্দ শুনতে পেল। ছেলেগুলা নিজেদের মধ্যে ওকে নিয়ে অশালীন কথা বলছে আর অট্টহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আশেপাশের লোকজনও ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে রীমার মরে যেতে ইচ্ছা করল। কোনমতে ঢোঁক গিলে ছোট বোনের দিকে তাকাল।
-কান বন্ধ করে তাড়াতাড়ি হাঁট।

সীমার বয়স এখনো খুব কম। মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ে। ওদের কথাগুলো পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও খারাপ কথা বলতেছে এটা ঠিকই বুঝতে পারল। ভয়ে তাড়াতাড়ি করে আপুকে অনুসরণ করা শুরু করল।
-আপু, আশেপাশের লোকজন ওদেরকে মার দিতে পারে না? কেউ কিছু করতেছে না।
-ওদের ক্ষমতা অনেক। ওদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই মরতে হবে।
-তাই বলে এভাবে প্রতদিন অপমান হজম করে যেতে হবে?
রীমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল
-শোন আম্মুকে এই ব্যাপারে কিছু বলবি না। আম্মু এমনিতেই অনেক টেনশনে থাকে, তার উপর এই কথা শুনলে আরো টেনশন করা শুরু করবে।
-ঠিক আছে আপু, বলব না।



রেহানা বেগমের স্কুল আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে রান্নাবান্নার পাট চুকিয়ে উলের কাঁটা নিয়ে বসলেন। সামনে শীত আসছে, এর আগেই দুই মেয়ের জন্য দুইটা উলের সোয়েটার তৈরি করে ফেলার ইচ্ছা। মেয়েরা আসতে আরো ঘন্টা দুয়েক বাকি আছে। তারপর আবার কিছু ছাত্র ছাত্রী পড়তে আসবে। এরপর আর সময় পাওয়া যাবে না। এই ছাত্র ছাত্রী পড়িয়ে আর স্কুলের বেতন দিয়েই কোনমতে সংসারটা চালাতে হয়।

রেহানা বেগমের হঠাৎ মৃত স্বামীর কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত এত কষ্ট করতে হত না। স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবনটা পার করে দিতে পারতেন। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এখন মেয়ে দুইটাই তার সব। এদেরকে পড়াশুনা করিয়ে ঠিকমত মানুষ করতে পারলেই তার শান্তি। রেহানা বেগম মনে মনে কিছু সুখের দিনের ছবি আঁকতে শুরু করলেন।



-কিরে তোদের স্কুল থেকে নাকি পিকনিকে যাবে?
রাতের বেলা সীমাকে পড়াতে বসিয়ে রেহানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন।
সীমা কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল,
-হ্যাঁ আম্মু।
-তো আগে বলিস নাই কেন? এখন যাবি যে টাকা পাবি কই?
-টাকা আমি জোগাড় করে রেখেছি আম্মু।
-তোর টাকা গুলো খরচ করে ফেলবি?
রেহানা বেগম কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেন।
-রেখে দে তোর টাকাগুলো, পরে কাজে লাগতে পারে। আমি দেখি জোগাড় করতে পারি নাকি। কবে যাবি?
-দিনটা এখনো ঠিক হয় নাই। শুধু জায়গা ঠিক হয়েছে। সীতাকুন্ডের ইকোপার্কে যাব। খরচ মনে হয় ৪০০ টাকার মত লাগবে।
-ঠিক আছে দেখি। এখন পড়তে বয়।

-আম্মু একটু শুনবে?
সীমা কিছুটা ইতস্তত করতে থাকে।
-আবার কি হয়েছে?
রীমার নিষেধ স্বত্বে ও সীমা রেহানা বেগমকে বিকালের ঘটনা সব বলে দিল।
-ওই গুন্ডা ছেলেটা আজকেও আপুকে বিরক্ত করেছে।
রেহানা বেগম একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
-কি? আবার বিরক্ত করেছে? আগে বলিস নাই কেন?
-আপু নিষেধ করছিল।
-রীমা নিষেধ করেছে?
রেহানা বেগমকে একটু চিন্তিত দেখাল।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আর কিছু হলে আমাকে জানিয়ে দিবি।

