somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারকে হার মানানোর গল্প (How i completed A Half Marathon)

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে আমি সহজ ভাষায় একটা গল্প বলব। আমার একটা যুদ্ধ জয়ের গল্প।

কয়েক বছর ধরে প্রায় সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ। যে কাজই করি হয় শেষ করতে পারি না , না হলে ব্যর্থ হই। এই সময় অনেক দিনের একটা ইচ্ছা সাইকেল কিনি। সাইকেল চালাই খুব প্যাশন নিয়ে।একদিন বিডিরানার নামে একটা ফেবু গ্রুপের সাথে যুক্ত হই।সে দেখি মানুষ অনেক অনেক কিলো দৌড়ায় যা আমার কল্পনার অতীত। আগেই বলে আমি মোটেও বেশি দৌড়াতে পারি না। সর্বোচ্চ পারলে ৫০০ মিটার একবারে। মোটা মানুষ (BMI 26.6) , তার উপর ধুমপানের বদ অভ্যাস আছে। মোটের উপর কোন দিক দিয়ে শারীরিক ভাবে ফিট নই।

একদিন খুব ইচ্ছা হল আমি ম্যারাথন দৌড়াব। যা আমার জন্য হাস্যকর। ইভেন্ট এর আড়াই মাস আগে রেজিস্ট্রেশন করি। হাতে সময় কম। প্রথম দিন সকালে দৌড়াতে যেয়ে আমি কিছু দূর পর পেটে ব্যাথা হতে লাগল। একটা এপস নামালাম। প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়ানোর চেষ্টা করলাম। কয়েকদিন পর আমার বন্ধু বান্ধব আমার ম্যারাথনে যাবার কথা শুনল। তারা এত হাসল। সবাই এক কথায় সবাই আমার এটা নিয়ে খুব মজা নিল। আমার খুব অপমান বোধ হল। খাওয়া দাওয়া নিয়ম মত শুরু করলাম। ধুমপান পুরোপুরি বাদ দিলাম। প্রতিদিন সকালে আমার এক বান্ধবী ডেকে দিত। সে বলত দেখ চেষ্টা করে কি হয়। এই ভাবে প্রায় দুই মাস চলে গেল । তখন আমি মোটামুটি ১০ কিলোর মত দৌড়াতে পারি। কিন্তু হাফ ম্যারাথন ত ২১.১ কিলোর। কেউ বিশ্বাস করত না যে আমি সকালে দৌড়াই তাও এত কিলো । সবাই বলত আমি মিথ্যা বলি(তখন ও আমার বেশ স্বাস্থ্য সাথে একটা সুন্দর ভুড়ি :D )। দিন যত যেতে লাগল তত অনেকে জানতে লাগল আর ততবেশি মানুষ এটা নিয়ে মজা করতে লাগল।
মনে জেদ চেপে গেল যে করেই হোক আমাকে এটা করতেই হবে। হাফ ম্যারাথন ছিল ঢাকায়। ইভেন্ট এর তিন দিন আগে ঢাকায় পৌছালাম। আব্বু আম্মু কেও জানালাম না। ঢাকায় পৌছে আম্মুকে বললাম । আম্মু কিছু বলল না শুধু বলল কি দরকার। দৌড়ের আগের দিন আমার ফুপাতো বলল( তার ওখানেই উঠেছিলাম) পারবেত না , বেশি কষ্ট করার দরকার নেই,এক দুই কিলো দৌড়ে চলে এসো। আব্বু ফোন দিল দিয়ে খুব খারাপ ভাবে বারন করল এবং বলল কোন ভাবেই যেন আমি দৌড়াতে না যাই। এদিকে সর্বোচ্চ এই কয়েকদিনে আমি দৌড়েছি ১৪ কিলো। আমার বিপক্ষে সবাই। সব কিছু গুছিয়ে আগে আগেই ফোন বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম।

সারা রাত তেমন ঘুম হল না। খুব সকালে উঠেই হাতিরঝিল এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ওখানে কেউ পরিচিত না। সবাই কত কত লোকের সাথে কথা বলে আমি একা দাঁড়িয়ে । তারপর সময় মত দৌড় শুরু হয়ে গেল । আমি আমার সাধারন স্পিড এর থেকে কম গতিতে দৌড়াতে লাগলাম। শেষ আমি করবই। এ দিকে নেট অন করে ডোন্ট দিস্টার্ব মুড অন করে দিলাম। হাতির ঝিলের পুরোটা শেষ করে তারপর বুঝতে পারলাম একটু একটু কষ্ট হওয়া শুরু করছে। এ দিকে দৌড়ের মাঝে দুই জনের সাথে ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল। সকল বয়স অবস্থার মানুষ দৌড়াতে আসছে। দেখলাম এক দাদু আসছে। মনে মনে ভাবলাম যে করেই হোক আজ যতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকব দৌড়াব । আজ কোন ভাবে হাল ছাড়ব না। যখন প্রায় ১৪ কিলো শেষ হল তখন মনে হল এই আমার রেঞ্জ শেষ । পা আর উঠতে চাচ্ছিল না। আর কিছুক্ষন পর খুব কষ্ট হতে শুরু করল। ফিটনেস ব্যান্ড এ দেখলাম হৃদস্পন্দন ১৭০। সারাশরীর দিয়ে আগুন বের হচ্ছে মনে হল। এবার হাটা শুরু করলাম। মাঝে মাঝে দৌড়। অবশেষ এ ফিনিস লাইন দেখতে পেলাম । কি যে আনন্দ হচ্ছিল। এবার জোরে দোড় দিলাম। মুহুর্তে পৌছে ফিনিস লাইন ক্রস করলাম। আমার যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না আমি এটা করতে পারছি । আমাকে মেডেল পড়ান হল। আমি এটা পাইলাম। সত্যি পাইলাম।

প্রথমে আম্মুকে ফোন দিয়ে জানালাম। আব্বুকে প্রথমে আমার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞাস করল, আর বকা দিল। কিছুক্ষন পর ফোন দিয়ে অভিনন্দন জানালো। এবার আমি আমার সেই বান্ধবীকে জানালাম আমি পারছি আর তাকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম পাশে থাকার জন্য।

ঢাকা থেকে ফিরে এসে অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইল না আমি এটা করেছি। কিন্তু আমি জানি আমি করেছি। আমি আমার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত আমি এটা করতে পেরেছি।

No pain , No Gain.
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×