১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহীদের সেই মহাবিদ্রোহের কথাই বলছি। পুরো ভারতবর্ষ যখন উত্তাল ছিল সেই বিদ্রোহের সময় তখন বাদ যায়নি এই বাংলার সিপাহীরাও। সে বছরের ২২শে নভেম্বর ইংরেজ মেরিন সেনারা ঢাকার বিদ্রোহী সেনাদের উপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পর পরাস্ত হওয়া বিদ্রোহী সৈনিকদের আটক করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার পরপরেই আতককৃত সেনাদের পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার মোরে আন্টাঘর ক্লাব মাঠে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়। শুধু ফাঁসি দিয়েই কাহিনী শেষ হয়নি সেদিন। বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত সিপাহীদের লাশ সেই মাঠের গাছের ডালে ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।
পরবর্তী বছর রানী ভিক্টোরিয়া যখন ভারতবর্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন এই ক্লাব মাঠেই উক্ত তথ্য ঘোষণা করে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়ে দেয়া হয়। এর পর থেকেই এই ক্লাব মাঠের নাম হয়ে যায় ভিক্টোরিয়া পার্ক। ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার পর ১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শত বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্কটির নাম ফের বদল করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ্ পার্ক। বর্তমানে এই নামেই পার্কটি সর্বত্র পরিচিত।
দুর্ধর্ষ ইতিহাসের সাক্ষী এই পার্কটিতে পা রাখার সাথেই সাথেই গায়ের লোম দাড়িয়ে গিয়েছিল। ফাঁসিতে ঝোলানো সেইসব বিদ্রোহী সেনাদের করুণ আর্তনাদ চোখের সামনে যেন ফুটে উঠছিল।
১৯৫৭ সালে যখন সিপাহী বিদ্রোহের শত বছর উৎযাপন করা হয়েছিল তখন বিদ্রোহী সেই সেনাদের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে তৈরি করা হয়েছিল একটি বিরাট স্মৃতিস্তম্ভ। যেটি এই পার্কের মূল আকর্ষণ।
তবে পার্কটির আরেক পাশে আরও একটি স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে পেলাম। পার্কের ভেতরের একটি সাইন বোর্ডের লেখা অনুযায়ী এই স্মৃতিস্তম্ভটি ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৫ সালে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা খাজা হাফিজুল্লাহর স্মরণে তৈরি করা হয়।
পার্কটিতে সকাল-বিকেল বেড়াতে আসেন অনেকেই। হাঁটাচলা আর আড্ডায় দিব্যি কেটে যায় দারুণ সময়। কিন্তু পার্কটির গাঁ ঘেঁষেই সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ডাস্টবিন দেখতে পেলাম। যা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। এছাড়াও পার্কে ঢোকার গেটগুলোতে ফেরিওয়ালাদের দোকান তো বোধকরি নতুন কিছু নয়।
ঢাকার এই বাহাদুর শাহ পার্ক শুধু ঐতিহাসিক ভাবেই নয় পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। আশা রাখি যুগযুগ ধরে মাথা উঁচু করে টিকে থাকবে সিপাহী বিদ্রোহের সেই সব বীর সেনাদের মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে থাকা এই পার্কটি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৮