somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের অতিমাত্রায় রাজনীতি সচেতনতা আমাদের উন্নতির প্রধান অন্তরায়

১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক শিক্ষক একদিন ক্লাসে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, দেখ আমাদের সাধারন মানুষের অবস্থা। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তারা ৩০০ সিটের অন্তত ৯০০ প্রাথীর নাম ও ইতিহাস বলতে পারবে। কিন্তু তাদের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, আপনার এলাকার দশজন ভালোমানুষের নাম বলুন তারা বলতে পারবেনা। এর মানে কি? মানুষ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসে? নাকি ওদের পাবলিসিটি বেশী?

পত্রিকায়, মিডিয়ায় সারাদিন ওদের প্রচারণা চলে। টক শোগুলোতে ওদের আনা হয়। যারা রাজনীতিবিদ নয় তাদের দিয়েও রাজনীতির আলাপ করানো হয়। ওরাই প্রকৃত হিরো। স্পটলাইট সব সময় ওদরে উপর। খবর হয় সারাদিন। সারাদিন ওদের নিয়ে আলোচনা হয় পথে ঘাটে, মাঠে ময়দানে, অফিসে আদালতে, হাসপাতালে, পাবলিক বাসে, চায়ের টেবিলে…সবাই রাজনীতি সচেতন…সবাই রাজনীতি বুঝে…রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের এই অসীম আগ্রহই ওদের এই অসীম শক্তির উৎস বলে আমার মনে হয়।

আমার এক সিনিয়র সহকর্মী অফিসের কাজে একবার হংকং এ গিয়েছিলেন। তার মুখে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। তিনি গেছেন মসজিদে নামাজ পড়তে। সাথে আমাদের দেশীয় এক ব্যক্তি যিনি ওখানেই চাকুরী করেন। মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলে একজন মানুষ পোষ্টার বিতরণ করছে। রাস্তা দিয়ে এক যুবক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাকে ওই লোক পোষ্টার দিতে গেলে যুবকটি তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হাত দিয়ে সরিয়ে চলে গেল। কিন্তু লোকটি দমে না গিয়ে তার কাজ চালিয়ে গেলেন। আমার সহকর্মী তার সঙ্গের ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কি? উনি বললেন, লোকটা মেয়র পদপ্রার্থী। তাই নাকি? এই অবস্থা কেন? ওনার কি কোন জনপ্রিয়তা নাই? উনিই তো মেয়র হবেন।

কারণ, মেয়র পদে দাড়িয়েছেনই তিনজন। একজন বড় ব্যবসায়ী। ব্যস্ত মানুষ। উনি বেশীরভাগ সময়ই প্লেনে থাকেন ব্যবসার প্রয়োজনে। আরেকজন এই ভদ্রলোকের ধারে কাছেও নাই। খাইছে; যেই লোক নিশ্চিত মেয়র হবে তাকেই মানুষ কুকুরের মত খেদায়।

আপনাদের সবারই আত্নীয়-স্বজন বিদেশে থাকেন। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে, উন্নত দেশগুলোতে রাজনীতিবিদদের কেমন সম্মান দেখানো হয়। আমি যতজনকেই জিজ্ঞেস করেছি সবাই বলেছেন, আমরা এই প্রজাতিকে যত সম্মান দেই, যত আগ্রত দেখাই ওদের ব্যাপারে, যত আলোচনা করি ওদের নিয়ে উন্নত বিশ্বে ততটা নেই। বরং ওরা সবসময়ই রাজনীদিদদের উপর অসন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা এত সন্তুষ্ট কেন?

আমি অনেকের সাথে আলোচনা করেছি এই ব্যাপারে। মুখে বলে, এরা সবাই খারাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই একটা দলকেই ওরা খারাপ মনে করে। এই দল তবু ওই দল থেকে কম খারাপ। সবাইকে সমানভাবে খারাপ মনে করতে পারেনা…তাচ্ছিল্য দেখাতেও ভয় পায়…মনে করে এই দলের তবু একটা আদর্শ আছে অন্যদের তো তাও নেই। অথচ ওরা একজোট হয়ে ব্যবসা করে, লুটের মাল ভাগ করে, ওদের ছেলে মেয়েতে বিয়ে হয়। কোন নীতি আদর্শ ওদের নেই। কিন্তু আমরা মনে করি ওরা অমুকের আদর্শ অনুসরন করে। কিছু চুরি ওরা করতেই পারে। অনেক উদার আমরা।

আর আমাদের মিডিয়া তো মিডিয়াই। সারাদিন রাজনীতিবিদ অথবা রাজনীতি বিষয়ক সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচারে ওদের অদম্য আগ্রহ। খুবই অল্প খরচে বিরাট কাটতি। দিনের বেশীরভাগ সময়ই আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা। এতটা সম্মান কি ওদের প্রাপ্য? ওদের আমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারিনা কেন? ওরাতো আমাদের নিয়মিত অবহেলা দেখায়। খারাপ মানুষ নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা না করে ভালো মানুষকে নিয়ে কথা বলা ভালো নয়কি?

মিডিয়ার লোকেরা হয়ত বলবেন, ভাই আমরা কি করবো? মানুষ এসব দেখতে বা জানতে পছন্দ করে। ভাই মানুষ নেশা করতে পছন্দ করলে আপনি নেশাদ্রব্য বিক্রি করবেন?

আমরা রাজনীতিবিদদের অবহেলা করতে শুরু করলেই,

তাচ্ছিল্য দেখানো শুরু করলেই,

অসম্মান করা শুরু করলেই,

ওরা জনগনকে সম্মান করতে শিখবে বলে আমার ধারনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×