somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিরূপ! ~রোজি। (ছোটগল্প)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~বাসা থেকে সোজা ফুটপাথ এ উঠতে যতক্ষণ সময় সেটাকে যদি ঘড়ির কাটায় পরিমাপ করা হয় তাহলে কয়েক সেকেন্ড এর বেশী হবেনা কিন্তু ক্ষণিক মুহুর্তে চারিপার্শ্বের দিকে চোখ বুলিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে যেখানে নামব বলে বাসে উঠেছিলাম আমি কি তবে সেখানে নামি নি? সেই চিনা পরিচিত ফার্মগেট এলাকাটাকে আজ অপরিচিত কোন কাপলদের মিলনস্থল মনে হচ্ছিল।

~ছোট বেলায় কোন এক স্থানের নাম পড়েছিলাম যেখানে কাপলরা জড়ো হতো লাইন দাঁড়িয়ে একটা স্থানে তালা ঝুলিয়ে নিচ দিয়ে প্রবাহিত স্রোতে চাবিটা ফেলে দিয়ে তারা ভাবতো যতদিন তাদের লাগানো তালাটা নির্দিষ্ট গাছে ঝুলে থাকবে ততদিন তাদের সম্পর্কটা আমরণ টিকে থাকবে। যদিও সেই তালাগুলো খুলে যেতনা কোন কৃত্রিম বা অকৃত্রিম কারণে কিন্তু হয়ত সেখান থেকে বাসায় পৌঁছবার পূর্বেই কত সম্পরকের ইতি টানা হয়ে গেছে তার খবর কজন ই বা রাখত।

~আজ কি তাহলে এমন কোন স্থানের আকর্ষণে ছুটে এসেছিল আর আচমকা মিলিত হয়ে গেছে সবাই নির্দিষ্ট এক স্থানে? কেই বা জানে! তবে আমি যে জানিনা এটা সিউর। কারণ আমিতো আর তাদের সাথে যোগাযোগ করে আসিনি এবং আমি নয় কোন কাপলের ও একটা অংশ। আমি আজ যাচ্ছিলাম কলেজে, ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে। অত কিছু ভাব্বার মতো আজকে অন্তত সময় নেই আমার হাতে কারণ প্রথম ক্লাসটা অলরেডি মিস হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় ক্লাসে আছে ক্লাস-টেস্ট। ক্লাস শুরু হতে যেই টাইম বাকি আছে হেটে রিক্সায় বা লেগুনা যেভাবেই যাই পরিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটবেই। আর যদি তেজগাঁও রেলক্রসিং এর সিগনাল এ পড়ে যাই তাহলেতো পড়ের ক্লাসের প্রেজেন্ট দিতে পারব কিনা সেটাও অনিশ্চিত।

~দেরী জিনিসটা আমার রক্তে মাংসে অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। যে কোন খবর মস্তিষ্কে পৌঁছবার পর প্রতি সময় যার রেস্পন্স দিতে দেরী হয় তার দ্বারা সময়ানুবর্তীতা প্রত্যাশা করাটাই বোকামি নয় কি? হয়ত দোষটা আমার ও না। ঢাকার রাস্তায় সবসময় জ্যাম এ বসে থাকতে থাকতে কোন একটি সংবাদ পাওয়ার পর সেটা মস্তিষ্কে পৌঁছবার দেরি হওয়ার কারণ সংবাদ বহনকারী নিউরনকে জিজ্ঞাসা করলে সেও আজ জ্যাম এর অজুহাত দেখায়!

~যাইহোক বাদ দেই, প্লাটফর্মে ফিরে আশি। চার-পাঁচ না ভেবে হাটার সিদ্ধান্ত নিলাম মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের সন্তান বলে কথা! তাছাড়া হাটার অনেক অভিজ্ঞতাও আছে। পছন্দের কার্যাবলীর মধ্যে একটি হলো বিন্দাস মুডে হাটা যেই দুরুত্বের কথা শুনে ফ্রেন্ডরাও কম অবাক হয়নি।

~হঠাৎ আনমনা হয়ে কি যেন ভাবতেই "হুমায়ুন আহমেদ" এর লেখা উপন্যাস সিরিজ হিমুর কথা মনে পড়ে গেলো। যদিও কখনো এটা পড়া হয়নি কিন্তু সেই নীল শাড়ি আর হলুদ পাঞ্জাবীর সাথে বসন্তবরণ উৎসব এর কথা মনে পড়তে লাগল। লাল নীল আর হলুদ শাড়ি সাথে ছেলেদের লাল-হলুদ পাঞ্জাবীর কথা মনে পড়ে গেল। আজ কি তবে সেই দিন? আমার কাছেতো মনে হচ্ছে এখনো শীত তার প্রকৃতরুপটা দেখাতেই পারেনি অথচ বসন্তই এসে গেছে!