রেহানা বেগম খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই ছেলে গুলার জ্বালায় আর পারা গেল না। কয়েকদিন ধরেই ঝামেলা করতেছে। এদের মায়েরা কি জানে না, ছেলে কি করতেছে? রেহানা বেগম কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

এবার কিছু একটা করতেই হবে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।

পরক্ষণেই মনে হল, এদের বিরুদ্ধে তিনি কি করতে পারবেন?
এদের শক্তি যে অনেক বেশি। একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন।



কিছুদিন পর সীমা খুব খুশি খুশি ভাব নিয়ে স্কুল থেকে বের হল। বের হয়েই রীমাকে দেখতে পেল, গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-আপু, কালকেই আমরা পিকনিকে যাচ্ছি। সব কিছু কনফার্ম।
-কালকেই? কয়টায় রওনা দিবি?
-সকাল আটটার মধ্যে সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
-ভাল, অনেক মজা করতে পারবি।
-হ্যাঁ আপু। ইশশ তোমাকে যদি নিয়ে যেতে পারতাম, তাহলে আরো মজা করতে পারতাম।
-আমি তোদের সাথে গিয়ে কি করব? এমনিতেই অনেক মজা হবে।
-তারপরও আপু, তুমিই তো আমার সবচেয়ে প্রিয়।
-থাক, বুঝতে পারছি...

হঠাৎ শিষের শব্দে কথাবার্তায় ছেদ পড়ল। উফ আবার ছেলেটা বিরক্ত করতে এসেছে। রীমা কোন দিকে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করল।
-এই রীমা, এই কথা শুনে যাও।
রীমা আরো তাড়াতাড়ি পা চালতে শুরু করল।
হঠাৎ ছেলেটা তার হাত ধরে টান দিল।
-কি হল, ডাকছি যে শুনতে পাচ্ছ না?
রীমা ঝটকা মেরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ছাড়াতে পারল না।
-হাত ছাড়েন।
-ছাড়ার জন্য ধরছি নাকি?
-আপনার সমস্যাটা কি? কি চান আপনি?
-কি চাই তুমি বুঝ না? আমি শুধু তোমাকে চাই।
-হাত ছাড়েন বলতেছি, নাইলে চিৎকার করে লোকজন জড় করব।
বলেই আশে পাশে তাকিয়ে দেখল অনেকেই তাদের দিকে তাকিয়ে মজা দেখছে।
ছেলেটা এবার হা হা করে হেসে উঠল।
-লোকজন ডাকবে? ডাক না, দেখি তাদের কত সাহস।
রীমা এবার জোর করে ঝটকা দিয়ে হাতটা কোনমতে ছাড়িয়ে দৌড় লাগাল। পিছন থেকে অশালীন ভাষায় ছেলেগুলা তাকে ডাকতে লাগল।

রীমা কান্না করতে করতে ঘরে ঢুকে দেখে রেহানা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। রেহানা বেগম খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।
-কি হয়েছে? এই রীমা কি হয়েছে?
রীমার মুখে কোন ভাষা নেই। সীমা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল,
-ওরা আপুর হাত ধরে টান দিয়েছে, আরো অনেক আজে বাজে কথা বলেছে।

রেহানা বেগমের মাথায় রক্ত চড়ে গেল। ছেলে গুলার সাহস এত বেড়ে গেছে? এখনই একটা বিহিত করা দরকার। ভাবতেই ঘরের শাড়িটা পড়া অবস্থায় বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। পিছন থেকে রীমা মাকে থামাতে চেষ্টা করল, কিন্তু রেহানা বেগম আগেই বের হয়ে গেলেন।

