ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পাশের রাস্তা দিয়ে একদিন হেঁটে যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যেতেই রাস্তার বামপাশে চোখে পড়ল শহিদুল্লাহ হল। এই ছাত্রাবাসটিতে ঢোকার ফটকের বাম পাশে হটাত খেয়াল করলাম জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে থাকা একটি ছোট দোতলা প্রাচীন মসজিদ। তো মসজিদটির পেছন দিকটাই চেয়ে আছে মূল রাস্তার দিকে তাই সামনের দিকটা দেখার উদ্দেশ্যে হলের গেটের ভিতরে প্রবেশ করলাম। একটা মসজিদের সামনের দিকটার অবস্থা এমন হতে পারে তা এই মসজিদটি না দেখলে আমার ধারণাই হত না।
মসজিদটি বেশ খানিকটা উঁচু প্লাটফর্মের ওপর নির্মিত। যার নিচের অংশে কিছু ঘর রয়েছে যা পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। আর উপরের অংশটাই নামাজের জন্যে ব্যবহিত হচ্ছে। পাশে একজন মুসল্লিকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম এই মসজিদটির কি নাম-পরিচয়। তখন জানতে পারলাম মসজিদটির নাম মুসা খাঁর মসজিদ। আনুমানিক ১৬৭৯ সালে নির্মিত এই মসজিদটির পাশে মুসা খাঁর কবর খানিও আমার নজর কারতে ভুল করেনি।
ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারলাম এটি বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ নির্মাণ করেন। তবে এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন এই মসজিদটি মুসা খাঁর ছেলে মাসুম খাঁ অথবা তার পৌত্র দিওয়ান মুনওয়াব খাঁ নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটিতে কোন শিলালিপি না পাওয়াতেই অবশ্য এতো মত-দ্বিমত। তবে মসজিদটি নির্মাণের কৌশল শায়েস্তা খাঁর সময়কালীন। এরই ভিত্তিতে অনেকে মসজিদটি মুসা খাঁর পুত্র অথবা পৌত্র দ্বারা নির্মিত বলে দাবি করেন
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির দেয়ালে রয়েছে মোঘল আমলের কারুকার্য। যা এই মসজিদটির শেষ সৌন্দর্য। গা ঘেঁষা ছোট্ট এক সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে গিয়ে নামাজের স্থানে যেতে হয়। মসজিদটির পশ্চিম দেয়ালে একটি প্রধান ও পাশে দুটি ছোট মেহরাব রয়েছে। পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি দরজা আর উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে একটি করে খিলান দরজা। মূল নামাজের ঘরের বাহিরে ছোট একটি বারান্দাও বিদ্যমান রয়েছে।
মসজিদটির বর্তমান অবস্থাকে আমি এক কথায় ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিতে চাই। দেয়াল ফেটে চৌচির, নেই কোন প্লাস্টার। মনে হচ্ছিল এই বুঝি ভেঙ্গে পরে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে কয়েক শতক পুরনো ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদখানা। বারো ভূঁইয়াদের শেষ এই স্মৃতিচিহ্নটুকু কি শেষমেশ টিকে থাকবে?
-১৮/০৯/২০১৬ ইং, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৩