somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - আমি নেতা হতে চাই

১৯ শে মে, ২০১৯ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্বপ্ন মানুষই দেখে, আর স্বপ্ন দেখাটাই একজন সাধারণ মানুষের জন্য স্বাভাবিক। স্বাভাবিকতার রীতিতেই আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম একদিন বড় হবো অনেক বড়। আমার স্বপ্নের ধরণটা ছিল একটু ভিন্ন ধরণের, আমি নেতা হতে চাই । নেতা হওয়ার সুবিধাগুলো যে নেতা হয়, সেই'ই একমাত্র বুঝতে পারে । সম্মান আর চেয়ে নিতে হয় না সম্মান আপনা-আপনিতেই আসে।

আমার স্বপ্ন ছিল আমিই একদিন নেতা হবো, আমার স্বপ্ন এখন পূরণ হওয়ার পথে । আমি নেতা হতে পেরেছি সম্পূর্ন নিজ যোগ্যতাতেই। যদিও আমার নেতা হওয়ার প্রাথমিক স্টেজে আমারই এক কলিগ বন্ধুর হাত ছিল কিন্তু আমি তা এখন আর স্বীকার করতে রাজী না। আমি নেতা হতে পেরেছি সেটাই বিশাল ব্যাপার আমার জন্য।

আমার পরিচয় যদি না দেই তাহলে তা হবে মহা অন্যায়, আমার পরিচয় থেকেই শুরু করে আমার নেতা হওয়ার ধাপগুলো উপস্থাপন করতে চাই যাতে সবার অনুপ্রেরণার পাত্র আমি হতে পারি।
আমি শামীমুর রহমান শ্রাবণ , বেড়ে উঠা ভোলার একটি চরে। স্কুল কলেজ সেখানে শেষ করেই পাড়ি জমাই বরিশাল শহরে। বরিশাল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই যোগ দেই ঢাকার গাজীপুর এর একটি গার্মেন্টসে। পজিশন এবং বেতনভাতা ভালোই ছিল এবং এখনোই ভালো অবস্থানেই আছে। সুপারভাইজার পদে জয়েন করায় অধীনস্থ কিছু লোকজন ছিল তাদের নিয়েই স্বপ্ন দেখা আমার নেতা হওয়ার।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও পারি নাই কখনো নেতৃত্ব দিতে। আসলে সে সুযোগটা কখনো হয়ে উঠে নাই আরকি। কর্মজীবনে এসে দুবছর পর মনে হলো এবার যদি নেতা হতে না পারি তাহলে জীবনটাই বৃথা। সরকারী দল কিংবা বিরোধী দলে যোগ দিলে নেতা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আমাকে তো নেতা হতে হবে। ছোট খাট দলে যোগ দিয়েও অপেক্ষা করতে হলো বহুদিন। পদ পেয়েছি আমি সে রাজনৈতিক দল থেকে। তবে তার আগেই আমি নেতা হতে পেরেছি সেই গল্পটাই আগে বলি -
কর্মজীবনে দুবছর পার করে দিলাম, কিন্তু নেতা হওয়ার স্বপ্নটা আমার অপূর্ণই রয়ে গেল । এরই মাঝে আমাদের গার্মেন্টসে নতুন নিয়োগ হলো। নতুন নিয়োগএর কথা শুনেই আমার মাথায় কাজ করলো। এটাই সূবর্ণ সুযোগ, এ সুযোগ মিস করা মানে সবকিছুই মিস।

গার্মেন্টস এর সুপারভাইজার হওয়ায় অন্যান্য গার্মেন্টসগুলার কিছু মানুষজনের সাথে উঠা বসা ছিল। উঠা বসার মাধ্যমেই জানতে পারি গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন সংগঠন চালু হয়েছে “বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আদায় কাউন্সিল” নামে। সংগঠনটি ক্রমান্বয়েই দেশের সবগুলো গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়বে সেই আশাতেই আশাবাদী প্রতিষ্ঠাতারা সদস্যরা ।

