somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেট নিউট্রালিটি, ফেইসবুক এবং আমাদের ভবিষ্যত: ইন্টারনেটে সেবার স্তরায়নের আড়ালে ঔপনিবেশিকতার পদধ্বনি?

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনলাইন দুনিয়াতে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে নেট নিউট্রালিটি (ইন্টারনেটের নিরপেক্ষতা) আমাদের মত উত্তরণশীল জাতির জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। নেট নিউট্রালিটি বিষয়টি আসলে কি অথবা কিভাবে ফেইসবুক ইনকর্পোরেটেড ভার্চুয়াল জগতে সুবিধার স্তরায়নের নামে বৈষম্যকে উস্কে দিচ্ছে সেটাই এই লেখার মুল বিষয়বস্তু। উল্লেখ্য যে এই সংক্রান্ত আরেকটি লেখা ব্লগার সেনপাই ২০১৫ সালে লিখেছিলেন।

নেট নিউট্রালিটি বা ইন্টারনেটের নিরপেক্ষতা বলতে সেই নীতিকেই বুঝায় যার অধীনে সরকার বাধ্য করবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের তার গ্রাহকদের সকল ধরনের কন্টেন্টস এর সুবিধা সমানভাবে নেয়ার। যেমন, কেউ যদি ইচ্ছে করে সামহোয়্যারইন ব্লগের আপটাইমকে (লোড হওয়ার সময়কে) ইচ্ছেকৃতভাবে ধীরগতি করে দেয় অন্য একটি একই ধরনের সার্ভিসকে অন্যায্য সুবিধা দিতে, আমরা বলতে পারবো যে এখানে নেট নিউট্রালিটির লংঘন হয়েছে। ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ভেরাইজন ওয়্যারলেস অভিযুক্ত হয়েছিলো নেটফ্লিক্স ও ইউটিউবের সার্ভিসকে ধীরগতি করে দেয়ার দায়ে, যদিওবা তাদের কোন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। যারা ঢাকার ব্রডব্যান্ড সার্ভিসগুলো নিয়ে থাকেন তারা খেয়াল করে দেখবেন আইএসপিগুলো বলে যে তাদের ডেডিকেটেড ইউটিউব সার্ভার রয়েছে এবং আমাদের দেশের আমজনতার মধ্যে এই সার্ভিসের এত জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারনগুলোর মধ্যে এটি একটি। যেখানে অন্যান্য ভিডিও সার্ভিস ভিত্তিক ওয়েব পেইজ (যেমন ভিমিও, স্ক্রীন জাঙ্কি অথবা মেটাক্যাফে ইত্যাদি) তুলনামুলকভাবে ধীরগতিতে চলে। না বুঝেই আমরা নেট নিউট্রালিটির মুলনীতিকে লংঘন করছি অথবা লংঘনে সহায়তা করছি। নেট নিরপেক্ষতার দিন শেষ হয়ে যাওয়া মানে ইন্টারনেটকে কেউ আর পাবলিক ইউটিলিটি সার্ভিস হিসেবে দাবি করতে পারবে না, এইটা হয়ে যাবে আরেক ধরনের ইনফরমেশন সার্ভিস। যার পয়সা যত বেশী তিনি তত বেশী সার্ভিস ক্রয় করতে পারবেন, যার কম পয়সা তিনি বাধ্য থাকবেন আইএসপি যা দেয় তা গ্রহনে।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ফেইসবুক এই ডিসকোর্সে কিভাবে প্রাসংগিক হয়ে গেলো? মাঝে আমরা বিনামূল্যে ফেইসবুক ব্যবহারের একটা অফার মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে দেখেছিলাম যা জিরো ডট ফেইসবুক অথবা বৃহদার্থে ইন্টারনেট ডট অর্গ ধারনার সাথে সম্পৃক্ত যা ফেইসবুক অথরিটির হাত ধরে এসেছে। এই ইন্টারনেট ডট অর্গ এর মাধ্যমে গরীব ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেট সার্ভিস সহজ করার নামে এক ধরনের সার্ভিস মনোপলি চালু করার ফন্দি আটা হয়েছে যা প্রকারান্তে ভার্চুয়াল জগতে নয়া সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করবে। যেহেতু আমাদের মত দেশে মানুষের পক্ষে সবসময় পকেটের পয়সা খরচ করে ডাটা কেনা সম্ভবপর হয়ে উঠে না অথবা হেভী কন্টেন্টস সম্বৃদ্ধ সার্ভিস (যেমন দ্য ভার্য, ব্লিক, ওয়্যার্ড ইত্যাদি) লোড হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, আমাদের এই অবকাঠামোগত দুর্বলতার সুযোগে ফেইসবুক চাচ্ছে নির্দিস্ট কিছু সার্ভিসের সাথে আমাদের অভ্যস্ত করানোর যা দীর্ঘমেয়াদে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠার পথে অন্তরায়। উদাহরনস্বরুপ আপনি চাইলেন ওপেন কোর্স সিস্টেম যেমন এড-এক্স বা কোর্সেরা থেকে নতুন কোন কিছু শিখবেন; কিন্তু বিধিবাম, দেখলেন সেই পেইজ এত ধীরগতিতে লোড হচ্ছে ততক্ষনে আপনার পড়াশুনার সব ইচ্ছে উবে যাবে। তার চাইতে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে এই যে এই ইন্টারনেট ডট অর্গ এর মাধ্যমে হাতেগোনা কিছু সার্ভিসের এক্সেস গ্রাহকরা পাবেন এবং ফেইসবুক কতৃপক্ষ চাইলে যে কোন সময় যে কোন সার্ভিসকে এই প্লাটফর্ম থেকে বের করে দিতে পারবে। এই ব্যবস্থা তাদেরকে খুব স্পর্শ করবে না যারা ইন্টারনেটকে মূলত বিনোদন/ অবসর সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু নীভু নীভু প্রদীপের মত এখনো যেসব মানুষ ইন্টারনেটকে দেখেন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ার চৌকস মাধ্যম হিসেবে, তাদের জন্য নেট নিরপেক্ষতার বিলুপ্তি আসবে দুর্যোগের অশনি সংকেত হিসেবে। একদিকে বিদ্যমান অর্থব্যবস্থার বেনিয়াদের কায়েমি স্বার্থের বাস্তবায়ন আরেকদিকে ভার্চুয়াল জ্ঞানের জগতে প্রবেশের পথে নিষেধাজ্ঞা, আমরা তাহলে যাবো কোথায়?

