ঘটনা নংঃ ১
বেশ কিছুদিন আগে আমাদের পাশ্ববর্তি গ্রামে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। গ্রামের অন্যতম বিত্তশালী ব্যক্তির একমাত্র ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি! বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হবার কারণে ভালো মন্দের বাছ-বিচার করার সক্ষমতা তার ছিল না। একদিন গ্রামের কিছু বদ প্রকৃতির ছেলে সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ছেলেটিকে একটি নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে যায়! তারপর তারা তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে গাজা খাওয়ায়! তারা ছেলেটিকে গাজা খাইয়ে মজা দেখতে চেয়েছিল! কিন্তু তাদের এই মজা দেখতে চাওয়াই ছেলেটার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াল! গাজায় টান দেবার কারণে তার বুকে মারাত্নক ব্যথা শুরু হয়! এক পর্যায়ে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফেলে রেখে অন্যান্যরা পালিয়ে যায়! গ্রামের আর এক লোক ছেলেটিকে মূমুর্ষ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তার বাড়িতে খবর পাঠায়! সেখান থেকে তাকে মিঠাপুকুর উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার বলে, সে হার্টএ্যাটাক করেছে! সেখান থেকে তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়! সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে পাঠানো হয়! আর পিজিতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারদিন পর মৃত্যুবরণ করে সেই ছেলেটি!
আজ নতুন করে ভাবতে হয়, আজকে যারা সুস্থ মানুষ! তারা সকলেই কি সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী? নাকি সুস্থ মানুষের আড়ালে অসুস্থ বুদ্ধির কারার করছেন?
ঘটনা নংঃ২
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক প্রতিভাবান প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নাম হুমায়ন কবির। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। দেড় বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এর পর পায়ে কোনো শক্তি না থাকায় এখন হুইল চেয়ারই একমাত্র ভরসা তার।
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ১২ নং মিলনপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। দূর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কলেজ থেকে এইচএসসিতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকার মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও পরীক্ষার ফলাফলে কোনো ভাটা পড়েনি। সবসময় নিজেকে প্রথম শ্রেণীতে ধরে রেখেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবন্ধি কোটা থাকার পর তিনি সেটা গ্রহণ করেননি । নিজের মেধা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তার একটাই লক্ষ্য বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করা।
লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য একটি বই লেখেন। এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন থাকায় বইটি নিয়ে ভালোই সাড়া পড়ে। এ পর্যন্ত মোট তিনবার তিনি বই বের করেন। অবসরে গল্প লেখেন হুমায়ন।
তিনি যে শুধু এখানেই তার প্রতিভাকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন তা নয়। সবচেয়ে পুলকিত হওয়ার বিষয়, তিনি একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমের অলরাউন্ডার খেলোয়াড় তিনি। এছাড়াও তিনি নিজ এলাকায় দুর্গাপুর তরুণ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার এই পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন তার গর্বিত বাবা ফজলুল হক।
আজকে এই হুমায়ূনের বাবার মত সমাজের প্রত্যেকটা ব্যক্তিই যদি দায়িত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে তাহলে, হুমায়ূনের মত অন্যান্য প্রতিবন্ধিরাও দেশ গড়ায় সমান অংশিদার হতে পারবে! তারাও হতে পারে আমাদের সম্পদ! তাই আসুন, “বাংলা ব্লগ দিবসে সচেতন ব্লগাররা”আমাদের বিবেকটাকে জাগ্রত করি! প্রতিবন্ধিদের দিকে বাড়িয়ে দেই আমাদের সাহায্যপূর্ন হাত! তাদেরকে ভালোবাসি, আমাদের আপন ভাই কিংবা বোনের মত! তাদেরকে করুনা নয় বরঞ্জ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সঙ্গে তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করি!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