প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সাথে আমার ভালোই উঠা বসা ছিল, সেই সুবাধে দাবার গুটির প্রথম চালটার এখানেই যথাযথ প্রয়োগ। প্রস্তাব দিলাম - আপনাদের সংগঠনটির প্রসারের জন্য আমাদের গার্মেন্টসকেও ব্যাবহার করা যায়। আপনারা সায় দিলে আমাদের গার্মেন্টেসে সংগঠনটির একটি শাখা সংগঠন চালু করবো, তবে শর্ত হলো আমাকে শাখা সংগঠনটির সভাপতি করতে হবে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা এমনিতেই চাচ্ছিলেন তাদের সংগঠনটির প্রসার হতে। কেউ যদি নিজে থেকে সংগঠন প্রসারে সহযোগীতা করতে চায় তাহলে আপত্তি কিসে।
তারা আমার প্রস্তাবে সায় দিলেন আর আমাকে বললেন - যত শীঘ্রই পারি যেনো একটা কমিটির তালিকা জমা দেই। আমি প্ল্যানিং করতে থাকি কিভাবে কি করা যায়.? আমার প্ল্যানে আশার আলো ফুটায় নতুন জয়েন করা আমারই সহকারী আতিকুল ইসলাম ইসলাম আতিক। তার চিন্তাধারা ঠিক আমার মতোই। প্রথমে আতিকের সাথে আলাপ করলাম বিষয়টা নিয়ে, আতিক সায় দিলো। আতিকের সাথে জয়েন করা আরো বেশ কয়েকজনের সাথে আতিক আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।

আর যাই হোক মাইন্ড ব্লেডিং এ মোটামোটি অভিজ্ঞতা রয়েছে, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সূদর ভবিষৎ দেখিয়ে টানতে লাগলাম আমার স্বপ্ন পুরণের হাতিয়ার হিসেবে । কিন্তু বাধা হলো আমাদের গার্মেন্টস অথোরিটির নির্দেশনা মোতাবেক চললেও নিয়ন্ত্রণ সিনিয়র আফিসারদের হাতে। তাদের টপকিয়ে যদি কমিটি গঠন করতে যাই তাহলে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বিষয়টা এড়াতে কলিগ বন্ধু নাঈমের সাথে আলাপ করলাম। নাঈম আমার সমপদে চাকুরী করলেও নিয়ন্ত্রকদের একজন সে ও । সরল মনে তাকে বুঝালাম বিষয়টা সেও নিলো তা সরল মনে। কিন্তু বুঝতে দেই নাই তাকে আমার মহা উদ্দেশ্য কি.? সে ও বুঝার চেষ্টা করেনি। বন্ধু হিসেবে সায় দিয়ে বললো - তুমি কমিটি গঠন করো বাকী যা হবে আমি দেখবো।

নাঈমের কথায় ভরসা পেয়ে দাবার গুটির দ্বিতীয় চালটার প্রয়োগ - নাঈম সহ বেশ কিছু জুনিয়র কলিগদের নিয়ে “বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আদায় কাউন্সিল” এর অফিসে শুভেচ্ছা সফর। সবাই উৎসাহের সাথেই সেই সফরে আমার সাথী হলো। কিন্তু কেউই বুঝতে পারে নাই তাদেরকে ব্যাবহার করে আমার নেতা স্বপ্নটির কথা।
সফর শেষে নিজ কর্মস্থলে ফিরে এসেই কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিকে কমিটির তালিকা প্রেরণ করি। ব্যাস পরের দিনই আমার নেতা হওয়ার স্বপ্নের প্রথম ধাপ অর্জিত হলো। আমাকে সভাপতি করে গঠন করা হলো “ বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আদায় কাউন্সিল তমা গার্মেন্টস ইউনিট” । বলাবাহুল্য, আমাদের গার্মেন্টস এর নাম তমা গার্মেন্টস। কমিটির সভাপতি আমি আর সাধারণ সম্পাদক বন্ধু নাঈম, এবং অামার সাথে সফর করা জুনিয়র কলিগদের বাকীপদগুলো দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। আমি এবং আমার সহকারী আতিক ব্যাতীত কেউই জানতো না কমিটির কথা। কমিটি তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরেই তুলকালাম কান্ড বেঁধে যায় গার্মেন্টস জুড়ে। সিনিয়র কলিগদের প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমাকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয় বন্ধু নাঈমের জন্য। সে থাকাতেই সে যাত্রায় বেঁচে যাই আমি।