~সাড়ে নয়টা প্রায় বেজে গেছে। সূর্যও পুরোদমে তার উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে আর প্রতিমুহূর্তে মধ্যাকাশের দিকে ধাবিত হচ্ছে পূর্বাকাশের নিলীমা ভেদ করে। আমার গায়ে এখনো হুডিটাই আছে, শীত হতে নিজেকে আত্নরক্ষার জন্য যেটা পড়েই সাধারণত বের হই। ভাবনার আকাশে অজস্র বিষয় আসলেও একটা বিষয়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হয়ত শীত যায়নি পুরোদমে। এখনো গাছে গাছে ফুলও ফোটেনি হয়ত কিন্তু তাই বলে কি বসন্তের আগমনের প্রতিক্ষা শেষ হওয়ার জন্য তাকে স্বাগত জানাবোনা!
তার জন্য নতুন সাজেঁ সাঝবোনা তা কি হয়?

~হেটে চলেছি আর কপোত-কপোতিদের নতুন বসন্ত বরণ দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ হাড়া করে ফেলতেছি। নতুন যৌবনোদ্দীপনায় শরীর শিহরিত হয়ে উঠল। কিছুটা কাল্পনিক জগতে হারিয়ে গেলাম। প্রেম-ভালোবাসার মর্মার্থটা উপলব্ধি করতে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। যৌবনে পদার্পণের মুহুর্তটা আর ঠিক তার পূর্ব মুহুর্তের মধ্যে যা যা পার্থক্য ছিল সেগুলো আলাদা করতে লাগলাম।

~বাস্তবিক আর আধাত্নিক পরিবর্তন গুলোর মধ্যে সমন্বয় খুঁজতে লাগলাম। ততক্ষণে হলি-ক্রস কলেজ এর গেট অতিক্রম করে যাব হঠাৎ থমকে দাড়ালাম!

~ভাবনার সাগরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমি কি এখন বাস্তবতায় আছি না কোন কল্পনার সাগরে ডুবে গিয়ে ওকে ইম্যাজিন করতেছি যে আচমকা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে? আমি থেমে যাওয়া কোন পৃথিবীতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা সেই কল্পনা মানবীকে দেখতে থাকলেও সময়ের তালে তালে সে আমার থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছিল। হার্টবিট এর লাব শব্দটা মনে হচ্ছিল কানের সামনে কেউ জোড়ে একটা স্পিকার বাজিয়ে আমাকে জানান দিয়ে যাচ্ছিল যে তোমার স্বপ্নের সেই অপ্সরী এখন তোমার সামনে। যৌবনের প্রথম বসন্তে তোমাকে এভাবে কখনো আমার সামনে আচমকা প্রকৃতি নিয়ে আসবে তা কখনো কল্পনা করতে পারি নি।

~লাল শাড়িতে তোমাকে দেখতে সত্যি অতুলনীয় লাগছিল। হাতে লাল চুড়ির ঝনঝনানি বসন্তের ফুলের সুবাস প্রকৃতি থেকে না পেলেও তোমার মাথার ঝুটিতে তার বিন্দুমাত্র কমতি ছিলনা যে সেটা স্পষ্টতর ই বুঝতে পেরেছিলাম। তোমার সেই আড়চোখের চাহনি নিৎসঙ্গ একলা পথচলা আমাকে আরো বিস্মিত করে দিয়েছিল। মাঝে মাঝে নিজেকে সংযত করতে কষ্ট হচ্ছিল। খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল আমার জন্যই যখন তুমি এসেছিলে তবে আমাকে সঙ্গে নেওয়া ছাড়া কেনইবা চলে যাচ্ছ?

~তখনো তোমার সাথে দেখা হয়নি। তোমার সাথে শুধুমাত্র দেখা করার জন্য আমাকে আরো একটি বসন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল যেটা ছিল আমাদের পরিচয়ের দ্বিতীয় বসন্ত। আজ আরো একটি বসন্তের দিকে পা বাড়ালাম সব কিছু সাথে ছিল কিন্তু তোমার পরিবর্তে শুধু তোমার স্মৃতি গুলোই আমার সঙ্গী হলো নতুন একটি বসন্তে পা দেওয়ার সাথে সাথে।

~তোমাকে সেদিনের কথাগুলো বলা হয়নি কখনো কারণ এটা অন্তত নিশ্চিত ছিলাম সেদিন আর যাইহোক সেটা তুমি ছিলেনা, হয়ত তোমার কোন প্রতিরূপ ছিলো!

~আজো তোমার অনুপস্থিতিতে যাকে খুঁজে বেড়াই!

~বাস্তবতা অবলম্বনে।
~ঘটনার সময়কালঃ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ (বসন্তের প্রথম দিন)
~রচনা কালঃ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ (বসন্তের প্রথম দিন)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×