এক প্রতিবেশীকে নিয়ে রেহানা বেগম ছেলে গুলার কাছে গেলেন। তাকে দেখেই ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো।
-স্লামালাইকুম ম্যাডাম। ভাল আছেন?
-তোমাদের সমস্যাটা কি? আমার মেয়েকে বিরক্ত কর কেন?
-কই ম্যাডাম বিরক্ত তো করি না। মাঝে মাঝে একটু খোঁজখবর নেই আর কি।
বলেই সবাই মিলে হাসতে শুরু করল।
রেহানা বেগমের মাথায় রক্ত চড়ে গেল। সামনের ছেলেটাকে একটা চড় কষিয়ে দিলেন।
-আদব লেহাজ কোনদিন শিখ নাই? এই শিখাইছে তোমাদের বাবা মা?
ছেলেগুলা এইবার হাসি বন্ধ করে দিল।
-দেখেন ম্যাডাম কাজটা ভাল হয় নাই। আমরা কি করতে পারি তা আপনার জানা নাই।
-কি করবা তোমরা? আমি এখনই পুলিশের কাছে যাব।
-কাজটা কিন্তু ভাল হচ্ছে না বলে দিচ্ছি।
রেহানা বেগম কোন দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলেন।

হঠাৎ পিছন থেকে ছেলেটা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। তারপরই ছুরি দিয়ে পেটের মধ্যে একটা কোপ দিয়ে ছুটে পালাল। লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই সব কিছু খুব দ্রুত ঘটে গেল।

রেহানা বেগম মাটিতে শুয়ে কাতরাতে লাগলেন। এতক্ষণে লোকজনের সম্বিত ফিরে এল। সবাই মিলে ধরাধরি করে রেহানা বেগমকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেল। কিন্তু তার আগেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।



কান্না করতে করতে রীমা মায়ের কথা চিন্তা করতে লাগল। আজ তার জন্যই এত সমস্যা, সে না থাকলে এত কিছু ঘটত না। একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।

হঠাৎ হৈ চৈ এর শব্দে ঘুমে ভেঙ্গে যায়।
-এই সীমা, কি হয়েছে রে?
এক ছুটে বাইরে এসে দেখে অনেক গুলো লোকজন একটা কফিন সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রীমা কিছুই বুঝতে পারে না, একসময় সীমাও তার পাশে এসে দাঁড়ায়। দু জনই হতবাক।

একজন লোক নীরব ভঙ্গিতে কফিনের ডালা খুলে দিলে দুই বোন আঁৎকে উঠে। কফিনের ভেতরে শুয়ে থাকা মানুষটা দেখতে অবিকল তাদের মায়ের মত। কিছু বুঝে উঠার আগেই সীমা দেখতে পেল তার বোন টলতে টলতে পড়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বোনকে ধরে ফেলল। সীমা বুঝতে পারল তাদের মা আর নেই। তখন পড়ে যাওয়া বোনকে জড়িয়ে ধরে নীরবে চোখের জল ফেলতে শুরু করল। বুঝতে পারল তাদের দুই বোনের মাথার উপর থেকে সবচেয়ে বড় ছায়াটা আজ সরে গেছে। তাদের ভবিষ্যতের সব আলো নিভে গেছে। চারদিকে এখন শুধুই অন্ধকার।



এরপর অনেক কিছু ঘটে যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক মানব বন্ধন করে। অনেক পত্রিকায় খবর ছাপা হয়। একসময় কতৃপক্ষের টনক নড়লে দোষী ছেলেরা গ্রেপ্তার হয়, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। সবাই ভাবতে থাকে অনেক ভাল ভাবে সব কিছু শেষ হয়ে গেল। একসময় মেয়েগুলোর কথা সবাই ভুলে যায়। তাদের কি অবস্থা কেউ জানার চেষ্টা করে না, কেউ তাদের খোঁজ নিতে যায় না।



রীমা, সীমার অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতে থাকে। যে মেয়েটা একসময় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত, আজ সে সব কিছু হারিয়ে বোনটাকে মানুষ করার যুদ্ধে নেমেছে। তার নিজের স্বপ্নটা বোনকে দিয়ে পূরণ করাতে চায়।



