ঈসা আলাইহিস সালাম মারা যাননি, আল্লাহ তাকে আসমানে তুলে নিয়েছেন, কিয়ামতের পূর্বে তিনি আবার বিশ্বে পদার্পন করবেন। বিষয় তিনটি মেঘহীন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় জ্বলন্ত ও সুস্পষ্ট হওয়া সত্বেও একদল স্বার্থান্বেষি বিষয়গুলাতে ধোয়াশা সৃষ্টি করে চলছে। আমারাও পর্যাপ্ত ঐশী জ্ঞানের অভাবে মরিচিকায় বিশ্বাসী হয়ে উঠছি।
বর্তমানে কাদিয়ানী কাফেররা এই অকাট্য বিষয় গুলোকে মিথ্যা অপব্যখ্যার মাধ্যমে আমাদের কাছে ঘোলাটে করে তুলছে।
.
প্রথমে ঈসা আলাইহিস সালাম মারা যাননি। আল্লাহ তাকে আসমানে তুলে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আকাশে আছেন। কুরআনের আলোকে প্রমান করছি:
১৫৭ - ... و قولهم إنا قتلنا المسيح عيس ابن مريم
“এবং তারা বলে, আমরা আল্লাহর রাসূল ঈসা ইবনে মাইরয়ামকে হত্যা করেছি অথচ তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়াতে পারেনি বরং তাদের বিভ্রম হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যারা এ সম্পর্কে মতভেদ করেছে, তারা এ বিষয়ে সংশয়ে নিপতিত এবং এ বিষয়ে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের প্রকৃত কোনও জ্ঞান ছিল না। সত্য কথা হচ্ছে, তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম)কে হত্যা করেনি।”
১৫৮ - بل رفعه الله اليه و كان الله عزيزا حكيما
“বরং আল্লাহ তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। বস্তুত আল্লাহ মহা ক্ষমতার অধিকারী, অতি প্রজ্ঞাবান।” ১
.
আয়াত সংক্রান্ত ঘটনা:
হযরত যাহহাক রহিমাহুল্লাহ বলেন,
ইহুদীরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল ঈসা (আলাইহিস সালাম)কে হত্যা করবে। এই খবর ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার সাহাবীদের কানে গেলে তারা এক জায়াগায় সমবেত হলেন। রক্তপিপাসু ইহুদীরা হন্য হয়ে ঈসা আলাইহিস সালামকে খুজে ফিরছে। এদিকে ইবলিস শয়তানও বসে নেই, সে ইহুদিদেরকে তিনার অবস্থান জানিয়ে দিল। একযোগে ৪ হাজার ইহুদী দুরাচর তিনার ঘর অবরোধ করে ফেলল। ঈসা আলাইহিস সালাম তার সাথিবৃন্দদের লক্ষ্য করে বললেন- এমন কে আছ! যে বাহিরে যাবে, তাদের হাতে নিহত হবে, আর জান্নাতে আমার সাথি হবে?
এই ঘোষণার পর এক ভক্ত নবী ঈসার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে নিজের জান দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল। নবি ঈসা তাকে নিজের জামা ও পাগড়ি পরিয়ে দিলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাকে ঈসা আলাইহিস সালামের আকৃতি দান করলেন। সে বাহিরে গেল। ইহুদীরা তাকে ঈসা ভেবে গ্রেফতার করে শূলে চড়িয়ে হত্যা করল।
আল্লাহ তাআলা ঈসা আলাইহিস সালামকে নিজের কাছে আসমানে তুলে নিলেন। ২
.
তিনি কিয়ামতের পূর্বে আবার আসবেন। এর প্রমান হল:
১৫৯ - ... و إن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل
“কিতাবীদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, নিজ মৃত্যুর আগে ঈসার প্রতি ঈমান আনবে না। আর কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।” ৩
.
আয়াত সংক্রান্ত তাফসীর:
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যা বলেন,
ঈসা মাসীহের মৃত্যুর পূর্বে সমস্ত আহলে কিতাব (ইহুদী-খ্রিস্টান) তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। আর এটা হবে সে সময় যখন তিনি দুনিয়াতে অবতরণ করবেন। ইহুদী-খ্রিস্টান উভয় জাতী ঈসা আলাইহিস সালামকে সত্য রাসূলরূপে বিশ্বাস করে নেবে। ইহুদিরা তাকে ‘মিথ্যা নবী’ ভাববে না আর খৃষ্টানরা তাঁকে ‘খোদা’ও মনে করবে না। ৪
.
৬১ - و إنه لعلم للساعة فلا تمترن بها
নিশ্চয়ই তিনি কিয়ামতের একটি আলামত। সুতরাং তাঁর ব্যাপারে তোমরা কোনো সন্দেহ করো না। ৫
.
আয়াত সংক্রান্ত তাফসীর:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
আয়াতে বর্ণিত আলামত হল কেয়ামতের পূর্বক্ষণে ঈসা ইবনে মারইয়ামের আবির্ভাব। ৬
.
আয়াতলদ্ধ সিদ্ধান্ত:
উপরোক্ত প্রমান্য আলোচনার ভিত্তিতে ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হল- আল্লাহর নবি ঈসা ইবনে মারইয়াম তিনি মরেন নি। শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। কিয়ামতের পূর্বে ইসলামের পূণর্জাগরনের জন্য আবার পৃথিবিতে আসবেন।
.
কতিপয় মুজিযা:
আল্লাহ তাআলা সমস্ত নবিকে বিশেষ কিছু মুজিযা দিয়েছিলেন। ঈসা আলাইহিস সালামও এর ব্যাতিক্রম ছিলেন না। তিনার মুজিযা গুলো অত্যান্ত বিরল ও আশ্চর্যজনক ছিল। যেমন, মৃতকে জীবিত করা। জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগিকে সুস্থ করা ইত্যাদী।
আসলে এগুলোর বিবরণ খোদ কুরআনেই আছে।
১১০ -
و تبرئ الاكمه و الابرص بإذني و إذ تخرج الموتي بإذني
“জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে তুমি আমার আদেশে নিরাময় করে দিতে এবং আমার অনুমতিক্রমে তুমি মৃতকে জীবিত করতে।” ৭
.
এই আয়াতেই তিনার আরো কিছু মুজিজার উল্লেখ আছে। আগ্রহী পাঠকগণ আয়াতটি ‘তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন - মুফতি শফি রহিমাহুল্লাহ’ এর ব্যখা সহ পাঠ করুন। ইংশাআল্লাহ যথেষ্ঠ খোরাক পাবেন।
ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে চূড়ান্ত ফায়সালা জানতে ‘কাদিয়ানীরা অমুসলিম কেন? - মাওলানা মানজুর নোমানী’ পড়ার পরামর্শ থাকল। সমস্ত সংশয় দূর হয়ে যাবে।
---------------
১. সুরা নিসা
২. মাআরিফুল কুরআন ২/৫৮১
৩. সুরা নিসা
৪. আল জাওয়াবুস সহীহ ২/২৮৪
৫. সূরা যুখরূফ
৬. মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৯১৮
৭. সুরা মাইদাহ্
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