কমিটি হল। আমি সভাপতি, আমার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ অর্জিত। আমার প্ল্যানগুলো সূদর প্রসারি । ইতিমধ্যে সিনিয়রদের টপকে অথোরিটির সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল আমার। সুতারং আমায় ঠেকায় কে.?
আমি এগোচ্ছি আমার স্বপ্নপূরণে, আমার ভীষণ একটাই আমাকে নেতা হতে হবে। এরই মাঝে আরো বেশকিছু গার্মেন্টস রিলেটেড সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে প্রত্যেকটিরই শাখা সংগঠন তমা গার্মেন্টসএ চালু করলাম। আর সব কয়টি সংগঠনের ই সভাপতি আমি। বুঝতে পারছেন বিষয়টা..? এতগুলো সংগঠনের সভাপতি হওয়ায় আমার ডিমান্ড যে বেড়েছে তা আমি নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছি।

দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বন্ধু নাঈম সহ আরো বেশ কয়েকজন আমার সূদূর প্রসারি চিন্তাভাবনা বুঝেছিল । বুঝতে পেরেই কেটে পড়েছে । তারা সরে গেছে তাতে কি.? আমি তো নেতা হতে পেরেছি। আর কয়েকজনই তো মাত্র সরেছে বাকীরা তো রয়েছেই। বাকীদের নিয়েই আমার মিশন শুরু।

আমার মিশনের প্রথম ভিশন হলো নতুন কেউ জয়েন করলেই তাকে আমার দলে ভেড়ানো। দলে ভেড়ানোর জন্য আমি আবার বেশ কিছু কৌশলও অবলম্বন করি। যার মাঝে একটি কৌশল এর কথা বলি তা হলো - গার্মেন্টস থেকে গার্মেন্টস নামক একটি ইভেন্ট। সেখানে নতুনদের নিয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টস ভিজিট করে থাকি। নতুনরা ভাবে তখন আমার ডিমান্ড অনেক। গার্মেন্টসে একটা ভাই শ্রাবণ ভাই। শ্রাবণ ভাই বলতেই সবকিছু সম্ভব তার দ্বারা। নবীনদের এর এই ধারণাকে কাজে লাগিয়েই আমি আরো বেশ কয়েকটি সংগঠন চালু করি। কিন্তু এবার ভিন্ন ধারায়। জুনিয়দের আকৃষ্ট করতে তাদেরকেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়ে আমি আর ঘনিষ্ঠ সহকারি আতিক হই উপদেষ্টা। কয়েকটা সংগঠন যেমন - আমরা সৌখিন, তীর্থের খোঁজে এবং আরো বেশ কয়েকটি। জুনিয়র কলিগগনও তুষ্ট আমার প্রতি। আমার ভিশন এখন বহুদূর আমাকে আরো বড় হতে হবে। গার্মেন্টসে প্রতিষ্ঠিত কিছু সংগঠনের মত আমাকেও একটা সংগঠন চালু করতে হবে। সুতারং সে মহা ভিশন সফল করার জন্য আমাকে অথোরিটির অনুগত হতে হবে। অথোরিটির অনুগত হতে হবে কি বুঝিয়েছি তা তো বুঝেছেন নিশ্চয়ই.? এককথায় অথোরিটির কথায় উঠা-বসা করা। আমি বাধ্যই খুব, স্বপ্ন পূরনে আর যা করতে হবে তাতেই আমি রাজী।

নেতা হওয়ার বিভিন্ন ধাপ এগিয়ে এখন আমি একজন সফল নেতাও বটে, রাজনৈতিক পদও পেয়েছি বটে। আমার হাতিয়ার অনুগত কিছু জুনিয়র কলিগ। তাদের নিয়েই গঠিত হয় আমার সকল সংগঠন।