মার্কিন আদালত ইতিমধ্যে বারাক ওবামার সময়ের প্রণীত নেট নিউট্রালিটির নীতিমালার বৈধতাকে খারিজ করে দিয়েছে ২০১৬ সালে। এরই মধ্যে এই সংক্রান্ত ইন্টারনেটের মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল কমিউনিকেশান কমিশনস নেট নিরপেক্ষতা বাতিল করার পক্ষে ভোটাভুটির মাধ্যমে তা কার্যকর করে ফেলেছে (যদিও নিউইয়র্কের গভর্নর তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তা অগ্রাহ্য করেছেন)। তবে এখন পর্যন্ত ধরে নেয়া যায় নেট নিরপেক্ষতা বলতে কিছু থাকছে না (ট্রাম্প যতদিন ক্ষমতায় আছেন)। আশার কথা হচ্ছে এই যে দক্ষিন এশিয়াতে সর্বপ্রথম ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি সুস্পষ্টভাবে নেট নিরপেক্ষতার পক্ষে রায় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এবং ভারতে ফ্রি ফেইসবুকের ক্যাম্পেইনও দৃশ্যত বন্ধ। ১২০ কোটির অধিক ভোক্তার বাজার যদি নিজেদের অবস্থান এইভাবে জানিয়ে দিতে পারে ভার্চুয়াল জগতে নব্য ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে, তাহলে আমরাও নিশ্চয়ই পারবো এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সচেতন করে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলতে। আজ না হোক আগামীকাল নিশ্চয়ই নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ তাদের সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×