somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুজবের ব্যবচ্ছেদঃ তথ্য কি? গুজব কেন ছড়ায়?

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সংবাদ মাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ ভিত্তি বলা হয়, যদিও এটা স্বীকৃত নয়।


১ম পর্বঃ গুজবের ব্যবচ্ছেদঃ গুজব কিভাবে ছড়ায়?
~জানার প্রতি কৌতুহলতা মানুষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পর্যবেক্ষণ করে নতুন কিছু জানার চেষ্টার কারণে মানবজাতি আজ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, পরিচয় দিতে সমর্থ হচ্ছে নিজের বুদ্ধিমত্তার। জীব মানেই বেচে থাকার জন্য তার খাদ্য প্রয়োজন। অন্যরা শুধু বস্তুগত খাদ্য গ্রহণ করে, কিন্তু মানুষ শুধুমাত্র বস্তুগত খাদ্যেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা। বস্তুগত খাদ্য শরীরের সাথে সম্পৃক্ত, কিন্তু তথ্য খোরাক হিসেবে কাজ করে মনের। যদিও মনের অস্তিত্ব এখনো বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত নয়, তথাপি এটাকে অস্বীকার করার ও কোনো উপায় নেই।

~তথ্য যে কোনো ব্যপারে হতে পারে, মূখ্য উদ্দেশ্য সেটা মানুষকে নতুন কিছু জানাতে হবে, বা পূর্বের অর্জিত জ্ঞানের নিশ্চিতকরণ কিংবা পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত করতে হবে। ঠিক কোন কোন বিষয় তথ্যের আওতায় আসবে (এক্ষেত্রে তথ্য বলতে যেগুলো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।) সেটা মূলত মানুষের আগ্রহ কিংবা অচেতন মনের উপর নির্ভর করবে। তাছাড়া সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার জন্য তথ্য হবে এমন কোনো বিষয়বস্তু যা মানুষের চিন্তা প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। একটু ভেঙ্গে বলি-

~আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো মানুষ ভালো কাজ করেই যাচ্ছে। কেউ কেউ খারাপ কাজ ও করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ার দিকে চোখ বুলালে দেখবেন তারা একটি ভালো কাজ প্রচারের বিপরীতে অনেকগুলো খারাপ কাজ প্রচার করে থাকে। কেন এমনটা হয়? এর সাইকোলজিক্যাল কিংবা বিজনেস আইডিওলজি কি? মানুষ সৃষ্টি হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে। মানুষ শব্দটা শুধু মানুষ নয় সকল প্রাণীদের মনে একটা আবেদন তৈরি করে। যেহেতু তাদের মধ্যে বিবেক দেওয়া হয়েছে তাই তাদের দ্বারা সম্পন্ন কৃতকাজ গুলো অবশ্যই ভালো হবে। বিবেকবান প্রাণী, বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী, ভালো মন্দের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম কেউ যে অপরের ক্ষতিকারক কোনো কাজ করবে এমনটা মানুষ হিসেবে আমাদের মনেও বিশ্বাস হয়না। প্রাণের অস্তিত্ব থাকা মানে বিশ্বাসের একটা আবেদন থাকতে হবে। আপনি যদি বিশ্বাসের আবেদনে বিশ্বাসী না হন, তাহলে কিসের মাপকাঠিতে অবিশ্বাস করছেন! (এখন আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে, আমি মানুষের অস্তিত্বে বিশ্বাস করিনা, আমি বিবেকের সত্ত্বায় বিশ্বাস করিনা, মানুষের কর্তৃত্বপরায়ণতায় বিশ্বাস করিনা, তাহলে আপনি পশুর খাতায় নাম লেখান আপনাকে না করিনি। আপনি যে আপনার অস্তিত্বে বিশ্বাস করছেন না, সেখানেও কিন্তু বিশ্বাসের প্রসঙ্গ চলে আসছে, বিশ্বাসকে বিশ্বাসের মাপকাঠি দিয়ে মাপতে পারবেন না।)