নেতা হওয়ার সুবাধে মোটামোটি পরিচিতিও বেড়েছে, সময় অসময় বিভিন্ন গার্মেন্টস রিলেটেড সেমিনারেও যেতে হয়। সবগুলো সেমিনার এর মাঝে একটি সেমিনার আমার জীবনে বয়ে এনেছে অনন্য এক শুভ্রতা যা প্রকাশ করে শেষ করার মত না।

জীবনে নেতা হতে চেয়েছি, নিজ যোগ্যতাতেই পেরেছি। তবুও জীবনে অপূর্নতা রয়ে যায়। নারীসঙ্গ ব্যাতীত প্রতিটি পুরুষেরই জীবন অপূ্র্ণ। আমার জীবনেও প্রয়োজন ছিল একজন নারীর। যে নিঃস্বার্থে বিলিয়ে দিবে তার সর্বস্ব আমার তরে এবং ভালোবাসবে শুধু আমায়।

আমার জীবন এখন ভীষণ সুন্দর, নেই কোন কিছুর অপূর্নতা। সেবার সেমিনারে যাওয়ার পর “ বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আদায় কাউন্সিল তমা গার্মেন্টস ইউনিটি” এর সভাপতি হওয়ার সুবাধে স্টেজে উঠার সুযোগ পেয়েছিলাম। স্টেজে উঠার পর চোখ পড়ে স্টেজের বিপরীতে বাঁ পাশের সারিতে বসা নীল শাড়ী পরা এক সুদর্শনা রমনীর দিকে। কপালে মাঝে ছোট্ট কালো নীল টিপ ঠোঁটে লাল রঙের লিপিস্টিক। বয়সে আমার সমবয়সীই হবে হয়তো। রমনীর দিকে তাকিয়ে আমি মুগ্ধ। জীবনে আমি এমন একজনকেই চেয়েছিলাম, তার দেখা পেয়েছি, তাকে আমার করে পেতে হবে । নইলে যে জীবন বৃথা।

সেমিনার রুম থেকে বেরিয়ে দেখি রমনী দাড়িয়ে আছে। নীল শাড়ীতে অপরূপা লাগছে তাকে। কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলাম। প্রথমাবার হয়তো খেয়াল করে নাই। আবার বললাম -
- এক্সকিউজ মি!
- আমাকে বলছেন.?
- হ্যাঁ, আপনাকেই বলেছিলাম
- সরি ভাইয়া, খেয়াল করি নাই
- আচ্ছা ব্যাপার না
- জ্বী, সেমিনারে আপনার কথাগুলো ভালোছিল
- আচ্ছা, তাই বুঝি
- জ্বী
- নাম জানা হলো না এখনো
- অহহ! সরি, আমি নাবিলা। আপনার নাম কিন্তু আমার জানা আছে
- তাই বুঝি.?
- জ্বী। শ্রাবণ, তমা গার্মেন্টস প্রতিনিধি
- বাহ! সব'ই তো জানেন। আপনি কোথায় কাজ করছেন.?
- নার্গিস গার্মেন্টস এন্ড ফ্যাক্টরিতে প্রজেক্ট ম্যানাজার হিসেবে কারছি
- বাহ! ভালোই তো।
- জ্বী।
- ক্যান আই গেট ইউর ভিজিটিং কার্ড.?
- সিউর, হোয়াই নট.?
পার্টস থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে দিয়ে বলল - টেক ইট, ইফ ইউ ফিল ফ্রি, দ্যান কল টু মি।
- থ্যাংক ইউ।
- আচ্ছা, আসি তাহলে আজ. ?
- সিউর । ভালো থাকবেন।
- আপনিও।

