somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাত ভিক্ষা!!!"

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলা যখন চিত্র নায়িকা সাবানা অভিনীত ''ভাত দে'' সিনেমা দেখতাম, তখন মনে হত এও সম্ভব? ? ভাত ভিক্ষা? ? ভাতও মানুষ ভিক্ষা করে? ? মানুষ ভাত চাইলে কেউ আবার না করতে পারে?? কচি মন, নিষ্পাপ হৃদয় নিয়ে সেদিন অনুভব করতে পারিনি,এই পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা, এই ধরনীর নির্মমতা। কয়েক মাস যাবত বিকল্প মেসে খেতে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম দরজায় এক মহিলা বাচ্চা নিয়ে ভাত চাইছে,"বাবা কয়টা ভাত দে" । মেসের বয়রা যে দেয় না তা নয় মাঝে মধ্যে ভাত ব্যাগে ভরার দৃশ্য আমার চোখেও পড়েছে। খেতে ঢোকার সময় আজ কাল চোখে পড়ে।বিশেষ করে রাতে দশটার পর,কখনো বা দুপুরে। একটু আগে খিদে পেলে সন্তান নিয়ে তাড়াতাড়ি এসে বসে থাকে মেসের খাবার খাওয়া কখন শেষ হবে এই প্রতিক্ষায়। অপেক্ষার প্রহর যখন শেষ হয়ে আসে তখন কখনো বয়রা বলে খাবার নাই।তখন বাধ্য হয়েই অন্য কোথাও হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় ক্ষুধার জ্বালায়।বয়রা যে দেয় না তা নয়, তারা চেষ্টা করে, সব সময় পারে না।তাছাড়া ওদের তো জনসেবা করার অধিকার নেই বা এই খাবারও কারো না কারো জন্য রান্না করা হয় সে না পেলে সেইবা কোথায় খাবে। যদিও সে ছাত্র তবুও সেও তো বিপুল টাকা খরচ করতে পারে না।এক চিলতে বেগুন ভাজি,এক টুকরো মাংস (তা গরু,খাসি বা মুরগীর এক পিচ এর বেশি নয়) ও এক চামচ ডাল খেয়ে বেচে থাকার জন্য ওই ছাত্রটিও কম সংগ্রাম করে না।হয়তো টিউশন বা বাবার ধান বিক্রির টাকা বা বোন বা ভাইয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত সামান্য কিছু টাকা দিয়েই তো সে মেসের পাওনা পরিশোধ করে।তাইতো মেসের লোক ছাত্রটির কথা চিন্তা করে ওই ক্ষুধার্ত মহিলাও তার সন্তানকে অনেক ক্ষুধার্ত দেখেও খেতে দেয়ার সুযোগ নেই। আমি প্রথম প্রথম রাতে খাবার খেতে গেলে বলতাম এই খাবার দিছ না কেন?? প্রতুত্তরে ওরা বলত ভাই এভাবে দিলে আপনারা তো খেতে পারবেন না। আমি বলতাম আমি খাব না আমারটা দে, কিন্তু এভাবে আর কয়দিন?? সবার মত আমার পকেটেও হরহামেশা পর্যাপ্ত টাকা থাকে না।কি আর করা, আরো একবার ভাবি পৃথিবী কত নিষ্ঠুর,কত নির্দয়,কতটা হৃদয়হীন।একজন ক্ষুধার জ্বালায় মরবে অথচ কারো দেখার সময় নেই। প্রতিদিন যে একজনই আসে তা নয়, মাঝে মাঝে এর সংখ্যাটাও দুই,তিন জনে পৌছায়। তবে দুই বা তিনজন যাই হোক না কেন মুখগুলো কমন।একদিনের কথা আমাকে এত পীড়া দিয়েছে যে, আমি তাকে কিছু টাকা দিলাম,মেস থেকে খাবার দিতে বলল্লাম, সে খাচ্ছিল আর আমি রুমের দিকে হাটছি,রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল,অনেক ক্ষন ঘুম আর এল না। তখন গভীর রাত, আমার চিন্তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই।না আছে গাড়ির হর্ণ ,আর না আছে মানুষের কোলাহল। যদিও মানুষের কোলাহল আমার খুব ভালো লাগে ,মানুষের সাথে সময় কাটাতেই আমার অনেক ভালো লাগে,তবুও কারো জন্য চিন্তা করার জন্য বা কিছু নিয়ে ভাবার জন্য গভীর রাতের মত উপযুক্ত সময় আর নাই। আমি ভাবতে থাকলাম ওই বৃদ্ধা ক্ষুধার্ত মহিলার কথা....তার বয়স প্রায় সত্তর এর কাছাকাছি,তারও শৈশব ছিল,ছিল সাজানো সংসার,ছিল আদরের পিতা-মাতা,সোহাগের স্বামীও তো ছিল,ছিল বৃদ্ধ বয়সে অবলম্বন করে বাচার মানিক রতন। তার বাবাও তাকে সবার বাবার মত আদর করত,গান শোনাত,গল্প বলত রাজ-রানীর,ডালিম কুমারের।তার বাবাও তার চোখে স্বপ্ন একে দিয়েছিল বড় হওয়ার,মানুষের উপকার করার,স্বচ্চল জীবনে ক্ষুধার্তের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ানোর।তার সন্তান ও তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলত, মা আমি বড় হলে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না,তুমি হাসি-খুশি মনে ঘুরবা আর আমি রোজগার করে সবাইকে খাওয়াবো,তোমাদের তখন আর কষ্ট করতে হবে না মা।তারো ত মেয়ে বলেছিল মা আমি বড় হলে বড় চাকুরি করবো, তখন আর আমাদের কষ্ট হবে না মা। কন্ঠ শিল্পী আসিফের কন্ঠে শোনা গানের মত তারও ত বাবা বলত-- কিছুই যখন ভালো লাগবেনা তোর,পিয়ানোয় বসে তুই বাজাবি রে---আয় খুকু আয়,,,,,,,,।জীবন তার সাথে প্রতারণা করেছে,তা না হলে জীবন সায়াহ্ন এ এসে কেন তাকে ভাত ভিক্ষা করতে হবে?? পুঁজিবাদী বিশ্ব দিন শেষে তাকে ক্ষুধা মেটানোর নিশ্চয়তা দেয়নি।তার জীবনেই সবই কেড়ে নিয়েছে গতিশীল বিশ্বব্যবস্থা।অনেকে হয়তো বলবে অনেক টাকা ওয়ালা ভিক্ষুক আছে,আমি অস্বীকার করি না,তবে দায় না পড়লে কেউ ভাত ভিক্ষা করতে পারে এটা সবাই বিশ্বাস করতে পারলেও আমি পারি না।আমাদের এই পৃথিবীতে যদি একটি মানুষ ও না খেয়ে থাকে,একটি শিশুও যদি ক্ষুধা নিয়ে ঘুমায়, এই ধরিত্রীর বাসিন্দা হিসেবে কারও দায় এড়ানোর উপায় নেই। পৃথিবী তাকে দু'হাত ভরে না দিতে পারলেও, অন্তত একটু জীবন ধরনের অধিকার কি কেড়ে নিতে পারে??
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×