সীমা ক্লাস সেভেনে উঠে গেছে। মা মারা যাওয়ার পর তাদেরকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। রীমা লেখাপড়া ছেড়ে কি একটা কাজে যোগ দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে সীমার পড়াশুনা চলে। প্রতি রাতে রীমা কাজে বের হয়। কিন্তু সীমা জানে না কি এমন কাজ আছে যেটা রাতে করতে হয়। রীমাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে একটা অফিসে নাইট শিফটে কাজ করে। সীমা আর কথা বাড়ায় না। রাতে একা একাই থাকে, আর মন দিয়ে পড়াশুনা করার চেষ্টা করে।



-টাকা এত কম দিলেন কেন? আমার রেট আপনি জানেন না?
-চুপ থাক। দুই টাকার মাগী আবার বড় বড় কথা কয়। যা দিছি এইটাই অনেক বেশি।
রীমাকে বিছানায় ফেলে লোকটা হনহন করে বেরিয়ে যায়।

রীমা বিছানায় শুয়ে নীরবে কাঁদতে থাকে। প্রতি রাতেই এভাবে একবার করে কাঁদে। অনেক বড় স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু ছোট বোনটার মুখের দিকে চেয়ে সব কিছু ছেড়ে আজ তাকে এই পথে নামতে হয়েছে। এছাড়া আর কিছুই করার ছিল না, অনেক চেষ্টা করেছে সে, একটা কাজ জোটানোর জন্য হন্য হয়ে পথে পথে ঘুরেছে। কিন্তু সব জায়গায়ই কিছু হিংস্র পশুর উন্মত্ত লালসার শিকার হতে হয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে এসব ঘৃণ্য পশুদের সামনেই নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছে। এখন প্রতি রাতে তার দেহের প্রতিটা কোনা হাতড়িয়ে পশু গুলা শরীরে উন্মাদনা জাগিয়ে তোলে।

রীমা এবার ডুকরে কেঁদে উঠল। এভাবে কতদিন পার করতে হবে সে জানে না। এই জীবন তো সে চায় নি। সবসময় সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখত, কিন্তু আজ?

বোনটাকে নিয়েও তার অনেক দুশ্চিন্তা। মেয়েটাও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। তার মতই সুন্দরী হয়ে উঠছে। মানুষরূপী এইসব পশুদের ছোবল একসময় তার উপরও পড়বে। বোনটাকে তাই সব সময় আগলে রাখতে হয়। কিন্তু কতদিন ধরে রাখতে পারবে তা জানা নেই। ভবিষ্যতের জন্য এখন আর কোন সুখ স্বপ্ন জমা করা নাই। ভাবতে গেলেই সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখতে পায়, কোথাও আলোর ছিটেফোঁটাও নাই।



এটা কোন সত্যি ঘটনা নয়, একটা গল্প মাত্র। এই গল্প লিখার জন্য সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই ধরনের গল্প লিখার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না। গল্পটা লিখতে গিয়ে নিজের কাছেই অনেক কষ্ট লেগেছে।

আসল কথা হল, আজ হয়ত এটা একটা গল্প, কিন্তু কাল বা পড়শু এটা কোন সত্যি ঘটনায় রুপান্তরিত হয়ে যেতে পারে। যেটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু কাম্য না হলেও বাস্তবতা আমাদেরকে এ ধরনের অনেক ঘটনার সম্মুখীন করছে। আমরা সবাই আমাদের এই প্রিয় দেশটাকে অনেক ভালবাসি। তাই সবাইকে এখনই এই সামাজিক ব্যাধি টার হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসা উচিৎ। আমরা সবাই নির্বিকার ভাবে বসে থাকলে এই ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে। আজ হয়ত আঘাতটা রীমা, সীমার মত মেয়েদের পরিবারের উপর পড়েছে। কিন্তু আঘাতটা আপনার, আমার পরিবার আসতে কতক্ষণ? তাই সময় থাকতেই যে যেভাবে পারি আমাদের নিজ নিজ এলাকাটাকে এসব নরপশুদের হাত থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসি। অন্তত চেষ্টা করে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলেও অনেক বড় একটা কাজ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪৪
৭৪টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×