নাবিলা চলে চায়, আমি তাকিয়ে তার দিকে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে নাবিলাকে। নেতা হওয়ার পর সেমিনার, সমাবেশ , বিভিন্ন স্থানে অনেক রমনী দেখেছি এবং অনেক রমনীর সাথে মিশেছি, কিন্তু নাবিলার প্রতি যে অনুভূতি কাজ করছে তা অন্য কোথাও করে নাই ।
ভালোবাসা কি সত্যি এমন..?
হঠাৎ যদি কারো প্রতি একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয় তখন আমরা তাকে ভালোলাগা বা মোহ বলি। সেই ভালোলাগা বা মোহ হয়তো সবসময় কাজ করে না। সময়ের তালে মিশে একসময় হারিয়ে যায়। আবার কখনো ভালোলাগা থেকে সৃষ্টি হয় ভালোবাসার।
আমি তখনও নিশ্চিত ছিলাম না আমার এই সম্পর্কের গতি কোথায় গিয়ে থামবে.?
সারাদিন কাজশেষে রাতে বাসায় ফিরে ভাবছি মেয়েটার কথা। এত সুন্দর মানুষ হয়..? ভিজিটিং কার্ডটা হাতে নিয়ে ভাবছি ফোন দিবো। কিন্তু ফোন দিলে কি ভাববে মেয়েটা.? ছ্যাঁচড়া ভাববে.? নাকি নরমালিই নিবে.? মেয়েটার যদি বিয়ে হয়ে থাকে. ? তাহলে কি হবে..?
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিলাম, একবার তো ফোন দিতে পারি। তাছাড়া সে নিজেও তো বলেছে ফোন দেয়ার কথা।

সাহস করে ভিজিটিং কার্ড থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম , রিং হলো কিন্তু রিসিভ করলো না। আবার কল দিলাম, এবার ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো -
- হ্যালো! কে বলছেন.?
- চিনতে পেরেছেন.?
- নাহ তো, কে আপনি.?
- আমি শ্রাবণ, তমা গার্মেন্টস কমিটির সভাপতি ।
- অহহ! ভাইয়া, আপনি.? আপনার কথাই ভেবেছিলাম
- তাই নাকি.?
- হ্যাঁ
- কি করছেন.?
- শাওয়ার নিলাম, আপনি.?
- আপনার সাথে কথা বলছি।
- আচ্ছা।
- আমার সাথে কথা বলছেন যে, আপনার হাজব্যান্ড কিছু মনে করবে না.?
- আমি এখনো বিয়ে করি নাই
- সিরিয়াসলি..?
- হ্যাঁ
- জানেন আপনি অনেক সুন্দর
- ফ্লার্ট করছেন না তো, সুযোগ পেয়ে
- আরে না কি বলছেন.? সত্য প্রকাশ করতে দোষ নাই
- আচ্ছা
- প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছিলাম সেদিন থেকেই আপনার রূপে মুগ্ধ আমি।
- বাব্বাহ! সুযোগ পেয়ে তো ভালোই এগুচ্ছেন
- কালকে কফি খেতে একসাথে.?
- মাত্রই কথা হলো, আর তাতেই কফি খাওয়ার অফার। তারপর প্রস্তাব দিবেন - চলো ঘুরতে যাই কোথাও, চলো ডিনার করি একসাথে, সর্বশেষে বলবেন ভালোবাসবে আমায়.? আমি ভালোবাসি তোমায়। আপনাদের পুরুষদের সম্পর্কে জানা আছে আমার।
- পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে বুঝি.?
- সব কিছুর অভিজ্ঞতা থাকতে হয় না, হিউম্যান সাইকোলজি মানুষের অাচরণেই বুঝা যায়।
- বাবাহ! এত্ত এক্সপেরিয়েন্স
- আবার একই কথা
- আচ্ছা, বাদ দিন। কফি কি খাওয়া যায়.?
- এত করে যেহেতু বলেছেন তাহলে কালকে সন্ধ্যায় বনানীতে আসুন।
- বাহ! আমার দরখাস্ত মঞ্জুর। হিউম্যান সাইকোলজি যদি আরো কিছু চায় তখন.?
- সুযোগ নিচ্ছেন আবারও
- সুযোগ নিচ্ছি না, আবার যদি সুযোগ নিতেও চাই তাহলে?
- সময় তা বলে দিবে। আচ্ছা রাখছি এখন, কাল দেখা হবে।
- গুড নাইট। ভালো থাকবেন।
- আপনিও ভালো থাকবেন।