কেউ এসে আপনাকে বললো, আজকে দেখলাম একটা বাঘ একটা হরিণ শিকার করেছে। কেউ কেউ কৌতুহলী হয়ে আপনার চাক্ষুস করা ঘটনাটা একটু জানতে চাইবে, কিন্তু জানার আগ্রহ থেকে কিংবা মানবিক আবেদন থেকে কেউ সেটা শুনতে চাইবেনা। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আজকে একটা বাঘের হাত থেকে আপনি রক্ষা পেয়েছেন কিংবা এভাবে বলেন যে বন্য কোনো বাঘ আপনাকে একা পেয়েও শিকার করে নি, আপনার কাছে এসেছে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করেছে, আপনি কোনোরকম প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াই আপনাকে শিকার না করে চলে গেছে কিংবা আপনার সাথে লড়াইয়ে বাঘটি আত্নসমর্পণ করে চলে গেছে তাহলে সেই ঘটনার একটা আবেদন তৈরি হবে। সমগ্র মহলের মানুষ থেকে আপনার কাছে বিবরণ চাওয়া হবে। কেননা এটা বাঘের অস্তিত্বের সাথে মানানসই নয়, গল্প কিংবা লৌকিক কাহিনী ছাড়া কোনো যুক্তিতেই এটা বাস্তবসম্মত নয়।

~মানুষ মানুষ হওয়ার কারণে ভালো কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই তার সত্ত্বাকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু এই মানুষই যদি তার নিজ সত্ত্বা থেকে বের হয়ে অন্য কোনো প্রাণির জন্য ক্ষতিকর এরূপ কোনো কাজ করে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই মানবিক আবেদন তৈরি করবে। জাতি সত্ত্বার বিরুদ্ধাচারণ করা লোকটিকে ও তার কার্যপ্রণালীকে জানতে মানুষের মনে আগ্রহ জন্মাবে। এই আগ্রহটা কৌতূহলবশে তৈরি হয়না, এটা হয় জাতিসত্ত্বার প্রতি অচেতন মনে তৈরি হওয়া বিশ্বাস থেকে।

আর ঠিক একই কারণে প্রিন্ট মিডিয়ায় কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যে খবরগুলো প্রচারিত হয় তার অধিকাংশই থাকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের, সেই তুলনায় ভালো কাজের খবর কম প্রচারিত হয়।

এখন বুঝা গেলো, তথ্য সেগুলো হতে পারে যা মানবিক আবেদন তৈরি করতে সক্ষম, যা জানার আগ্রহ মানুষের মধ্যে জন্মাতে পারে, যা নতুন কিছু সম্পর্কে অবগত করতে পারে, যার প্রতি মানুষ কৌতূহলী, সর্বশেষ যা স্বাভাবিকতার বিপরীত।


~এবার আসি গুজব ছড়ায় কেন?!

~উপরোল্লিখিত তথ্যের মধ্যে যদি এমন কোনো তথ্য ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় মানুষের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয় আর সেটা পরবর্তীতে মানুষ জানতে পারে তবে তথ্যের ঐ সোর্স দাতাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ধিরে ধিরে কমে যায়। আর যদি কোনোভাবে এটা জানা যায় যে সোর্স দাতারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য (অসৎ উদ্দেশ্য) বাস্তবায়নে এমন কোনো তথ্য মানুষের কাছ থেকে গোপন করেছিলো যেটা সাধারণ মানুষের কাছে নৈতিকতার বিরুদ্ধাচারণ করে বলে মনে হয় তাহলে সেই সোর্সের উপর বিশ্বাস কমতে কমতে নাই হয়ে যায়।

~তথ্য গোপন করার তথ্যটা যার কাছ থেকে জানা যায় তার উপর নির্ভরশীলতা চলে আসে আর স্বভাবতই সেটা কোনো কমিউনিটি হয়ে থাকেনা। ব্যক্তিবিশেষের কাছ থেকে সেই তথ্যটা আসে অর্থাৎ অজানা সোর্স থেকে। কিন্তু বাস্তবিক জীবনের প্যাটার্নের সাথে যদি সেটা কোনোভাবে খাপ খেয়ে যায় তখন সেটকেই সত্যি মনে হয় আর তাই প্রথমে বিশ্বাস জন্মানোর জন্য গতানুগতিক ধারার তথ্য প্রচারের বাহিরে গিয়ে তারা সিক্রেট কোনো তথ্য প্রকাশ করে থাকে। তারপর যখন মূল ধারার মিডিয়া থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যায় তখন থার্ড পার্টি অজানা সোর্স হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভুল কোনো ইনফরমেশন দিলেই মানুষ সেটা খেতে শুরু করে। কিন্তু এতে বদহজম হবে কিনা সেটা যাচাই করার প্রয়োজনবোধ করেনা।

কেন প্রয়োজনবোধ করেনা, আর কেনই বা মূল ধারার গণমাধ্যমকে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা উচিৎ ইত্যকার বিষয়াবলি নিয়ে আসছি পরের এপিসোডে।

~এমনি এমনি দিলাম-
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে আমাদের অর্জন, "নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা কেন প্রতিবেদন জমা দিতে পারে নি সেটা তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা।"

শুভ ইংরেজি নববর্ষ B-)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×