somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁদের পাহাড় এবং আমার কিছু কথা...

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অজপাড়া গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা সাধারণত স্বপ্ন দেখতে জানে না। কখনও দেখার চেষ্টাও করে না। হয়ত স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খেতে হবে একারণেই। তবে সব মাঝিরা স্রোতের সাথে নৌকা ভাসায় না, কেউ কেউ স্রোতের বিপরীতে যেতেই মরিয়া হয়ে ওঠে। শঙ্করও এমনই একজন তরুণ বালক। যে ভালোবাসে রোমাঞ্চ, যে ভালোবাসে দুঃসাহসিক অভিযান, যার মন উড়ে যেতে চায় পৃথিবীর বিভিন্ন বিপদ কূলে। ঠিক যেমন লিভিংস্টোন, স্ট্যানলির মতো, হ্যারি জনস্টন, মার্কো পোলো, রবিনসন ক্রুসোর মতো। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে সে তৈরি করে নিয়েছে। স্কুলে পড়বার সময় সে বরাবর খেলাধুলাতে প্রথম হয়ে এসেছে। শুধু কি তাই? তার মত সাঁতারু আর বক্সার ওই অঞ্চলে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া ছিল ভার। তবে দারিদ্র্য যে বড় কঠিন বস্তু! মেধাকে গিলে খেতে সে যে ওস্তাদ পর্যায়ের। এমতাবস্থায় বাবার অসুখ আর মায়ের অনুরোধে শঙ্করকে এখন হতে হবে পাট কলের কেরানী! তবে কি শঙ্করের আর পৃথিবী দেখা হবে না? স্বপ্ন কি শেষমেশ স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে?

ভারতবর্ষের বুকে জন্মানো এমনই এক দুঃসাহসিক স্বপ্নবাজ তরুণ যুবক শঙ্করের চারিত্রিক এবং পারিবারিক প্রেক্ষাপট দিয়েই ‘চাঁদের পাহাড়‘ উপন্যাসটির শুরু। ১৯০৯-১০ সালের সময়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উপন্যাসটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। তবে উপন্যাসটি আমার কাছে এতোটাই জীবন্ত মনে হয়েছে যে পড়ার সময় এটিকে কিছু দিন আগের লেখা কোন উপন্যাসই মনে হচ্ছিল। পুরো উপন্যাস জুড়ে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের অসাধারণ সব বর্ণনা আমাকে কল্পনায় বার বার সেইসব জায়গায় নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।

আফ্রিকার বর্ণনা? হ্যাঁ, আফ্রিকার বর্ণনাই। কারণ, ভাগ্য একদিন শঙ্করকে ভারতবর্ষ থেকে নিয়ে যায় মধ্য আফ্রিকায়। যেখানে সূর্য ডুবতেই সিংহের ভয়, আছে ভয়ানক সাপের ভয়। ঠিক এমনটাই যেন শঙ্কর চাইত। ঘটনা চক্রে একদিন এক ইউরোপিয়ানের সাথে তার দেখা হয়, নাম ডিয়েগো আলভারেজ। আল্ভারেজ তার আফ্রিকা ভ্রমণের গল্প শঙ্করকে শোনায়। যেখান থেকে শঙ্কর জানতে পারে রিখটারসভেল্ড পর্বতমালার কথা, সেখানে বাস করা ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণীর কথা, অদম্য এক পাহাড়ের কথা এবং আশে পাশে কোথাও লুকিয়ে থাকা এক অজানা হীরার খনির কথা। আল্ভারেজ কিন্তু সেবার ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিল। তবে সে আবার যেতে চায়। এবারে তার সাথে থাকছে শঙ্কর। উপন্যাসের মূল ঘটনাটা এখান থেকেই শুরু। আল্ভারেজ আর শঙ্কর কি পারবে সেই চাঁদের পাহাড় জয় করতে? তারা কি পারবে জঙ্গলের বিভিন্ন ভয়ঙ্কর প্রাণীর সাথে লড়াই করে সেই অজানা হীরার খনির সন্ধান লাভ করতে? যদি পেরেই থাকে তাহলে সেটা কিভাবে? আর যদি না পেরে থাকে তাহলে তাদের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল? এসব জানতে হলে অবশ্য আপনাকে মূল উপন্যাসের বইটা হাতে নিয়েই বসতে হবে।

পাঠকদের যেকোনো ধরণের বিভ্রান্তি এড়াতে লেখক বইটির ‘লেখকের ভূমিকা‘ অংশে উল্লেখ করেন "চাঁদের পাহাড় কোনও ইংরিজি উপন্যাসের অনুবাদ নয় বা ঐ শ্রেণীর কোনও বিদেশী গল্পের ছায়বলম্বনে লিখিত নয়। এই বইয়ের গল্প ও চরিত্র আমার কল্পনাপ্রসুত। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক সংস্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্নানাকে প্রকৃত অবস্থার অনুযায়ীর করবার জন্য আমি স্যার এইচ, এইচ জনস্টন, রোসিটা ফরবস, প্রভৃতি কয়েকজন বিখ্যাত ভ্রমণকারীর গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করিছি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে পারি যে, এই গল্পে উল্লেখিত রিখটারসভেল্ট পর্বতমালা মধ্য- আফ্রিকার অতি প্রসিদ্ধ পর্বতশ্রেণির এবং ডিঙ্গোনেক (রোডেসিয়ান মনস্টার) ও বুনিপের প্রবা জুলুল্যাণ্ডের বহু অরণ্য অঞ্চলে আজও প্রচলিত।"

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক এই বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। যিনি তাঁর অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তাঁর অসাধারণ সেইসব সাহিত্যকর্মের মধ্যে 'চাঁদের পাহাড়' অন্যতম। আমিতো বলব, এটিই বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় রোমাঞ্চকর উপন্যাস। আর হ্যাঁ, এই উপন্যাসের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে কলকাতায় পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এর পরিচালনায় ২০১৩ সালে একটি চলচিত্র নির্মিত হয় যেখানে 'শঙ্কর' চরিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক দেব। চলচিত্রটিও সে বছর বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

সবশেষে আমি বলব এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত একটি উপন্যাস এটি। না পড়ে থাকলে আর দেরি করবেন না। সময় হাতে নিয়ে বসে পড়ুন আর হারিয়ে যান মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলগুলোর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×