নাবিলা ফোন রেখে দিলো। আমি ভাবতে লাগলাম নাবিলাকে নিয়ে। কি সুন্দর মেয়েটি। কি সুমধুর মেয়েটির কণ্ঠস্বর। আমি অপেক্ষায় রইলাম শুভক্ষণটির জন্য।
পরদিন মেয়েটি আমার পূর্বেই বনানীতে নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে পৌঁছেছে, জ্যাম এর কারনে অামার একটু লেট হয়ে যায়। মেয়েটি অপেক্ষা করে আমার জন্য। রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দেখি নাবিলা বসে আছে পূর্বপাশের একটি কাপেল টেবিলে। আমি কাছে গিয়ে বললাম
- সরি, একটু লেট হয়ে গেল
- জ্যামে পড়ছিলেন নিশ্চয়ই.?
- হু
- আচ্ছা, বসুন
- কি খাবেন বলেন ( বসতে বসতে বললাম)
- কোল্ড কফি. ?
- সিউর

ওয়েটার কে ডেকে দুটা কোল্ড কফির অর্ডার দিলাম। মেয়েটিকে ভীষণ সুন্দর লাগছে আজ। বেগুনী রঙের শাড়ী পরেছে, কপালে বেগুনীর রঙের মাঝারি সাইজের টিপ হাতে কাঁচের চুড়ি। বেসম্ভব সুন্দরী লাগছে নাবিলাকে। আমি আনমনে তাকিয়ে রইলাম নাবিলার দিকে। যেন স্বর্গের অপ্সরী দেখছি আমি। এতো সুন্দর মানুষ হয়. ?

আমাকে আনমনে তাকিয়ে দেখতে চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে নাবিলা বললো-
- এই যে মিস্টার! কি দেখছেন এমন করে.?
- আপনাকে
- আমাকে দেখার কি আছে এমন, যে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে
- বেসম্ভব সুন্দর আপনি
- আর কয়জন কে বলছেন.?
- সত্যি বলি. ?
- বলুন
- একমাত্র আপনাকেই বলছি। সত্যি বেসম্ভব সুন্দর আপনি
- আচ্ছা
- ভালোবাসবেন আমায়..??
- এই দোষটাই আপনাদের পুরুষদের , মাত্র একদিনেই ভালোবাসার কথা
- ভালোবাসতে কোন সময় লাগে না, কখন মানুষের মনে বিপরীত মানুষটির প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে যায় মানুষ নিজেও তা জানে না। হয়তো অজান্তেই আপনার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে তা আমি নিজেও অনুভব করতে পারি নাই। আমি পারতাম সময় নিতে, আপনার সাথে ক্রমান্বয়ে ক্লোজ হতে, একদিন না একদিন হয়তো আপনাকে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করতাম, হয়তো তখন আপনি আমার ভালোবাসা গ্রহন করতেন। কিন্তু আমি তা চাইনি। আপনার প্রতি আমার যে ফিলটা তৈরি হয়েছে তা আপনাকে এখনই প্রকাশ করলাম। এবার বাকীটা আপনার উপর ডিপেন্ডেড।

নাবিলা সেদিন উঠে চলে গেল, আমি অনুশোচনায় ভুগতে লাগলাম এমন করাটা কি আমার ঠিক হলো.? কিন্তু ভালোবাসা যদি যথাসময়ে প্রকাশ করতে না পারি তাহলে তা ভালোবাসা কিনা তা আমার জানা নেই। ভালোবাসতে সাহস লাগে। আমি সাহসের পরিচয় দিয়েছি। এবার নাবিলা যদি আমার ভালোবাসা গ্রহনের উপযুক্ত হয় তাহলে সে আমার ভালোবাসা গ্রহন করবে এবং ভালোবাসবে আমায়।
হ্যাঁ নাবিলা ফিরেছে, ভালোবাসে আমায়। তিনদিনপর আমাকে ফোন দেয়। নাবিলার ফোন পেয়ে আমি অবাক, সত্যিই কি নাবিলা ফোন দিছে আমাকে.? স্বপ্ন দেখছি না তো. ?
আমি ফোন রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো -
- সরি, ওই দিন এভাবে চলে আসার জন্য, আসলে আমি বিষয়টা প্রাথমিক ভাবে মেনে নিতে পারি নাই। সরি ফর অল।
- ইটস ওকে। ব্যাপার না। তারপর বলুন কেন ফোন দিয়েছেন.?
- সত্যিই ভালোবাসেন আমায়.?
- জানিনা
- আমি ফিরে আসায় ভাব নিচ্ছেন.?
- যা বলার ওইদিনই তো বলেছি
- আচ্ছা, রাখি তাহলে এখন
- নাহ।
- তাহলে.?
- ভালোবাসি
- যদি বলি আমিও ভালোবাসি

এরপর থেকেই আমাদের প্রণয়ের শুরু। আমি ভালোবাসি নাবিলাকে, নাবিলা ভালোবাসে আমাকে । আমি সুখেই আছি বর্তমানে নাবিলাকে নিয়ে। নাবিলার ইচ্ছেতেই আমরা একত্রে থাকি এবং যখন ইচ্ছে হবে বিয়েও করে নিতে পারি হয়তো।

প্রণয়ের সুত্রপাত কোথা থেকে তা তো বলা হলো, এবার ফিরে যাই আমার নেতা হবার স্বপ্ন পুরনের গল্পে । আমার মূল লক্ষ্য ছিল - গার্মেন্টেসে এমন একটা এসোশিয়েশন চালু করা, যে এসোশিয়েশনটা সরাসরি গার্মেন্টস চেয়ারম্যান কর্তৃক অনুমোদিত হবে, এবং বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে পর্যাপ্ত অনুদান পাবে ।

স্বপ্ন অনুযায়ী এগুচ্ছি, আতিকের সহায়তা নিয়ে আরো বেশকয়েকজনকে দলে ভিড়ালাম। দাবার শেষগুটির চালটা সেখানেই দিলাম।
তনিমা ম্যাম, যিনি এমডি স্যারের খুবই কাছের । তনিমা ম্যাম এর নিকট গিয়ে তাকে বুঝিয়ে আমার স্বপ্ন সফলের পথে। তনিমা ম্যামকে আমার আগে থেকেই সেটিংস দেওয়া ছিল। ম্যামের সহায়তা নিয়েই চালু করি - “তমা গার্মেন্টস লেবার এশোসিয়েশন” । এবারও সভাপতি আমিই নির্বাচিত হই। নির্বাচিত বলতে সিলেক্টেডই হই। এশোসিয়েশন চালুর পিছনে আমার এত শ্রম মেধা খরচ হয়েছে , বিনিময়ে সভাপতিত্বটাই চেয়েছি এবং তা'ই পেয়েছি। তাছাড়া সবাই তো আমার নিজেরই লোক। যাদের কল্যানে আজ আমাকে এতদূর পর্যন্ত উঠে আসা। এবারের এশোসিয়েশনে আরো কয়েকজন নতুন লোকজনকে যুক্ত করতে পারছি, যদিও তাদেরকে প্রথম দিকের পদগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে। তাতে আমার কি.? আমি তো সভাপতি। বাকীপদগুলা কে পাক বা না পাক তাতে আমার মাথাব্যথা নাই। আমার পিছনে থাকা মানুষগুলা সদস্য পদ পেলেই খুঁশি, সুতারং চিন্তা কিসের তাতে.?
আমি নেতা হয়েছি, কেউ আমাকে কেয়ার করুক বা না করুক তাতে আমার কি.? যাদের নিকট থেকে কেয়ার প্রয়োজন তারা আমার সাথেই আছে। শ্রাবণ ভাই সর্বদা মহানায়ক তাদের দৃষ্টিতে।
আমার স্বপ্ন এখন দ্বিগুণ প্রসারিত, আমি নেতা হতে চাই অনেক বড় নেতা।

#চাইরচোখ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৯ রাত ২:০৫
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×